কাগজ ফুলের বাহাস
শুভনীল
প্রতি মিনিটে জানালা খুলছে দুইশত পঞ্চাশবার, বন্ধ হচ্ছে একশত পঞ্চাশবার।
পৃথিবীর জরিপ করতে যেয়ে জন্ম মৃত্যুর এমনই হিসাব জানা গেলো। পৃথিবী, প্রেমে বিরহে জড়িয়ে যাওয়া এক গ্রহের নাম। এই
ভেবে জানালার দিকে চোখ
চলে গেলো। গাঢ় রাতের সুর জানালা দিয়ে ঢুকছে, দূর
দেশের আলো এসে দেয়ালে রেখা একে যাচ্ছে, গাছ থেকে শব্দ করে পাতা ঝরছে, জানালায় এসব
শব্দ যখন তখনই ঢুকে পড়ে। কেননা জন্ম তো তাই, যা বেঁচে থেকে থেকে দৃঢ় হয়।
জানালার দিকে চোখ মিশে যেতে যেতে চোখ চলে গেলো নিকটতম এক জানালার
দিকে। কিছুক্ষণ আগেই জানালাটি বন্ধ হয়েছে। ওই জানালা দিয়ে সূর্যের উপহার আর ঢুকবে
না, গভীর রাত হলে পাতা ঝরা শব্দও ঢুকবে না আর। কে শুনবে! কে দেখবে! কে ভাববে!... এমন
ভাবতে ভাবতেই দেয়ালে ঝুলানো ছবিটির দিকে চোখ চলে যায়। মানুষের পরিণতি যে ফ্রেমে
থেমে যায়, যাকে মৃত্যু বলেই হিসেব করা হয়। মূলত জানালা বিষয়ক এমন সংবিধানই
পৃথিবীকে ভারসাম্যের দিকে ঠেলে দেয়, পৃথিবী টিকে থাকে। আর টিকে থাকে যার যার কষ্ট,
সুখ, অবিশ্বাস। তাছাড়া বেঁচে থেকে যে নিয়ম রচিত হয়, তাতে শোক ও সুখ থাকে বলেই তো
দীর্ঘ হয় বেঁচে থাকা। কখনও গতি কখনও আবার থেমে যাবার সুত্রেই সম্পাদিত হয় গণিত। তো
চলুন গণিতের দিকেই উপহাস নিক্ষেপ করা যাক। আর উপহাস নিক্ষেপ করা হয়ে গেলেই শুরু হয়
রাজনীতি, ধর্মযুদ্ধ, দাঙ্গা, ষড়যন্ত্র ও ভাঙন।
জরিপের পর শুরু হওয়া এসব ঘটনা যদিও
প্রান্তিক বনাঞ্চলে খুব একটা পৌঁছায় না। পৌঁছায় না বলেই মধ্য দুপুরে- জানালায়
শুকাতে দেয়া রুমাল নড়ে ওঠে। এখানে ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে ভিন্ন সুরে। আঁচ করা যায়
জানালার ওপাশে কোনো প্রেমিক তার প্রেমিকার স্মরণে লিখে চলছে
শোক। যেহেতু স্মরণেই দীর্ঘ হয় মৃত্যু, দীর্ঘ হয় বিচ্ছেদ আর বিগত দিনের ভালোবাসা।
এমন করেই উন্মুক্ত জানালাটির জরিপ করা হলে বুঝা যায়, মানুষের বিবিধ আয়ুসমাচার। যা
কিনা শেষমেশ প্রতি মিনিটে এসে রূপান্তর হয়ে যেতে থাকে। জন্মের হিসাব কিংবা খুলে
যাওয়া জানালার হিসাব এভাবেই একসময় গাণিতিক হারে বের হয়ে যায়। এই যে হিসাব বের হয়,
তার ভিতরেই কোথাও লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা। বস্তুত ভালোবাসা তো তাই, যা গোপন অভিসারের
মতো সম্পর্ক রচনা করে যায়- সকল ইন্দ্রিয়ে। সুখে অসুখে এই যে ভালোবাসা রচনা হতে
থাকে, তারই পথে হেঁটে পারাপার হয় বিশ্বাস, পারাপার হয় সুখ, সঙ্গম এবং উন্মুক্ত হয়
ভবিষ্য জানালা। হিসাবের ভিতরের অংশ এসব, যাকে এড়িয়ে যাওয়া আর ভুল সুরে যুদ্ধ
বাধিয়ে দেয়া প্রায় সমান ফলাফল এনে দেয়। আর ফলাফলগুলো প্রকাশ পেতে পারে শোক, মৃত্যু,
বিচ্ছেদ, হত্যা, ঘৃণা ও নির্বাসনে। পরিণতির এমন অকূলে বেঁচে থাকা- হিসাবের ভিতর এক
অর্থ প্রকাশ পায়, যার সাথে অন্যকূলের কোনো মিল নেই। কিংবা আছেও। যেহেতু বেঁচে থাকা
নিজেই এক আবহমান সত্য নিয়ে বয়ে চলে। কেননা দিন শেষে যার যার সিলিঙে চোখ গেঁথে
দেয়াই তো অবশিষ্ট কাজ, মানুষের। সে অর্থে জরিপের মাঝেই সমতার ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
যদিও সমতায় বিশ্বাস রেখে খুব জোর ভালোবাসা অধিকার করে নেয়া যায়, আর কিইবা হবে! এই
ভেবে হিসেবের ভিতর চলতে থাকে দ্বন্দ্ব। বিতর্কিত হয় জন্ম, মৃত্যু ও জানালার জরিপ।
তখন রাগে অনুরাগে দুয়েকটি সত্যফুল ছিঁড়ে যায়, অভিমান করে দূরে চলে যায় রাত। সময়ের
অংকেও মিশে যায় অসংখ্য ভুল দিনরাত্রি।
দ্বন্দ্বকেও না হয় নিক্ষেপ করা গেলো, গণিতের দিকে। কিন্তু ভোরের পর
যদি নিঃসঙ্গতা এসে থামিয়ে দেয় মানুষের প্রাচীন ঘূর্ণন, যদি শব্দে শব্দে কেউ লিখে
চলে অবশিষ্ট দিনের লিরিক, যদি ব্যাক্তিগত নদীটির কাছে ক্রমে ক্রমেই দূরত্ব বেড়ে
যায়, তখন বিগত দিনের পারাপার বুকে নিয়েই কেউ কেউ চলে যায়। আর বন্ধ হয়ে যায় জানালা।
নব আশা যদিবা ঢেকে যায় হতাশার কাছে, যেন অতীত নিয়েই চলে যায় মানুষ। সুতরাং বারবার
বন্ধ হবে জানালা। তাই প্রেমে বিরহে যে জানালা বন্ধ হয়ে গেলো সে হিসেব আয়ু দিয়ে ভাগ
হলে পরে কোনো সত্যসুন্দর ফলাফল পাওয়া যায় না, যাকে মৃত্যুর নামে ইতি টেনে দেয়া
যেতে পারে। সে কারণে দ্বন্দ্বকেও নিক্ষেপ করা হলো, গণিতের দিকে। ঠিক যেমন করে
গণিতের দিকে উপহাস নিক্ষেপ করা হয়েছিল। আর সুখে অসুখে গাঢ় হতে চলেছে যে জীবন, দায়
নিয়ে যে এখনও রচনা করে যায় দেহ- আগুনেরও আগে তার শব ক্ষয়ে যাবে ভেবেই বেছে নেয়া
হলো সঙ্গম। উত্তরাধিকার রেখে যেয়ে বিলাপিত হৃদয় মরে
যাবে বলে নয়, ভালোবাসায় ব্যকুল হওয়া হৃদয় মিলনের পথে সুখী হবে বলেই- দেহের ভিতরে
দেহ জড়িয়ে যায়। এবং উত্তরাধিকারও যদি ভবিষ্য জানালাতেই এসে থেমে যায়; তবে তাকে
ফসলের সাথেই তুলনা করা চলে। পৃথিবীর কাছে যে ফসল একটা সুন্দর বার্তা নিয়ে আসে। ফসল
অর্থাৎ আরও একটি নতুন জানালা, যে খুলে যাবে অল্প কিছুদিন পর। তারপর সে জানালা দিয়ে
একদিন ঢুকে পড়বে দুপুর বেলার রোদ, সাথে পাতা ঝরা শব্দের সুর জানালায় এসে একটা নদীর
খোঁজ দিয়ে যাবে। একটু একটু করে সে জানালায় উপচে পড়বে আলো, যেন দেয়ালে দেয়ালে
চিত্রিত হয় আয়ুরেখা। আর এমনই করে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে মিনার, মূলত বেঁচে থেকে
থেকে যে মিনার রচিত হয়। পৃথিবীতে এমন অসংখ্য মিনার আছে, যা সহজেই জরিপের ভিতর ঢুকে
গেছে। কেননা জন্মমৃত্যুর এইসব জরিপ যে হিসেবের জের টেনে দিয়ে যায়, তার স্রোত ধরেই
তো প্রবাহিত হবে নদী, জেগে উঠবে মায়া, জমে উঠবে ভালোবাসার সফলতম অধ্যায়। বৈকালি বাতাসে
যদি নড়ে উঠে রুমাল, জানালার কাছে তার
অর্থ কী হতে পারে, তাই ভেবে নিয়ে জানালায় চোখ গেলে
স্পষ্টতই দেখা মিলে, ভালোবাসায় বিজিত মুখ। যে মুখ হিসেবের অংশ, জরিপের ভিতরে এইসব
মুখেরাই জমা হতে থাকে। যা ক্রমশ রূপান্তরিত হতে হতে মিশে যায় বছরে, মাসে, দিনে,
ঘন্টায়, এমনকি মিনিটেও। এই যে চক্রের ভিতর বয়ে চলে পৃথিবী, তার কোনো জটিল কারণ
নেই। কিংবা আছেও। তবুও হিসেব ঠিকই চলতে থাকে, সম্পর্কের মাঝে যেমন পারাপার হতে
থাকে বিশ্বাস তেমনই করে পারাপার হতে থাকে হিসেব। যে হিসেব দুটি বিপরীত অর্থে
প্রকাশ পায়। তার একটি অর্থ দাঁড়ায় থেমে যাওয়া। আর অন্য অর্থ দীর্ঘতর হওয়া মিনারের
দিকে চোখ গেলেই বুঝা যায়। তবু একদিন থেমে যাবে হিসেব, সে আয়ুরেখায় ক্ষত নিয়েই হোক,
আর দুঃখে যন্ত্রণায় অভিযুক্ত হয়েই হোক থেমে যেতে হবে। কেউ আবার ঠিক বুঝে যায়, কখন থামতে হবে! কেননা থেমে গেলেই অধ্যায় শেষ
হবে, স্তব্ধ হয়ে যাবে দীর্ঘতর মিনারের নিজস্ব উচ্চতা। আর বন্ধ হয়ে যাবে জানালা।
সেই শোকে অন্য এক জানালায় উপচে পড়বে স্মৃতি। তখনো অন্ধকার হবে, আর বাতাসে মুছে
যাবে নিজস্ব শোকের ভাষা। যে ভাষা পাতা ঝরা শব্দে মিশে যেয়ে মুখরিত করে তুলে
জানালা, দূরবর্তী জানালা। যে জানালা শোক নিয়ে দীর্ঘ করে চলে মিনার, জরিপের ভাষায়
যাকে বেঁচে থাকা বলে চিহ্নিত করা হয়। আর এই যে বিয়োগের ফলে যোগ কিংবা যোগের ফলে
বিয়োগ হতে চলেছে পৃথিবী, মূলত তাই নিয়ে চলে হিসেব। যদিও হিসেবের এইসব দিক যেকোনো
দৃশ্যকেই জটিল করে তোলে, মানুষের চোখে যা ভাববাদীদের জন্য জমিয়ে রাখা কাজ বলেই
নির্মিত হয়ে আসছে, আবহমানকাল ধরে। তাই জটিল দৃশ্যকে এড়িয়ে যেতে হলে আরও একবার
গণিতের দিকে উপহাস নিক্ষেপ করা যেতে পারে। দ্বন্দ্বকেও নিক্ষেপ করা যেতে পারে,
গণিতের দিকে। যেহেতু জানালা বিষয়ক এইসব দ্বিধার কোনো নির্ধারিত ফলাফল পাওয়া যায়
না, যা নিয়ে সান্ত্বনা খুঁজে যাবে মানুষ। যে কারণে সংশয়বাদীর হাতে গড়া এ জরিপ
নিজেই হয়ে যায় এক সংশয়বাদী দলিল। যাকে এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে; যেমন ঘৃণায়,
অবহেলায়, উপহাসে কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়া জানালার কাছে শোক লিখে লিখে। আবার বিপরীতে
তাকালে দেখা যায় ভালোবাসায় সুখী হওয়া মুখ কী নিশ্চিন্তে গেঁথে চলেছে মালা। ব্যাস, সংশয়বাদী দলিল সেখানেও তীব্র
আকর্ষণ নিয়ে থেকে যায়। কিন্তু সংশয়বাদীর হৃদয় থেকে শুরু হওয়া নদী তো এমনই হয়ে
থাকে, যে কালে কালে বাঁক নিয়ে চলে গেছে, যে সরলরেখাকে ভেঙে ভেঙে গড়ে তুলেছে ঢেউ। যে
বছরের পর বছর অপেক্ষা করে গেছে, কেউ আসবে ভালোবেসে নিজস্ব করে নেবে এমন আশা নিয়ে
জেগে থেকেছে দিনের পর দিন। দম বন্ধ হয়ে আসা ঘোরের কাছে যে কিনা খুলে দিয়েছে
জানালা, যেন এই বুঝি বাতাসের শব্দে ভেসে আসবে সেই সুর, সেই দাবি। যেন সঙ্গমরত
দৃশ্যটির কাছে এসে জমে থাকে অন্ধকার, কেননা দেহের অতলে দেহ মিশে গেলে যে অন্ধকার
রচনা হয় তাই নিয়ে খুলে যাবে জানালা, ভবিষ্য জানালা। যেন ভোর হলে পরে নিঃশ্বাসে
নিঃশ্বাসে বেজে ওঠে ভালোবাসা। যেন বুঝে নেয়া যায় মিনিটে দুইশত
পঞ্চাশবার জানালা খুলে যাবার বিবিধ হিসেব। যে হিসেব বিপরীতে ভিন্ন সুর নিয়ে মিশে
যায়। যে সুর কেবলই নিস্তব্ধতায় বেজে উঠে। এই ভেবে ঘনিষ্ঠতম জানালাটিকে ছুঁয়ে দেখে
যে সংশয়বাদী, তার স্পর্শের মতো সুখেই একদিন স্রোতস্বিনী হবে নদী। যেন ভালোবাসায়
বেড়ে যায় আয়ু, যেন দীর্ঘ মিনারটিও সেই সুযোগে উচ্চতার সীমাবদ্ধতা বুঝে নিতে পারে। জন্মমৃত্যুর
এই যে পরিণতি জানালায় ফুটে ওঠে, তাই নিয়ে বেঁচে থাকা মহৎ হয়। কখনও জন্মে কখনও বিচ্ছেদে পৃথিবীতে বারবার সৃষ্টি হবে ভোর, বারবার ধ্বংস
হবে রাত। যেন ভালোবাসায় বারবার আশ্বাস খুঁজে যায় বিপর্যস্ত প্রেমিক, সে সুযোগে
কোনো কোনো প্রেমিকা তার ইন্দ্রিয়ে ভালোবাসা মিশিয়ে নির্মাণ করে যাবে বাগান, যুগল বাগান। দিনের আশ্চর্য এক মুহূর্তে যে বাগানে ফুটে ওঠবে
ফুল, এই দেখে জানালায় চোখ যাবে। খোলা জানালায় বেঁচে থাকা সুখ ঝরে পড়বে, মেঘে মেঘে
ঢেকে থাকবে হিসেবের নামে লিখে রাখা সমস্ত অবিশ্বাস। যেন আয়ুরেখা ঘিরে রেখে সৃষ্টি
হয় নব নব জানালা, যে জানালা বিগত দিনের ভালোবাসায় খুলে যাবে। যে জানালা পরবর্তী
দিনের জন্য গড়ে তুলবে সুখ, গড়ে তুলবে উপযুক্ত উত্তরাধিকার। আর এসব কিছুই জরিপের
অংশ, যে জরিপ প্রেমে অপ্রেমে বেঁচে থাকার কথা বলে যায়। যে জরিপ শোকে পাথর হয়ে যেয়ে
স্তব্ধ হবার সূত্র বলে যায়।
যে হিসেব ধরে রাখে মানুষের ঘূর্ণিত স্মৃতি, সে হিসেব নিয়েই শুরু হয়
গণিত। যে গণিত বয়ে চলা বাতাসেও মিশিয়ে দেয় তার নিরপেক্ষ আবেদন। ফলাফলস্বরূপ মিনিটে
জানালা খুলে যায় দুইশত পঞ্চাশবার, জানালা বন্ধ হয়ে যায় একশত পঞ্চাশবার। গাণিতিক এমন
প্রকাশে যদি ছোটো হয়ে আসে বন্দর; যদি
আলো নিভে যায়; যদি যুদ্ধে, দাঙ্গায়, অবহেলায় ভেসে যায় বিশ্বাস; হৃদয়ের কাছে তবু
জমা হবে হৃদয়। যেমন দেহের কাছে জমা পড়ে যায় দেহ। বাস্তসংস্থানের ফলাফল মনে রেখে কে
কবে ফুটিয়েছিল ফুল! মুহূর্তে মুহূর্তে বদলে যাওয়া এইসব হিসেব তবু সত্য নদীর কাছে
মিশে যায়। কেননা বয়ে চলাই কালের নিয়ম। যা প্রবাহে প্রকাশিত হয় জরিপের ভিতর,
হিসেবের ভিতর। হিসেব অনুযায়ী কেউ নিঃসঙ্গ হবে, কেউ বেধে রাখবে দেহের বিকার, কেউ
মরে যাবে, কেউ হারিয়ে যাবে। আর এইসব মেনে নিয়েই বয়ে চলে জরিপ, কালের জরিপ। যেন প্রবাহের
মাঝেই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়- মানুষের জীবন।
----------------------------------------------------------------------------
লেখা পাঠান- chilekothasahitto@gmail.com
----------------------------------------------------------------------------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন