চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

হতভাগ্য .......

হতভাগ্য ....... | প্রান্ত স্বপ্নিল    


তার সাথে দেখা হল, সময়ের কাঁটা বলছে প্রায় দশ বছর হয়ে গেলো। ঘড়ির কাঁটায় সময়টা হিসেব করলে দাঁড়ায় ৮৬৪০০ ঘণ্টা। এত তাড়াতাড়ি কিভাবে এতোটা সময় হারিয়ে ফেললাম? ভাবতেই মনের অন্তরালে একটি স্মিত হাসি ফুটে ওঠে। হাসিটা আমি আর উপরে যিনি বসে আছেন তিনি ব্যতীত কেউ দেখেন না বৈকি। সেই ক্লাস সিক্স থেকে তার ভাল লাগার বহিঃপ্রকাশ, কিছু মিষ্টি ইশারা, দুষ্টু ইঙ্গিত আমার মনের প্রকোষ্ঠে কখন যে চিরস্থায়ী আসনে আসীন হয়েছে বুঝতেই পারি নি। আমি অধম তার এই প্রতীকী ভাল লাগার ইঙ্গিত সামান্যটুকু আঁচ করতে পারি নি ক্ষণিকের জন্য। যখন  তার মনে “ভালোবাসা” নামক অনুভূতিটি রং ধারণ করা শুরু করলো, হয়তোবা সেই মুহূর্তটিতে আমার মনটা মাঠেই পড়ে থাকতো।
আমার বহুল প্রত্যাশিত দিনটি চলেই এল। বাসে চড়ে ভাবছি, সে দেখতে কেমন হয়েছে?? আমাকে চিনবে সে?? নিজের দিকে তাকিয়ে তখন নিজেকেই অচেনা লাগছিলো। আমিই তো সে... যে কিনা ভালোবাসার হন্তারক হয়ে প্রাণদানকারীর ভূমিকা নিলাম। নিজের ভাগ্যটাকে নিজেই এখন দুষছি। অজানার গন্তব্যে নিজের এই হতশ্রী ভাগ্যটাকে ফিরে পাওয়ার একটি শেষ চেষ্টা না হয় করেই দেখলাম!!!  দেখি কি হয়......?
ক্লাস এইটে পদার্পণ করলাম।  তখনও তার প্রতি সেরকম কোন টান বা আকর্ষণ কিছুই অনুভব করি নি। কিন্তু সেই সময়ের একটি ঘটনা আমার অনুভূতির পিলারটাকে বেশ কাঁপিয়ে দিল। একদিন একটি ছোট ছেঁড়া চিরকুট তার নামসমেত আমার পাঠ্যবইয়ের হৃৎপিণ্ডে  আবিষ্কার করলাম, কাঁচা হাতে লিখা ছিল সেই তিনটি মধুর শব্দ। বিধাতা আমার সাথে কি ছলনার খেলা খেলছিলেন জানি না, সেইবারও ব্যাপারটিকে নেহাত  দুষ্টুমি ভেবে এতো গুরুত্ব দিলাম না। এরপর......কিছু দৃষ্টি বিনিময় ও ঠোঁটের ইশারা ছাড়া তেমন কোন ঘটনা জীবনে রেখাপাত করলো না। আমার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তার চোখে দেখেছিলাম অসহায়ত্ব আর অন্তরাত্মা বলছিল, তার ঠোঁটের ইশারায় সে বলছে “তোমাকে চাই, শুধু তোমাকে”...  এভাবেই কেটে গেলো স্কুলজীবন.....তারপর দীর্ঘ একটি সময়ের জন্য তাকে হারিয়ে ফেললাম......।। ভালবাসার অনুভুতিগুলো জন্ম নেওয়ার আগেই বুকে পাথর চাপা দিতে হল।
 বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে পদার্পণ করে সেই অতীত স্মৃতিগুলো আমার  মনের বাগানে বেশ ঝড় তুলছে।জীবন্মৃত ভালবাসাটাকে আর একবার বাঁচিয়ে তোলার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করবো চিন্তা করলাম। কোথায় খুঁজবো তাকে??? তাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য “মুখপুস্তক” ব্যতীত আমার অন্য কোন উপায় ছিল না। তখন সেটিকে বিধাতার আশীর্বাদ বলেই মনে হচ্ছিলো। মস্তিষ্কের নিউরনগুলো কেমন যেন না-বোধক সংকেত দিচ্ছিল। তবুও পাগলের মত খুঁজতে লাগলাম তাকে। দীর্ঘ এক ঘণ্টা অনুসন্ধান করার পর তার নামের আইডিটি পেলাম। তখন মনে হল, “পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম”। প্রোফাইলপিকে দেওয়া ছিল এক হলুদ শাড়ি পড়া রমণীর মুখলুকানো ছবি। স্মৃতির ডায়রি হাতড়ে দেখতেই মনে পড়ে গেলো হলুদ তার প্রিয় রং ছিল। কীভাবে তার মনের খবর রেখেছিলাম, সেটা নাই বা বললাম। তার timeline আর about ঘেঁটে প্রায় নিশ্চিত হলাম, আমি আমার হারিয়ে যাওয়া ......ফিরে পেয়েছি। শূন্যস্থানটিতে কি বসাবো আমি নিজেই বুঝতে পারছি না। এটা কি বন্ধুত্ব নাকি অন্যকিছু??? মনের প্রশ্ন মনেই থাকুক।দেরি না করে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলাম দ্রুত। এবার আর ভুল করতে চাই না!!!  অপেক্ষা করতে থাকলাম, কখন তার নামের নোটিফিকেশানটি দেখব? আমার অবচেতন মন বলছিল, “সে কি আমাকে মনে রেখেছে??? নাকি তার রহস্যময় ইঙ্গিতগুলো শুধুই ছলনা ছিল, নাকি আমি ভ্রমে আছি”? মনটাকে শান্ত করার কোন অবকাশ পাচ্ছিলাম না। এরুপ দুশ্চিন্তা আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করলাম প্রায় ৭২ ঘণ্টা। চতুর্থ দিনের প্রথম প্রহরে ঘুম ঘুম চোখে মুখপুস্তকে উঁকি দিতেই দেখি সে আমার ডাকে সাড়া দিয়েছে, মনটা আনন্দে ভরে গেলো। উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রন করে দেখলাম একটি ক্ষুদে বার্তাও এসেছে, এতো একাদশে বৃহস্পতি...বুঝলাম পরিস্থিতি ও সময় দুটিই আমার অনুকূলে। এরপর... টুকরো টুকরো ভালোবাসাগুলোকে পুঞ্জীভূত করে হৃদয়ের মানসপটে একটি পূর্ণাঙ্গ ভালোবাসার জলছবি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা...... সেই ছবিতে শুধু দৃশ্য হচ্ছিলো তার মিষ্টি বদনখানি। বুঝতে বাকি রইল না সে আমার কে?  চলতে থাকলো ক্ষুদে বার্তা বিনিময়......। কিন্তু তার কথার মধ্যে সেই আগের কোন মায়া, ছলনা কিংবা আকর্ষণ অনুভব করলাম না।
বেশ কিছুদিন গত হল। একদিন সে আমার সাথে দেখা করার অভিপ্রায় প্রকাশ করলো। তার সেই প্রস্তাবকে নাকচ করার মত সাহস আর শক্তি কোনটিই আমার মধ্যে ছিল না বললেই চলে। তাই বাধ্য ছেলের মত আমার মনের রাণীর আজ্ঞা শিরোধার্য হিসেবে মেনে নিলাম। কাল ও স্থান নির্ধারক সে নিজেই আর পাত্র-পাত্রী আমি অধম আর সে। কাল ঠিক হল এখন থেকে ঠিক ৪৮ ঘণ্টা পর। অনুধাবন করলাম মনের মধ্যে তখন সুনামি বয়ে যাচ্ছে। উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণ করে কিছু ত্বরিত পরিকল্পনা হাতে নিলাম। মনে মনে ঠিক করে নিলাম, তার প্রিয় বইটি আর চকোলেট তাকে উপহার দিবো। বই আর চকলেট এর প্যাকেট দুটি তার প্রিয় রঙে মুড়িয়ে  একটি লাল ফিতে দিয়ে বেঁধে নিলাম।
অবশেষে... আমার বহুল প্রত্যাশিত দিনটি চলেই এল। বাসে চড়ে ভাবছি, সে দেখতে কেমন হয়েছে?? আমাকে চিনবে সে?? নিজের দিকে তাকিয়ে তখন নিজেকেই অচেনা লাগছিলো। আমিই তো সে... যে কিনা ভালোবাসার হন্তারক হয়ে প্রাণদানকারীর ভূমিকা নিলাম। নিজের ভাগ্যটাকে নিজেই এখন দুষছি। অজানার গন্তব্যে নিজের এই হতশ্রী ভাগ্যটাকে ফিরে পাওয়ার একটি শেষ চেষ্টা না হয় করেই দেখলাম!!!  দেখি কি হয়......?

মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠার জনপ্রিয় বই


চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২৩’ এর নির্বাচিত বই



চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২২’ এর নির্বাচিত বই