সাম্ওয়ান রিংগস্ সাম্ওয়ান ব্যাক্... | শত্তুর মিত্তির
পাতি প্রেক্ষাপটে অস্তান্ত, মুখ্য চরিত্রে এক অসুস্থ অসামাজিক যে সবুজ সুতো খুব ভালোবাসে, অসুখটা হল মোহ আর সুখ'টা..ভালোবাসা। শুরুটা হচ্ছে একটা চড়ুই'কে দিয়ে যে এইমাত্র উড়ে গেলো জানালার পেছনে ওই নারকেল গাছটার ডগা দিয়ে। যাই হোক..গাম্বাট অভিনেতা এখন তার জীবনের সেরা কোটেশন পড়ছে..'টোব্যাকো কজেস্ ক্যানসার'.., পলিথিন প্যাকেটের কোনটা দাঁতে খুবলে দিয়ে নিজেই বলে ওঠে.."ওই তো একই কথা, ক্যানসারই তো মোক্ষ..ওফ্..হোয়াট্ অ্যা ফ্যাগি মোমেন্ট্ ব্রো..!" এরপরের হাসিটা শুনলে সাইকিক্ রোগীর কথা মাথায় আসে..!
...
অঙ্ক ১
"কখন তোমার আসবে টেলিফোন"-বাজানো মোবাইলঃ ক্রিং ক্রিং..!
(অচেনা নাম্বার..। তুলবো..? দুঃশ্যালা.., থাম্ব কোনদিকে সুইপ্ করে যেন..? ভাগ্যিস..!)
আকস্মিকি'তে ফাজিল প্রাক্তনীঃ কি হে.. এক্স'..? ক্যামন্ চলছে দিনকাল..?
(বুক ধড়ফড়ানি আক্রান্ত মূর্খ...আঙুল ও বিড়ি..দুটিই ফ্যাকাশে.. বেবাক চুপ..)
কিয়ৎ কনফিউজড্ প্রাক্তনীঃ আরে.., তোমার মতো সাবেক জগদ্দল'কে কনফার্ম করার দরকার নেই..; আহাঃ কি রাবিন্দ্রীক কলার-ট্যিউন্ মাইরি.."আমারে পড়িবে মনে কখন..?" হেঁ হেঁ.. কলিকালীন ভ্যালেন্টাইন..!
বহু-রক্তাক্ত ফসিল-দেবদাস গলার ভেতর আরো দুটো আব গিলে নিলে কেবল..)
অপ্রস্তুত হতে হতেও আপাত কনফিডেন্স এনে ফেলা প্রাক্তনীঃ কবিবর..! পিলিজ্, মৌন থেকো না নটবর..! হেব্বি 'নো-কমেন্টস্' প্রাক্টিস করেছো তো..! ওয়্যে.. (শাঃ..) নটঙ্কি..!
(ভাবুক আহতের মতো পুরোনো প্রেমিকার স্কিপ্ করে যাওয়া 'শালা'টা মনেমনে ঠিকঠাক লাগিয়ে নেয় দুঃখবিলাসী..)
রিডায়াল করে আসবে কিনা ধন্দে বিরক্ত প্রাক্তনীঃ এ-ব্বেশি ভাঁজ মেরোনা বুজলে..! তোমার বাপের সন্তোষে'র রেডিও শুনতে পাচ্ছি..সেই পুঁই-পাই-ফিস্-উউ সহযোগে কলকাতা-ক..? তাছাড়াও..সেই যে খাটারা মডেলের খৈতানের টেবিলফ্যান্..তখন থেকে ঘ্যানঘ্যান কচ্ছে..! বেশি ঢং.., কথা বলছো না ক্যানো গো..?
("গো.." শব্দটা আজও সেরকমই সুরেলা..; একরত্যি আবেগও কম নেই.., বগলের পাশ দিয়ে স্যান্ডো গেঞ্জির ফাঁকে হাতটা গলিয়ে দেয়..তালু দিয়ে দেখে বুকে বিট্-উচাটন..উদুম প্রশান্তিতে গান্ডুর মতো দাঁতকেলিয়ে শুয়ে থাকে, চোখ বুজে ভাবে..আঃ কতোদিন্ সেলফি নেওয়া হয়নি..!)
আরেকটু উপদ্রব নিয়ে আসার চেষ্টায় পরিসান্ প্রাক্তনীঃ ও হে.. এক্স'জন.. বৈরাগ্যে আছেন বুঝি..? তা.. ওসব ছাড়ো নাহয়..; বলি-ই-ই.., কি বলি..? আচ্ছা..আপনার বিরহ কি আমরন..? তা-ও.. ইতিমধ্যে বয়স কতো হলো..? অ্যাতো দিনে তো অস্কারে নোমিনেট্ হওয়ার কথা..! না সত্যিই..এ বিরহ কিন্তু একটা ব্র্যান্ড্..যে যাই বলুক হে..!
(বুকের ভেতর একটা ইয়াব্বড়ো ফ্যাক্টরি দুরমুশ চালাতে চালাতে হঠাৎ যেন থামলো..ছুটির সাইরেন কিংবা শিয়ালের ডাকও হতে পারে..হু-উ-উ-উ..! নেশা কাটার মতো আছাড় এলো মাথায়..কি-ব্যে..খিল্লী করতা অ্যা..!? তবু চুপ থাকে সে..)
অ্যাতোক্ষণ ফোন কাটেনা দেখে আশ্বস্ত ও রগড়ে'প্সু প্রাক্তনীঃ জানো কেষ্ট.., মাঝেমাঝে আমার একটা আকাট কৌতূহল হয়..এই জমানায় দাঁড়িয়ে তুমি এমনি ব্যাকডেটেড্ হলে ক্যামনে বল দিকি..! তুমি কি জিঞ্জারব্রেড নাকি হানিকম্ব..! কি টাল..! আপগ্রেড নেয়না নাকি..? এখন তো মার্শমেলো ফেলে ন্যেওগ্যাট্ চলছে..! হে হে..! আর কদ্দিন অ্যামন থাকবে আশিক-শ্রেষ্ঠ..?!
(নিজের মানুষই তো..আদর আর অপমানের মধ্যে মশারির চাইতে বেশি পার্থক্য নেই..এমনটাই ভেবে বুক চওড়া করতে গিয়ে দেখে..ফণীর মতো সেই বিষাক্ত দিলল্যাগি কলজে গিলে নিচ্ছে অ্যাতোদিনেও..! হতভাগা 'দিলফাটা'-কেষ্ট আর হেলে থাকতে পারেনা.. পিঠের বালিশ ঠিক করতে গিয়ে অসাবধান দীর্ঘনিশ্বাস'টা ককিয়ে উঠলো হঠাৎ..)
উল্টোদিকে একইসাথে স্তম্ভিত ও আচম্বিতে দরদী হয়ে যাওয়া গলায় প্রাক্তনীঃ ওই.., কথা বলছো না কেন গো..? (যে থ্রেটটা দেবে ভেবেছিলো..সেটা আপনাআপনিই অনুনয়ে পৌঁছলো..) ফোনটা কি রেখে দোবো..?
[ ইন্টারভ্যাল্..]
এইমাত্র আকাশবাণী'র খবর শেষ হল, শিক্ষিত গরীব বাপের পাড়ার ঠেকে চা-পানের সময়। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দরজার সামনে থুতুর মতো শ্লেষ ফেলে দিয়ে গেলো.."হোপলেস্ একটা.., ছিঃ!" কারেন্ট'টাও চলে গেলো হঠাৎ..; ফোনের দু'তরফেই অন্ধকার নেমেছে.., চারধার বেয়াক্কেলে চুপ..! ]
...
অঙ্ক ২
স্থির কন্ঠ..অনেক ভালবাসা আর অল্প প্রকাশ মেশানো..যেমন ভাতে অনেকটা নুন আর ন্যূনতম ডাল..আলুভাতের মতো আনুপাতিক হাসিতে..আজও প্রেমিকঃ তুমি বলছো..তাই শুনছি..। বেশ কথা বলতে পারো তো..! তবে..আমিও একদিন ধুরন্ধর বক্তা ছিলুম, মনে আছে..? তবে বাচাল নই..! এখন প্রায় নির্বাক বটে..তাও একশো কথাকে এককথায় সামারাইজ্ করতে এখনও পারি..!
(কথাহারা থাকে ছেড়ে যাওয়া প্রেয়সী..)
দেওয়ালের বুকে ঠেক দিয়ে অর্ধবৃত্ত গড়তে থাকে প্রেমিকের হেলদোল..; কেমন কেমন করে অসংযমী হয়ে পড়ছে প্রত্যেক রোম থেকে মরমে, ঘুপচি কোনের দেহাতি আয়নায় আঁধারলিপ্সু বিম্বটা হঠাৎ দেখতে পায় সে.., উফ্..কি কুৎসিত! চকিতে কুঁকড়ে যায় সত্তা, ফের বিনম্র হয় বিপ্লবী..। প্রসঙ্গে ফিরে আসে আজও প্রেমিকঃ দিনকাল আর ক্যামন চলবে, তোমাদের উল্টোটাই বোধয়, নইলে..তাচ্ছিল্য করে এই বন্য সুখটা কি পেতে..? আর কাজের কথা বললে, পূর্বসূরী'র খিস্তি আর রক্ত চুষে খাচ্ছি.., কি করি বলো..!
(হয়তো দামী মোড়ার ওপর নিস্পন্দ ও নিশ্চুপ থাকে প্রিয় পলাতকা)
অদ্ভুত এক কষ্ট আর ভালো লাগায় বিভোর হয়ে পড়ে ধোঁয়াখোর..। ভাবে.. অপেক্ষা জয়ী হয় তাহলে..যদিও কিংকর্তব্যবিমূঢ়তাই যথার্থ পরিণতি। পেটে কতো কথা অম্বলপুষ্টিতে জর্জর হয়, তবু নীরবতা অবলম্বী হওয়াই শ্রেয়। তাই..অ্যাতো প্রশ্নের উত্তরে পুনরায়..আজও প্রেমিকঃ হুম্-ম্-ম্.. আমি জগদ্দল রয়ে গেলাম, তোমরা স্রোতের মতো এগিয়ে গেলে, কি করি, বেনোজল আমার বড়ই না-পসন্দ, তাই তীরে তীরে হাঁটি। তবু বলো..যদি আমিও বয়ে যেতাম..প্রতিকূলতা মাপত কে? সময় পালটে গেলো, তোমরা বদলে নিলে স্ব-যাপন, মানিয়ে নিলে..। কিন্তু কতটা বদল, কতটা আপোস.., কিভাবে ছুঁটে গেলে আগামীতে, কত দ্রুত, কত দূরে চলে গেলে..কে বুঝলো বলো..? জীবাশ্মের মতো ভারী বলেই তো.. তোমাদের অ্যামনতর অভিযোজন চাক্ষুষ করেছি আমি; তোমার পরিবর্তনের অদ্বীতিয় প্রমান তো শুধু আমিই..! কি বলো..!
(নেপথ্যে আপিসফেরা বরের কলিংবেল হয়তো, তাও শূন্যদৃষ্টিতে মিউট্ থাকে বিবাহিতা বিলাভেড্..)
বহুদিন পর কথা বলতে বলতে ঘরকুনো হঠাৎ কল্পনায় বোঝে..সে আস্তে আস্তে জাদুকর হয়ে যাচ্ছে..,সামনে উছল এক তরুনী বিনীত হয়ে পড়ছে ক্রমশ, চোখের পাতা তুলতে কষ্ট হচ্ছে ওর..যেন ভারী তুষার পড়ছে পালকে, মেয়েটির মুখে শ্রদ্ধা আর বিস্ময় জমা হচ্ছে..প্রজ্ঞার দম্ভে ফুলে উঠছে কিশোরের বুক..! স্বরের মধ্যে নেমে আসছে সুর..তারই দোলনে-পতনে এতদিনের বুঝতে-না-দেওয়া অভিমানগুলো গুঁজে দেয় সে আরও দুর্বোধ্য ঢঙে.., বক্তা হতে যার একঘর লাগে..সেই আমৃত্যু-আজও প্রেমিকঃ কতো কি বলে গ্যালে তখন থেকে..! আর আমি ভাবছিলাম.. 'জীবনস্মৃতি' না পড়লে কথা বলতে বা কথা শুনতে আর শিখলাম কই..! তোমার আকাশবাণী' ভাল্লাগে না, অথচ ওটা ছাড়া আমার মহালয়া বড়ো বেরঙ লাগে..; হয়তো সেইজন্যই আমার বুকে বপন করেছি ভূপেন হাজারিকা'র কষ্ট..! তোমরা তাই জানোই না..আদতে মৃত্যুপায়ী'রাই পৃথিবীকে দিয়ে গেছে শ্রেষ্ঠতম জীবনমূখী গান-গদ্য-ছন্দ-সুর..!
তুমি জানোনা মেয়ে..যেদিন তুমি আতরে মেতে আদর পেতে গিয়েছিলে ফুলসাজানো ঘরে..কানে বয়েছিলো সেহেনায়ি.. সেই রাতে আমি বাড়ি পালিয়ে..কতো দৌড় দৌড়..কতো-মাইল্ কাঁটা..আর পিছুডাকে অথর্ব মায়ের "খোকা খোকা" শব্দেরা..! তুমি তো জানোই না.. মেয়ে! ওইদিন তোমার সাথে আমার পরিচয়ের ছ'বছর পুর্তি ছিলো..!
(শ্যেনক্ষুধা বা চাতকপিপাসায় অপেক্ষামান মেয়েটি তখনও মিউট্.., পুরোনো দিনের কিছু অস্পষ্ট স্লেট্ রঙ হয়তো তাকে বিবর্ণ করে যাচ্ছে সমানে..)
অজস্র না-রাখা কথা, হাজারো স্মৃতি'গন্ধের ঘূর্ণাবর্তে আটকে পড়েছে বিরহবিলাসী, নিজেই আর মানছেনা নিজেকে..; দৃষ্টির সামনেও আঙুল জ্বলে যাচ্ছে অচেতনে। যন্ত্রণাবিদ্ধ হতে হতে মাঝে মাঝে খুব বিরক্তিও আসে, এখনটা ঠিক তেমনি, নিভু নিভু লাল অঙ্গার সহ হাতটা গোত্তা খায় অ্যাশট্রেয়.., মরনপ্রিয় ছাইগুলো বিকট গন্ধ মেলে দিয়ে বলে..কথা শেষ করো তা'তাড়ি..। দু্র্বিষহতায় মাথা নীচু রাখে..আজও প্রেমিকঃ অনেক্ষন চুপ আছো..; ডোরবেলটা বেশ কিছুক্ষণ থেকে বাজছে শুনতে পাচ্ছি..। যাও..দরজা খোলো, এক্সকিউজ্ দিও পারলে..বোলো..ঘুমিয়ে গেছিলে আলগোছে.. কানে হেডফোন ছিলো..। সত্যিই..বহুদিন হয়ে গেলো, বলো..! আর কদ্দিন অ্যামন থাকবো..; খুব ভয়ানক প্রশ্ন..! কিন্তু কি করি বলো..; তোমার কাছে যেটা যুগের হিসেব, আমার কাছে কেন জানি পলের ফারাক মাত্র। এই দেখোনা..তোমরা কত কত আপডেট্ পেরিয়ে কি সব মার্শমেলো-টেলো নিয়ে চলো..আমাকে সুদূর অতীতে ফেলে গেছো কবেই, অথচ, আমার শুধু মনে হয়..যেন অনভ্যস্ত ঠোঁট-জিভে এইমাত্র চা খেয়ে এলুম, কোরক-গ্রীবা-বিবর সব পুড়ে গেছে, অ্যাতোটাই বিস্বাদ..যেন..এই তো এইমাত্র সন্ধ্যেয় রূহ্ ছেড়ে গেলে তুমি..!
তবে..অ্যাতো দামী ফোন তোমাদের, তাহলেও আমার হাসি পায় বড়ো..; তুমিও তো চুপ করে গেলে আমার দুটো কথা শুনেই। ক্লিনার'গুলো আদতে ভীষণ বেয়াদব, ওদের ছলনায় ফালতু নিশ্চিন্ত থেকোনা, স্প্যাম পরিষ্কার করেনা কেউই। আর সত্যি বলতে কি..একেই তো জীবন বলে, বৈরী..! নইলে অ্যাতো কথার কি ছিলো বলো, ক্যালেন্ডারের বুকে তুমিও দেখতে পেতে..আজ হয়তো..
আমার কপালে তোমার ঠোঁটের সন্ধি লেখা থাকতো.., মানসী!
আসি..। আবারও বলি..
ভালো হও, সুন্দর হও, বড় হও....
[ইন্টারভ্যাল্ নেই]
....
অঙ্ক ৩
দুপুরের ঘুম ভেঙে গুম হয়ে বসে আছি..; স্বপ্নটা ভাঙলো কি করে.. শুনবে..? মেয়েটা চুপ ছিলো বহুক্ষণ, সে তো জানোই.., কিন্তু ছেলেটা লেকচার্ শেষ করতেই.. সে কোত্থেকে হাই-টাই তুলে শেষে বিশ্রী একটা তুড়ি মেরে বললে.."য়্যে-এ-এ ল'ল্..!!"
.
.
.
আঘাত বা জলের ছিটে ছাড়া ঘুম আর স্বপ্ন..আরেকটা প্যারালাল বাস্তব।।
লেখা পাঠান ই-মেইলেঃ chilekothasahitto@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন