চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

পৃথিবী গোল


পৃথিবী গোল

মূল লেখক : পিটার বিকসেল 
ইংরেজি অনুবাদ : মাইকেল হামবার্গার 
বাংলা অনুবাদ: মিলু হাসান 


একটা লোকের কিছুই করার ছিলো না, আর সে বিবাহিত ছিলো না, তার কোনো সন্তানও ছিলো না কিংবা কোনো চাকুরিও, কাজেই সে যা যা জানতো তা আরো একবার ভেবে ভেবে তার সময় কাটতো। 

তার নাম নিয়ে সে সন্তুষ্ট ছিলো না, কিন্তু সে জানতে চাইতো ঠিক কেন ও কিভাবে এ নাম সে পেলো। দিনের পর দিন, সে পুরনো বই-পুস্তক ঘাটাঘাঁটি করে অবশেষে তারই একটায় তার নাম খুঁজে পেলো। 

তারপর  সে যা যা জানতো তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা সে তৈয়ার করলো, সে যা জানতো আর আমরা যা জানি তা ছিলো হুবহু একই। 

সে জানতো যে দাঁত ব্রাশ করতে হয়। সে জানতো যে ষাঁড়েরা লাল কাপড়ের টুকরো দেখলেই তেড়ে আসে এবং স্পেনে কোনো কোনো লোকেরা ষাঁড়ের সাথে লড়াই করে। 

সে জানতো যে চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে ও চাঁদের কোনো মুখ নেই, চাঁদের চোখ আর নাক বলে যা মনে হয় তা হচ্ছে চন্দ্রপৃষ্ঠের গহ্বর আর উঁচু জায়গা। সে জানতো যে বাদ্যযন্ত্র কাঠের, তারের আর চামড়ার হয়। সে জানতো যে চিঠিতে ডাকটিকেট লাগাতে হয়, গাড়ি চালানোর সময় একপাশ দিয়ে যেতে হয়, পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য নির্দিষ্ট স্থান ব্যবহার করা দরকার আর কোনো জীবজন্তুর সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করা ঠিক না। সে জানতো যে লোকজন যখন সাক্ষাৎ করে তখন তারা মুসাহাফা করে আর মাথায় হ্যাট পরা থাকলে তা খুলে সম্মান জানায়। 

এখন অনেক কম জিনিস দরকার তার : শুধু প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম, একটি রেইনকোট, চড়বার বোট জুতো, হাঁটার জুতো, রাবারের বুট জুতো, জামাকাপড়, একটি ঠেলাগাড়ি, একটি নৌকা, একটি নৌকার জন্য বয়ে নেবার জন্য আরেকটি ঠেলাগাড়ি, ঠেলাগাড়িগুলোর জন্য আরেকটি নৌকা, ঠেলাগাড়িগুলো ওঠানো নৌকার জন্য একটা ঠেলাগাড়ি। একজন দরকার লোকজনের জামাকাপড় ঠেলাগাড়িতে রাখার ফলে তা টানার জন্য, আর এ লোকটা তার জামাকাপড় একই ঠেলাগাড়িতে রাখতে পারবে আর সেই সঙ্গে কপিকলচালকের  জামাকাপড়ও, যেহেতু, লোকটা চাচ্ছিলো তার যাত্রাপথে যত কম ঠেলাগাড়ি নেয়া যায়। তখন শুধু দরকার বাড়িঘরের ওপর দিয়ে যাবার জন্য একটি কপিকল, প্রকৃতপক্ষে আরো একটি বড় কপিকল, তার জন্য একজন কপিকল চালক আর একটি কপিকল -নৌকা আর একটি কপিকল -নৌকা-ঠেলাগাড়ি, কপিকল-নৌকা -ঠেলাগাড়ি টানা লোকের জামাকাপড়ের জন্য একটি ঠেলাগাড়ি, আর একজন কপিকল-নৌকা-ঠেলাগাড়ি চালকের জামাকাপড় বওয়া ঠেলাগাড়ি চালক -যে তার নিজের জামাকাপড় কপিকল চালকের জামাকাপড় ওই ঠেলাগাড়িতে রাখতে পারবে, যাতে অতিরিক্ত ঠেলাগাড়ির প্রয়োজন না পড়ে। 

সে জানতো যে তার নিজের হ্যাটটি ফেল্ট দিয়ে তৈরি, ফেল্ট তৈরি হয় উটের লোম থেকে আর এক কুঁজওয়ালা ও দুই কুঁজওয়ালা উট আছে, এক কুঁজওয়ালা উটকে বলে ড্রোমেডারি আর  উট থাকে সাহারায় আর সাহারায় থাকে বালি। 

এসব সে জানতো। 

এসব সে জেনেছে পড়ে, কারো কাছ থেকে শুনে আর সিনেমা দেখে। সে জানতো, সাহারায় বালি আছে। কিন্তু এটা সত্য যে সে কখনো সাহারায় যায় নি, ওই কথা সে বইয়ে পড়েছে এবং সে আরো জানতো কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেছে কারণ সে বিশ্বাস করতো পৃথিবী গোল। 

পৃথিবী গোল। এটুকু সে জানতো। 

যখন থেকে লোকেরা জেনে এসেছে যে পৃথিবী গোলকের মতো, তখন থেকে এটাও জেনেছে যে কেউ একজন যদি সোজা নাক বরাবর সামনে হাঁটতে থাকে তাহলে যেখান থেকে হাঁটা শুরু করেছে সেখানেই একদিন ফিরে আসতে হবে। 

কেবল লোকে পৃথিবী যে গোল তা দেখতে পায় না বলে দীর্ঘকাল ধরে লোকেরা তা বিশ্বাস করে নি, কারণ কেউ যদি পৃথিবীর দিকে তাকায় তাহলে তা দেখায় চ্যাপ্টা কিংবা কোথাও উঁচু কোথাও নিচু, এটির চারদিকে গাছপালা কিংবা নির্মিত বাড়িঘর আর যেখানেই গোলত্বের আভাস পাওয়া যেতো - সমুদ্রে, মহাসমুদ্রে, সেখানে ও মহাসমুদ্র এক জায়গায় এসে শেষ হয়েছে এবং শেষ হয়েছে একটি সরল রেখায়, সুতরাং, লোকে দেখতেই পায় না কেমন করে সমুদ্র আর স্থলভাগ বাঁকা হয়ে গোলের আভাস দিচ্ছে। 

এটি এরকম দেখায় যে সকালে সমুদ্র থেকে সূর্য উঠে আর সন্ধ্যায় সেই সমুদ্রেই ডুবে যায়। অথচ আমরা জানি যে এটি সত্যি নয়, সূর্য একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্থির থাকে, কেবল পৃথিবীই তাকে ঘিরে ঘোরে, গোল পৃথিবী প্রত্যেক দিন তার নিজস্ব কক্ষপথে ঘুর্ণায়মান। 

আমরা সকলে এটা জানি আর লোকেরাও এটা জানে। সে জানতো যে কেউ যদি সোজা নাক বরাবর সামনের দিকে হাঁটা শুরু করে অনেক দিন, অনেক মাস, অনেক বছর পর আবার একই জায়গায় ফিরে আসে,যদি সে এখন টেবিল থেকে উঠে যাওয়া শুরু করে, পরে সে অন্য রাস্তা দিয়ে টেবিলেই ফিরে আসবে। 

ব্যাপারটা এরকম, তা আমরা সকলেই জানি। লোকটি বললো - আমি জানি। যদি আমি সোজা নাক বরাবর সামনের দিকে যেতে শুরু করি, শেষে আমি টেবিলেই ফিরে আসবো। 

সে বললো- আমি এটা জানি। কিন্তু বিশ্বাস করি না। এ কারণে আমাকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে এর ফলাফল বের করা উচিত। 

যে লোকটির কিছুই করার মতোন ছিলো না, সে লোকটির সোজা নাক বরাবর যাওয়া মন্দ কিছু না বরং ভালো। সে বললো -সোজা সামনের দিকে যেতে থাকবো আমি। যদিও সহজ কাজগুলোই সবচে কঠিন। লোকটা হয়তো তা জানতো কিন্তু সে তা প্রকাশ করেনি যে সে এটা জানে, সে একটা গ্লোব কিনে আনলো৷ সে তার উপরে একটা রেখা টানলো, গ্লোব সবদিক থেকে ঘিরে এক সরলরেখা, আর যেখান থেকে শুরু হয়েছিল এ সরলরেখা সেখানেই তা ফিরে আসবে। তারপর সে টেবিল ছেড়ে উঠলো, সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো, যেদিকে সে যেতে চায় সেদিকে তাকালো এবং সেদিকে একটা বাড়ি দেখতে পেলো। তার রাস্তা গেছে সরাসরি বাড়িটার উপর দিয়ে, সে বাড়িটার পাশ দিয়ে যেতে পারবে না, কারণ তাহলে সে তার নির্দেশিত রাস্তা হারিয়ে ফেলবে। এ কারণে সে রওনা করতে পারলো না। সে টেবিলে ফিরে গেলো, এক টুকরা কাগজ নিলো এবং তাতে লিখলো : একটা লম্বা মই দরকার, তারপর তার মনে পড়লো বাড়ির ওপাশে শুরু হয়েছে বন এবং তার সোজা রাস্তার মাঝখানে অনেক গাছপালা জন্মেছে, সেগুলো পার হতে হবে, সুতরাং সে তার কাগজে লিখলো - আমার একটা রশি দরকার, পায়ের ভর রাখার জন্য দরকার লোহার আংটা। গাছে চড়তে গিয়ে জখমও হতে পারে। লোকটি লিখলো - দরকার প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম। আমার দরকার রেইনকোট, চড়বার জুতো, হাঁটার জুতো, শীতের পোশাক, গরমের পোশাক। আর এসব নিয়ে যাবার জন্য দরকার একটি ঠেলাগাড়ি। 

এবার তার যা দরকার সব আছে, কিন্তু বনের ওপাশে আছে নদী আর নদীর উপর আছে একটি ব্রিজ, কিন্তু ব্রিজটা ঠিক তার পথে পড়বে না। সে লিখলো - আমার দরকার নৌকা। আর দরকার নৌকা বয়ে নেবার জন্য একটি ঠেলাগাড়ি, আর দ্বিতীয় নৌকা ঠেলাগাড়ি পার করবার জন্য, আর দ্বিতীয় নৌকাটার জন্য দরকার তৃতীয় ঠেলাগাড়ি। 

যেহেতু লোকটা একা কেবল একটি ঠেলাগাড়ি টানতে পারবে, তাই অন্য ঠেলাগাড়ি টানবার জন্য আরো দু'জন লোক দরকার এবং ওই দুটি লোকের জন্য দরকার হবে জুতো, কাপড় আর তা বহন করবার জন্য আরেকটি ঠেলাগাড়ি আর তা টেনে নেবার জন্য দরকার আরেকটি লোক। আর প্রথম কাজটা হলো এতোগুলো ঠেলাগাড়িকে বাড়িটার উপর তুলে নিয়ে যেতে হবে, এর জন্য চাই একটি কপিকল আর কপিকল চালাবার জন্য একজন লোক আর কপিকলের জন্য দরকার আরেকটি নৌকা আর নৌকাটি বয়ে নেবার জন্য দরকার একটা ঠেলাগাড়ি, আর একটা লোক দরকার ঠেলাগাড়ির ভিতর যে নৌকা আর নৌকার ভিতর যে কপিকল তা  টানার জন্য, আর এ লোকটার জামা-কাপড়ের জন্য দরকার ঠেলাগাড়ি আর এ ঠেলাগাড়ি টানবার জন্য দরকার একটা লোক৷ 

লোকটি বললো - অবশেষে যা যা দরকার সব পাওয়া গেলো। এখন আমরা রওনা করতে পারি। এ ভেবে সে বেশ আনন্দিত হয়ে গেলো, কারণ এবার তার আর মই, রশ্মি, লোহার আংটা দরকার নাই, কারণ এখন তার কপিকল আছে। এখন অনেক কম জিনিস দরকার তার : শুধু প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম, একটি রেইনকোট, চড়বার বোট জুতো, হাঁটার জুতো, রাবারের বুট জুতো, জামাকাপড়, একটি ঠেলাগাড়ি, একটি নৌকা, একটি নৌকার জন্য বয়ে নেবার জন্য আরেকটি ঠেলাগাড়ি, ঠেলাগাড়িগুলোর জন্য আরেকটি নৌকা, ঠেলাগাড়িগুলো ওঠানো নৌকার জন্য একটা ঠেলাগাড়ি। একজন দরকার লোকজনের জামাকাপড় ঠেলাগাড়িতে রাখার ফলে তা টানার জন্য, আর এ লোকটা তার জামাকাপড় একই ঠেলাগাড়িতে রাখতে পারবে আর সেই সঙ্গে কপিকলচালকের  জামাকাপড়ও, যেহেতু, লোকটা চাচ্ছিলো তার যাত্রাপথে যত কম ঠেলাগাড়ি নেয়া যায়। তখন শুধু দরকার বাড়িঘরের ওপর দিয়ে যাবার জন্য একটি কপিকল, প্রকৃতপক্ষে আরো একটি বড় কপিকল, তার জন্য একজন কপিকল চালক আর একটি কপিকল -নৌকা আর একটি কপিকল -নৌকা-ঠেলাগাড়ি, কপিকল-নৌকা -ঠেলাগাড়ি টানা লোকের জামাকাপড়ের জন্য একটি ঠেলাগাড়ি, আর একজন কপিকল-নৌকা-ঠেলাগাড়ি চালকের জামাকাপড় বওয়া ঠেলাগাড়ি চালক -যে তার নিজের জামাকাপড় কপিকল চালকের জামাকাপড় ওই ঠেলাগাড়িতে রাখতে পারবে, যাতে অতিরিক্ত ঠেলাগাড়ির প্রয়োজন না পড়ে। 

তাহলে যা যা প্রয়োজন তা হচ্ছে : দুটি কপিকল, আটটি ঠেলাগাড়ি, চারটি নৌকা আর নয় জন লোক। প্রথম নৌকা নিবে ছোট্ট কপিকলটি, দ্বিতীয় নৌকাটি নেবে বড় কপিকলটি, আর তৃতীয় নৌকা নেবে প্রথম দুটি ঠেলাগাড়ি, চতুর্থ নৌকা নেবে তৃতীয় ও চতুর্থ ঠেলাগাড়ি৷ কাজেই তার চাই পঞ্চম ও ষষ্ঠ ঠেলাগাড়ি বয়ে নেবার জন্য একটা নৌকা আর সপ্তম ও অষ্টম ঠেলাগাড়ি বয়ে নেবার জন্য আরেকটা নৌকা। 

আর ঐ নৌকাগুলোর জন্য দুটি ঠেলাগাড়ি। 

আর ঐ ঠেলাগাড়িগুলোর জন্য একটা নৌকা। 

আর ঐ নৌকার জন্য একটা ঠেলাগাড়ি। 

আর তিনজন ঠেলাওলা। 

আর ঠেলাওলাদের জামাকাপড়ের জন্য একটা ঠেলাগাড়ি। 

আর জামাকাপড়ওলা ঠেলাগাড়ির জন্য একজন ঠেলাচালক। 

আর জামাকাপড় ও ঠেলাগাড়িটা তখন সেই নৌকায় চড়ানো যাবে যার উপর মাত্র একটি ঠেলাগাড়ি। দ্বিতীয় বড় কপিকলটার জন্য তার চাই তৃতীয় আরো বড় একটা কপিকল আর তৃতীয়টি জন্য একটা চতুর্থ, একটা পঞ্চম, একটা ষষ্ঠ, এ বিষয়গুলো লোকটা একবারও খেয়াল করেনি, কিন্তু তার এটা খেয়াল হলো যে নদীর পরে আছে পাহাড় আর পাহাড়ের উপর দিয়ে ঠেলাগাড়িগুলো নিয়ে যাওয়া -অসম্ভব -নৌকা তো দূরের কথা। 

কিন্তু পাহাড়ের উপর দিয়ে নৌকা নিতেই হবে, কারণ পাহাড়ের পরে হ্রদ, আর সেজন্য দরকার নৌকাগুলো বয়ে নিয়ে যাবার লোকজন, আর লোকদের হ্রদ পেরিয়ে যাবার জন্য নৌকা, আর ঐ নৌকাগুলো বয়ে নেবার জন্য লোক, ঐ লোকজনদের জামাকাপড় নেবার জন্য ঠেলাগাড়ি, আর ঐ লোকগুলোর জামাকাপড় রাখা ঠেলাগাড়িগুলো বয়ে নেবার জন্য নৌকা। 

আর এবার তার দরকার হলো দ্বিতীয় আরেকটি টুকরা কাগজ। এই কাগজে সে একটা হিসাব কষলো। 

প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম কিনতে লাগে ১৫ শিলিং, একটা রেইনকোট দাম ৫ পাউন্ড ১০ শিলিং, পাহাড় চড়ার জুতোর দাম ৮ পাউন্ড ১৯ শিলিং, হাঁটাবার জুতো দাম ৮৫ শিলিং, রাবারের জুতোর দাম কিছু একটা হবে, জামাকাপড়ও তাই৷ 

একটা ঠেলাগাড়ির দাম সবকিছু মিলিয়ে যা, তারও বেশি; আর একটা নৌকার দামও অনেক, একটা কপিকলের দাম বাড়ির চেয়েও বেশি, আর কপিকল- চাপানো নৌকাটা তো মস্ত বড় হবে, আর বড় নৌকার দাম ছোট্ট নৌকার চে বেশি আর একটা মস্ত নৌকা চাপানো ঠেলাগাড়ি তো হতে হবে যাকে বড় অতিকায়, আর নিঃসন্দেহে অতিকায় ঠেলাগাড়ির মূল্য অনেক বেশি। আর লোকজন চাইবে তার কাজের জন্য মজুরি, আর তাদের জন্য অনেক খোঁজা লাগবে,কারণ আজকাল সত্যিকার কাজের লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। 

এতোসব প্যারা লোকটাকে খু্ব মনমরা করে ফেললো, কারণ ইতোমধ্যে তার বয়স আশি হয়ে গেছে, মৃত্যুর আগে সে যদি বাড়ি ফিরতে চায় তো তাড়া না করে উপায় নাই। 

কাজেই শেষ অব্দি সে একটা লম্বা মই ছাড়া আর কিছুই খরিদ করতে পারলো না, মইটা কাঁধে চাপিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলো সে।পাশের বাড়ির কাছে এসে পড়লো, মইটাকে সে বাড়ির গায়ে ঠেকালো, নেড়েচেড়ে দেখে নিলো যাতে মইটা শক্ত দাঁড়ায়, তারপর আস্তে-আস্তে বেয়ে উঠতে লাগলো। কেবল তখন আমার মনে হলো যে তার যাত্রা সম্পর্কে সে মনস্থির করে ফেলেছে, এই দেখে আমি চেঁচিয়ে ডেকে তাকে বললাম : থামো, ফিরে আসো, বেহুদা তুমি সময় নষ্ট করছো। 

কিন্তু ততক্ষণে সে আর আমাকে শুনছে না। সে উঠে গেছে বাড়ির ছাদে, টেনে তুলেছে মই, বহুকষ্টে ছাদের ওপাশে টেনে নিয়ে গেছে, তারপর অন্যপাশে নামিয়েছে৷ সে একবারও ফিরে তাকালো না, কার্নিশ ডিঙিয়ে হাওয়া হয়ে গেলো। 

আর তার সাথে আমার দেখা হয়নি৷ এ কাহিনী ঘটেছিলো দশ বছর আগে, আর তখন তার বয়স ছিলো আশি৷ 

এখন তার নিশ্চয়ই নব্বুই বছর। হয়তো এ নিয়ে সে অনেক ভাবার পর -মাঝপথেই -এমনকি চীনে পৌঁছাবার আগেই - সব যাত্রা সে ভন্ডুল  করেছে। হয়তো মারা গেছে। 

কিন্তু কখনো কখনো আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পশ্চিম দিকে তাকাই, খুব খুশি হবো, যদি একদিন দেখি সে অরণ্য থেকে বেরিয়ে আসছে কুঁজো, ক্লান্ত, মন্থর হয়ে  কিন্তু সে যখন আমার কাছে আসছে তখন ঠোঁটে হাসি এঁকে আমাকে বলছে : 'এতো দিনে আমার বিশ্বাস হলো : পৃথিবী গোল।'

লেখা পাঠান- chilekothasahitto@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠা বেস্ট সেলার বইসমূহ

‘নক্ষত্রের খোঁজে’ প্রতিযোগিতা ২০২২ এর নির্বাচিত বই