চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

“রিবর্ন অব এন আনসাং হিরো – The Mitch Lucker memorial Show 2012”



“রিবর্ন অব এন আনসাং হিরো – The Mitch Lucker memorial Show 2012”
রিয়াজ মাহমুদ

মেটালের অভ্যন্তরীণ এক জনরার নাম হচ্ছে “ডেথকোর”। মেটালকোর এবং ডেথ মেটালের ফিউশনকেই ডেথকোর হিশেবে ধরা হয়। লো গ্রাউল, হাই-পিচে স্ক্রিম, প্রচলিত গ্রান্ট, গ্রাইন্ড ও স্ল্যামিংসহ ভোকালের হরেকরকম কলাকৌশল থাকে এই জনরায়। ইন্সট্রুমেন্টের ক্ষেত্রে, গিটারের লো টিউন এবং ব্রেকডাউনের সঙ্গে ডেথ মেটাল ও মেটালকোরের রিফ বাজিয়ে থাকেন যন্ত্রশিল্পীরা। অন্যান্য ব্যান্ডগুলোতে যার কদাচিৎ চেষ্টাই দেখা মেলে। শীর্ষস্থানীয় কোনো ডেথকোর ব্যান্ডের নাম নিতে চাইলে; আপনাকে অবশ্যই বলতে হবে, সুইসাইড সাইলেন্সের গৌরবোজ্জ্বল লেজেন্ডারির কথা। আমার টেস্ট এবং রিকোয়্যারমেন্ট অনুযায়ী, জনরাটা মারাত্মক হেভি! ফলে, সুইসাইড সাইলেন্স ব্যতীত অন্য কোনো ডেথকোর ব্যান্ড শোনার স্পর্ধা, আমার কান এখনও পায়নি।

তবে মেলানকোলি হচ্ছে, ব্যান্ডটাকে আমি চিনেছি তাঁদের প্রয়াত ভোকাল মিচ লুকারের মেমোরিয়াল শো-তে। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এই কনসার্টে, অকাল মৃত্যুবরণকারী তরুণ মিচ লুকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাঁর পরিবারকে কিছু আর্থিক সহায়তা দিতে, সুইসাইড সাইলেন্সের মোট আঠারোটি গান পারফর্ম করেন হালের জনপ্রিয় সব ব্যান্ডের ভোকালরা। হোয়াইটচেপলের ফিল বোজম্যান, রিকি হুভার, জনি প্লেগ, মাইস এন্ড ম্যানের এক্স ভোকাল অস্টিন কার্লাইল, ম্যাডভেইন ও হেলইয়ার চ্যাড গ্রে, ল্যাম্ব অব গডের র্যান্ডি ব্লাইথ এবং ইঞ্জিন নাইন নামক স্বয়ং মিচ লুকারের গলায় প্রিরেকর্ডেড এক গানসহ, কম্পাইল করা হয় পুরো ভিডিও অ্যালবামটি। কিন্তু আয়রনি এটা যে, একার পক্ষে, মিচের হেভিনেস কখনো কানের কন্ট্রোলে আনা সম্ভব না হলেও, তাঁর মেমোরিয়ালের প্রতিটি গানের কভার আমি শুনেছিলাম মন্ত্রমুগ্ধের মতো! এতগুলো সুবিদিত প্রতিভাবান সঙ্গীত শিল্পীর কণ্ঠে ঝরে পড়া আগুন, ব্রাশফায়ারের শব্দ, কামানে দাগানো গোলার গন্ধ গোটা একঘণ্টা বিশ মিনিট আপনাকে তন্ময় রাখতে বাধ্য!

দীর্ঘকায় জনি ডেভিকে নিয়েই যদি বলি, শ্রোতাদের পানে তিনি যখন ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন, 'Destruction of a statue'  ট্র্যাকের লিরিকে জমানো সমস্ত ক্লেদ ও শ্লেষোক্তি, তিনি যখন গাইছিলেন, "...Now you're lost, smashed to pieces by this hammer I have..." দর্শকদের তখন চামড়া খুলে চর্বি গলার মতো দশা, আমি নিজেও রীতিমত এড্রেনালিন রাশে তলিয়ে যাচ্ছিলাম, কতবার যে শুনেছি তাঁকে, অথচ উদ্দীপনায় কোনো ফারাক নেই, সেই একই থ্রিল আর রোমহর্ষকতা আমাকে চিবিয়ে খায় প্রত্যেকবার।

তাঁর পরে এলেন, আরেক নিউক! দ্য ডিভাস্ট্রেড, ফিট ফর এন অটোপসি ও অবলিকের এক্স ভোকাল গ্রেগ উইলবার্ন, গানের প্রারম্ভেই তিনি এক আশ্চর্যরকম তেজদীপ্ততার সহিত ঢুকলেন স্টেজে, উন্মাদনায় নেচে গেয়ে; ডুবো তেলে ভাজলেন যেন প্রতিটি শ্রোতাকে, প্রাণবন্ত এই গায়ক তো পারছিলেন না গোটা মাইক্রোফোনটাই গিলে খান! খ্যাপাটে ঘোড়ার মতো একবার লিডের নিচে তো আরেকবার বেজের কাছে শুধু ছুটে বেড়াচ্ছিলেন হন্যে হয়ে। 'Distorted thought of addiction'  টাইটেলের যথার্থ বাস্তবায়নই দেখতে পাচ্ছিলাম তাঁর পাগলামিতে! বড়ো নয়নাভিরাম ঐ হাইপার।

এদিকে, তৃতীয় ট্র্যাক, 'Ending is the beginning'  গাইতে এসে ভালোই ধকল পোহাতে হয়েছে ব্রুক রিভসকে। ফাইনাল ভার্সের "A victim of high tension, and beat me everyday, for what?"  লাইনটা গাইবার সময়, মুখ চিরে বেরিয়ে আসতে চাইছিলো তাঁর জিভ! অথচ প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো এই বুনো বুলডোজারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাতে, তিনি যেন পিচের মতো শ্রোতাদের পিষে যেতেই তৎপর ছিলেন বেশি।

একই কারখানার গোলাসহ, চার নাম্বার গানটি নিয়ে মঞ্চে হাজির হলেন রিকি গ্রুভ। কৃশ গড়ন, সারা গায়ে ট্যাটুর ছড়াছড়ি, ফুঁ দিলেই উড়ে যাবার অবস্থা, আমি ভাবলাম এ আর কী গাইবে! কিন্তু হায়, গ্রান্ট দিয়ে তিনি যখন গাইতে শুরু করলেন, "You're worthless, you pleague humanity..."  উন্মাত্ততায়, আমার তখন কাঁচা মানুষ খেয়ে ফেলার জোগাড়! মর্টারের নলি থেকে যেন অবিরাম গুলিবর্ষণ চলছিলো আমার মগজে, গোটা অ্যালবামের মধ্যে, এই ট্র্যাকটাই আমার সবচে ফেভারিট। গায়কীর কারিগরি নিয়ে কী বলবো! তাঁর গলায় নিশ্চয়ই স্ক্রিমিংয়ের কোনো নব বসানো আছে, যেটা আবার বহুবিধ মেকানিজমে ইকিউ করা, নতুবা ইচ্ছেমত গ্রান্ট এবং গ্রাউলের এত মসৃণ আপডাউন কিভাবে সম্ভব? ওভারঅল এক অপরিণামদর্শী আর্টিস্ট তিনি! শ্রোতাদের কান যেন তাঁর প্লে গ্রাউন্ড, তিনি খেলে যাচ্ছিলেন শুধু। প্রতিটি ব্রেকডাউনে লাফিয়ে উঠে, নাজেহাল বানাচ্ছিলেন ধৃষ্ট দর্শকদেরও। নারকীয় কাণ্ড লাগছিলো সেসব দেখতে! রাইট হ্যান্ডি এই সিঙ্গার লেফট হ্যান্ডে ফায়ারিং করতে করতে, 'Bludgeoned to death'  ট্র্যাকে সবাইকে জানাচ্ছিলেন,
"Your curses with thoughts and narration for what I say
(Hope you listen)
Your cursed with thoughts and narration this is what you get
(I made you smile)
And doctors won't be able to recognize your fucking face!"

এরপর দ্য ক্লিনজিন অ্যালবামের গান, ‘Unanswared’  কভার দিতে স্টেজে ঢুকলেন ফিল বোজম্যান, তাঁর গায়কীর কায়দাগুলো আবার বিশেষ শারীরিক শিক্ষা মেনে চলছিলো, যেমন : স্টেজে ওঠেই লক্ষীমন্ত চেহারার এই বালক প্ল্যাটফর্মে পয়তাল্লিশ ডিগ্রী পা ভেঙ্গে দাঁড়ালেন, আমি ভাবলাম গ্রেনেড ফেলবে নাকি রে বাবা! কিন্তু হায়! আমাকে ভুল প্রমাণ করে, মুহূর্তেই, তিনি এসিড বৃষ্টির বন্যা বইয়ে দিতে লাগলেন পুরো ফ্যানবেইজে, স্ল্যামিং ও লিরিকের সুরত শুনে মনে হচ্ছিলো, গান নয়, তিনি চপেটাঘাত করছেন সবার মুখে! এতটাই নৃশংস তাঁর আওয়াজ, সাত আট স্কেলের ভূমিকম্পও সেদিন বোধকরি ধরা পড়েছিলো রিখটারে! শ্রোতা বন্ধুরা যখন তাঁর সাথে তাল মিলিয়ে গাইছিলেন,

“Where is your god?

Where is your god? " 



সারকাস্টিক এই শিল্পী তখন কেন্দ্রচ্যুত স্যাটেলাইটের বিদ্রূপাত্মক অভিনয়ে মত্ত, বড়ো রসিক মনে হয়েছে তাঁকে। অ্যালবামে এটা আমার সেকেন্ড ফেভারিট ট্র্যাক।

ওদিকে, আরেক গায়ক, মাইক টেরি তো ‘Girls of glass’  গাইতে এসে অডিয়েন্স দ্বারা বস্ত্রহৃতও হোন জনসম্মুখে! স্টেজে পড়েই সেয়ানা এ-যুবক চনমনিয়ে আচমকা ঢুকে গেলেন ক্রাউডের ভেতর! যেন বাঘের মুখে হামলে আসা খরগোশের মতো সবাই ছিঁড়ে ফুঁড়ে নিচ্ছিলো তাঁকে। মাইক অবশ্য নিরাপদ ছিলেন, কেউ আহত হননি এতে। তবে মজার ব্যাপার হলো, মাঝ থেকে তাঁর গায়ের টি শার্টটা উধাও হয়ে যায় আর কী!

এইভাবে, একের পর এক পারফর্মার আসছিলেন, আস্কিং অ্যালেকজান্ডারের ড্যানি ওর স্নোপ, জনি প্লেগ, ক্যামেরুন অ্যারন, বুর্ক ভ্যানর্যা টেল, অ্যানথনি, টিম ল্যাম্বেসিস, হের্নার এডি, ক্রমান্বয়ে গাইলেন, The prince of beauty, No pity for a coward, Disengage, No time to bleed, Smoke, wake up আর Slaves to Substance এর মতো ঝড়ো বাতাসের দমকাযুক্ত সব ট্র্যাকগুলো! তন্মধ্যে, তেরো নাম্বারের 'March to the black crown' আপাতত আমার রিংটোনে বাজে। ট্র্যাকটা ম্যাজিকাল, জীবন সারে ভরপুর এবং রহস্যময়। অস্টিন কার্লাইলের ‘O.C.D’ তেও যা দৃষ্টিগোচরে বিভ্রাট ঘটায়নি, লাফাঙ্গা এই বুড়ো সাড়ে তিন মিনিটের গানে দর্শকদের মাঝে জলাতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, খুবই ট্রিকি সিঙ্গার তিনি, থিউরি বজায় রেখে গাইছিলেন নানান ভঙ্গিতে, যতরকম পদ্ধতি আছে; সবই ফুটে ওঠছিল তাঁর গায়কীতে, সম্ভাবনাময় ভোকালদের জন্য এই ট্র্যাকটা দারুণ এক লেসনও বটে! কনসার্টের শেষের দিকে, শ্রোতাদের পৈশাচিকতায় যেন ভাটা না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রেখে গাওয়া হলো সেপালচুরার Roots bloody roots, ব্ল্যাক সেবাথের Die young গানগুলোর মতো ঐতিহাসিক সব সৃষ্টি।

এবং ফাইনালি, সুইসাইড সাইলেন্সের সর্বাধিক জনপ্রিয় গান 'You only live once'  নিয়ে স্টেজে ওঠলেন ল্যাম্ব অব গডের সুযোগ্য কর্ণধার, থান্ডারবোল্ট, র্যা ন্ডি ব্লাইথ। পিটে তখন ম্যাসাকার লেগে গেছে। থরের মিউলনিয়ার যেন র্যা ন্ডির কণ্ঠ থেকে বজ্রপাত করছিলেন অডিয়েন্সদের উপর, টারবাইনে গাঁজার ফুল ঝরে পড়ছিলো মাটিতে, ভক্তদের স্রোতে সেই ঘূর্ণিপ্রপাতে ঢুকে গেলেন র্যা ন্ডি, আর চিৎকার করে গাইলেন, মিচ লুকারের অনবদ্য সেই অমর গীতিকথা,
“Push your care, push your burdens aside
Erase everything inside and leave just one thing on your mind.
You only live once so just go................! (Go!)”

মন্তব্যসমূহ

  1. মেটাল ঘরানার মিউজিক নিয়া আগে কোন লেখা পড়ি নাই বাংলায়। পইড়া ভালো লাগল। লেখক আসলে উক্ত লেখার মাধ্যমে কী প্রকাশ করতে চাইলেন বুঝতে পারি নাই। সমালোচনা তো না, অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ তবে? লেখকে শুভেচ্ছা।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

      মুছুন
    2. মেটাল আসলে আমার কাছে ট্রিটমেন্টের মতো। আর এই অ্যালবামটা ঐ পথ্যের প্যারাসিটেমল! ফলে অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ বা মেটাল মিউজিকের প্রচারণা দিয়ে ডিপ্রেশনকে দমনের উপায় জানানোর এক ভলান্টারি ওয়ার্কও ধরা যাইতে পারে রিভিউটাকে।

      মুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠা বেস্ট সেলার বইসমূহ

‘নক্ষত্রের খোঁজে’ প্রতিযোগিতা ২০২২ এর নির্বাচিত বই