চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

মমতাজ মহল


মমতাজ মহল
নিবেদিতা আইচ

এক 

বারান্দার গ্রিল দিয়ে পৌষের রোদ এসে ফ্লোরটায় লুকোচুরি খেলে। রাবেয়া চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। শরীর থেকে ভুরভুর করে লাক্স সাবানের সুঘ্রাণ বেরুচ্ছে। কতদিন পর ভালো করে গোসল করলো সে! মাথায় জড়ানো গামছাটা খুলে দিতেই ভেজা চুলগুলো কোমর পর্যন্ত এসে নামলো। গোসল করে শরীরটা হালকা লাগছে তার। নরম রোদে আরাম করে পা ছড়িয়ে দিয়ে বসে রাবেয়া।

মমতাজ মহলের সাথে টানা এক সপ্তাহ রাবেয়াকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। আজকে ছুটি না দিলে বোধ হয় মরেই যেত রাবেয়া। হাসপাতালে দিনের পর দিন থাকার মতো হ্যাপা আর নেই। ফিরতে পেরে খুব ফূর্তি লাগছে তাই। ভরপেট খেয়ে বারান্দায় বসে ঝিমোতে থাকে সে। দুটোদিন অন্তত নিশ্চিন্তে কাটবে। পিঠে আর কোমরে ব্যথা হয়ে গেছে কেবিনের ওই ছোট বিছানায় শুয়ে। শীত বলে এত কষ্ট করতে হলো, গরমকাল হলে ফ্লোরেই হাত পা ছড়িয়ে ঘুমোনো যেত। আর ঘুমিয়েছেই বা কত! মমতাজ মহল রাতের বেলাতেও ওকে জ্বালাতে ছাড়েননি। রাবেয়ার প্রায়ই মনে হতো একটা টিকেট কেটে ত্রিশালের বাসে চেপে বাড়ি ফিরে যেতে। বহু কষ্টে নিজেকে সামলে রাখতে হয়েছে। ছেলেটাকে কতদিন দেখে না! এ ক’দিনে আরো দুষ্টু আর অবাধ্য হয়েছে নিশ্চয়ই। দু’মাসের বেশি হয়ে গেছে রাবেয়া বাড়ি যায় নি। এই ক’দিন মমতাজ মহল ওকে মন খারাপ করার ফুরসতই দেন নি। আজকে একটু সময় পেতেই কেমন অস্থির লাগছে ছেলেটার জন্য! একবার ফোন করে কথা বলতে হবে বাড়িতে। 

রাবেয়ার ঝিমুনি কেটে যায় মিনুর ডাকে। ধড়মড় করে উঠে বসতেই মিনুর মুখ ঝামটা খেতে হলো ওর। আসরের নামাজের সময় হয়ে গেছে, তবু পড়ে পড়ে ঘুমোতে দেখে বুড়ির মেজাজটা তিরিক্ষে হয়ে আছে। রাবেয়া কথা না বাড়িয়ে অজু করতে চলে যায়।

ঢাকার মতো একটা শহরে এই বাড়িটার সবচেয়ে ভালো দিক হলো এখানে একটা টিউবওয়েল আছে আর সেটা দিব্যি সচল! যখন ফ্রিজের বরফপানিতেও তেষ্টা মেটে না রাবেয়া ছুটে এসে সশব্দে কল চেপে জগ ভরে নেয় আর গ্লাসের পর গ্লাস পানি খেয়ে শান্ত হয়। সেই টিউবওয়েলের পানিতেই অজু সারছে রাবেয়া। ঘুমটা গাঢ় হয়েছে ওর। ফোলা ফোলা চোখমুখ নিয়ে নামাজ পড়তে চলে যায় সে।

-এইটা কী রান্ধসো বুড়ি? মুখে তোলা যায় না!  
-খা চুপচাপ, এইটাই আমার বুবু খায়, তিরিশ বছর ধইরা।  
-তোমার বুবুর তো লবণ খাওয়া নিষেধ, হেয় খাক, আমারে কি তোমার বুবু পাইছো?  
-রাজার বেটি! মরতে আইছোস ক্যান তাইলে, বাড়িত যা!

বিকেলে চা নাস্তার পর আর তেমন কোন কাজ থাকেনা ওদের। শুধু রাবেয়া মমতাজ মহলকে ঘড়ি ধরে ওষুধ খাইয়ে দেয় ঘন্টায় ঘন্টায়। বাকি সময় দুজনেই ঝাড়া হাতপা। মোড়া পেতে করিডোরে বসে থাকে ওরা। মাঝেমাঝে রাবেয়া হাওয়া খেতে ছাদে যায়। গাছে পানিও দেয়। ছাদ ভর্তি হরেক রকম ফুলগাছের টব। এখন চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা আর কসমস ফুটে আছে। ভুঁই চাঁপা, নাইটকুইন, কাঁটামুকুট, পাতাবাহার এরাও ছাদবাগানের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় সময়মতো। রাবেয়া হাঁপিয়ে যায় পানি দিতে দিতে। না দিয়েও উপায় নেই, রোজ সিঁড়ি ভেঙে ছাদে ওঠা মিনুর কম্ম নয়। এজন্যই গত এক সপ্তার অযত্ন চিহ্ন রেখে গেছে গাছগুলোতে। 

রাবেয়া ঘুরতে ঘুরতে আশেপাশের বিল্ডিং এর লোকজনকে দেখে। মজাই লাগে ওর। কিন্তু একটু পরেই হয়তো মিনু খালার ডাক শোনা যায় সিঁড়িঘর থেকে। ‘বুড়ি মরেও না’ -রাগে গজগজ করতে করতে রাবেয়া নিচে নেমে আসে। মিনু সারাক্ষণ ওকে কাজে ব্যস্ত রাখতে চায়। ঘন্টায় দু’বার ওর সাথে ঝগড়া না করতে পারলে দিনটা কেমন পানসে লাগে মিনুর! 

এই বাড়িটা অন্যরকম। পেছনের দিকটা গাছপালায় ছায়াময়। মমতাজ মহল যখন সুস্থ ছিলেন তার বহু আগে থেকেই তার বাগানের ভীষণ শখ ছিল। নিচতলায় বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গায় আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা গাছ লাগিয়েছেন নিজ হাতে। তার হাতে জাদু ছিল, যাই লাগাতেন ফুল ফলে ভরে থাকতো। এই ঢাকা শহরের মাঝখানে বসে বাড়িতে হাঁস মুরগীও পেলেছেন মমতাজ মহল। 

-গরু ছিল না? গরুর দুধ বেচলে আরো কত টাকা হইতো। 

রাবেয়া ইচ্ছে করেই মিনুকে এসব প্রশ্ন করে। মিনু নীরবে হাসে। মিনু আরো অনেক গল্প শোনায় ওকে। মমতাজ মহলের দুই মেয়ে, তারা স্কুলে পড়ার সময়ই তিনি বিধবা হন। বয়স তখন ত্রিশ কি বত্রিশ। মিনু দেখেছে কিভাবে ওই বয়সের একটা মহিলা নিজেকে চারপাশের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাঁচিয়ে সংসারটাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারে। বাড়িটা মমতাজ মহলের নামেই তৈরি করে গিয়েছে তার স্বামী। একটা বড় স্বস্তির ব্যাপার ছিল এটা। 

-আচ্ছা বুড়ি, খালুর নাম কি শাহজাহান আছিলো? 
মিনু কটমট করে তাকায় ওর দিকে। 
-না বাড়ির নামটাও তো মমতাজ মহল রাখছে…তাই জিজ্ঞেস করলাম। 

রাবেয়ার ফিচলে হাসি দেখে মিনুর গা জ্বলে যায়। তার জীবনের প্রায় তিরিশটা বছর এই বাড়িতে কেটেছে। মমতাজের কাছে সে পরিবারের একজনের মতোই। বাড়ির মালিক মমতাজ হলেও সংসারের সবকিছুতে এতকাল ধরে মিনুর একটা প্রচ্ছন্ন আধিপত্য চলে এসেছে। এসবের গল্পও তাই ফুরোতে চায় না। রাবেয়া এখানে এসেছে গত বছর, তার কৌতুহলেরও যেন শেষ নেই। কাজ ফেলে রেখে প্রশ্ন করে করে গল্পের গভীরে ঢুকতে ভালোবাসে মেয়েটা। একটু পর মিনুর বকা খেয়ে গল্পের তাল কেটে যায় আর যে যার কাজে ফিরে যায়। 

রান্নাঘরের সাথে লাগোয়া আরেকটা বারান্দা, সেখানে বসে রাবেয়া কুটাবাছা করে। আর মিনু খালা ছানি পরা চোখে রান্না করে। এই বিস্বাদ রান্না রাবেয়া বাধ্য হয়ে খায়। মাঝে মাঝে খালাকে খোঁচা দিতেও ছাড়ে না। 

-এইটা কী রান্ধসো বুড়ি? মুখে তোলা যায় না! 
-খা চুপচাপ, এইটাই আমার বুবু খায়, তিরিশ বছর ধইরা। 
-তোমার বুবুর তো লবণ খাওয়া নিষেধ, হেয় খাক, আমারে কি তোমার বুবু পাইছো? 
-রাজার বেটি! মরতে আইছোস ক্যান তাইলে, বাড়িত যা!

ধমক খেয়ে রাবেয়া খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসে। তাতে মিনুর মেজাজ সপ্তমে ওঠে। হাতের কাছে যা পায় ছুঁড়ে মারে। রাবেয়া গা বাঁচিয়ে ছুট লাগায়।

দুই

মমতাজ মহল চৌধুরী আধো ঘুম আধো জাগরণে মেয়েদের গল্প শোনেন। কিসের এত হিসেব নিকেশ করে ওরা? তিনি কান পাতার চেষ্টা করেন কিন্তু একটা ঘুমঘুম ভাব তাকে স্বপ্ন কিংবা গোলকধাঁধার ভেতর আটকে রাখে। ডাক্তার বলেছে তার ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স আছে তাই এই ঘোর সহজে কাটে না। 

মমতাজ বেগমের শরীর বেশি খারাপ হলে তার নিজের কাছে ভালোই লাগে। মেয়েরা ফোন করে বারবার খোঁজ নেয়। এবার শরীর খারাপটা একটু বাড়াবাড়ি রকমের হয়ে গেছে। সাথে সাথে মিরপুরে খবর দিতেই ভাইয়ের ছেলে রুহান চলে এসেছে। বড় মেয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে পরশু রাতে এসে পৌঁছেছে। আর ছোটজন এসেছে গত সপ্তায়। ওর হাজব্যান্ড নাকি আজকে রাতের ফ্লাইটে এসে পৌঁছুবে। সবার আগমনে বাড়িটা গমগম করছে। অন্যসময় একটা পোড়োবাড়ির নির্জনতায় দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। 

চারপাশে চোখ বুলিয়ে রাবেয়াকে খোঁজেন মমতাজ মহল। কোথায় গেল হতচ্ছাড়িটা! এখন তাকে বেডপ্যান কে এগিয়ে দেবে? ঘরভর্তি লোকজন। তিনি হাত দিয়ে ইশারা করতে চান। শরীরের পেশীগুলো অসহযোগ করে, তিনি রাবেয়াকে ডাকতে থাকেন। গোঁ গোঁ শব্দ ছাড়া গলা দিয়ে আর কিছুই বেরোয় না। কেউ লক্ষ্য করছে না তাকে। এমন পঙ্গু জীবন নিয়ে বিষণ্ণতার চূড়ান্তে পৌঁছে যাবার পর একটা আশ্চর্য নির্লিপ্ত ভাব চলে আসে। মমতাজ মহল এখন সেই দশায় আছেন। অন্য সময় হয়তো অভিমান হতো। কিন্তু আজকাল এসবের উর্ধ্বে চলে গেছেন তিনি। 

মিনু প্রায়ই কান্নাকাটি করে এই ঘরের কোণে বসে। রাবেয়া ওকে ধমক দিয়ে থামায়। একদিন সবাইকেই মরতে হবে, কেঁদে কী হয়-এসব বলে মিনুকে বোঝায়। মমতাজ ওদের কথোপকথন শোনেন। শুনতে ভালোই লাগে তার । শুধু মিনুর এই কান্নাটা মাঝেমাঝে তাকে বিব্রত করে দেয়। বিয়ের পর এ বাড়িতে এলে মমতাজ মহলের শাশুড়ি ঘরের কাজের জন্য মিনুকে এনে দেন। তারপর থেকে এই মানুষটা বলতে গেলে জীবনের পুরোটাই মমতাজ মহলের সংসারের পেছনে কাটিয়ে দিয়েছে। বিনিময়ে কিছুই পায় নি। তাদের ছোট মেয়েটা তো মিনুর কাছেই বড় হয়েছে। তিনি শুধু পড়াশোনাটা দেখতেন। কারণ ততদিনে মমতাজের স্বামী মারা গিয়েছেন আর তাকেও পুরোপুরি চাকরিতে মন দিতে হয়েছে। চারপাশের মানুষেরা শেয়ালের মতো ওঁত পেতে থাকতো। মমতাজ মহলের এখনো মনে হয় মিনুই সত্যিকার অর্থে তাকে আগলে রেখেছিল সেই কঠিন দিনগুলিতে। 

আজকাল খুব পরিতাপ হয় এসব মনে করে। মিনুর নামে কিছু রেখে যেতে পারলেন না তিনি। উইলটা নিয়ে বসার মতো অবস্থা নেই তার। গত দু'মাসে একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন। এই মাসেই আরেকবার ডায়ালাইসিস করাতে হয়েছে। তার সাথে আছে এই লবণের ইমব্যালেন্স। বেশিক্ষণ কিছু ভাবতে পারেন না, মাথা কাজ করে না তার। ভাবনা থেকে সহজেই মুক্তি মেলে তাই।

তারপরেও মাঝেমাঝে অনুভূতিগুলো খুব সূক্ষ্ম হয়ে যায়। এই যেমন এখন দেয়াল ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটাটা যেন টিকটিক করে কথা বলে যাচ্ছে তার সাথে। আর তারপরই ঘরটা কেমন নিস্তব্ধ বলে মনে হয়। মমতাজ মহল চারপাশে চোখ রাখেন। কেউ নেই কেন! এত নীরবতা বড্ড অস্বস্তিকর। একটু নড়েচড়ে শোয়ার চেষ্টা করেন তিনি। তখনই মনে হল ঘরে কেউ এসেছে। আবছায়া আলোয় ঠাহর করা মুশকিল। তবু চোখ রাখলেন সেদিকে। 

-বুবু…

ডাকটা মিনুর মতো শোনালো। মমতাজ মহল নিশ্চিত হলেন। রাগ হলো তার, বাড়িটাকে এরা প্রেতপুরী বানিয়ে রেখেছে। ইশারায় বললেন আলো জ্বালাতে। এই ডিম লাইটের মৃদু আলো ভীষণ একঘেয়ে। রাবেয়ারই বা আজ কী হয়েছে কে জানে! কাজে একদম মন নেই ওর। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর একটা উড়ু উড়ু ভাব চলে এসেছে তার মধ্যে। সবই হচ্ছে বাড়ি যাওয়ার পায়তারা। 

কতক্ষণ কেটে গেলো তার হিসেব রাখতে পারেন না মমতাজ। শুধু চোখ মেলতেই হুড়মুড় করে আলো এসে পড়ে চোখমুখে। কয়েক সেকেন্ড লাগলো সেটা সয়ে নিতে। কেউ এগিয়ে এলো কাছে। মমতাজ মহল গায়ের ঘ্রাণ নেন। তবু বুঝতে পারেন না। প্রায় সাথে সাথেই মাথার কাছের বালিশটাকে উঁচু করে দিল কেউ। তারপর মুখের ভেতর ওষুধ দিয়ে পানির গ্লাসটা ঠোঁটে ছোঁয়ালো। এটা রাবেয়া। মেয়েটা ঘড়ির কাঁটার মতো ওষুধ দিয়ে যায় তাকে। মাঝেমাঝে রাবেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে হয় তার। কিন্তু পারেন না, তিনি বড় অক্ষম। 

মুখ দিয়ে একটু শব্দ বেরিয়ে যাওয়ায় মেয়েটা দাঁড়িয়ে পড়ে। মমতাজ মহল তাকে আঙুলের ইশারায় কাছে ডাকে। রাবেয়া তার গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। তারপর মুখ ভার করে চলে যায়। ওর এখন সময় নষ্ট করার মতো অবসর নেই।

বাইরে তখন সবাই মৃতদেহের গোসলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাবেয়ার ডাক পড়ে সেখানে। সে ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। লাশের কাছে বসে একটানা ফোঁপাতে থাকে। কেমন সুস্থ একটা মানুষ হুট করে মারা গেলো! ঘন্টাখানেক আগেও যে ছিল সে এখন নিথর হয়ে শুয়ে আছে! ওর মোটেও বিশ্বাস হয় না, বার বার ছুঁয়ে দেখে শরীরটা। 

সবাই গম্ভীর হয়ে আছে। কেউ মুখ ফুটে বলছে না তবু প্রত্যেকে মনে মনে একটা মৃত্যুর অপেক্ষায় ছিল। একটা মৃত্যুর ঘ্রাণ ছিল এ বাড়িটায়। কিন্তু মিনুর কথা কেউ কল্পনাও করে নি। তাতে কী! যমদূতের সিদ্ধান্ত কি কেউ টলাতে পারে? 

রাবেয়া থেকে থেকে কেঁদে উঠছে। ওকে কেউ সান্ত্বনা দেয় না। রাবেয়া ডাক দেয়- এই বুড়ি, চোখ খোল! চোখ খোল! 

মিনুর বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে। ওর ছেলেরা গ্রাম থেকে এসে পৌঁছুতে রাত ভোর হয়ে যাবে। খবর পাঠিয়ে দিয়ে যেন দায়িত্ব শেষ সবার। তাই নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শুধু রাবেয়া ঠায় মেরে বসে থাকে। ওর আহাজারিতে দুয়েকজনের চোখেমুখে বিরক্তিও ঝরে পড়ে। আর কেউ বলে ওঠে - আহা কাঁদুক না, কেউ অন্তত কাঁদুক। 

নির্ঘুম শীতের রাত আরো গভীর হয়। মমতাজ মহল কান পাতেন। পাঁচিল গড়িয়ে ঝরে পড়া শিশিরের টুপটাপ শব্দটাও যেন শুনতে পান তিনি! সে শব্দ ছাপিয়ে মনে হয় বাইরে কেউ কাঁদছে । এভাবে কে কাঁদছে এমন অসময়ে? কেন কাঁদছে এমন কান্না? নাকি সবটাই বিভ্রম! বুকটা খাঁ খাঁ করে ওঠে। রাবেয়া বা মিনু কেউ আশেপাশে নেই। গলাটা শুকিয়ে আসে। লেপের ভেতর কুলকুল করে ঘামতে থাকেন তিনি। জগদ্দল পাথরের মতো একটা ভয় চেপে বসে তার বুকের ওপর।  

লেখা পাঠান- chilekothasahitto@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠা বেস্ট সেলার বইসমূহ

‘নক্ষত্রের খোঁজে’ প্রতিযোগিতা ২০২২ এর নির্বাচিত বই