চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

কোন কাননের ফুল

কোন কাননের ফুল | মোঃ আব্দুল সবুর  


ইদানিং আমাকে একটি প্রশ্নের খুব বেশী সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রশ্নটা এই, কখন বিয়ে করছি আমার বস শিবলু স্যারতো রীতিমত উঠে পড়ে লেগেছে আমার বিয়ে নিয়ে। স্যার আমাকে ছোট ভাইয়ের মত দেখতে পারে তাই বারবার তাগিদ দেয়, কারণ স্যার দেরিতে বিয়ে করেছিলো বলে এখনো আপসোস করে। স্যার বিবাহীত জীবন নিয়ে খুব বেশী সন্তুষ্ট। কথায় কথায় ম্যাডামের প্রশংসায় মেতে উঠে। কয়েক দিন ধরে র্মাচেন্ডাইজিং ম্যানেজার জিনা ম্যাডাম আমাকে একটি মেয়ের কথা বলছে। ম্যাডামের মতে মেয়েটি খুব ভালো। জীবনে অনেক কষ্ট করে নিজের অবস্থান তৈরী করেছে। আমার সাথে নাকি খুব মানাবে। ম্যাডামের কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে ডাইরিতে লিখে নিলাম।
মেয়েটির নাম কানিজ (ছদ্মনাম)। রাতে ডাইরি থেকে নাম্বার নিয়ে ভাবছি কল দেব কিনা। যদি ও ম্যাডাম আমার ব্যাপারে তাকে বলেছে, তবু অদ্ভুত একটা অচেনা অনুভুতি হচ্ছে। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে। দুরু দুরু বুকে তাকে ফোন দিলাম। পরিচয় দিতেই চিনতে পারল। মিনিট পাঁচেক কথা বলে ভাল লাগলো.............
সোনালী স্বপ্ন সকাল। আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আজকের দিনটি আমার মনে অন্যরকম শিহরণ ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমি আজ কানিজের সাথে দেখা করব প্রজাপতি পার্কে। তাই আজ এই বিশেষ দিনটি বিশেষ মানুষটির জন্য বেছে নিয়েছি। ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। বারবার নিজেকে আয়নাতে দেখছি। নিজেকে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করছি। ভাল পারফিউম গায়ে ব্যবহার করলাম। খুব নার্ভাস বোধ করছি। নিজেকে প্রথম পরিচয়ে ভালো ভাবে উপস্থাপন করার কমতি রাখছি না।
এখন আমার ছোট্ট আকাশকে খুব বেশী মিস করছি। সত্যি সে যদি আমার আকাশ হতো। তাহলে আমি তার আকাশের মেঘ হতাম। সুখী মেঘ হয়ে ভেসে যেতাম। হয়তো বা কখনো অভিমানী বৃষ্টি হয়ে ঝরে যেতাম তার বুক থেকে .......
রেডি হয়ে আগ্রাবাদ আসলাম। আজ ফুলের দোকানে খুব ভীড়। ভীড় ঠেলে চৌদ্দটি লাল গোলাপ নিলাম, সাথে একটি সাদা গোলাপ নিলাম। সাদা গোলাপটি লাল গোলাপের মাঝখানে রাখলাম কারণ সাদা গোলাপ আমার পক্ষ থেকে বিশেষ বার্তা বহন করবে মেয়েটির জন্য। সিএনজি নিয়ে নেভালের দিকে ছুটলাম। পার্কের সামনে এসে কানিজকে ফোন দিলাম আমার সামনে একটি মেয়ের মোবাইল বেজে উঠলো.. হ্যাঁ, কানিজ। আমাকে দেখে মুচকি হাসল। কানিজ নীল শাড়ী পরে এসেছে। হাতে নীল চুড়ি। মোহনীয় চোখদুটি খুব সুন্দর, যেন “হারানো সুর” এর সুচিত্রা সেন। তার সৌন্দর্যে আবিষ্ট হয়ে গেলাম। আমি এমনই স্বপ্ন দেখতাম আমার স্বপ্নচারিনী এমনই হবে.... হঠাৎ মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল। “এই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠ!”
চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে উঠলাম। মাকে বললাম, “একটু পর ডাকতে পারলে না? কত সুন্দর তোমার পুত্রবধুকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম। সব মাটি হয়ে গেল তোমার ডাকে!”
অফিসের জন্য রেডি হয়ে আগ্রাবাদ আসলাম। ফুলের দোকানের দৃশ্য ঠিক তেমন, যেমনটা স্বপ্নে দেখেছি। ফুলের দোকানে উপচে পড়া ভীড়। দোকান থেকে চৌদ্দটি গোলাপ নিয়ে ছুটলাম এয়ারর্পোট এর দিকে। আজ আমার বায়িং হাউজের চেয়ারম্যান মি. লেমির জন্মদিন ফুল দিয়ে উইস করবো। সিএনজি সী-বিচের পাশ দিয়ে যাচ্ছে। তরুণ তরুণী জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এখন আমার ছোট্ট আকাশকে খুব বেশী মিস করছি। সত্যি সে যদি আমার আকাশ হতো। তাহলে আমি তার আকাশের মেঘ হতাম। সুখী মেঘ হয়ে ভেসে যেতাম। হয়তো বা কখনো অভিমানী বৃষ্টি হয়ে ঝরে যেতাম তার বুক থেকে .......
কিন্তু জীবন কল্পনার মত সুন্দর নয়। জীবন কঠিন বাস্তব। টাকার হিসাবের জালে বন্দী বাস্তব। যে বাস্তবে আমার মত মানুষের সুন্দর কল্পনায় ভেসে যাওয়া বিলাসিতা এবং অনুচিত.....

মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠার জনপ্রিয় বই


চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২৩’ এর নির্বাচিত বই



চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২২’ এর নির্বাচিত বই