সম্পদের সুষম বণ্টন চাই । শামীম আহমদ তালুকদার
১৯৪৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু দুঃস্থদের সাহায্য করার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর রিলিফ ফান্ড চালু করেন। ওই ভান্ডারের টাকায় কেবল দুঃস্থদের সাহায্য করা হয় ভারতে। একই উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডার নামে একটা রিলিফ ফান্ড আছে। দেশের দুঃস্থদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী যেসব দান খয়রাত প্রদান করেন, তা ওই ভান্ডার থেকে খরচ হয়। ত্রান ভান্ডারের টাকা সরাসরি দুঃস্থদের ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে মাসে বা বছরে একবার হলেও চলে আসার ব্যবস্থা গ্রহণে আকুল আবেদন করছি। আমাদের দেশে যে ধনী মানুষ রয়েছে তারা যদি ঠিকমতো যাকাত দিত তাহলে আমরা পথ শিশু, অসহায় মানুষের ছবিগুলো হয়তো দেখতাম না।
জনতার প্রয়োজনীয় সম্পদ না থাকায় হিংসা উন্মত্ত পরিবেশে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিত্য নিষ্ঠুর দ্বন্দ্ব লেগে আছে। সমাজের মুষ্টিমেয় রাজনীতিবিদগণ ও ধনিরা উচ্চশিখরে বসে সমস্ত ভোগবিলাসে মত্ত। বিশ্বের অতি ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে। নয়া উদারবাদ দেশের ভেতরে যেমন আয় ও সম্পদের বৈষম্য বৃদ্ধি করেছে, তেমনি সারা বিশ্বে এক ধরনের অসম বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার জন্ম দিচ্ছে। এর ফলে ধনীরা আরও ধনী ও গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার ’নব্য উদারবাদ' শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। শিগগিরই ধ্বংস হচ্ছে মানবসভ্যতা, আশঙ্কা নাসার...বাড়ছে অপচয়, ধনী আর দরিদ্রের বৈষম্য, হিংসা, অহংকার, সহিংসতা।... রিচ কালেক্টস টু মাচ, রেজাল্টিং ইন আ ফেমিন অ্যামাং মাসেস দ্যাট ইভেনচুয়ালি কজেজ দ্য কোলাপ্স অফ সোসাইটি' বা ধনীরা সম্পদ আহরণ করে প্রচুর পরিমাণে, যার ফলে জনগণ দুর্ভিক্ষপীড়িত হয়ে পড়ে এবং সমাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
আমার একটা পারসোনাল এজাম্পশন হইলো, বাংলাদেশে বেশ কিছু সুপার রিচ আছে, যারা পৃথিবীর প্রথম ১০০ জন ধনীর মধ্যে চলে আসবে। আমাদের সুপার রিচদের একটা বৈশিষ্ট্য হলো, তাদের অনেকেই অত্যন্ত সিম্পল জীবন যাপন করেন। বিশেষত যারা, পাবলিক ডোমেনে আলোচিত নন, তাদের পাশে দাঁড়ালে আপনি তাদেরকে চিনতেও পারবেন না। এই ধরনের বেশ কিছু সুপার রিচ আছে। যারা প্রিমিও গাড়ি চালায়, যেটা উচ্চ মধ্যবিত্তদের বাহন। কিন্তু, চাইলে ৫০ টা রোলস রয়েস কিনতে পারবে। এর কারণ, তারা কোন ভাবেই তাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় না।
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় ১০৫০ ডলার প্রায়, কিন্তু বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্য আয়ের ধনী দেশ হতে চলেছে । মানে এই দেশের অর্থনীতির সাইজ অনেক বড়। এই সাইজের অর্থনীতিতে সম্পদের সুষম বণ্টনে যাকাত একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। যাকাত গরীবের প্রতি ধনীর করুণা নয় বরং হক। সমাজের যাকাত দাতাগণ ঠিকমত যাকাত প্রদান করলে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। তাই যাকাত ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ প্রতিষ্টা সম্ভব।
যাকাত এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা যেখানে মানুষের মধ্যে সাম্য তৈরি করে। যাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকার পরেও যদি কোনো ব্যক্তি সঠিক পদ্ধতিতে যাকাত আদায় না করেন তাহলে এই সম্পদই কেয়ামতের দিনে তার জন্য সাপ হয়ে তাকে দংশন করবে। খলিফা আবু বকর (রা.) যাকাত অস্বীকারকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বুঝিয়েছেন যাকাত কত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই আমাদেরকে নিজেদের সম্পদের পবিত্রতার জন্যই নিজ উদ্যোগে যাকাত আদায় করতে হবে।
লেখা পাঠান ই-মেইলেঃ chilekothasahitto@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন