আবার দেখা হবে নাকি | দেবাশিস ভট্টাচার্য
টেরিটি বাজারের পেছনে চিৎপুর রোডের ট্রামলাইনের স্বপ্ন
আমায় এখনো তাড়া করে
একবার ঈদের দিন সকালে একটি সবুজ পাঞ্জাবি পরে
হাঁটছি এমন সময় ঠিক ঐ জায়গায় এসে
কে একজন আমায় জাপটে ধরল
আমি রাস্তার দিকে চেয়ে অন্যমনস্ক হেঁটে চলেছি বুঝতে পারিনি
তাকিয়ে দেখি এক দাড়িওলা মুসলমান যুবক
আমায় আলিঙ্গন করছে ও ভেবেছে আমিও মুসলমান
লালবাজারের পাশে থাকতাম তখন
মুখভরতি ব্রণ কৈশোর তো একা আসে না
সঙ্গে করে নিয়ে আসে ব্রণ বিষাদ প্রণয় পিপাসা প্রতিশোধ স্পৃহা
আরও কতকিছু
কবিতা ভালবাসতাম বলে
ছাদে গিয়ে আকাশের ঘ্রাণ নিতাম
কাউকে যে কথা বলা যায় না সেই কথা লুকিয়ে লুকিয়ে বলতাম নিজের সঙ্গে
ডালহাউসির রক্তিম চাঁদ কোনদিন
ইশারায় কাছে আসতে বলত
টেরিটি বাজার ছাড়িয়ে চিনে পাড়া এক পাশে রেখে
নিয়ে যেত নিরুদ্দেশ যাত্রায়
একদিন কিভাবে চাঁদকে অনুসরণ করে
হঠাৎ দেখি এক অদ্ভুত থিয়েটারে ঢুকেছি
রাস্তা জুড়ে বারবনিতারা দাঁড়িয়ে
দালাল ঘুরছে চারদিকে, একজন আমার কাছে এসে বলল
আসেন দাদা খাসা চিজ মজুত আছে আসেন না
আমার হৃৎপিণ্ড লাফিয়ে উঠল, মিনারের উপর চাঁদ তখন পলাতক
আমি তার হাত ছাড়িয়ে ছুটছি
কেমন করে বার হব জানি না।
লালবাজারে পুলিশ আর তার পাশেই হারমোনিয়াম এস্রাজ সারাবার দোকানগুলো
উড়েদের মেস থেকে খাবার আনা হত মাঝে মাঝে
একটি মেয়ে ছিল যার হাসি দেখে অপলক তাকিয়ে থাকতুম
তার উরুদুটি সাগরের ফেনার মত
হাসলে মাড়ি দেখা যেত
টেরিটি বাজার থেকে হেঁটে কলেজ স্ট্রিট যাবার সময়
আমার কৈশোরকে বন্ধক রেখে যেতাম কবিতার কাছে
টেরিটি বাজারে পাওয়া যেত অসামান্য চিতল মাছের পেটি
লালবাজার স্ট্রিটে একটি অসাধারণ চিংড়ির কাটলেটের দোকান ছিল
সাত আট মিনিট হেঁটে ধর্মতলায় মাদ্রাস কাফে
পাশে আনন্দবাজারের গলি
সুনীল শক্তিদারা ছিলেন
লজ্জা লজ্জা মুখ করে কখনো সখনো কবিতা দেখাতে যেতাম
এখন আর টেরিটি বাজার লালবাজার চিৎপুর রোড যাওয়া হয় না
জানি কোনদিন সেখানে গেলে
রাস্তায় বা কোনও বিশেষ বারান্দায় একটি চেনা কিশোর মুখ আজও দেখতে পাব।
লেখা পাঠান ই-মেইলেঃ chilekothasahitto@gmail.com










মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন