চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

সময়ের হালচাল

 সময়ের হালচাল । জাহাঙ্গীর চৌধুরী


নদ্দা বাস স্টেশনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশাওয়ালাকে ডাক দিলাম-
এই মামা,যাবেন? (আজকাল সবাই সবার মামা,বন্ধুরা বন্ধুদেরকেও ডাকে মামা বলে,ফকির এসে ভিক্ষা চায় মামা বলে, রাস্তাঘাটে প্রচুর মামা, মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে-আমার নানী সত্যি সত্যি কতোটা ছেলে জন্ম দিয়েছিলো? আদালতে এক আসামী নাকি জজ সাহেবকে বলেছিল -মামা, এইবারের মতো মাফ করি দেওন যায়না?)

রিকশাওয়ালা বলল-মামা,কই যাবেন?
আমি বললাম -হাতিরঝিল,ভাড়া কতো?
-দরদাম না করলে পঞ্চাশ টাকা,আর আমার রিশকার সিট অন্য রিশকার চেয়েও আরাম। নতুন কিনছিতো তাই। (রিকশাকে অনেক মানুষ রিশকা বলে,শুনতে মন্দ লাগেনা।)

ভাড়ার পরিমাণ শুনে মেজাজটাই ধরে গেলো। আসলে রিকশা ভাড়া পাঁচ দশটাকা বেশি হলে আমাদের মেজাজ ধরে যায়, বেচারা রিকশাওয়ালা রোদে পুঁড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে রিকশা চালায় তারে দুই টাকা বেশি দিতে গায়ে লাগে কিন্তু রেষ্টুরেন্টে চিকেন ফ্রাই আর লাচ্ছি খেয়ে পঞ্চাশ টাকা বকশিশ দিয়েও শান্তি লাগে। কারণ ওরা কোট টাই পড়ে এসির ভিতর কষ্ট করে খাবার এনে দেয়!

রিকশাওয়ালারে বললাম- হেঁটে যেতে কতোক্ষণ লাগবে?
সে আমার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে বলল- মামা,আপনি যদি বড়লোক হন তাহলে কমপক্ষে তিন ঘন্টা লাগবে, আর যদি দরিদ্র হয়ে থাকেন তাইলে লাগবে ত্রিশ মিনিট!

সত্যিই তো বড়লোকদের পায়ের গতি কম। আমাদের চিটাইংগা ভাষায় একটা কথা আছে-
বুড়া মাইনষর লাডি
ডর মাইনষর গাড়ি
গরীব যায়গই আডি।

গাড়ি থাকলেই আবার বড় লোক হয়না। আমার পরিচিত এক বড় ভাই হিরো হুন্ডা কিনেছিলেন প্রায় পনের বছর আগে। একেকটা জিনিস ক্ষয়ে যাচ্ছে। হেড লাইট কম জ্বলে। গাড়ির সারা গায়ে কুষ্ঠরোগীর মতো অনেক দাগ। মাঝে মাঝে স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেলে আসমানে যতোক্ষণ ঠাডা পড়ে না ততোক্ষণ আর স্টার্ট হয়না।
গাড়িতে তেল নিয়ে তিনি যদি কোথাও যান মানুষ বলতে পারে যে তিনি কোথায় গেছেন। কারণ যেদিকে যান সেদিকেই রাস্তায় তেলের ফোটা পড়তে থাকে। ছোট বাচ্চাদের পেশাব ঝরা রোগের মতো। ট্রাফিক পুলিশ গাড়িটা কখনো ধরেনা,কারণ গাড়ির দিকে তাকালেই মায়া হয়। মূমূর্ষ গাড়িটাকে ধরে আর কি হবে। যেকোনো মুহুর্তেই তো চলে যাবে দুনিয়া ছেড়ে, মানে রাস্তা ছেড়ে।

তো তার গাড়িতে হর্ণ নষ্ট হয়ে গেলো একদিন। বেচারা মানুষ দেখলেই খালি চিৎকার করে বলে- ও ভাই সরেন, সাইড দেন, গাড়ি ওরিবা (পাড়া দিবেন) চাইয়োন (দেইখেন)। মানুষ গাড়ির নিচে পড়বে সে ভয় তার নেই, গাড়ি মানুষের নিচে পড়বে বলেই বেচারা চিন্তিত!

যাই হউক, হাতির ঝিলে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময় কাঁটালাম। ব্যস্ত শহর, ব্যস্ত মানুষ, কারো দিকে কারো ফিরে তাকানোর সময় নেই। প্রত্যেকে শুধু নিজেকে নিয়েই আছে। হাশরের ময়দানের মতো ইয়া নফসি, ইয়া নফসি ভাব। কেউ মারা গেলেও কেউ ফিরে চাইবেনা। এক গ্লাস পানিও কেউ বিনামূল্যে অন্যকে দিবেনা। যেখানে স্বার্থ সেখানে আপনজন। সেখানেই বন্ধুবান্ধব,প্রিয়জন। স্বার্থ ফুরালে কেউ কারো নয়।

সূর্যটা ডুবে গেলো ধীরে ধীরে। জ্বলে উঠল হাজারো কৃত্রিম বাতি। বেলা ডুবে,বেলা উঠে, মানুষ শুধু ছুটে,শুধু নিজের জন্যই ছুটে। ছুটতে ছুটতে জীবনের বেলাও ডুবে যায়।


 লেখা পাঠান ই-মেইলেঃ chilekothasahitto@gmail.com, chilekothasahittobd@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠার জনপ্রিয় বই


চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২৩’ এর নির্বাচিত বই



চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২২’ এর নির্বাচিত বই