শহর থেকে দূরে (শেষ পর্ব) | দেবাশিস ভট্টাচার্য
সকালে ভুবন এসে ডাকতে ঘুম ভাঙল। চা তৈরি হয়ে গেছে, চল বারান্দায় গিয়ে বসে চা খাই।
আনোয়ার বলল, তুই কখন উঠলি?
---অনেকক্ষণ।
---রাতে ঘুম হয়েছিল?
---একঘুমে রাত কাবার। বহুদিন এত ভাল ঘুমোইনি রে, মাইরি বলছি।
পূরণ চা দিয়েছে, ব্রেকফাস্টে কি বানাবে জিগ্যেস করছে, আনোয়ার ভুবনকে বলল তুই কিছু একটা বলে দে, আমি একটু আসছি, বলে উঠে দাঁড়িয়ে হনহন করে গেট দিয়ে বেরিয়ে কুয়োতলাটার দিকে এগিয়ে চলল।
সকালে সব অন্যরকম, ঝলমল করছে রোদ্দুর, ভয় করছে না, জায়গাটা যেন যে কোনও জায়গার মতনই। গেটের বাইরে এবড়ো খেবড়ো মাঠ দেখা যায়, উপরে পথ দিয়ে সাঁওতাল মেয়ে পুরুষ আসা যাওয়া করে, অনেক শাল মহুয়া গাছ চারদিকে, উপরের পথ থেকে যে গড়ান জমি বাংলোয় নেমে এসেছে তার উপরও প্রচুর গাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে। কুয়োতলা পৌঁছে মাটি খোঁড়ার জায়গাটাও কিছু আলাদা করে বোঝা গেল না, মাটি কোপাবার বা নতুন নরম মাটি দিয়ে গর্ত বোজাবার কোন চিহ্নমাত্র নেই। আনোয়ারের মনে হল কাল রাতে বোধহয় ও স্বপ্ন দেখেছিল। পুরো ঘটনাটাই বাস্তবে ঘটে নি, স্বপ্নে ঘটেছে।
চা পান করতে করতে আনোয়ার চৌকিদার পূরণকে আলগা করে জিগ্যেস করল, তোমাদের এখানে এখন আর কেউ থাকে নাকি, কাজের লোক টোক?
---- না বাবু।
----কাল রাতে তুমি কোনও শব্দ পাও নি?
-----কি শব্দ?
-----মাটি কোপানোর শব্দ?
পূরণ অবাক হয়ে চেয়ে রইল, যেন এত অদ্ভুত কথা আর জীবনে শোনে নি।
আনোয়ার পিছন ফিরে তাকাল, কয়েক মুহূর্তের মধ্যে প্রকৃতির ছবিটা কিরকম পালটে গেছে। বৃষ্টির ঝাপটা চলে আসছে আউটহাউসের ভিতরে, বিদ্যুৎ চমকানির সঙ্গে ও দেখতে পেল ঘরে কেউ নেই, একটা চটের বস্তা, একটা শাবল আর কিছু সিমেন্ট বালি এইসব এককোণে পড়ে আছে। এই যে এখুনি একটা লোক তার দিকে পিছন ফিরে বসে ছিল, হাঁটুর ফাঁকে মাথা গুঁজে, সে কোথায় গেল? কোত্থাও তো তাকে আর দেখা যাচ্ছে না। ঝোড়ো হাওয়া বইছে, আকাশে বিদ্যুৎ ঝিলিক দিচ্ছে, আনোয়ার সর্বত্র খুঁজেও কাউকে দেখতে পেল না।









মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন