চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

আমি পাঠক বলছি (৮)


আমি পাঠক বলছি (৮)।আখতার মাহমুদ


(“আমি পাঠক বলছি” শিরোনামে ধারাবাহিকভাবে আমার পড়া বই নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করি।  আমি সর্বভুক পাঠক। সব পড়ি। লেখা সুখপাঠ্য হলে লেখক আস্তিক না নাস্তিক, মোল্লা না ব্রাহ্মন, দেশি না বিদেশি, নতুন না পুরাতন, লেখায় গভীরতা আছে কী নেই এসব বাছবিচার এ যাই না। লেখাটা পড়ে ফেলি। কখনো কখনো মতামতও দেয়ার চেষ্টা করি। পাঠক হিসেবে আমার এই কখনো কখনো দেয়া বক্তব্য হয়ত লেখকের/লেখকগোষ্ঠীর মনঃপূত না-ও হতে পারে কেননা লেখার বিচারিক ক্ষমতা কখনোই একজন পাঠক আর লেখকের মধ্যে সমানভাবে থাকে না। দৃষ্টিভঙ্গীও সমান হয় না। তবু পাঠক হিসেবে ভাবনা তুলে ধরার সুযোগ থাকায় কলম হাতে নেয়ার দুঃসাহস করেছি। আশা করছি, লেখকগণ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আমার এই দুঃসাহস আর আমার সমালোচনাকে আক্রমণ হিসেবে নেবেন না। সমালোচনা নেয়ার মানসিকতা যে লেখকের নেই, তিনি এখানেই থেমে যেতে পারেন। সেটাই মঙ্গলজনক)

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ মোজাফ্ফর হোসেনের উপন্যাস ‘তিমিরযাত্রা’


‘তিমিরযাত্রা’ উপন্যাসটি নিয়ে কিছু লিখতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের স্ত্রীণে তাকিয়ে থাকি। এমন না যে, উপন্যাসটা আমাকে ভীষণ আলোড়িত করেছে বা বেশ চমকে গেছি কাহিনীর চমকে। বা এমনও নয় যে, এরকম উপন্যাস আর পড়িনি। মোজাফ্ফর হোসেনের সাথে মূলত দুটো মিল থাকায় চিমটি চিমটি খেলব কী না বুঝে উঠতে পারছি না মূলত। মোজাফ্ফর হোসেন ইংরেজির ছাত্র আমিও তাই। আবার মোজাফ্ফর হোসেনের এসএসসি ব্যাচ আর আমার এসএসসি ব্যাচ একই। তবে পাঠক কল্যাণ সমিতির সভাপতি (স্বঘোষিত) হিসেবে উপলব্ধি করি, চিমটি চিমটি খেলা আমার সাজে না। মিল অমিল বাদ দিয়ে আমার কেবল পাঠক স্বার্থ দেখার কথা আর সেদিকে নজর ফেরানো আমার জন্যে ভাল; যেদিকে নজর ফেরালে লেখকদের উন্নত করে তোলা যায়, তাদের আত্মতুষ্টি-বাগাড়ম্বর-এলিটিজম-লেখকীয় ইগো থেকে বের করে এনে আছড়ে ফেলা যায় নিষ্ঠুর আয়নার সামনে। এছাড়া, সেই প্রচেষ্টার দিকে আমার দৃষ্টি ফেরানো জরুরি, যা লেখককে শ্রদ্ধাবনত করে উপলব্ধি করাবে, যে জায়গায় সত্যিকার পাঠক দাঁড়িয়ে থাকেন সে জায়গায় লেখকেরা পৌঁছাতে পারেন না।

‘তিমিরযাত্রা’ ফ্ল্যাপের কথাগুলো আকর্ষণীয়। মানে ফ্ল্যাপের লেখাটুকু পড়লে উপন্যাসটা পড়তে চাইবেন আপনি। যদিও উপন্যাসটি বিষয়ে সঠিক বার্তা দেয় না কথাগুলো। এটা আশা করা অনুচিতও যে, ফ্ল্যাপে সব বলা থাকবে। উপন্যাসের মূল চরিত্র সুরুজের অনুসন্ধান শুরু হয় মূলত ডাক্তারের পরামর্শে পিতার অতীত সন্ধানে গিয়ে। এ যাত্রায় নেমে সে আবিষ্কার করে জীবনের নানা বাঁক, মুক্তিযুদ্ধের নানা বয়ান। তো এটা উপন্যাসে নতুন কিছু নয়। ওবায়েদ হকের উপন্যাস ‘জলেশ্বরী’-ও এই স্টাইলেই এগিয়েছে। শেষে এসে জলেশ্বরীর মূল চরিত্র যা আবিষ্কার করে কিংবা তিমিরযাত্রা’র সুরুজ যা আবিষ্কার করে তা তাদের উভয়কেই কিংবা পাঠককে একটা উপলব্ধিতে এনে দাঁড় করায় যে- সত্য না জানলেও চলতো। যদিও ‘জলেশ্বরী’ উপন্যাস ‘তিমিরযাত্রা’র চেয়ে অনেক বেশি উপভোগ্য এবং বৈচিত্র্যময়। তবে একটা কথা এখানে থাকে যে, ‘জলেশ্বরী’ জনপ্রিয় ধারার উপন্যাস; ‘তিমিরযাত্রা’ তা নয়।  বরং কিছু প্রশ্ন উসকে দেয়া বোধ-উপলব্ধির উপন্যাস এটি। সেসব প্রশ্ন এমন কিছু গভীর উপলব্ধির সমন্বয়, যার রেশ এক জীবনে শেষ হবার নয়। 

যদিও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি প্রশ্ন যা সুরুজ খুঁজতে চায়, কিংবা যাকে ভীষণ দরকারি মনে করে সে; সেটার উত্তর সম্ভবত লেখকও খুঁজেছেন এই উপন্যাসের মধ্য দিয়েই। প্রশ্নটা হলো, সুরুজ জানতে চায়- তার বাবা কেন যুদ্ধে গিয়েছিল। এটা একটা রোমান্টিক প্রশ্ন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রোমান্টিসিজমে আক্রান্ত পরের জেনারেশনগুলোই এ প্রশ্নটা করে মূলত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা এত দ্রুত এত সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছিল যে, এ প্রশ্নের একমুখী কোনো উত্তর হয় না। বাঙালির জন্যে ছিল এটা এক অপরিহার্য জিহাদ। কেউ কেউ একে আক্ষরিক অর্থেই জিহাদ ভেবে যুদ্ধে গেছে, কেউ কেউ গেছে অস্তিত্ব রক্ষার্থে, কেউ গেছে একটি পতাকা-মানচিত্র-দেশ পাবে বলে, কেউ গেছে প্রতিশোধ নিতে। 

এইসব ভিন্ন ভিন্ন কারণে মানুষের যুদ্ধে যাওয়াটা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম ভাবালু চোখে দেখতে চেয়েছে এবং অনেকেই এই প্রশ্নটা করে চলেছে মুক্তিযোদ্ধাদের- কেন তারা যুদ্ধে গিয়েছিল? প্রশ্নটা মানুষ করে, মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পেছনে মহৎ কোনো কারণ উদঘাটনে। যেন একটা সন্দেহ দোদুল্যমান মানুষের মনে যে, যুদ্ধে অংশগ্রহণের পেছনে কোনো ব্যক্তিস্বার্থ হয়তো মুক্তিযোদ্ধার ছিল! অথচ যারা এ প্রশ্নটা করে, তারা তাদের ফাঁপা মাথায় এটা রাখে না যে, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাটাই এক মহৎ কাজ এবং এক জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ উদ্যোগ। ফলে, এই প্রশ্নটা আমার কাছে শুধু অপ্রয়োজনীয়ই নয় ফালতু মনে হয়।

যদিও তিমিরযাত্রা’র শেষে লেখক বা সুরুজ উপলব্ধিতে পৌঁছায়, প্রশ্নটা জরুরি নয়। উত্তরটাও নয়। সেকারণেই হয়তো শেষে এসে সুরুজ প্রশ্নটাই ভুলে যায়। আর তার বাবা উত্তর দিতে তৈরি হলেও প্রশ্নটা মনে থাকে না বলে উত্তরটা বুকে জমিয়ে বসে থাকে, উত্তর দিতে পারে না। অথচ সুরুজ প্রায় মরিয়া হয়ে প্রশ্নটার উত্তর পেতে চেয়েছে আর তার বাবা চেয়েছে সমস্ত উত্তর ভুলে যেতে। এই যে, মানবমনের দ্বৈতসংঘাত একে ব্যাখ্যা করার সহজ পন্থা হলো বলা- অভিজ্ঞতার কারণে কিংবা সময়ে মানুষ বদলায়। 

এরকম প্রায় কাছাকাছি একটা এন্ডিং ছিল তানিম কবিরের ‘জুঁই’ নামক চমৎকার একটি গল্পে। গল্পটা তিন-চারবছর আগে পড়া হলেও এখনো মনে আছে। গল্পের নায়ক মূল চরিত্র জুঁই এর অতীত জানতে আগ্রহী। কিন্তু জুঁই বলতে আগ্রহী নয়। শেষে গিয়ে দেখা যায়, নায়ক জানার আগ্রহটা হারিয়ে ফেলে আর জুঁইয়ের ভেতর তার অতীতের গল্প জানানোর আগ্রহ জন্মায়। একপর্যায়ে জুঁই গল্পটা বলতে উন্মুখ হয়ে থাকে কিন্তু অপরজন আর শুনতে চায় না।

ফেসবুকে দেখেছি স্বকৃত নোমান উপন্যাসটার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, তিনি এন্টার্কটিকা বা এন্টারকোটিকা এরকম কোথাও চলে যেতে চান, কেননা ‘তিমিরযাত্রা’ প্রকাশ হবার পর তার লেখা কেউ পড়বে না। এটা দায়িত্বশীল বক্তব্য নয়, স্নেহ-বাৎসল্যের প্রভাবেই হয়তো এরূপ বক্তব্য এসেছে। দায়িত্বশীল কোনো লেখকের এমন বক্তব্য রাখা উচিত নয়। পাঠককে এসব বক্তব্য প্রভাবিত করে। যেমন আমি নিজেই প্রভাবিত হয়েছি এবং আমার আশাভঙ্গ হয়েছে। 

লেখকদের এ বিষয়ে পূর্ণ সচেতন হওয়া জরুরি। আমরা প্রায়শই দেখি লেখকেরা রাজনীতির নোংরামী, ক্ষমতাবানের স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি নিয়ে সমালোচনায় মুখর থাকেন। কিন্তু লেখকেরা নিজেদের গোষ্ঠীপ্রীতি হালাল ও সহী মনে করেন। অথচ তাদের উচিত সাহিত্য বিচারে স্বজনপ্রীতিকে প্রাধান্য না দিয়ে সত্য উপলব্ধিকে প্রাধান্য দেয়া এবং দায়িত্বশীল বক্তব্য রাখা।

তিমিরযাত্রা নতুন ধাচের কোনো উপন্যাস নয়। এমনকি আমি এটাকে উত্তরাধুনিক উপন্যাস বলতেও রাজি নই। যদিও লেখক নিজেই এটিকে উত্তরাধুনিক উপন্যাস বলেছেন। প্রচ্ছদেই আছে কথাটা। উপন্যাসটাকে বরং আমার মনে হয়েছে, কলকাতার আর্ট ফিল্মগুলোর মত। যেখানে সব চরিত্রই দার্শনিক!

এছাড়া, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দিবা রাত্রির কাব্য’ উপন্যাসটির মতই ফিলোসফিক্যাল টোনে উপন্যাসটা লেখা। ভাদুড়ীর ‘জাগরি’র সাথেও মিল আছে মনে হয়েছে। এইসব উপন্যাসেই আত্মউপলব্ধি, জিজ্ঞাসা, প্রশ্ন এবং উত্তর রয়েছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, যু্দ্ধাপরাধী বিষয়ক যেসব প্রশ্ন লেখক উপন্যাসে খুঁজে বেড়িয়েছেন, শহীদুল জহির তার ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ উপন্যাসে সেসবের উত্তর দিয়ে গেছেন অনেক আগেই। 

তিমিরযাত্রা উপন্যাস জুড়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে লেখকের জিজ্ঞাসা এবং উত্তর তার নিজেরই। যা তিনি বলতে চান। যেভাবে তিনি শুনতে চান সম্ভবত সেভাবেই সাজানো প্রশ্ন ও উত্তরগুলো। আমার মনে হয়েছে, প্রশ্ন এবং উত্তর সবই দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জন্ম নিয়েছে। প্রায় প্রতিটা চরিত্রেরই রয়েছে দার্শনিক প্রশ্ন ও উত্তর। এটা এক বড় ত্রুটি এ উপন্যাসের। কেননা সব মানুষের দর্শনবোধ থাকে না। 

যাইহোক, ফিরে আসি উপন্যাসের গল্পে। রফিমোল্লার সাথে কথোপকথনে দেখা যায়, একাত্তরের পরাজিত শক্তি নিজেকে জয়ী মনে করে এবং সুরুজ খুব একটা প্রতিবাদ করতে পারে না। যে সুরুজ কথার পিঠে চমৎকার কথা বলতে পারে। সে রফিমোল্লার সাথে ঠিকঠাক বাদানুবাদ করে উঠতে পারে না। হয়তো, রফিমোল্লার বিষয়ে যে সন্দেহটা সে করে যা অনুচ্চারিত হলেও আমার মনে হয় লেখক ইঙ্গিত দিয়েছেন রফিমোল্লা তার জৈবিক পিতা। যা এক কদর্য সত্য। এ কারণেই বোধহয় সে কিছুটা মিইয়ে থাকে রফিমোল্লার সামনে। এটা আমার মনে হবার কারণ, একখানে রফিমোল্লা বলে, ‘তোমার সঙ্গে আমার একটা সম্ভাব্য সম্পর্ক আছে। আরেকদিন এলে জানাব।’

সুরুজের এই উপলব্ধির ভাঙচুরটাই মূলত উপন্যাসের অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয়। সুরুজের আবিষ্কারগুলো পাঠককে নিঃসন্দেহে ভাবায়। একবার আবিষ্কার করছে সে মুক্তিযোদ্ধা পিতার সন্তান। আরেকবার সে আবিষ্কার করছে সে একজন বীরাঙ্গনার সন্তান এবং সাথে সাথে এটাও স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা পিতা তার জৈবিক পিতা নন। অন্যদিকে একটা সম্ভাবনাও উঁকি দেয় যে, সে রাজাকারের সন্তান! যদিও সুরুজের অন্তর্দহন খুব একটা টের পাই না আমরা। তীব্র বেদনা বা হাহাকার যাকে বলে তা দেখা যায় না সুরুজের মধ্যে। 

সম্ভবত লেখক উপন্যাসটিকে উত্তরাধুনিক করে তুলতে গিয়ে সাধারণ মানুষ যেমন আচরণ করে তেমন আচরণ করতে দেননি চরিত্রগুলোকে। আবার হতে পারে এটা লেখকের চরিত্র নির্মাণের ব্যর্থতা। সহজাতভাবেই মানুষ যখন নিজের জীবন সম্পর্কে কোনো কদর্য সত্য আবিষ্কার করে তখন মানুষের মন, উপলব্ধি, চিন্তা-চেতনা সব তছনছ হয়ে যায়। দীর্ঘদিনের যাপিত জীবন যখন মিথ্যে হয়ে সামনে দাঁড়ায় তা মানুষকে ভয়ানক পোড়ায়, ভীষণ যন্ত্রণার মুখোমুখি করে। অথচ এসবের কিছুই আমরা সুরুজের ভেতর তেমন তীব্রতায় দেখি না। সুরুজ বেশ যান্ত্রিকভাবেই জীবন এলোমেলো হয়ে যাওয়া তথ্যগুলো গ্রহণ করে। 

তবে গল্পটার বাইরে দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি রফিমোল্লা তথা যুদ্ধাপরাধীদের মনস্তত্ত্ব ধরতে পারি। তারা যে পরাজিত, এটা তারা স্পষ্ট বুঝতে পারে। বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারে। যদিও কখনোই তারা এটা স্বীকার করে না। তাদের জনসমর্থন নেই। এবং ষড়যন্ত্রের পথ ছাড়া বা ক্ষমতাবানের লেজ ধরা ছাড়া বৈধ কোনো রাস্তা তাদের সামনে নেই। এটা এক মহাসত্য। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি অদ্ভুত দ্বৈত আচরণ করে। এদেশে যুদ্ধাপরাধীদের সুযোগ দেয়া হয়েছে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অথচ এটা কোনো আইনেই হবার কথা না। সুস্থ রাজনীতির কোনো নীতিতেই এটা হবার কথা না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পরপরই জার্মানীতে নাৎসী বাহিনীকে নিষিদ্ধ করা হয় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে এর নেতাদের বিচারের সম্মুখীন করা হয়। অথচ আমাদের এখানে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করতে দেয়া হয়েছে এবং কেউ কেউ মন্ত্রীও হয়েছিল। শুধু যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে নয়, বাঙালির রাজনৈতিক চরিত্র যে চরিত্রহীন তা আরো একবার প্রমাণিত হয় বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ক্ষেত্রে। বঙ্গবন্ধুর ভয়ঙ্কর খুনীদেরও এদেশে রাজনীতির সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। খুনী রশীদতো ১৯৯৬ সালে কুমিল্লা-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিল!

এইসব জঘন্য ঘটনা প্রমাণ করে বাংলাদেশে রাজনীতি ও ক্ষমতার স্বার্থে নীতি ও আদর্শকে রাজনীতিবিদগণ পায়ের নিচে ফেলতে দ্বিধা করেন না। মানে, সবার উপরে ক্ষমতা সত্য তার উপরে নাই। এটা স্পষ্টতই রাজনৈতিক চরিত্রহীনতা।

যদিও কেন এসব ঘটেছে তার উত্তরই উপন্যাসে খুঁজেছেন লেখক এবং পাঠককেও জানাতে চেষ্টা করেছেন।

অনবরত ফিলোসফিক্যাল বক্তব্য থাকায় উপন্যাসটা একঘেঁয়ে লাগে কিছুটা। এমনকি মাত্র দেড় পাতা জুড়ে যে ডাক্তার সুরুজের পিতার চিকিৎসার খাতিরে দেখা দেন তিনিও দার্শনিক মননের বাইরে নন! কেননা আমরা দেখি সুরুজ যখন প্রশ্ন করে- মা ঠিক আছেন তো?
তখন ডাক্তারের উত্তর- আমরা কি কেউ ঠিক আছি?

উপন্যাসটির দার্শনিক ঢঙের বয়ান সত্যি বলতে আমার ভালই লেগেছে একঘেঁয়ে হওয়া সত্ত্বেও। দর্শনে আগ্রহ থাকায় আমি পড়ে আনন্দ পেয়েছি। অন্য পাঠকদেরও খারাপ লাগবে না হয়তো। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যাদের নানান জিজ্ঞাসা রয়েছে তারা পড়ে দেখতে পারেন উপন্যাসটা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে সব উত্তর এতে আছে তা বলবো না, তবে যেটুকু আছে তাতে মনে হয়েছে লেখক চেষ্টা করেছেন নির্মোহ দার্শনিক আলো ফেলতে। উপন্যাসটা পড়ে আমার প্রাপ্তি ওটুকুই।


ঘোষণাঃ
‘আমি পাঠক বলছি’ শিরোনামে বইপাঠ পরবর্তী কিছু উপলব্ধি- লেখক ‘পথিক রাজপুত্র’ ছ্দ্মনামে চিলেকোঠা সাহিত্যের জন্যে লিখেছিলেন। এখন থেকে তিনি স্বনামে এটি লিখছেন। উল্লেখ্য, এর পূর্বে  তিনি ‘আমি পাঠক বলছি’-এর ছয়টি পর্ব ‘পথিক রাজপুত্র’ ছ্দ্মনামে লিখেছেন চিলেকোঠার জন্যে।
– চিলেকোঠা এডমিন।

লেখা পাঠান- chilekothasahitto@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠা বেস্ট সেলার বইসমূহ

‘নক্ষত্রের খোঁজে’ প্রতিযোগিতা ২০২২ এর নির্বাচিত বই