পৃথিবী এক বিচিত্র পাঠশালা
পৃথিবী এক বিচিত্র পাঠশালা | মইনুদ্দীন শফি মাষ্টার
শৈশবের পাঠশালা, প্রাথমিক শেষ করে ভর্তি হলাম উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওখানে দেয়া হলো ৮/১০ টা বই। অঙ্ক বইতে শেখানো হলো যোগ-বিয়োগ,পূরণ-ভাগ। এসব নাকি টাকা পয়সা রোজগার আর হিসাব নিকাশের কাজে লাগবে। বাংলায় বেশ কিছু নীতিবাক্য, প্রবন্ধ, কবিতা, সাহিত্য। বেশ ভালোই লাগলো। মনে হলো এ যেন বিশাল পৃথিবীর একটি ছোট্ট অংশ, বাংলা মায়ের প্রতিচ্ছবি। ইংরেজীটা শিখতে হলো তাদের রেখে যাওয়া আইন কানুন, নিয়মনীতিটাকে রপ্ত করার প্রয়োজনে। কিন্তু হঠাৎ করে যেন হোঁচট খেলাম, ভুগোল আর ইতিহাসের পাতা উল্টাতে গিয়ে বিশাল ভারতের দুইপ্রান্তে দু’টুকরো পাকিস্তান।
ভুগোল স্যারকে প্রশ্ন করে বসলাম “স্যার এই ভুগোল বে-খাপ্পা লাগে। হাজার মাইল দূরের পাকিস্থানীরা এ ভুগোল মানেও না পড়েও না। টগবগে বয়সের এমন উক্তি ভুগোল শিক্ষক বিনোদ বাবুকেও ভাবিয়ে তুলেছিলো। বিনোদ বাবুর মন্তব্য ছিলো “হ্যাঁ একদিন তোরা নিজের ঠিকানা খুঁজে পাবি, তবে দিতে হবে এক সাগর রক্ত। পৃথিবীর এই বিচিত্র পাঠশালায় প্রয়াত বিনোদ বাবুকে খুব বেশি মনে পড়ে।
ইতিহাস পড়াতেন হেড মওলানা, ”এই ছেলেরা, উর্দু-আরবী হলো মুসলমানদের ভাষা, ইসলামের ভাষা, ইমানের ভাষা। পাক সার জমিন- জাতীয় সংগীত। সবাই মুখস্থ করে ফেলবি, নইলে পিঠের চামড়া তুলে ফেলবো।”
শ্রেনী কক্ষে দুঃসাহসী এক সহপাঠীর প্রশ্ন ছিলো- ”হুজুর এ জাতীয় সংগীত বাংলাও না উর্দুও না এ কোন সংগীত কিছুই বুঝি না। হেড মওলানা ক্ষনিক চুপ করে প্রচন্ড রাগ দমন করে বললেন- “দূর ব্যাটা এ হলো ফার্সি, বড্ড পবিত্র ভাষা। জেনারেল আইয়ুবের উপহার।” তারপর মওলানা প্রশান্তির হাসি হাসলেন। “খোদা প্রদত্ত এই পাকিস্তানকে তোরা সবাই মিলে হেফাজত করবি।”
শৈশব কৈশোরের শিক্ষাগুরু বিনোদ বাবু আর হেড মওলানা এখন পরপারে । তবে প্রয়াত বিনোদবাবুর সেই উক্তি- “একদিন রক্তের বিনিময়ে খুঁজে পাবি আপন ঠিকানা” কথাটির বাস্তবতার গতিপ্রবাহে আজ মাতৃভূমি বাংলাদেশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল পৃথিবীর এক প্রান্তে। কিন্তু জোর করে উর্দু ফার্সী চাপানো মরহুম হেড মওলানার উওরসুরীরা কি আবারো ফিরে আসছে জেএমবি-আইএস নামের পতাকা তুলে? জানি না, যে-ই আসুক যেভাবেই যে নাম ধরেই বালাদেশের ক্ষতি করতে আসুক আড়ালে আবঢালে হিংস্র সাপের মতন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা রুখে দেবো তাদের পৈশাচিক অগ্রযাত্রা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন