চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

আমারও ঘর আছে চিলেকোঠায়


আমারও ঘর আছে চিলেকোঠায় 
হাসান মাহবুব

“চিলেকোঠা নিয়ে তরুণ প্রজন্মের শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভেতর ব্যাপক রোমান্টিসিজম কাজ করতে দেখা যায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। এক  'চিলেকোঠার সেপাই' নামেই রয়েছে একাধিক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ এবং সঙ্গীত। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সেই মাস্টারপিসের সাথে অবশ্য আর্টসেলের আন্ডারগ্রাউন্ড মিক্সড এ্যালবামের গানটির তুলনা করা ঠিক হবেনা। প্রায় একইসময়ে এলিফেন্ট রোড নামক আরেকটি আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড 'চিলেকোঠা' শিরোনামে একটি গান গেয়েছে। খারাপ লাগেনি। তো যা বলছিলাম, এই চিলেকোঠা নিয়ে কত বিমূর্ত ছায়াবেগ, স্থূল মধ্যবিত্ত ফ্যান্টাসি, হৃদয়স্পর্শী কাহিনী রচিত হল, কত চিলেকোঠা উড়ে গেল ঝড়ে, কতক প্লাবিত হল জোৎস্নার ঢেউয়ে, পুড়লো কত নিকোটিন রাত্রিদিন, অথচ এই চিলেকোঠা নিয়ে আমার কোন গল্প নেই। কি করব, উথাল পাথাল জোৎস্নায় আমার প্রিয়তমা আলস্য বড়জোর বিছানার পাশের জানলাটা খোলার অনুমতি দেয়, সিগারেট খেতে হলে বারান্দায় গেলেই হয়, আর সর্বোপরি আমার ছোট্ট হলেও নিজের একটা ঘর আছে। কী সাধে চিলেকোঠায় সেধোতে যাবো! 

তবে একদিন একটু এ্যাডভেঞ্চার করে দেখলে মন্দ হয়না! ওহ প্রিয়তমা আলস্য ছাড়ো আমাকে, আমাকে যেতে দাও তারাজ্বলা রাত্তিরের কুহক মেঘ আর সৃজনশীল ধুম্রকূন্ডলীর কাছে। ছাড়ো! যেতে দেবেনা? আচ্ছা, আমার কলম আর কাগজটা দাও, এটুকু কর অন্তত! 

আমার এড্রোনালিন প্রবাহে একটা ঘর, একটা ছাদ, একটা চাঁদ, একজন অচেনা মানুষ আর তার চিন্তাভাবনাগুলো ভেসে আসছে জোয়ারের মত। আমাকে যেতেই হবে সেই ধ্রুপদী, রহস্যময় অন্ধকারে। আধ খাওয়া সিগারেট ছাদে টানিয়ে রাখা মেয়েলী অন্তর্বাস, ডিমলাইট আর চাঁদের আলোর মিশ্রণ, স্মৃতি এবং বিস্মৃতির সন্তরণ, খুব টানছে আমাকে। ওহ এই বদ্ধ ঘর! ভালো লাগেনা ঘর, ভালো লাগে ঘোর। চিলেকোঠায় নিয়ে যাও, নিয়ে যাও আমায় পূবালী বাতাস আর হাজার জোনাকপোকা। আমি কাগজ-কলম টেনে নিই। আর কিই বা নিতে পারি!

মাশরুরের সাথে আমার একটা বাজী আছে মারামারির। অবশ্যই সেটা সিরিয়াস কিছু না, তবে আমরা খুব গলাবাজী করি এটা নিয়ে কে কাকে কিভাবে পরাস্ত করবে, কতটুকু রক্ত ঝরাবে, বিবিধ হুমকি! তবে মাঝেমধ্যে কল্পনা করতে ভালোই লাগে ওর সাথে একটা তুমুল মারামারি হচ্ছে, এবং যথারীতি আমি জিতে যাচ্ছি! 

*
আনিস কাজ শেষে তার জীর্ণ চিলেকোঠায় ফিরে ঘর ঝাঁট-টাট দিয়ে ডিমের তরকারি দিয়ে বেশ একপেট ভাত খেয়ে আয়েশ করে একটা সিগারেট ধরালো। আনিসের ডিম ভালো লাগে। আর ভালো লাগে সিগারেট। আরো অনেক কিছুই ভালো লাগে, কিন্তু তার সাধ্যের মধ্যে খুব বেশি ভালোলাগার সাহচর্য পাবার জো নেই। নিম্ন আয়ের মানুষ। আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে ছোটখাটো একটা চাকরী করে এই বড় শহরে। আর ছোট বিছানাটায় ঘুমুতে গিয়ে বড় বড় স্বপ্ন দেখে।

#
যাক অবশেষে লেখাটা শুরু করতে পারলাম! আপনারা যারা আমার লেখার সাথে পরিচিত তারা সবাই নিশ্চয়ই বেশ অবাক হয়েছেন গল্পের এরকম সাদামাঠা সূচনাতে। ভাবছেন, পরাবাস্তববাদী হাসান মাহবুবের সুমতি হল অবশেষে! এখন সে গল্পের মধ্যে মেটাফোর এবং সিম্বল বলে যা চালিয়ে আসছিলো এতদিন, আদতে যা কোড বা পাজলের মত, এবার সে একটা সহজ সরল আটপৌরে গল্প লিখে ফেলবে। উমম, দেখা যাক, আসলে চিলেকোঠা নিয়ে অনেকদিন ধরেই কিছু একটা লিখবো ভাবছিলাম। তবে গল্প কোথা থেকে কোথায় যাবে এটা বলা মুশকিল। অনেকসময় এক থিম নিয়ে লিখতে বসে অন্য থিমে চলে যাই। কলম কখনও কখনও লেখকের ওপর ভর করে। কাকে যেন বলেছিলাম কথাটা? ফাহাদকে মনে হয়।

*
নীচতলায় কলাপসিবল গেট খোলার শব্দে আনিসের শিশুবয়সী ঘুমটা ভেঙে যায়। এত রাতে কে এলরে বাবা! তিনতলা বাড়িটা বলতে গেলে ফাঁকাই এখন। সবাই গেছে টাঙ্গাইলে এক বিয়ের দাওয়াতে। আনিস আপাতত এই বাড়ির কেয়ারটেকার। কলাপসিবল গেটের চাবি আর কারো কাছে নেই। ওদের কেউ কি এলো? নাহ তা কেন হবে! এত তাড়াতাড়ি কেউ আসবেনা। তবে? তবে কে আসতে পারে? ডাকাত-টাকাত নাকি? হু তাই হবে। আনিস ডিম ভালোবাসে কিন্তু ডাকাত ভালোবাসেনা। তাই সে সবজী কাটার বটিটা হাতে নিয়ে তৈরী হয়। পদশব্দ এগিয়ে আসছে। ধীর এবং ভারি গতিতে। আনিস বটিটা ফেলে দিয়ে ফল কাটার ছুরিটা হাতে নেয়। ছুরিতে ধার দিতে থাকে। যেই মাস্তানই আসুকনা কেন, দলে তারা যত ভারী হোকনা কেন, আনিস শেষ রক্তবিন্দু নিয়ে লড়বে।

#
রিপিটেশন হয়ে গেল। এর আগের গল্পেও ছুরিতে ধার দেবার উল্লেখ ছিলো। অনেক আগের আরেকটা গল্পতেও ছিলো। ছুরি, রক্ত, ভায়োলেন্স-এসবের প্রতি আমার তীব্র ফ্যাসিনেশন আছে। মাঝেমধ্যে  'আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ'-এর লিটল এ্যালেক্স হতে ইচ্ছা করে। এমনিতে অবশ্য আমি নিরীহ নাগরিক, তবে ভার্চুয়াল ভায়োলেন্স অন স্ক্রিন টার্ন মি অন! এরকম অবশ্য অনেকেরই হয়। নাহলে 'স' সিরিজের ছবিগুলো এত জনপ্রিয়তা পাবে কেন? চেনা পরিচিতদের মধ্যে অমিত, মাশরুর এদের মধ্যেও এই প্রবণতা দেখেছি। সোহান এটা নিয়ে একটা গল্পও লিখেছিলো। কঠিন এ্যাকশানধর্মী গল্প হাহা! 
মাশরুরের সাথে আমার একটা বাজী আছে মারামারির। অবশ্যই সেটা সিরিয়াস কিছু না, তবে আমরা খুব গলাবাজী করি এটা নিয়ে কে কাকে কিভাবে পরাস্ত করবে, কতটুকু রক্ত ঝরাবে, বিবিধ হুমকি! তবে মাঝেমধ্যে কল্পনা করতে ভালোই লাগে ওর সাথে একটা তুমুল মারামারি হচ্ছে, এবং যথারীতি আমি জিতে যাচ্ছি! 

সবার মধ্যেই আসলে একজন লিটল এ্যালেক্স বসবাস করে।

*
পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে। আনিস প্রস্তুত ছুরি হাতে নিয়ে। তার ভালো লাগছে। ডিমের তরকারী আর সিগারেট ছাড়াও ভালো বস্তু তাহলে আছে পৃথিবীতে! মানুষের মন এক নিমিষেই কত যে চিন্তা করে! আনিসের হঠাৎ মনে হল আজ রাতে বাসা ফাঁকা দেখে পাশের বাড়ির সেলিনা আসছে নাকি অভিসারে? সেলিনাকে আনিসের অনেকদিন ধরেই পছন্দ। সেদিন আর না পেরে কথাটা বলেও ফেলেছিলো তাকে। যথারীতি প্রত্যাখ্যাত! তাই আজকে রাতে তাকে প্রেমিকার বদলে ডাকাতের কথা ভাবতে হচ্ছে। আনিস কখনও কোন মেয়ে শরীরের সংস্পর্শে আসেনি। হঠাৎ করেই আনিসের কাছে ডাকাতের চেয়ে প্রেমিকার আগমনের সম্ভাবনাটা জোরদার মনে হয়। হয়তো সেলিনা তার ভুল বুঝতে পেরেছে, হয়তোবা উপচে পড়া যৌবনের সেলিনা তার শরীরের খায়েশ মেটাতে ফাঁকা বাড়িতে এসে পড়েছে। হতেই তো পারে, আনিস ভাবে। অসম্ভব কিছুনা। মানুষের মন কখন কোন দিকে মোড় নিবে তার কোন পূর্বানুমান করা কঠিন। তবে একটা খটকা, সেলিনা চাবি পেল কোথায়? আরে ধুর! এটা কোন ব্যাপার? বানিয়ে নিয়েছে। ভালোবাসার জন্যে মানুষ কতকিছুই না করে! আনিস হুট করে লুঙ্গিটা পাল্টে ফেলে একটা হাঁটু ঢাকা হাফপ্যান্ট পরে। এই পোষাকটা নিঃসন্দেহে সুন্দর এবং যৌনাবেদনময়ী। আর সেলিনা না এসে যদি ডাকাতও আসে, তাহলেও মারামারির জন্যে এটা বেশ উপযুক্ত একটা পোষাক হবে। লুঙ্গিকে বিশ্বাস নেই। কখন গিঁট খুলে যায়, মহাবিপত্তি! 

#
গল্পটা লিখতে চেয়েছিলাম মধ্যবিত্ত জীবনের টানাপোড়েন নিয়ে। কিন্তু এখন দেখছি সেখানে একজন নিম্নবিত্ত শ্রেণীর প্রতিনিধি মূল চরিত্র হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। তার প্রতি আমার হিংসা হচ্ছে এখন। সে গভীর রাতে খালি গায়ে, শর্টস পরে, ছুরি হাতে নিয়ে একটি সম্ভাব্য অভিসার অথবা রক্তপাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর আমি খামোখাই কি বোর্ডে খটর খটর করে চলেছি এই শেষরাতে। জাতিকে একেবারে উদ্ধার করে ফেলবো লিখে! ভালো লাগছেনা কিছু। মনে হচ্ছে আনিসের কাছ থেকে ছুরিটা কেড়ে নিয়ে নিজের শরীরে কাটাকুটি করি। আমার কোন ব্যক্তিগত ছুরি নেই। তবে কিনে ফেলবো একদিন। ও আনিস মিয়া, তোমার ছুরিটা আমারে দিবা? নাহ, থাক ওটা তোমার কাজে লাগবে। কি-বোর্ডে খটরমটর করার চেয়ে বরঙ তোমার কাজকারবার দেখতেই ভালো লাগছে। বুকে সাহস রাখো মিঞা!

*
পদশব্দ খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। অনেক স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে এখন। তবে এই ভারী,মন্থর পায়ের শব্দ সেলিনার হবেনা। 'ধুর বাল!' আনিস তার হতাশা প্রকাশ করে। "তাইলে কোন হালায় আইবো এত রাইতে দিকদারি করতে? চুতমারানির পুলা আমার ঘুমটা ভাইঙ্গা দিছে" আনিস বিরক্ত হয়। সে ডিমের তরকারি, সিগারেট এসবের সাথে ঘুমও ভালোবাসে। খিস্তি করে ওঠার পর আনিসের শরীরে জোশ এসে যায়। তার ভালো লাগে। রোমাঞ্চ জাগে। ডাকাইতরা আসে দলবেঁধে, কিন্তু এখানে খালি একজনের আগমনের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং ডাকাইত থিওরি আনিস নাকচ করে দেয়। "তাইলে নিশ্চয়ই পাশের বস্তী থিকা কুনো হিরুঞ্চি" আনিস ভাবে। "হ, যেমনে ঠ্যালাগাড়ির ইস্পিডে আইতাছে, মাল খায়া পুরা টাল। আইজকা কেরদানি দেখাইতে আইলে খানকির পোলারে কুপায়াই মাইরা ফালামু"। আনিস অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। 

#
আহ চিলেকোঠা!
তোমার কংক্রিট-ইট গুলো ধুসর মেঘেদের সাথে কি কথা বলে?
রাতের বেলা তারাখসা ছুটে গেলে তুমি কি ইচ্ছে কর?
তোমার চৌকোনো জঠরের ভেতর একটুকরো প্রাণ নিয়ে তুমি কতটা জীবন্ত, কতটা বিমূর্ত ফ্যাকাশে জোৎস্নায়?
চাঁদ নেমে আসে, রাত নেমে আসে তোমার ওপর
উড়ে যায় জঙ্গী বিমান অহংকারী ফড়িঙের মত
তোমাতে...
নাহ কিছুই হচ্ছেনা। হবেওনা। ও বাদ। সকাল হয়ে এলো। কিন্তু কি অদ্ভুত, একই দেশে বসবাস করা স্বত্তেও আমার সাথে আনিস মিঞার সময়ের ব্যবধান প্রায় ছয়ঘন্টা! ওর ওখানে এখন মধ্যরাত আর আমার এখানে সকাল। ওহ রাত! আমি আবারও তোমার প্রতি ঈর্ষান্বিত হচ্ছি আনিস মিঞা। তোমাকে নিয়ে একটা রাত নষ্ট করলাম, কিছুই হলনা অথচ তুমি দিব্যি রাতের রোমাঞ্চে শিরদাঁড়া টানটান করে দাঁড়িয়ে আছো!

*
কড়া নাড়ছে কেউ দরজায়। আনিস তার ছুরি নিয়ে রেডি। অনেকদিন পর ভীষণ ভালো লাগার অনুভূতি হচ্ছে তার। সেদ্ধ ডিমের কুসুম খাবার চেয়ে হাজারগুন ভালো। 
"কেডা?"
"খুলেন"
অপরপাশের কন্ঠস্বরটা বেশ জবরদস্ত। আনিস উৎসাহিত হয়।
"আব্বে কেডা? নাম না কইলে ঢুকতে দিমুনা।"
"নাম কইলে চিনবেন না, আমারে খালায় পাঠাইছে টাঙ্গাইল থিকা"
হ! খালায় পাঠাইছে! চাপা মারতাছে শিউর। আনিস ভাবে। মিছা কথা কয়া ঘরে ঢুইকা জিনিসপত্র হাতায় নিয়া যাওনের চিন্তা। আনিসের সাথে চালাকি কইরা পার পাইবানা সোনার চাঁন! "তয় সাথে মেশিন থাকলে সমিস্যা" আনিস একটু চিন্তিত হয়। তবে তার নিস্তরঙ্গ জীবনে এহেন উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা কদাচ ঘটে। তাই উত্তেজিত আনিস পরমুহুর্তেই ভুলে যায় ওসব সম্ভাব্য প্রতিকুলতার কথা। 
"কুন খালা? নাম কন"
"রশীদা খালায় পাঠাইছে আমারে, আপনে একা সব মেন্টেন করতে পারবেন না এর লিগা। আমি মনছুর"
ধুস! মনছুর! আনিস বড়ই বিমর্ষ হয়ে পড়ে। একেতো সে চেনে। এর আগে একবার এসেছিলো এখানে, কথা হয়নি তবে দেখেছে। কন্ঠস্বরটা আনিসের পরিচিত লাগে এবার। "কাম কাইজ নাই হুদাই বাল ফালাইতে আইছে" বিড়বিড় করে উষ্মা প্রকাশ করে আনিস ছুরিটা ফেলে দিয়ে দরজাটা খুলে দেয়।
"সালামালিকুম ভাইজান। আছেন কিমুন? খিদা লাগছে পচ্চুর। খাওন দাওন আছেনি কিছু?"
"হ, ডিমের তরকারি আছে খায়া লও।"
"আপনে খাইছেন?"
"খাইছি আর কি দুই মুঠ। ডিমের তরকারি ভালা লাগেনা। তুমি বহ, আমি আইতাছি একটু বাইরে থিকা।" 

#
আমাদের বাসার কলাপসিবল গেট ধরে কে যেন ঝাকাচ্ছে। এসময়টায় কাজের বুয়াটা আসে। আমি জেগে থাকলে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেই। তবে আজকে ইচ্ছা করছেনা, বড় ক্লান্ত লাগছে। বুয়া দরজা ঝাঁকাতে থাকুক। কেউ একজন খুলে দিবে নিশ্চয়ই। 

আচ্ছা! বুয়াই হতে হবে এমন কোন কথা আছে নাকি! আনিসও তো হতে পারে। আমার ওপর হয়তো তার অনেক রাগ। আর যেভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো! আমার খোঁজেই নাতো? আমি তাকে সুযোগ থাকা স্বত্তেও মাত্র একরাতের জন্যে প্রেমিকার সাহচর্য দিতে পারিনি। তার 'লিটল এ্যালেক্স' সত্তাকে জাগিয়ে তুলেও ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি আবার। আসো আনিস আসো, তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে। তোমার আর আমার জীবনযাপন পদ্ধতিতে হাজার ফারাক থাকলেও কিছু ব্যাপারে খুব মিল আছে। ওগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাবে। দরজাটা কে যেন খুলে দিয়েছে। আমাদের বাসার কলবেল বাজলো। নাহ! আনিস আসেনি। কাজের বুয়াই। 

"ভাইজান নাস্তায় কি খাবেন?"
"রুটি আর ডিম"
"পোচ করমু নাকি ভাজি"
"পোচ করেন"

আজ সকালে ডিম দিয়ে নাস্তা করাই শ্রেয়। আনিসের প্রতি সহমর্মিতা এবং সাম্য প্রকাশ করে অথবা সারারাত জেগে একটা গল্প লেখার চেষ্টা গোল্লায় যাওয়ায় ওটাকে আমি ডিম দিয়ে প্রতীকায়ন করতে পারি। অবশ্য সেক্ষেত্রে সেদ্ধ ডিম খাওয়াটাই পারফেক্ট  হবে।

"আই বুয়া, পোচ না সিদ্ধ কৈরেন"


সেদ্ধ ডিমটাকে ছুরি দিয়ে স্লাইস করতে করতে আমার মনে প্রশ্ন জাগে আনিসকে এর পরেরবার ডিম নাকি ছুরি, কোনটা দেবো? অবশ্য এই প্রশ্নটা আমার নিজেকেও করা উচিত। আপনাদেরকেও করা যায়, অবশ্য এত বৃহৎ একটা জনগোষ্ঠীকে এমন ক্ষুদ্র এবং স্থুলভাবে বিভাজন করাটা ঠিক হবেনা বলে দ্বিমত করতে পারেন অনেকেই। 

তাতে কিছু এসে যায়না। এতক্ষণ রাতজেগে এই ছাইপাশটা লেখার পর শেষমুহুর্তে আমি ডিম এবং ছুরি বিষয়ক একান্ত ব্যক্তিগত একটি দর্শন আবিষ্কার করতে পেরেছি। চিলেকোঠায় বসে এ নিয়ে আরো ভাবা যাবে। অবশ্য আমার কোন চিলেকোঠা নেই। বানিয়ে নেবো। ডিম এবং ছুরি বিষয়ক গভীর দার্শনিক চিন্তার জন্যে চিলেকোঠার চেয়ে ভালো আর কোন জায়গাটাই বা আছে!


লেখা পাঠানঃ chilekothasahitto@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠা বেস্ট সেলার বইসমূহ

‘নক্ষত্রের খোঁজে’ প্রতিযোগিতা ২০২২ এর নির্বাচিত বই