চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

আমি পাঠক বলছি (৩)


(“আমি পাঠক বলছি” শিরোনামে ধারাবাহিকভাবে আমার পড়া বই নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। আমি একজন সর্বভুক পাঠক। যা পাই তাই গিলি। আমার কাছে মূল বিষয়- কোন একটি বই সুখপাঠ্য কিনা। সুখপাঠ্য হলে লেখক আস্তিক না নাস্তিক, মোল্লা না ব্রাহ্মন, দেশি না বিদেশি, নতুন না পুরাতন, লেখায় গভীরতা আছে কি নেই এসব বাছবিচার এ যাই না। লেখাটা পড়ে ফেলি। কখনো কখনো মতামত ও দেয়ার চেষ্টা করি। পাঠক হিসেবে আমার এই কখনো কখনো দেয়া বক্তব্য হয়ত লেখকের মনঃপূত না-ও হতে পারে কেননা লেখার বিচারিক ক্ষমতা কখনোই একজন পাঠক আর লেখকের মধ্যে সমানভাবে থাকে না। তবু পাঠক হিসেবে ভাবনা তুলে ধরার সুযোগ থাকায় কলম হাতে নেয়ার দুঃসাহস করলাম। আশা করছি, লেখকগণ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আমার এই দুঃসাহস!)

অনেকদিন আগে- স্কুলে ভর্তির সময় একজন শিক্ষক জিজ্ঞেস করেছিলেন- ‘কি নাম রে তোর?’
স্কুল মানে শিশুর চিরন্তন ভয়ের ব্যাপার-স্যাপার, এটা আমার জানা ছিল। আমাদের বাচ্চামহলে তখন স্কুলের নাম ছিল- ধোলাই কেন্দ্র। তাই ধোলাই কেন্দ্রে  পা দিয়েই বিভ্রান্ত আমি যখন নাম বলছিলাম, ভয়ে মৃদু মৃদু কাঁপছিলাম। কী ভেবে ভয় তা মনে নেই। কেবল মনে আছে নাম শুনে সেই শিক্ষক বলেছিলেন- ‘অ। নামে কী আসে যায়!’
স্কুলে পা দিয়েই আমার প্রথম পাঠ সেদিন হয়ে গেছিল- নামে কী আসে যায়!

নামে যে সত্যিই আসে যায়, এটা বুঝতে বুঝতে বেলা কেটে গেছে অনেক। প্রথম যখন, মেহেদী উল্লাহ’র গল্প- ’ফারিয়া মুরগির বাচ্চা গলা টিপে টিপে মারে’ শিরোনামে একটি পত্রিকায় পড়েছিলাম তখন থমকে ছিলাম বেশ অনেকক্ষণ।  ব্যাপারটা বুঝতে বুঝতে সময় লেগেছিল। ব্যাপারটা বুঝে যখন উঠেছি, নিশ্চিত হয়েছি, এই নাম ছাড়া অন্য কোন নামে গল্পটা মানানসই হত না। গল্পকার মেহেদী উল্লাহ কতটা গভীরে ভেবে এই নামটা দিয়েছেন বুঝতে পারলে পাঠকরা চিন্তার ভার থেকে মুক্ত হবেন। ফারিয়া মুরগির বাচ্চা গলা টিপে টিপে মারে তবুও কেন সে এই কাজ করে তাকে প্রশ্ন করার কেউ নেই। নেই তা-ও ঠিক নয়। সাহস করে না কেউই। হালকা চালে লেখক অত্যাচারী সমাজের চিত্রটাই তুলে ধরেছেন গল্পের আড়ালে। অপরাধ করে কেউ দম্ভোক্তি করলেও তাকে প্রশ্ন করার নেই কেউ। আছে কি কেউ?

গল্প পড়ার কিছুকাল পরেই জানলাম এই নামেই লেখকের গল্পের বই বেরুচ্ছে একটি। বইয়ের নামকরণেও এই নামটি লেখকের দুরদর্শিতারই পরিচয়। বইটি কিনলাম এবং পড়লাম। আর অনুভূতির ডালা নিয়ে বসলাম। বইটি শেষ করে মনে হয়েছে কোথাও কোথাও লেখকের খুব যেন তাড়াহুড়ো ছিল। অবশ্য এটা লেখকের না হয়ে প্রকাশকেরও হতে পারে। জায়গায় জায়গায় ফন্ট ভেঙ্গে গেছে। বানান অর্ধেক আছেতো অর্ধেক নেই। বিষয়টা লেখক/প্রকাশক আশা করি পরের সংস্করণে শুধরে নেবেন।

গল্প প্রসঙ্গে আসি-

‘ব্রেক-আপের-ব্যাক-আপ’ গল্পটি অদ্ভুত সুন্দর একটি গল্প। গল্পের নারী চরিত্র- যে কিনা তার নিজের ব্রেক-আপের গল্প বলতে বলতে স্মৃতির স্রোতে ভেসে চলে যায় মায়ের গল্পে। আবার গল্পের একটুও ব্যাঘাত না ঘটিয়ে ফিরে আসে নিজের গল্পে- এটা দারুণ লেগেছে। একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বেই গল্পটা শেষ করি। গল্পটি মেয়েটির না তার মায়ের? মায়ের না মেয়েটির?

‘ভূতের বাড়ির নির্মাণ কৌশল’ পড়ে প্রথমে মনে হতে পারে আজাইরা প্যাঁচাল সব! কিন্তু শেষে এসে ধারণা বদলে যায় মুগ্ধতায়। বাস্তব মানুষগুলো কেউ কেউ আমাদের চোখের সামনে ঘোরা-ফেরা করেও একরকম অদৃশ্য যেন। অনেকটা ভূতের মতই। যাদের অস্তিত্বে কারো কারো বিশ্বাস আছে। আর যারা কখনো বাস্তবকে সামনে দেখেনি তাদের কাছে ভূতের মতই অবাস্তব এইসব মানুষ এবং তাদের জীবন-যাপন।

‘জি মৌটুসী, আমি আপনাকে শুনতে পাচ্ছি’ গল্পটা পড়ে বিরক্ত হয়েছি। এটাকে গল্প মনে হয়নি।

‘সাবস্ক্রাইবার অব সালমন দ্য ব্রাউনফিশ’ গল্পটা পড়ে অভিভূত হয়েছি। এটাকেই মনে হয়েছে এই বইয়ের সেরা গল্প।

এছাড়াও হিজরত এবং শুষ্ক ঠোঁট তোমার পড়ে আনন্দ পেয়েছি।

মেহেদী উল্লাহ’র বর্ণনা একটু আলাদা বলেই, পড়ে সুখ আছে। একটা গল্প বলতে বলতে হুটহাট নস্টালজিক হয়ে পড়ার বিষয়টা দারুণ উপভোগ্য তার গল্পে। বর্ণনরীতি অবশ্যই নজর কাড়ার মত আলাদা।

বর্তমানের তরুণ জনপ্রিয় লেখক মেহেদী উল্লাহ ভবিষ্যতের মহীরুহ লেখক হবেন এটা লিখে দেয়া যায়। চোখ খোলা রেখেই!


 লেখা পাঠান ই-মেইলেঃ chilekothasahitto@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠার জনপ্রিয় বই


চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২৩’ এর নির্বাচিত বই



চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২২’ এর নির্বাচিত বই