প্রবাস জীবন ও অতীতের স্মৃতিগুলো | ইমরানুল হক বেলাল
শৈশব পেরিয়ে যখন কৈশোর বয়সে পা রাখলাম, সেই সময়ে হঠাৎ একদিন আমার বাবা স্ট্রোকে মারা যান। এই ক্ষুদ্র জীবনে যেটুকু সময় বাবাকে পেয়েছিলাম, সেটাই ছিল আমার সব চেয়ে বড় স্মৃতি। বাবার আদর মাখা মুখ,শাসন, স্নেহ,মমতা,সব কিছু যেন আজ স্মৃতি হয়ে রইলো। তখন বাস্তবতার নিষ্ঠুর নীরবতা মেনে নেওয়ার মত আমার বয়স ছিল না। তবে বেশ মনে আছে, বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন পরই আমার বড় ভাইয়া, আর ভাবি, সংসার থেকে আলাদা হয়ে শহরে চলে যান। সেই সময় আমার ছোট্ট ভাই মায়ের দুধ পান করে। আমার মা অল্প বয়সে বিধবা হন। কিন্তু আমাদের এতো চিন্তার মাঝে ও উনার চেহারায় এতোটুকু চিন্তার ছাপ ছিল না।
একদিকে স্বামী হারা, অন্যদিকে ছেলে-মেয়েদের কীভাবে মানুষ করবেন সে চিন্তায় তাঁর দিন কাটতো। তাঁর শেষ ইচ্ছে ছিল -জীবনে যতই দুঃখ - কষ্ট আসুক ছেলে -মেয়েদের মানুষ করতে হবে। যদি সন্তানদের মানুষ করা না যায় তবে মা হয়ে বেঁচে থেকে কি হবে! কিন্তু নিয়তির বিধান ছিল অন্যরকম! আমার বাবা মারা যাওয়ার ছয়মাস পর একদিন হঠাৎ করে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের ঘরবাড়ির সব কিছু ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এত বড় দুর্বিপাক মা সহ্য করতে পারলেন না, মেঝের ওপরে বসে কেদেঁ ফেললেন, -"হায় আল্লাহ!...! হায় আল্লাহ গো......!!!” .....আমি ও ...কেদেঁ উঠলাম।
পরের দিন আমাদের পরিবার এবং ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে এক নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিলাম। বুঝতে পারলাম, আমাদের জীবন, স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবু জীবন চলে জীবনের গতিতে।
আমার মনে আছে, যখন ফাইভে ভর্তি হলাম , আমার পায়ে ছিল মায়ের এক জোড়া ছেঁড়া জুতো; আর পরনে বহুদিন আগের বাবার দেওয়া ছেঁড়া লাল সুয়েটার। তা দেখে ক্লাসের ছেলেরা আমাকে বিদ্রুপ করা শুরু করেছিলো। গরীব হয়ে জন্মেছি বলে, স্কুলের সব ছেলে-মেয়েরা ও শিক্ষক মশাইরা আমাকে অপছন্দের দৃষ্টিতে দেখতেন। এর আরেকটা কারণ ছিল অবশ্যই, আমি ছিলাম একটু দুষ্টু প্রকৃতির। শুরুতে যখন ইসকুলে পা রাখি তখন কিছু ছেলেদের সাথে মারামারি করতাম ; এটা করে আমি ভীষণ আনন্দ পেতাম। অন্তত রোজ একটা ছেলের সাথে ঝগড়া না করে আমি একদমই থাকতে পারতাম না। আসলে আমি এসব মন থেকে করতাম না, শুধু দুষ্টামির ছলেই করতাম। কিন্তু সব ছেলেরা ভাবতো আমি ইচ্ছে করেই কারণে-অকারণে ঝগড়া করি।
এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ির ফলে দু 'একজন আমার নামে স্যারের কাছে নালিশ করলো। আমি নাকি বিনা কারণে সবার সাথে ঝগড়া করি।
প্রবাসে আমার সকাল আর রাত ছাড়া বিকেল দুপুর সন্ধ্যা বলে কিছু নেই। অনিয়ম আর পরিশ্রমে শরীর ভেঙে পড়ে। তবু অভিযোগ করার কিছু নেই। টাকা দরকার যে অনেক! আমি বেশ টের পাই, এভাবে কাজে কাজে জীবন ক্ষয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবু বিকল্প কিছু নেই।









মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন