চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

ঝিনুক তুমি নীরবে সহো

ঝিনুক তুমি নীরবে সহো | রহমান মিজান  


দুনিয়াটা কেমন যেন পানসে পানসে লাগে আমার কাছে। কোন কিছুতেই যেন আনন্দ পাই না। চারিদিকে অশান্তি আর অশান্তি। ঘরে অশান্তি, সমাজে অশান্তি, দেশে অশান্তি, এমনকি সমস্ত বিশ্বে অশান্তি। দিন যত গড়াচ্ছে, অশান্তির মাত্রা তত তীব্র হচ্ছে। পত্রিকার খবর বা চ্যানেলগুলোর সংবাদ প্রায় সবই নেতিবাচক, ইতিবাচক নেই বললেই চলে। আমরা পৃথিবীর মানুষরা দিন দিন এমন হয়ে যাচ্ছি, আমাদের মধ্যে স্নেহ, মায়া-মমতা, ভালোবাসা, আদর-মহব্বত দিন দিন লোপ পাচ্ছে। আমরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকি। চারপাশের ঘটনাগুলোর দিকে নজর দিই না। আমার এক ছোট বোন- বিথী। ক্লাস এইট-নাইনে আমি তাকে পড়িয়েছিলাম। বর্তমানে সে সাংসারিক জীবন নিয়ে ব্যস্ত। ঘটনাটি তার মুখ থেকে শোনা, তার ননদকে নিয়ে।
পত্র-পত্রিকায় আমরা নারী নির্যাতনের বহু ঘটনাই দেখি। কিন্তু এর চেয়ে আরো বেশি ঘটনা লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়। জানাজানির ভয়ে সবকিছু মেনে নেওয়া, সয়ে যাওয়া। কবির ভাষায় যদি বলি- “ঝিনুক তুমি নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও, ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুজে মুক্তো ফলাও।”
বিথীর শ্বশুর বাড়ি সন্দীপে। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি একমাত্র মেয়ে কে বিয়ে দেওয়ার জন্যে একজন ভাল পাত্র ঠিক করলেন। পাত্রের বাড়িও সন্দীপে। পাত্র থাকে বিদেশে। দুবাই। পাত্র মোটামুটি ভাল টাকা আয় করে। সুতরাং মেয়ে সুখেই থাকবে। খাওয়া-পরার অভাব হবে না। ধুমধাম করেই মেয়ের বিয়ে দেয়া হল। বিয়ের ছ-মাসের মাথায় পাত্রের আবার দুবাই গমন। স্বামী দূরে থাকলেও তিনটি বছর খেয়ে পরে সুখেই ছিল বিথীর ননদ। তিন বছর পর স্বামী দেশে আসার পর দেখা গেল অন্যরকম রূপ। বিয়ের সময় দেওয়া আসবাব-পত্র, সোনা-চান্দিতে তার মন ভরেনি। দরকার আরো। এটা নিয়ে বিথীর ননদ আর স্বামীর মধ্যে প্রায় ঝগড়া লাগতো। ঝগড়ার যোগানদাতা স্বামীর মা। একসময় যৌতুকের জন্য ঝগড়া যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হল তখন স্বামী লাথি মারল স্ত্রীর তলপেটে।
স্ত্রী তখন দুইমাসের অন্তঃস্বত্তা। তীব্র লাথি খুব দ্রুতই নিভিয়ে দিল অনাগত সন্তান ও মায়ের জীবন প্রদীপ। মৃত্যুটাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল শ্বশুর বাড়ির লোকজন। কিন্তু বিথীর শ্বশুর মেনে নিতে পারেনি মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু। তাই মামলা ঠুকে দেয় থানায়। মেয়েকে তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। কিন্তু ঘাতকের যদি শাস্তি হয়, তাতেই শান্তি পাবে মেয়ের আত্মা।
বলা হয় আমাদের সমাজে মেয়েরা পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবকিছু করছে। মেয়েরা এখন অনেকটাই স্বাধীন। আসলে কি তাই? কতটুকু স্বাধীন মেয়েরা? রঙচঙে পোশাক পরে বাইরে ঘোরা-ফেরা করলে আর অফিস-আদালতে চাকুরি করলেই কি মেয়েরা স্বাধীন হয়? হয় না। পত্র-পত্রিকায় আমরা নারী নির্যাতনের বহু ঘটনাই দেখি। কিন্তু এর চেয়ে আরো বেশি ঘটনা লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়। জানাজানির ভয়ে সবকিছু মেনে নেওয়া, সয়ে যাওয়া। কবির ভাষায় যদি বলি- “ঝিনুক তুমি নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও, ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুজে মুক্তো ফলাও।”
কলুষিত এই সমাজ থেকে নারী নির্যাতন বন্ধ করতে কত কিছুই না করা হচ্ছে। কিন্তু হচ্ছে কই? বরং দিন দিন যেন বাড়ছে। বড় বড় পোস্টারে দু-একটি সাফল্য মানেই পুরো সমাজের চিত্র নয়। পুরো সমাজের চিত্র তুলে ধরতে হলে সমাজের সবাইকে দাঁড়াতে হবে নিজ বিবেকের আদালতে। এ ছাড়া আর কোন বিকল্পই নারী নির্যাতন এই সমাজ থেকে পুরোপুরি নির্মূল করতে পারবে না। আমার অন্তত তাই মনে হয়।


মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠার জনপ্রিয় বই


চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২৩’ এর নির্বাচিত বই



চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২২’ এর নির্বাচিত বই