একটি মানবকলি ও মানবগণের মানবিকতা | হামিদ আহসান
গুঁড়ি গুঁড়ি জলের ছিঁটার মত হালকা বৃষ্টিতে আপন মনে হাঁটছে রাজিব। এমন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাঁটা রাজিবের খুবই প্রিয় একটি কাজ। এর পক্ষে তার একটা অদ্ভুত যুক্তি আছে। এসময় কেবল তার জীবন ও জগত সম্পর্কে অনেক ভাল ভাল চিন্তা ও দর্শন তার মাথায় আসে। জীবনের চড়াই উৎরাইয়ে নানা জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এসব চিন্তা তাকে নাকি সাহায্য করে । আজ বারডেমে গিয়েছিল। এক আত্মীয় ভর্তি আছে সেখানে। তাকে দেখতে গিয়েছিল। ফেরার সময় দেখে এমন বৃষ্টি। হাতে ও সময় ছিল। তাই রিকশা না নিয়ে হাঁটতে শুরু করল। উদ্দেশ্য নীলক্ষেত। নীলক্ষেতের তেহারী খেয়ে তারপর পলাশীর মেসে ফিরবে।
আষাঢ় মাস। রাত দশটার মতো বাজে। রাজিব হাঁটছে আপনমনে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে তো হচ্ছেই। এমন হালকা বৃষ্টি যার মধ্যে ঘন্টাদুয়েক হাঁটলেও দেখা যায় শরীরের কাপড় একেবারে ভিজে যায়না। মাথাটা কেবল ভিজে জবজব হয়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতে শাহবাগ পাড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র হয়ে নীলক্ষেতের দিকে হাঁটতে শুরু করল রাজিব। রোকেয়া হল পাড় হয়ে ভাষাতত্ত্ব ইনিস্টিটিউটের ফুটপাত ধরে হাঁটতে গিয়ে তার কেমন যেন একটু ভয় ভয় করল। সময়টা রমজান মাসের একেবারে শেষ দিকে। দুইদিন পর ঈদ। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। তার উপর এমন আষাঢ় মাসের বৃষ্টির দিন। এদিকটায় কোনো মানুষজনও নেই; এইমুহূর্তে কোনো রিকশা বা গাড়িও নেই। মাথার উপরে বড় বড় গাছ ঢালপালা বিস্তার করে আছে। ঝিঁঝিঁ পোকারা কলরব করে যাচ্ছে একটানা।
‘তোর কি অনেক ক্ষুধা পাইছে?’
‘হ, ক্ষিদা পাইছে দেইখাইতো কাঠবডি শরীলডারে যন্ত্রণা দিয়া পেডের ক্ষিদার যন্ত্রণা মিটাইতে চাই! নাইলে বাঁচুম কেমনে? আর আমরা না বাঁচলে আপনাগো বিষ মিটাইবেন কই? আপনাগো বিষ মিটানের লাইগাই আমরা বাঁইচা থাকুম।’









মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন