চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

যে নসিব খোয়াবে পাওয়া



যে নসিব খোয়াবে পাওয়া

আবুল হাসান


যাত্রাবাড়ি কুতুবখালি খালের উপরে বাশের চড়াট কাফি দূর জিয়ায়া জিয়ায়া পাতা, লোহার পাটাতনও আছে হাতে গোনা। হামেশা যেইগুলার ইসতেমাল,দুর্ঘটনার কোনো সাবেক রেকর্ড নিয়া কাউরে আলাপি হইতে দেখা যায় নাই। মানুষজন,বাজারি কুকুর, গিট্টুগাট্টা পোলাপান হামেশা ডিঙাইতেসে। গাছগুলা হাওয়া দিতেছিল মৃদু, আকাশের বেবাকটায় নীলিমা, ফুল্লতা উপচায়া আছে বেমক্কা। কাঠের পাটাতনে পা রাইখা মনের ভিতর কু ডাইকা যাইতেছে।একটা বাচ্চা বিপরীত পাশ থেকা চইড়া এক-ই গতিতে তাকে ঘেইষা ধাক্কা দিয়া পারায়া গেল। অল্পের উপরে দিয়া গেছে বইলা সে কেবল নিঃশ্বাস ছাড়ছে কি ছাড়ে নাই বিপরীত প্রান্ত চি চি কইরা কালো পানিতে চিত হয়া পড়ল। সেইসাথে সেও কালো পানির তলায় মাজা পলির ভিতর গাইথা যাইতেছে টের পাইল। তিতকুটে পানি নাক দিয়া মুখ দিয়া গলগল কইরা ঢুকতেছিল।

সকালে সমস্ত শরীরে নাপাকি।পরশু যাবে ঠিক কইরা রাখল। এই দিকে দিন হয়রান যাইতেছে।

দ্বিতীয় খোয়াবটা এই রাত্র ব্যাইপা। গাবতলি আন্ডারপাস অতিক্রম কইরা বাস ধরার তাড়া ছিল। মাঝ বরাবর আইসা শীতল হাওয়ার গুমরানি। আতকা ঝুরঝুর শব্দে খাবলা পলেস্তারা খইসে পড়ল। কিছু বুইঝা উঠার আগে ছাত মাথার উপরে ধ্বইসা পড়ল।

তৃতীয় স্বপ্নের বিত্তান্ত হইল- ভাত, মাছ, ভর্তা, ডাল তিন পদের সালুন কিনা বাসায় ফিরতেছিল, মসজিদের হাউজ থেকা পা সাফা কইরা গেলে হয়। কিন্তুক যেইটা ঘটার সেইটা হইল, পানির ধারা দিতে গিয়া হাত ফসকে সমস্ত খাবার চলকায়া পড়ল হাউজে। আতশবাজির মতো রঙিন বুদবুদ জাগাইতেছিল পানির সারফেসে। 

চতুর্থ খোয়াবে ইবনে আরাবির সাথে মোলাকাত। তিনি লাস্যময় নারীর পোর্ট্রেট দেখায়া এরশাদাইলেন এই মানবী তোমার বাগদত্তা। আদতে তিনি শাদির সবক বাতলায়া দিলেন।

কিসসা নিয়া আমার কাজ কাউরে ক্রেজি কইরা তুলতে পারে, বেশুমার ভুলভাল যেইটা করতে পারে আরকি। সেগুলার ফিরিস্তি আমারে তালেব এবং উচাটন কইরা ইন্তিজারে রাখসে, কিছু লিখবার ইরাদাই হয়, পারলাম আর কই!

এই বাজারের খরিদ্দার আর তাজেরদের মধ্যে একটাই ফারাক। তাজেররা কোকাফ নগর থেকা বারকোষ ভর্তি কইরা চিনা মাটির প্লেটে ঢাইকা কারি কারি কিসসা নিয়া আসা ভাগ্যাহত জিনের দল। খরিদ্দাররা সব মাটির মানুষ, যারা কিসসার বুভুক্ষা নিয়া বাইচা থাকে। সেইটা না পাইলে পিয়াসে পইড়া নাড়ি ছিড়া মউত নেয়। তাদের বাপ-দাদার মধ্যে এইভাবে মউত নেওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাত কম না। আর জিনদের এই বেসাতিও বংশানুক্রমিক কোনো ধারা না। কারণ, তাদের বাপ-দাদার ধান্দা ছিল অন্যরকম। সম্প্রতি খাদ্য সংকটে তারা বিদেশ-বিভুইয়ে ব্যবসার জন্যে হিজরত করতে বাধ্য হইসে। তো সেইসব জিনের কিসসার বাজার আজকে রমরমা যাইতেসে। কিন্তুক সরকার থেকা প্রশাসনের মাধ্যমে এই বাজার অবৈধ বইলা এলান হইসে, সেই সঙ্গে এত্তেলা; দেশের কারো উপস্থিতি সেইখানে অপরাধ বইলা বিবেচিত হবে। 

আজকের মুমতায কিসসাগুলার পয়লা পাঠক আপনেরা! গঙ্গিমা যে আছে এবং তার আস্তানায় হানা দেওয়ার মতো বীর ফরজন্দ যে কোনো যুগে মিলাদ নেয় নাই,দারু জিন সেইটা তারায়া তারায়া বলে। তাছাড়া গঙ্গিমার আস্তানার হদিশ জানা থাকলে তো সেইখানে হানা দেয়া বা ছড়ি ঘুরানোর প্রশ্ন আসে। এই পর্যন্ত আইসা দারুর কিসসা ক্ষীণস্রোতি হয়া পড়ে, মাদি ঘোড়ার মতো চলতে চায় না। খুব জারিজুরি করলে সে বুঝ দিতে আরেক ঘটনা ফান্দে।

মেঘনা ব্রীজের পায়ার তলে সেই জাহাজের ডেগ থেকা নিয়া মাস্তুল, নোঙর, ভেপু যাই বলো সবটাই ছিল খাঁটি সোনার, আবার আগিলা দিনের। এই জাহাজের কাপ্তান ছিল গঙ্গিমা। তো সেই সোনা কি সহজে সে হাতছাড়া করে? এইখানে গঙ্গিমার চালাকি, তার কিস্তিমাত বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায় জাহাজ নোঙর করার কায়দা কৌশলে। গঙ্গিমা তার হাযিরা জানান দেওয়ার জন্যে আতকা আতকা ইঞ্জিন চালু করে,তাইতে ব্রীজে ঝাকুনি লাগে, কাপন জাগে। বলতে কি এই জাহাজ সম্পর্কে জাপানি গুপ্তচররা পর্যন্ত ওয়াকিবহাল। তারা জাহাজ ডাঙায় তুইলা দেওয়ার বিনিময়ে তিন ভাগা এক ভাগায় সরকারের সাথে চুক্তিতে যাইতে চাইলে সরকার এড়ায়া যায়। কারণ মেঘনা ব্রীজ ধ্বইসা পড়ার আশঙ্কা তো আছেই, গঙ্গিমার অবাধ শক্তির কথাও মাথায় রাখতে হয়। 

গল্প থেকা গল্পে বাক নিতে দারুর বেগ পুহাইতে হবে সেইরকম কাচা গল্পকথক সে নয়। তার গল্পের এন্তার সংগ্রহ পরমায়ু নিয়া শ্রোতাদের কৌতূহল নিবৃত্ত কইরা যাইতেসে। গল্পগুলার প্রায়শই যে গাঁজাখুরি সেটা বুঝতে আতেল হওয়া লাগে না। আর মিথ, কিংবদন্তি ইত্যাদি জনশ্রুতি বইলা সেগুলারে পালতে মানুষের প্রচুর আগ্রহ। 

যাইহোক, দারুর এইবারের গল্প সুন্দরবন নিয়া। 

শিকারি ছাড়া বনে আর কে যায়। আল্লাহওয়ালা বুজুর্গদের কথা আলাদা। তাদের দেখা যেই সেই মানুষ পায় না। এমনকি কালেভদ্রে তারা যে অরণ্যের মধ্যে বাদশাহি এজলাস বসান, সমস্ত পৃথিবীর হুকুমাত নিয়া বাতচিত করেন, সেইটা তো তোমার আমার মতো ফতুল্লার চোখে পড়বে না। এই যে তারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকা হাজার মাইল চোখের পলকে পারি দিয়া এইখানে জমায়েত হন, সেইটা কি কেউ ইনকার করতে পারবে? সেই বনের মধ্যে শিকারি সিগারেট ফুইকা ধুয়া ছাড়ে। বনের আল্লাহওয়ালা গাছপালা এইসব সইবে কেন? তাদের অচলাবস্থা সাপকে রেওয়ায়েত করলে সে শিকারির পিছু ধাওয়া করে। সেইবারের মতো শিকারি নিস্তার পাইলেও বনে পশিবার সমস্ত অধিকার সে খোয়ায়ে ফেলে।

তিনবার স্বপ্ন দেইখা বেদিশা লাগতেসে, কোনো মিমাংসা কি আপাত সমাধান খুইজা বেড়াইতেসে সেইখান থেকা তরায়া যাওয়া যায় যদি! কিন্তুক স্বপ্নগুলাই বা কিসের ইঙ্গিত দিতেসে! মৌলবিরা যেই তাবির দিবে সেইটা মানবে নাকি মনোবিজ্ঞানী যেইটা বলবে; তারা অবচেতন, সাব কনশাসমাইন্ড আরো কী কী যেন পরিভাষার কপচানি যে আউড়ায়! এই দিকে ভিতরে ভিতরে তাতায়া উঠতেসে! রুপ রেখা দিয়া তুলনায় জড়ায়া দৃষ্টিগ্রাহ্য করা যায় কি যায় না, দূর দেশ থেকা কোনো জিনের আছরে কি এরকম হইসে কারোর?

চানপুর দিঘিতে কবে থেকা সাপের ফণারমতো নকশাকাটা পাপড়ি, জলজ ফুল ফুটায়া যাইতেসে খানদানিপানা। মেহেরজানগুলাতে সেই পানাফুল ছিঁড়া পিঠা বানানোর চল অনেক দিন থেকা। একবার বাপু যার জিব্বায় সেই পিঠার স্বাদের আঁচ লাগসে,তার কাছে বাপের নাম ভুইলা যাওয়া ত সাধারণই, কিন্তুকসেই পিঠার স্বাদ আবে মউত না মুখে দেয়া পর্যন্ত ভুলা সম্ভব না। তো সেই দিঘির গুণপনার বিত্তান্ত অন্যভাবেও দেওয়া যায়। দিঘির এই খানদানিপানা যেসব গরুর খাওয়া খাদ্যি জোগায় অথবা খুটা আলগা কইরা যে গরুগিলা পানিতে নাইমা পড়ে পানার লোভে, সেগুলার ওলান নাকি সারাবছর নিটোল থাকে।বাজারে বেইচা বেপারির রোজানিতে ঢাইলা বাড়ির বালবাচ্চাবাছুর সবাই খায়া তারপর কুটুমবাড়ি দিয়া থুয়া হাত দিলে ফিনকি দিয়া দুধ চোয়াইতে থাকে শিসের শোরে। দিঘির ইতিহাস গতবছর পর্যন্ত মোটামুটি এইরকম। সুদিনে সুনসান এক দুপুর থেকা দিঘির কবজা চইলা যায় অন্যকোনো অতিপ্রাকৃত প্রাণির হাতে। তারপর থেকা আজিব সব ঘটনা চাক্ষুষ করতে থাকে গ্রামের মানুষ। ফলে দিঘির সাথে তাদের মুয়ামালাত চুকায়া নিতে হয়। দড়ি ছিঁড়া দুইটা গরু সেইদিন বিল দিয়া বাঁদাড় দিয়া ঘাস খায়া পেটের খিদা দমাইতে না পাইরা দিঘিতে গিয়া নামে। হাটু পানি থেকা গলা পানি পর্যন্ত যাওয়ার পর গরুগিলা আর ডাঙামুখী হইতে পারে না। অদৃশ্য কিছুর টানে তলায়া যায়। বছরে দুইটা গরু না দিলে সে খোয়াবে আইসা বাড়িঘর ছিনায়া নেয়ার ডর দেখায়। জুমাঘরে ওমর নামে এক সাহাবির কথা বয়ানে শুইনা মানুষ অপেক্ষা করে কবে ওমর আসবে! তাদের নাজাত করবে এই অভিশাপ থেকা। এই সময় বাজারে পুলিশ পড়লে কোকাফি জিনেরা বেসাতি গুটায়া সেইখানে পানির পুকুর কায়েম করে। অন্য দিকে পুলিশেরা হাবুডুবু খাইতে খাইতে পাড়ের দিকে সাঁতরায়া প্রাণ বাঁচানোর লেগা হয়রান হয়।

কিছু একটা লিখার মোজাহাদায় আছি বুঝতেছেনই ত জানি কিন্তুক এই শোগলটায় চলমান থাকতে শরম বেশরম ব্যপারগুলারে লাই দিলে চলবে কেন, ফলে থামতেছিও না।

ম্যাসের ডেরায় বাস নেওয়া ইবরাহীম যার কারো দিকদারির হ্যাপা সইতে হয় না, যেইটার কারণে আমরা চোপায়া থাকি, মাদরাসায় আছি বইলা যে ব্যাপারটা নাক কান বুইজা মাইনা নিতে হইতেসে। কিন্তুক হুট কইরা কোনো বিকালে ইবরাহীম ম্যাসের বাসিন্দা আমাগো বেড়ায়া যাওয়ার লাইগা ফোনে ডাইকা পাঠায়। সেইখানে আমরা হাপ ছাইড়া বাচার, কী আকাশলগ্ন হওয়ার বাসনায় উড়া প্যারাময়তা নিয়া হাজির হই। ইবু ছাড়াও আর তিনজন সেইখানে, যারা দোস্ত ইয়ার নিয়া মইজা মাইতা থাকে। তখন আলাদা জীব ইবুশূন্যতার চোটপাটে ভোগে। আমরা ইবুর পক্ষের সেই মাস্তিওয়ালা বইনা গেলাম। পয়লা আমাগো ব্যবহার ইনানো বিনানো ইতস্তত আছিল। জড়তা কাটায়া উঠার পর আমাগো বিচরণে স্বাচ্ছন্দ্য গতি পাইসে।

ইবুর বাসায় আমরা মেদুর দিন দেইখা সাঝপরার আগে পয়লা কোনোবার যাওয়াটা ঠিক করছিলাম এবং সেইবার আমরা প্রসন্নতায় শানায়া ফিরা আইছিলাম। এই শহরের মানুষ কাঠবাদামের ঠাসবুনানি বিশ্বাস করতে শিখসে ছাতার মতো ছাউনির মতো মাথা বাচায় বইলা। 

সেইটাও যখন বিপাকে পইড়া ছাড়তে হয় বা হবে, তখন মিউনিসিপ্যালিটির পরিচ্ছন্নতাকর্মীও বর্ষাতি গায়ে চড়াইতে ভুলবে না। দিন দুয়েকের বৃষ্টি বাসার অন্দরে ফাঙ্গাস ধরাইতেসে, স্যাতস্যাতে ভাব তৈয়ার করতেসে। পরপর বিকালগুলা ইবুর সাথে তার বাসায় শুইয়া বইসা কাইটা যাইতেসে। বাসাটা কিন্তুক আমাগো মনে ধরসে। উঠানের মতো একপ্রস্থ চাতাল নিয়া পাচতলার চিলেকোঠা। এইখানে যখন সময় কাবার করি বেবাকটা মখমলের মতো মোলায়েম লাগে। বেচাইন করা সমস্ত ব্যাপার আমরা ছুইড়া ফেলি। সামান্য না পাওয়ার দুঃখু জাইগা উঠে যা একটু, ঘাই মাইরা মিলায়া যায় যদিও। এই চিলেকোঠার মগ্নতায় তাগোরে ভাবি, যারা গত হইসে যাদের চিহ্ন এইখান ওইখান জুইড়া খুদা আছে শতায়ু এপিটাফের মতো; ছফা, রশিদ করিম,বেলাল চৌধুরী পিতা পিতামহের মতো। ছাতের উপরে কইতরের যত্ন আত্তি নিতে নিতে একজন মেজাজ খিচড়ায়া বিড়বিড় করতেসে। গমের দানা ছিটায়া সারতে না সারতে শালিক আইসা পাত পাড়তেসে। শালিক খেদায়া কিনারা করতে পারতেসে না লোকটা। খোপের ঘেরাটোপ ছাইড়া কইতরগুলা পেখম ফুলায়া বাতাস চোয়াইতেসে। পাশের বিল্ডিংটার ছাতে রেলিং উপচায়া গেটফুল বাইড়া উঠতেসে। পাতাগুলার পাক খাওয়ার ভিতর তাকাইলে নারীর জুলফি বইলা ভ্রম হয়। হাওয়াখোর ঘুড্ডি নিয়া ফাপড়ে পড়সে পোলাটার হাত নাটায়ের সুতা ছাড়াইতে ব্যস্ত। কোথায় আমাগো শৈশবের সাথে সুদূর মিল আছে,পুরাপুরি না আবছা ভাবে সেই আবছায়ার কঙ্কাল বয়া নিয়া বেড়াইতেসি। পাচতলার সিড়ির যেইখানে দইয়ের ভাঙা কারিকারি বইপত্তর ডাই করা একটা ডায়েরি খুইজা নিয়া আসছিলাম ঘাইটা ঘুইটা। ভিতরের লেখাগুলা দেইখা অবাক মানতে হইল। মার দুঃখ, পোলা তার দিনলিপিতে টুইকা রাখসে, একটা লাইন দেখলাম এই রকম, "মার জীবন এমন কিছু লিলুয়া আসিল না।"

পছন্দসই জুতা কিনা আমি আর ইবরাহিম মাস্তিতে আছি। ফিরতি পথে গয়ংগচ্ছ হাটতেছি কি হাটতেছি না। তার উপরে আমার চোখে চশমা, চোখ না তুইলাও বুঝতেছি কারো নজর আমাকে ঘিরা। বেবাক ব্যাপারে প্রসন্নতা, জুতা কিনা জিতছি, চশমাটার দাম নিয়া মুলামুলি করতে হয় নাই। গুলিস্তান ছাইড়া যাত্রাবাড়ির দিকে যাওয়া বাসের তালাশ নিতে রাস্তা পার হয়া ফুটপাতে পড়ছি। সেইখানে ঘিঞ্জি টিকিট কাউন্টার বসাইছে লোকাল বাস কোম্পানি, চা পান সিগারেটের দোকান বাদ দিলেও অগুনতি পসরা গাইড়া বসছে।

তিনবার স্বপ্ন দেইখা বেদিশা লাগতেসে, কোনো মিমাংসা কি আপাত সমাধান খুইজা বেড়াইতেসে সেইখান থেকা তরায়া যাওয়া যায় যদি! কিন্তুক স্বপ্নগুলাই বা কিসের ইঙ্গিত দিতেসে! মৌলবিরা যেই তাবির দিবে সেইটা মানবে নাকি মনোবিজ্ঞানী যেইটা বলবে; তারা অবচেতন, সাব কনশাসমাইন্ড আরো কী কী যেন পরিভাষার কপচানি যে আউড়ায়! এই দিকে ভিতরে ভিতরে তাতায়া উঠতেসে! রুপ রেখা দিয়া তুলনায় জড়ায়া দৃষ্টিগ্রাহ্য করা যায় কি যায় না, দূর দেশ থেকা কোনো জিনের আছরে কি এরকম হইসে কারোর? আদতে ফোসফোসানির মতো দুর্বোধ্য স্রোত শরীরের শিরা,ধমনী,রক্তকণা, কোষ, অণুপরমাণুগুলারে ঝাঝায়ে তুলতেসে। কী কী সব আবর্জনা ভাবনায় ঘাই মারতেসে। এতোগুলা কথারে যদি বেহুদা খরচা না কইরা অল্প কথায় কইয়া ফেলা যাইত! শরীরে জায়মান সংকটের উপশম জুগায়া দিবে একটা জায়গায় তো! সেইটা মাহফুজ আছে, কিন্তুক যুঝতে যুঝতে প্রাণ যায় যায় দশা। আত্মার এই বিমুখতা যদি অগ্রাহ্য করা যাইত,যেইখানে এই সংস্কার মান্ধাতা আমল থেকা ডাঙা  পাইসে। জলজ কলমির মতো উপাঙ্গ দিয়া গুটি গুটি বাইড়া উঠসে, বিস্তার করসে কারি কারি বংশ। চাইতেসে দুবলার মতো পলকা হয়া উঠুক নিজের সুবিধার পক্ষে। বেশ্যাখানার দৌলতদিয়া তো লেনিনগ্রাদের মতো অপরিচিতের ধোয়াশা জিয়ায়া রাখে নাই, একবারের বেশি তো আর না। তারপর হাতমুখ ধুয়া সাফসুতরা হয়া গেলেই সব মিটা গেলো,তারপর না হয় কড়ার কইরা একটা মুনাজাতে প্রভুরে টলায়া নেয়া যাবে। পাপের দুয়ার দিয়া না গেলে নাকি পুণ্যের মহিমা আন্দাজ হয় না, সেইটাও তো বড় একটা ব্যাপার। মনের সায় আদায় বা সেইটা আগে থেকাই মজুদ ছিল,

এখন শুধু সমান্য অধার্মিক কাজ করার লেগা ফুসলানো এই যা। 

কিছু গুছায়া আইনা একটা প্রমা নিয়া রাত কাবার করার ফারাক ঘুচায়া আনতে হবে শুধু, ঘন সুবাহ বিছরায়া একটা মানাম পাওয়া গেল।যেইটার পটভূমি তিনমাস থেকা দেখা চিনা আসতেসে।

হাইওয়ের কানা বাইয়া চলতেছি। সুতা খইসা কাপড়ে বিবর্ণতা লাগছে, বাকানো লাঠি মতন নিয়া ফাকা আওয়াজ দিতেছে, শলার মতো চুল মাথার সীমানায় উল্টা পাক খাইছে লোকটার। পেছন থেকা বয়স আন্দাজ করব সেই খেয়ালে তার দিকে তাকাই নাই। চোখের সুমুখে যা কিছু পড়তেছে বুলায়া নিতেছি।কিছু একটা তাড়ানোর বেলায় মানুষ যেমন করে সেইরকম করতেছে লোকটা। যখন কুকুরটাকে দেখলাম তখন ব্যাপারটা খুল্লামখুলা আচ করতে পারি নাই। লোকটার বরাবর গিয়া কুকুরটার অচলাবস্থা চোখে পড়ল। মেরুদণ্ডের মাঝ থেকা পইড়া গেছে। চামড়া ছিলা একাকার। মাংস বের হয়া পড়ছে।পিছনের দুইপা অসার। পাশ থেকা যদ্দুর শুনলাম একটা বাস কুকুরটার উপরে চাকা উঠায়া দিছিল। কুকুরটার চোখের দিকে তাকায়া আছি, সেই চোখ এমন নিস্পৃহতা ধইরা রাখছিল যার অর্থ উদ্ধার করার লেগা তাড়া জাগে না। কেবলি দেইখা যাইতে মনে কয়। সেখানে কোনো দৃষ্টিও ছিলনা, বাচার লেগা আকুলি বিকুলি? কারোর দিকে চাইয়া সেই অনুরোধ রাখবে? যার অনবধানে তার এই দশা তার প্রতি শাপশাপান্ত? যেইখানে বাসের চাকা তারে পিষা দিয়া গেছে সেখান থেকা ফারাক নেবার প্রয়াস? এমন ধোয়াশা! প্রভু তোমার মতো। আমার আছাড়ি পিছাড়ি দিয়া গলা ছাইড়া কাঁদতে ইচ্ছা হইল, বুকের ভিতরটা চূর্ণ হয়া যাইতেছিল। সব চাইতে বড় গাদ্দারি কি অপারগতা কুকুরটার দিকে হাত বাড়ানোর ইরাদা আমার কাছে বড় হয়া দেখা দেয় নাই, পাপ আমারে হাত গুটায়া নিতে জোর করতেছিল তখন।

লেখা পাঠান- chilekothasahitto@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠার জনপ্রিয় বই


চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২৩’ এর নির্বাচিত বই



চিলেকোঠা সাহিত্য সম্মাননা ‘নক্ষত্রের খোঁজে ২০২২’ এর নির্বাচিত বই