চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

মেয়ে জন্ম

মেয়ে জন্ম | তাকিয়া সুলতানা  


মেয়ে হয়ে জন্মানো কি দোষের? ছেলেরা যেখানে অনার্স, মাসটার্স করে ব্যবসা কিংবা চাকুরি করে সেখানে মেয়েরা শুধু এসএসসি, এইচএসসি পাশ করলেই কি বোঝা হয়ে যায়? যদি হয় তবে একটি মেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই মনে করতে পারে, এই পড়ালেখার প্রয়োজনটা কি? যে পড়ালেখা শুধু মাত্র এসএসসি বা এইচএসসি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে? আগেই জানতে পারলে মেয়েরা হয়তো মনের মধ্যে স্বপ্ন লালন করত না। এটা হবো, ওটা হবো, এটা করব, ওটা করব না- এত কিছু ভেবে রাখত না। ভাবতে চেষ্টা করতো কোন রকমে এসএসসি বা এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা শেষ করলেইতো হল। স্বপ্ন দেখে দেখে বিভোর হত না।
বেশি পড়াশুনা করলে বুড়ো হয়ে যাবে। ভালো ছেলে পাওয়া যাবে না বিয়ে দেয়ার জন্যে। তাহলে এর মানে কি এই যে, এসএসসি/এইচএসসি পাশ মেয়েদের জন্যে সব সুপাত্রের ঢল বইছে? সবসময় কি এদের জন্যে শিক্ষিত, চরিত্রবান পাত্ররাই আসে? অনেকের কপালেতো অশিক্ষিত ব্যবসায়ী পাত্ররাও আসে। কারো কারো কপালে জোটে দুশ্চরিত্রবান স্বামী। তাহলে এমন কেন ভাবা হয়, বেশি পড়াশুনা করলে ভালো পাত্র পাওয়া যাবে না?
সবাই কেন মেয়েদের এত কথা বলে, যা ছেলেদের বলে না? মেয়েরা কি তাহলে কথা শুনতেই এসেছে দুনিয়ায়? সব মেয়ের সাথেই কেন এমন হয়? আমার মতে দেশের ৮০% মেয়েরই একই অবস্থা। এসএসসি/এইচএসসি পাশ করার পর মেয়েরা পরিবারের বোঝা। তাড়াতাড়ি বিদায় করলেই ভালো। তাহলে ছোট থেকে এত স্বপ্ন কেন দেখায় সবাই? স্বপ্ন না দেখালেতো কেউ আর স্বপ্ন দেখতো না। কেন ছোট বেলা থেকে বলা হয়- ভালো রেজাল্ট করতে হবে, পরীক্ষায় ১ম হতে হবে? বললেইতো পারে যে, কোন রকমে পড়ালেখা শেষ করো, বিয়ে দিয়ে দিবো। বললেইতো পারে কোন এডমিশন টেস্টে অংশ নেয়ার দরকার নেই, বেশি পড়ার দরকার নেই....
সবাই বলে যুগ পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু কোথায় পরিবর্তন? সমাজ যেখানে থাকার কথা সেখানেই আছে। মেয়েদের সম্পর্কে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী একটুও বদলায়নি। সমাজ মেয়েদের নিজের প্রয়োজনমত কিছুটা পরিবর্তন করে নিয়েছে। সমস্তটাই সমাজের সুবিধার জন্যে। সব নিয়ম কেবল মেয়েদের জন্যে। ছেলেদের জন্যে কোন নিয়ম নেই? এটা যখন বলি, সবাই ধর্ম নিয়ে আসে। কেন আমাদের নবী (সঃ) কি বলেননি যে, “দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান জ্ঞান অর্জন করো।” তাহলে মেয়েদের সীমারেখা এসএসসি/এইচএসসি কেন? কেন অনার্স/মাস্টার্স বা তার-ও বেশি নয়?
নয় কারণ, বেশি পড়াশুনা করলে বুড়ো হয়ে যাবে। ভালো ছেলে পাওয়া যাবে না বিয়ে দেয়ার জন্যে। তাহলে এর মানে কি এই যে, এসএসসি/এইচএসসি পাশ মেয়েদের জন্যে সব সুপাত্রের ঢল বইছে? সবসময় কি এদের জন্যে শিক্ষিত, চরিত্রবান পাত্ররাই আসে? অনেকের কপালেতো অশিক্ষিত ব্যবসায়ী পাত্ররাও আসে। কারো কারো কপালে জোটে দুশ্চরিত্রবান স্বামী। তাহলে এমন কেন ভাবা হয়, বেশি পড়াশুনা করলে ভালো পাত্র পাওয়া যাবে না?
মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা মেয়েরা প্রাণীর চেয়েও অধম। যে চায়, সে-ই হাতের পুতুলের মত নাচায়। ডানে বললে ডানে যাই, বামে বললে বামে যাই। আর কিছুই যেন জীবনে করার মত নাই। মেয়েদের প্রতিটা ব্যাপারে নাক গলানো হয়। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে প্রতিবেশীরা পর্যন্ত নাক গলায়। অথচ ছেলেদের ব্যাপারেতো অমন করে না? যত আপত্তি-বিপত্তি মেয়েদের বেলায়। ভদ্র ঘরের মেয়েরা এরকম ড্রেস পড়ে না, ওটা করে না, ওটা খায় না, লোকাল বাসে চড়ে না। কত্ত কি! একটা মেয়ে যখন নিজের প্রয়োজনে স্কুল বা কলেজে যাবে, পরিবার থেকে বলবে যাও লোকাল বাসে যাও, এত এত টাকা তোমার পেছনে খরচ করতে পারব না। লোকাল বাসের ভীড়ে একটা মেয়ে কখনোই নিরাপদ নয়, এটা কে বোঝাবে তাদের? আবার যখন নিজেরা মেয়েদের নিয়ে বেরুবে, বাসে চড়তে ইগোতে লাগে তাদের। তখন বলে, না লোকাল বাসে চড়া ঠিক না!
মেয়েদের একটু উনিশ-বিশ হলেই বাসা থেকে বেরুনো বন্ধ। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ। তাহলে আমরা মেয়েরা করবটা কি? আমাদের অধিকার, মানে নারীর অধিকার, আমল করে কয়জন? আরো আছে ইভটিজিং ও হাজারো বিড়ম্বনা। সবাই বলে হিজাব পড়ে বের হলে এত প্রবলেম হয় না। আচ্ছা, ধরে নিলাম যারা হিজাব পড়ে না তাদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু যারা হিজাব পড়ে বা বোরকা পড়ে তাদেরকে-ও তো নানারকম আপত্তিজনক কথা শুনতে হয়- গাঁইয়া, ফ্যাশন সম্পর্কে নলেজ নাই, চেহারা সুন্দর নাই তাই বোরকা পরছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব বন্ধ করবে কে? কেউতো কখনো এসব বন্ধ করার জন্যে এগিয়ে আসে না? আচ্ছা এটাও নাহয় মেনে নিলাম। কিন্তু বাচ্চা মেয়েদের কি দোষ? তারা কেন নির্যাতিত হয়? তাদেরকে কি আমাদের সমাজ রেহাই দেয়?
আজকাল ফেসবুকে, টিভি নিউজে নানা খবর দেখি। এ-ওর মেয়ের সাথে এটা করছে, সেটা করছে, নিয়ে পালিয়ে গেছে- এসব। এসব দেখে-শুনে আমরা মেয়েদেরই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করি। তখন মেয়েটার হয়তো দুনিয়া ত্যাগ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। কেউ দুনিয়া ছেড়ে যেতে পারে কেউ থেকে যায়, মানুষের নানান কথাবার্তা শোনার জন্যে। সেটা ঘরে হোক বা বাইরে হোক। আমি একটা বিষয় কিছুতেই বুঝি না, কিছু একটা হলেই কেন মেয়েদের চরিত্র বা চলাফেরা বা পোশাক-আশাক নিয়ে সবাই কথা বলে। মাঝে মাঝে মনে হয়, মেয়েদের ছোট করা ছাড়া মুখরোচক আলোচনা যেন মানুষের জমে না।
সমালোচনা সবাইকে করতে হবে। বেছে বেছে শুধু মেয়েদের সমালোচনা কেন করা হয়? আল্লাহ সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছেন। মানুষ নারী বা পুরুষ যাই হোক, মোটা কিংবা বেটে, সুন্দর বা অসুন্দর, বাঙালি কিংবা চাইনিজ সবাই অধিকারের বেলায় সমান। তাই শুধু ছেলেরা নয় মেয়েরাও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে, বড় চাকুরি করতে পারবে, সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবে, দেশ রক্ষার জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবে। শুধু নারীরা নয়, পুরুষকেও সংযত হতে বলা হয়েছে ধর্মে। ধর্মীয় অনুশাসন শুধু মেয়েদের বেলায় নয় ছেলেদের বেলায়ও কার্যকর। তাই আপনার দৃষ্টি সংযত রাখুন, একটি মেয়েকে মানুষ ভাবার মত সুস্থ মানসিকতা গড়ে তুলুন। সুন্দর দেশ গড়ুন।


মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠার জনপ্রিয় বই


চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২৩’ এর নির্বাচিত বই



চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২২’ এর নির্বাচিত বই