চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

মায়ের কাছে খোলা চিঠি......

মায়ের কাছে খোলা চিঠি...... | প্রান্ত স্বপ্নিল   


প্রিয় মমতাময়ী মা,
পত্রের শুরুতে আমার প্রণাম নিও। কেমন আছো তুমি?? উত্তরটা কোনদিন না বললেও কিংবা বলতে না চাইলেও আমার কাছে অজানা নয়। কেননা, যে মানুষ সকলকে এতো ভালবাসতে পারে, এতো ভালোবাসা দিতে পারে, আদর, মমতায় যার মন এতো পরিপূর্ণ, সে ভালো থাকতে পারে না তা কি হয়, বল তো মা!!! পত্রটি পড়ে তুমি হয়তো বাঁকা ঠোঁটে হাসছো আর আত্মজিজ্ঞাসায় নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করছ, দৃষ্টির সামনে থেকেও দৃষ্টির আড়ালে এতো কিছু লেখার দরকার কি??? আসলে, তোমাকে ছেলেবেলা থেকে যত দেখেছি,ততই অবাক হয়েছি এবং অনেক অব্যক্ত অনুভূতি জন্ম নিয়েছে ধীরে ধীরে এই মনের গহীনে। কিন্তু প্রকাশ করার সুযোগ হয়ে উঠে নি কখনও কিংবা সাহসেও কুলোয় নি। তাই সুযোগ পেতেই একটি খাতা আর কলম নিয়ে সহজ আর সাবলীল ভাষায় তোমাকে নিয়ে কিছু লিখতে বসে পড়লাম। লিখতে গিয়ে কলমটা এতো কাঁপছে কেন জানি না?? শব্দগুলো কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, কলমের কালিও কেমন যেন অনুভূতিশুন্য।
মনে আছে মা, শৈশবে একটি দুঃস্বপ্ন দেখে দীর্ঘ রাত কেঁদেছিলাম আর তুমি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলে?? সেই স্বপ্নে তোমাকে তো হারিয়ে ফেলেছিলাম প্রায়। ঘটনাটা ভাবলে এখনও ভয়ে শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে যায়। এরকম দুঃস্বপ্ন কস্মিনকালেও দেখতে চাই না আর। তখন ক্লাস থ্রি কি ফোরে পড়ি, একদিন দেখলাম তোমার চুল কয়েকটা পেকে গেছে। তখন ধারণা ছিল, চুল পেকে গেলে মানুষ তাড়াতাড়ি মারা যায়। সেই পাকা চুল দেখে আমার সে কি হাউমাউ কান্না!!!
আচ্ছা যাক সে সব কথা। এখন বয়সটা যখন বিশের কোঠায় ছুঁই ছুঁই, তারুণ্যের বাতাবরণ যখন অনুভব করছি ক্ষণে ক্ষণে, তখন নতুন একটা শব্দ বেশ পীড়া দিচ্ছিল। আশা করি,শব্দটা কি হতে পারে তা বেশ টের পাচ্ছ। তাই শব্দটার অর্থ খুঁজতে গিয়ে বেশ হাঁপিয়ে উঠেছি আর ধরেই নিয়েছিলাম এর অর্থ খুঁজে পাওয়া মেলা ভার। কিন্তু যখন হতাশ হৃদয়ে তোমার দৃষ্টিতে নিজেকে নিবন্ধ করলাম, তখন ভাবতেই পারি নি শব্দটির অর্থ এতো সহজে খুঁেজ পাবো। তুমি যখন ক্ষণিকের জন্য দৃষ্টির আড়াল হও, তখন বেশ শূন্যতা অনুভব করি। সেই শূন্যতাকে ভালোবাসা বললে ভুল হবে, এর থেকেও আরও বেশি কিছু। সেটা তুমি বিবেচনা করে নিয়ো,কি হতে পারে শব্দটা। মনে আছে মা, শৈশবে একটি দুঃস্বপ্ন দেখে দীর্ঘ রাত কেঁদেছিলাম আর তুমি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলে?? সেই স্বপ্নে তোমাকে তো হারিয়ে ফেলেছিলাম প্রায়। ঘটনাটা ভাবলে এখনও ভয়ে শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে যায়। এরকম দুঃস্বপ্ন কস্মিনকালেও দেখতে চাই না আর। তখন ক্লাস থ্রি কি ফোরে পড়ি, একদিন দেখলাম তোমার চুল কয়েকটা পেকে গেছে। তখন ধারণা ছিল, চুল পেকে গেলে মানুষ তাড়াতাড়ি মারা যায়। সেই পাকা চুল দেখে আমার সে কি হাউমাউ কান্না!!! এখন তোমার বয়স সত্যি সত্যি বাড়ছে, মাথার চুলগুলোও কেমন যেন সফেদ বর্ণ ধারণ করছে, কিন্তু এখন আর আমি আগের মত বাচ্চাটি নেই। বড় হতে গিয়ে অনুভূতিগুলোতে কেমন যেন মরচে পরেছে, মা।
ইসস, যদি একটা টাইম মেশিন থাকতো, সেই ছেলেবেলায় ফিরে যেতাম। প্রাইমারি লেভেল শেষ করতে না করতেই যখন মাধ্যমিকে পদার্পণ করলাম, তখন তোমার প্রতি আমার চাপা একটা ক্ষোভ তৈরি হল। একটু বড় হতে না হতেই তুমি আমাকে আর বুকে জড়িয়ে ধরতে না, তাই কৌতূহলী হয়ে এরূপ বালখিল্য প্রশ্নটা করেছিলাম। তুমি উত্তর দিয়েছিলে, “আরে বোকা, এখন বড় হয়েছিস না তুই, ভালোবাসা তো মনে মনে, লোক দেখানো ভালোবাসা ভালো নয়”। তোমার কথায় কেমন যেন একটা ভয়ের গন্ধ পেতাম। সেটা কি আমাদের হারানোর ভয়, মা??? উত্তরটা আজও অজানা।। আবার তোমার সাথে ঝগড়াও কম করি না বটে। একটা বড়সড় ঝগড়া মানে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা তোমার আর আমার মাঝে একটি মানসিক এবং বাচিক দূরত্ব। সেই ঝগড়া শেষে যখন কোন কাজ সেরে বাসায় ফিরি ,তখন তোমার বাকশূন্য মলিন চেহারা দেখে আমার সারা দিনে হৃদয়ে জমানো কথামালাগুলো কেমন যেন বোবা হয়ে ফিরে আসে,নিঃশ্বাস নিতে কেমন যেন বেশ কষ্ট হয় আর নিস্তব্ধতা যেন গুমরে কেঁদে উঠে মনের অন্তরালে । তখন নিজেকে দূষী, “কেন এমনটা করলাম?? আমি আসলেই একটা অপদার্থ”। তবে সবচাইতে মজা লাগে তোমার রাগ ভাঙ্গাতে। কারণ রাগ ভাঙানোর ছলে তোমাকে বেশ কয়েকবার জড়িয়ে ধরি, কিংবা কপালে চুমু এঁকে দিই। এহেন সুযোগ কেউ কি হাতছাড়া করে!!! তখন মনে মনে প্রতিজ্ঞা নিই, এরকম মধুর রাগ ভাঙাতে তোমাকে হাজারবার রাগাতে প্রস্তুত।
ছোটবেলায় তোমার বাহুডোরে পরম ছায়ায় চুপটি করে যখন ঘুমিয়ে পড়তাম, তখন মনে হতো এর থেকে পরম শান্তি ত্রিভুবনের আর কোথাও হতে পারে না। ভাবছ আমার ছোট বাবুটি এতো কথা বলতে শিখল কবে ? জান তো, এখনও সেই আগের মত তোমার বুকে মাথা রেখে ছোট বাবুটির মত ঘুমুতে বেশ ইচ্ছে করে, কিন্তু কেন যে বড় হয়ে গেলাম। তোমাকে বলতেও বড্ড লজ্জা লাগে, তাই আমার অব্যক্ত অনুভূতিটুকুন এখানে ব্যক্ত করার অল্প প্রয়াস মাত্র । তুমি যখন বাবার সাথে ঝগড়া কর, তখন সেই ঝগড়াতেও কেমন যেন একটা মিষ্টি সম্পর্কের সুবাতাস পাই। তোমাদের এই টক-মিষ্টি-ঝাল সম্পর্কের রসায়ন হতে আমিও ভবিষ্যতের জন্য কিছু সূত্র তৈরি করেছি। জীবনে অনেকবার পিছনে ফিরে তাকিয়েছি, কিন্তু সেই পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলে তুমি পথপ্রদর্শক হয়ে আর সাহস যুগিয়েছ সামনে তাকানোর জন্য। তোমার এই প্রেরণাকে বৃথা যেতে দিবো না, মা। শুধু তুমি পাশে থেকো বন্ধুর মত আর ছায়া হয়ে । তুমি নিজেই জানো না মা ,তুমি আসলে কি?? তুমি একাধারে শাসক, সেবক, মমতাময়ী, আবার আমাদের পরম বন্ধু। মা থেকে তোমাকে বন্ধু বলেই বেশি জেনেছি।
তোমাকে যতই বলি, ততই কম বলা হবে, মা। কলমের কালি ফুরিয়ে যাবে কিন্তু তোমাকে নিয়ে আমার অনুভূতি, ভালোবাসা কোনদিন ফুরাবে না। তাই হাতের কলমকে এখানেই ক্ষান্ত দিচ্ছি, হৃদয়ের কলম দিয়ে নয়। অবশেষে, জানি না পুনর্জন্ম বলে কিছু আছে কিনা!! যদি থেকে থাকে, তবে অন্তর্যামীর কাছে প্রার্থনা করবো আমি যদি পৃথিবীতে মানুষ রূপে ফিরে আসি অযুত-লক্ষ-নিযুত বার, শুধু তোমার কোল জুড়েই যেন আসি।
ভালো থেকো মা। এভাবে পাশে আছো, থাকবে ভালোবাসার পরশ পাথর হয়ে... তোমার ভালবাসাতেই নিজেকে ভালোবাসার কাঙাল হিসেবে গড়ে তুলেছি। তবুও কেমন যেন হৃদয়টা কাঁদছে আর অন্তরাত্মা বলে বেড়াচ্ছে, “শেষ হয়েও হইল না শেষ”। সত্যিই মা, আসলেই তোমার গল্পের শেষ নেই...... এ যে নিরবধি বয়ে চলা নদীর মত.........
ইতি-
তোমার পাগল ছেলে

মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠার জনপ্রিয় বই


চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২৩’ এর নির্বাচিত বই



চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২২’ এর নির্বাচিত বই