চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

দ্য আর্ট অফ ফিকশন : মিলান কুন্দেরা

 


চাট্টিখানি কথা

কুন্দেরার ব্যক্তি মানুষ

উপন্যাসের কাম কি? এই সওয়াল থেকে মিলান কুন্দেরা উপন্যাসের ভিত্তি তৈয়ারে ব্রতী হইছিলেন উপন্যাসের ভিত্তি যদি এই ব্যক্তিমানব ক্যায়া হ্যা আর সেই ব্যক্তিমানুষরে টোগায়ে পাওয়ার কোশেশ অয়, তবে উপন্যাসের কাম হয়ত অই ব্যক্তিমানুষরে চিচিংফাঁক করার মধ্য দিয়া পাওন যাইব। বোকাচ্চিও মানুষের কামের সিলসিলার ভিতর দিয়াই মানুষটারে খুঁইজা পাইতে ছুতা করছিলেন; দিদেরো কহিলেন, নহে; কামের মধ্য দিয়া আদমিই আর নিজেরে চিনবার পারতেছে না, মনা কাম এবং ব্যক্তিমানুষের যে কন্ট্রাডিকশন, সেই ফ্যাসাদে ওয়াকেবহাল থেকে কুন্দেরা কহিলেন ইহা উপন্যাসের এক কুতুব আবিষ্কার। তিনি ব্যক্তি মানুষরে (অথবা ব্যক্তির অস্তিত্বের হেঁয়ালি গন্ধবাস) ধরতে চাইলেন শব্দ [‘দি আনবেয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’-এ তেরেজারে ধরতে মাথা ঝিমঝিমানি, দুর্বলতা, প্রশান্তির মতো শব্দ], সংকেত [শব্দ ভাইঙ্গা ফ্রানজ আর সাবিনার অস্তিত্বের সংকেতগুলা আমলে আনার কোশেশ], কিংবা নির্ণয় [‘লাইফ ইজ এলসহ্যোয়ার’-এর তিসরা পার্টে জারোমিলের চিন্তা-ফিকিরের একটা নাম দিতে গিয়া ‘অভিমান’ শব্দটা এস্তেমাল এবং তার সুলুক সন্ধান] দিয়া।

কুন্দেরার ইতিহাস

স্মর্তব্য সেই ইতিহাস লিখিত হইল কুন্দেরার নভেলে যাহা জমানার ঐতিহাসিক এই অবসরে খায়া বইসা আছেন; চেকোস্লোভাকিয়ায় (শব্দটা কুন্দেরা উনার নভেলে কখনোই ইয়ুজ করেননা, যদিও কাহিনিগুলা সাধারণত অইখানে ঘইটা থাকে) সরকারি মদদে কুত্তা মারার ইতিহাস কিংবা কম্যুনিস্ট শতকিয়ায় ‘অশোভনতার?’ ইতিহাস।
--------------------------------------------------------------------------
একটা অ্যানেকডোটস (যেটা আসলে অ্যানেকডোটস না)

FR পুঁছতেছে MK রে : আপনের কি মনে লয়, দুনিয়াডা বুঝি তাগদা শেষ হইয়া আসতেছে? MK শরিফ বচনে কইলেন, তাগদা কইতে কি বুঝ দিতেছেন সেইটার উপ্রে বিবেচনা করি। ফিরা FR কয়, ধরেন কাইলকা কিংবা পরশু!
MK: দুনিয়াডা শেষ হইয়া যাইতেছে এই ধারণাটা বহুত আদিম।
FR : তাইলে কি কন, চিন্তিত হওনের জরুরত নাইক্কা।
MK: উল্টাডাই কওয়া যায়, যদি মাইনষের দিলের মধ্যে অনেকদিন ধইরাই একটা ডর থাইকা থায়ে, তবে সেইটার ভিত্রে হাছাই কিছু আছে।
--------------------------------------------------------------------------

তর্জমা ও কুন্দেরা

উনার মতে, প্রতিশব্দের এস্তেমালরে তর্জমাকাররা ক্ষ্যাপামির মোকামে লইয়া গেছেন। নিজের উপন্যাসের সকল ট্রান্সলেশন ভার্সন লইয়াই কখনো না কখনো উনারে নাখোশ হইতে দেখা যায়; বেশি চেইতা গেলে এডিশন বাতিল কইরা দেওনের কথাও কহেন‘দ্য জোক’ নভেলের কয়েক দফা তর্জমা কুন্দেরার মনে এতই প্যারা দিছে যে পুরা জিন্দেগীর লাইগ্যা দাগা লাইগা গেছে

উনার মতে, অনুবাদকেরা উনাদের ঠকান; লেখার অস্বাভাবিক অংশরে অনুবাদ করতে উনারা দম পান না; উনারা ডরান সমালোচকরা উনাদের পচা অনুবাদের দায়ে কাঠগড়ায় ঠেলবেন উনার কেতাবগুলার তর্জমা ঠিকঠাক করার পিছে কুন্দেরা দীর্ঘজীবন খরচ করে ফেলছেন।

কুন্দেরা ও ইন্টারভিয়ু

ঈসায়ী ১৯৮৫ সনের জুলাই মাসে মিলান কুন্দেরা ডিসিশন লইলেন, মাপ চাই; আর ইন্টারভিয়ু দিতাম না। ঠাহর হয়, এই ডর নিজের ইন্টারভিয়ুর কপিরাইট নিজের থিকা বেহাত হইয়া যাওয়ার ডর। একবার সাক্ষাৎকার ছাপা হওনের পর দেখলেন, যে আইডিয়ার কথা আলোকিত কুন্দেরা নামে, যাহা যাহা আলোকিত তাহা তাহা উনার বচন নহে। কি আচানক! এই অছিলায় সহি প্রতিবাদ জানাইলেন আর সাংবাদিক শুধাইলেনরেকর্ড আছে মিয়াভাই। একবার কয়া ফেলা কথার উপ্রে আর যে থাকল না রাইট, কুন্দেরা ইহা লইয়া বিচলিত হইলেন। উনি তিন ওজর গণিলেন: (১) ব্যাটা কোশ্চেন পুঁছে নিজ পছন্দের, আপনের খেয়ালের বিষয়গুলারে ব্যাটা ন গুনে; (২) আপনের জবাবের মানানসইগুলারে বাছাই করিয়া ব্যাটা শুদ্ধ বাইছা লইবে; (৩) ব্যাটা নিজের শব্দকুয়া দিয়া, নিজের চিন্তা ঢং লাগায়ে জবাবগুলা তর্জমা করিবে। সমাধান কি? তিনি কহেন, আমাগো দুইজনের মোলাকাত হইছে, আমরা লম্বা সময় লাগায়ে আলোচনা করছি, যাহা যাহা লইয়া ভাবুক মোরা তাহা তাহা নিয়া কমবেশি সহমত হইছি। আপনে প্রশ্নমালা তৈয়ার করছেন, আমি জবাবমালা তৈয়ার করছিশেষমেশ একটা এজাজত দানের আওতায় আমরা একমত হইছি।
--------------------------------------------------------------------------
আরো একটা অ্যানেকডোটস (যেটা আসলে অ্যানেকডোটস না)

মুই কৌতুকের ওজন বুঝতাম পারি স্ট্যালিনীয় বালা-মুসিবতের টাইমে।
তখন আমার বিশ বছর। যে লোক স্ট্যালিনিস্ট না, যারে ডরানোর
কোনো কারণ নাইক্কা, হেতের হাসির স্টাইল দেইখাই আমি তারে  
চিনবার পারতামমানুষ চিনার এক বিশ্বাসযোগ্য নোকতা আছিল 
রসবোধ। ঠিক তখন থিকা, যে দুনিয়া হারায়ে ফেলছে রসবোধ তারে
লইয়া মুই আতঙ্কে আছি।
--------------------------------------------------------------------------

এই পুস্তিকার তর্জমা নিয়া

এই সাক্ষাৎকারটা ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন লইছেন ১৯৮৩ সনের শরৎকালে। আর ছাপা হইছিল ১৯৮৪ সনের সামারে, প্যারিস রিবিয়ুর ৯২ নম্বর ইস্যুতে। এইটা দ্য আর্ট অফ ফিকশন সিরিজের ৮১ নম্বর এন্ট্রি। তর্জমার পহিলা থেকেই কুন্দেরার তর্জমা-সংক্রান্ত বেবাক ডর আমার ভিতরেও আছর করছিল, ফলে মাস গড়ায়ে পঞ্জিকার বছর পার হইলেও কোনো এসপারওসপার করা যায় নাই। মা ভৈ; যেকোনো ভাবেই হোক কুন্দেরার কথার ঢং এই তর্জমায় রক্ষা করে গেছে। বাক্য যত লম্বা হইছে, তাহারে কমায়ে তত খাটো করা হয় নাই। রক্ষা করা যায় নাই মাত্র ‘প্রতিশব্দ’ লইয়া উনার আগডুমবাগডুম উৎকণ্ঠার ঝোঁকসব কূল রক্ষা রাবনের ধর্তব্য নাই। তর্জমার শেষে ‘বোধিনী’ যোগে কতিপয় পাপের বোঝা কমাইলাম। এই সুবাদে উত্তমর্ণ মৃসের কর্জ স্বীকার করি, মিউজিকোলজিক্যাল থিওরিগুলার এইর’ম ব্যাখ্যান উনারই কেরামত (আমি না-বালেগ মাত্র); কিয়ৎ পরিমাণে কেহ কেহ জানিবেন মিউজিক্যাল খেইলগুলাই কুন্দেরার আর্ট অব কম্পোজিশনের বেশিরভাগটা জুইড়া নাচতেছে।


দ্য আর্ট অফ ফিকশন : মিলান কুন্দেরা


১৯৮৩ সনের শরৎকালে মিলান কুন্দেরার লগে প্যারিসে কয়েকবার মোলাকাত হওনের ফসল হইল এই সাক্ষাৎকার। মোঁপারনাসের কাছেই উনার চিলেকোঠা আস্তানায় আমাগো আলাপসালাপ হইত। অফিস হিশাবে কুন্দেরা যেই ছোট্ট রুমটা ইয়ুজ করতেন, সাক্ষাৎকারের জন্য আমরা সেখানেই মোলাকাত করতাম ফিলোসফি আর মিউজিকোলজির পুস্তকে উনার শেলফগুলা ঠাসা থাকত, একটা আদিকাইল্যা টাইপরাইটার আর একটা টেবিল আছিল। এইটা যে ওয়ার্ল্ড ফেমাস একজন রাইটারের স্টাডি, রুমটারে দেইখা কখনোই মালুম হইত নামনে হইত এইটা যেন কোনো স্টুডেন্টের আস্তানা। একটা দেয়ালে পাশাপাশি দুইটা ফটো টাঙ্গানো ছিল: একটা উনার বাপেরএকজন পিয়ানিস্ট। আর একটা ছিল লেওস ইয়ানাচেকের একজন চেক কম্পোজার যারে মিলান বহুত এডমায়ার করতেন।


আমরা এহানে বইসা ফরাসি ভাষায় একটানা ব্যাপক পকপক চালাইতাম; বাৎচিতের টাইমে আমাগোর লগে কোনো টেপরেকর্ডার থাকত না একটা টাইপরাইটার ইয়ুজ করতাম, লগে থাকত কাঁচি আর আঠা। অনেকগুলা কাগজের স্ক্র্যাপ খারিজ করার পরে, নানান ঘষামাজা পার হইয়া আস্তে আস্তে সাক্ষাৎকারটা পয়দা হইত। 

কুন্দেরার মোস্ট রিসেন্ট বহি ‘দি আনবেয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’ প্রকাশের লগে লগে এইটা বেস্টসেলার খেতাব পায়। আর ঠিক অই সময়টাতেই এই বাৎচিতের আঞ্জাম করা হয়। আঁতকা আসা বেবাক ফেইম উনারে খুব বেচেন কইরা ফেলে; কুন্দেরা ম্যালকমের লগে বিলকুল একমত হইবেন যে, “কারো ঘরদুয়ারে আগুন লাগার চেয়েও সাকসেস যেন আরেকটু যাদা ভয়ানক ডিজাস্টার। ফেইম দিলের মাকাম খাইয়া ফেলে” একদিন উনার নভেলের উপ্রে প্রেসের করা কিছু কমেন্টের কথা জিগাইছিলাম, তিনি কইলেন, “এগুলা আমার উপ্রে খুবই বাড়াবাড়ি করা হইছে।”


বেবাক সমালোচকই রাইটারের কামকাইজ বাদ দিয়া উনাদের পারসোনালিটি, পলিটিক্স, আর প্রাইভেট লাইফ লইয়া বেশি ফাল পাড়তে থায়ে। নিজেরে লইয়া এমন মশহুর আলাপে কুন্দেরার অনিচ্ছা এইসব ক্রিটিকগোরে নিরাশ কইরা থাকে। লে নওভেল অবজারভেটিওররে কুন্দেরা গোস্বা কইরা কইছিলেন, “নিজেরে নিয়া কওয়াটা খুবই আচোদামার্কা ব্যাপার। নভেলিস্টিক ট্যালেন্ট কিংবা কবিতা লেখার প্রতিভার মইধ্যে এখানেই তফাৎ।”


নিজেরে লইয়া কথা কওয়ার অনিচ্ছা থিকাই উপন্যাসের প্রতি মনোযোগ, লিটারারি কাজকাম এবং এর ফর্ম হইয়া উডে গরজের ধ্যানজ্ঞানআর্ট অব কম্পোজিশন নিয়া প্যাঁচাল পাড়ার মতলবই হইল এইটা।


ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

আপনে কয়েছিলেন যে মর্ডান লিটারেচার দুনিয়ার যে কোনো লেখকের থেকে আপনে ভিয়েনার নভেলিস্ট রবার্ট মুসিল আর হারম্যান ব্রখের প্রতি অধিক মোহাব্বত ফিল করেন। আপনের লাহানই ব্রখ মনে করতেনমনস্তাত্ত্বিক নভেলের দিনখতম হইয়া গেছেআলাদা ভাবে তিনি এইটারে কন পলিহিস্ট্রিক্যালনভেল

মিলান কুন্দেরা

মুসিল আর ব্রখ নভেলের উপ্রে হিউজ লেভেলের রেসপন্সিবিলিটি চাপাইয়া থাকেন। উনারা এইটারে সুপ্রিম ইন্টেলেকচুয়ালিটির সিনথেসিস হিশাবেই দেখেন। এইটা হইল আখেরি একখান জায়গা যেখানে মাইনষে আবিভি সওয়াল উঠাইতে পারে উনারা ঠাওর করতে পারছিলেন যে নভেলের আছে লা-জওয়াব সিন্থেটিক পাওয়ার; এটা হইতে পারে কবিতা, বা ফ্যান্টাসি, ফিলোসফি, কিংবা অ্যাফোরিজম, অথবা এজমালি কোনো প্রবন্ধ মাত্র। এই ইস্যুতে একখান চিঠিতে ব্রখ উনার প্রগাঢ় গোয়েন্দাগিরির ছাপ রাখেন। যাইহোক, আমার মনে হয় যে পলিহিস্ট্রিক্যালনভেল জাতীয় দুর্বল টার্ম ইয়ুজ কইরা উনি উনার ইনটেনশনটারেই অস্পষ্ট কইরা ফেলছেন। ইনফ্যাক্ট ব্রখের দিশিমাল অ্যাডেলবার্ট স্টিফারের ১৮৫৭ সনে বাইর হওয়া ডের নাশুমার [ইন্ডিয়ান সামার] একটা খাঁটি পলিহিস্ট্রিক্যাল নভেল এবং এইটা একটা ক্লাসিক অস্ট্রিয়ান গদ্য রচনা। নভেলটা খুবই ফেমাস : নিটশে এইটারে জর্মন লিটারেচারের চাইরটা গ্রেটেস্ট কামের মইধ্যে একটা কাম বইলা বিবেচনা করেন। বর্তমানে এইটা আনরিডেবল। এইটার ভিত্রে আছে জিওলজি, বোটানি, প্রাণীবিদ্যা, কারুশিল্প, পেইন্টিং আর আর্কিটেকচার; লেকিন এই বিশাল উঁচা উঁচা তথ্যের গাট্টি কিছু ক্ষেত্রে মানুষ এবং তার পরিবেশরেই বাইরে রাখে। প্রিসাইসলি এর কারণ হইতে পারে যে ডের নাশুমার একটা পলিহিস্ট্রিক্যাল; বিশেষ নভেল কইতে যা বুঝায় এইটা তা নহে। ব্রখের কেইস কিন্তু এইটা না। সম্পূর্ণ উল্টা! একটা উপন্যাস একলাই যা ডিসকভার করতে পারে, উনি সেইটাই আবিষ্কার করার ট্রাই করছিলেন। ব্রখ একটা স্পেসিফিক অবজেক্ট এর অস্তিত্বরে “নভেলিস্টিক চেতনা” নামে বোলাইতে চাইছেন। আমার মতে পলিহিস্ট্রিক্যাল শব্দটার ব্যাখ্যা হইব, “যেটা প্রতিটা ডিভাইস এবং জ্ঞানের হগল ফর্মরে একলগে করে যাতে কোনো অস্তিত্বের প্রতি আলোকপাত করন যায়।” হ, আমি এইর’ম এপ্রোচের লগে একমত পোষণ করি।

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

আপনার লে নওভেল অবজারভেটিওর ম্যাগাজিনে পাবলিশ হওয়া লম্বা প্রবন্ধ পইড়া ফরাসিরা নতুন কইরা ব্রখরে রিডিসকভার করছে। আপনে উনার বহুত গীত গাইছেন, হের পরেও আপনে উনার বিষয়ে ক্রিটিকাল। প্রবন্ধের শেষে আপনে লেখছেন, “হগল বড়মাপের লেখাই (যেহেতু তা বড় মাপের) কিছুটা ইনকমপ্লিট থাইকা যায়।”

মিলান কুন্দেরা

ব্রখ আমাগো কাছে সেরেফ এর লাগিন অনুপ্রেরণার না যে তিনি কিতা কিতা করতে পারছিলেন, এর জন্যও অনুপ্রেরণার যে, উনি যা যা করতে চাইছিলেন এবং করার হিম্মত অয় নাই। উনার কামগুলার ইনকমপ্লিটনেস আমাগোরে নয়া আর্ট ফর্মের জরুরত বুঝতে হেল্পাইতে পারে, যেমন : (১) আজাইরা বেহুদা জিনিস বাদ দিয়া একটা রেডিক্যাল পদক্ষেপ (যা মর্ডান দুনিয়ার অস্তিত্বের জটিলতারে ধারণ করে তার আর্কিটেকটনিক ক্লারিটিরে বিসর্জন না দিয়াই); (২) “নভেলিস্টিক কাউন্টার পয়েন্ট” (যা দর্শন, ন্যারেটিভ এবং কল্পনারে একসুরে মিশাইতে পারবে); (৩) বিশেষ কইরা উপন্যাসধর্মী প্রবন্ধের এক নয়া কৌশল (আরেক ভাবে কওন যায়, যা সরাসরি কিংবা পষ্টভাবে কোনো বয়ান প্রকাশের ঢং দাবি না কইরা বরং হাইপোথেটিক্যাল, মজা মারা নহিলে আয়রনিক ভাবে প্রকাশ করে)

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

আপনার হগল আর্টিস্টিক কাজকামই মনে অয় এই তিনটা পয়েন্টের আওতায় পড়ে।

মিলান কুন্দেরা

কোনো একটা উপন্যাসরে অস্তিত্বের পলিহিস্ট্রিক্যাল ইল্যুমিনেশনে পরিণত করার জন্য আপনারে আজাইরা শব্দগুলা বাদ দেওয়ার টেকনিকটা রপ্ত করতে অইব; এইটারে সংক্ষিপ্ত করার কৌশল বলা যাইতে পারে। নতুবা আপনে অন্তহীন দীর্ঘ রচনা লেখার ফাঁন্দে আটকা পইড়া যাইবেন। মুসিলের যে দুই-তিনটা নভেল আমি সব থেইকা বেশি পসন্দ করি তার ভিত্রে “দ্য ম্যান উইদাউট কোয়ালিটিস” একটা।  লেকিন আপনে আমারে এইটার লাহান অসম্পূর্ণ এবং বিপুল লেখারে তারিফ করতে কইয়েন নাএমন একটা ক্যাসেলের কথা ভাবেন যার আয়তন এত বিশাল যে, একনজরে দেইখা শেষ করন যাইত ন। নয় ঘণ্টা ধইরা চলা একটা স্ট্রিং কোয়ার্টেটের কথা কল্পনা করেন। মাইনষের কিছু নৃতাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতা আছেরইছে মেমোরির সীমাবদ্ধতাএইটারে ফাল মাইরা অগ্রাহ্য করা উচিত নহে। আপনে যহন একটা বহি’র শেষে পৌঁছাইবেন, তখনও আপনার বইয়ের শুরুয়াতটা মনে রাখতে পারার ক্ষেমতা থাকা উচিত। নচেৎ, উপন্যাস তার স্বরূপ হারায়। এর “আর্কিটেকটনিক ক্লারিটি” অস্পষ্ট হইয়া ওঠে।

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

‘দ্য বুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’ সাতটা পার্ট লইয়া গঠিত। আপনে যদি সংক্ষিপ্ত করার দিকে নজর না দিতেন তাইলে আপনে আলাদা সাতটা ফুল লেন্থ নভেল নামাইতে পারতেন।

মিলান কুন্দেরা

কিন্তু আমি যদি আলাদা সাতটা নভেল লেখতাম, তাইলে সবচাইতে জরুরি যে বিষয়টা হারাইতাম সেটা হইতেছে : একটামাত্র বহি’র ভিত্রে “মর্ডান দুনিয়ার অস্তিত্বের জটিলতারে” ধরতে পারার কোনো আশাই আমার থাকত না। এর লাইগ্যা আমার মনে অয়, বাক্যগঠনের কৌশল হিশাবে ‘আর্ট অব এলিপসেস’যাদা দরকারি বিষয়। কোনো বিষয়ের দিলের ভিত্রে হান্দাইয়া যাওয়ার জন্য এইটা আমাগোরে উস্কানি দেয়। এই সুবাদে আমার মনে পড়তেছে চেক কম্পোজার লেওস ইয়ানাচেকের কথা; ল্যাদাকাল থিকাই যার প্রচণ্ড অনুরাগী ছিলাম আমি। তিনি হইলেন মর্ডান মিউজিকের অন্যতম মহান আদমি। অন্যান্য বিষয়গুলার চেয়ে স্ট্রিপ মিউজিকের উপ্রে তিনি রেভ্যুলুশনারি অবদান রাখেন। অফকোর্স প্রতিটা মিউজিক্যাল কম্পোজিশনের লগে বিবিধ টেকনিক্যাল বিষয়-আশয় জড়িত; থিমের উপস্থাপন, তার বিবর্তন, পলিফোনিক কাম (এইটা আকসার যান্ত্রিক ভাবেই হইয়া থাকে), অর্কেস্ট্রার সংগঠন, গতিময়তা ইত্যাদি ইত্যাদি। আজকের দিনে যে কেউ কম্পুটার দিয়াই গীত রচনা করতে পারেন, কিন্তু একজন কম্পোজারের মাথাতেই তো একধরণের কম্পুটার বিরাজিত। যদি তাগো দরকার হয়, এক লহমায় কোনো অরিজিনাল আইডিয়া ছাড়াই “সাইবারনেটিক্যালি” উনারা একটা সোনাটা তৈয়ার কইরা লইতে পারে। ইয়ানাচেকের উদ্দেশ্য আছেল এইর’ম কম্পুটার পদ্ধতিরে নিরুৎসাহিত করা। স্থানান্তরের বদলে মনোহর নয় এমন সহাবস্থান, পরিবর্তনের বদলে পুনরাবৃত্তিএবং সবসময়ই বস্তুর কেন্দ্রিকতা বিষয়ে হুঁশিয়ার থাকা; সেরেফ প্রয়োজনীয় আঙ্গিকের উপর গুরুত্ব দেওয়া। এই চিন্তাফিকির উপন্যাসের ক্ষেত্রেও প্রায় সেইম; নভেলও নানান “রচনা কৌশলের” ভারে ভারাক্রান্ত এবং নানান বালছাল নিয়মের বস্তাসহ লেখকের কামে খবরদারি করে; যেমন : তিনি একটা ক্যারেক্টার তৈয়ার করেন, তার সামাজিক অবস্থার বয়ান দেন, তার জন্য একটা হিস্ট্রিক্যাল পটভূমি তৈয়ার করেন, ক্যারেক্টারটার ইতিহাস ভইরা উডে বেকার কেচ্ছা-কাহানি দিয়া। প্রতিটা দৃশ্যের পরিবর্তনের জন্য দরকার হয় নয়া এক্সপোজিশন, বর্ণনা কিংবা ব্যাখ্যার আমার মতলবটা  হইল ইয়ানাচেকের মতোই : উপন্যাসরে গৎবাঁধা নভেলিস্টিক টেকনিক থিকা, নভেলিস্টিক পকপক থিকা আযাদি দেওন

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

আপনে কইছেন, “নভেলিস্টিক কাউন্টার পয়েন্ট” আপনার রচনার দুসরা কৌশল।

মিলান কুন্দেরা

একটা বৌদ্ধিক সিনথেসিস হিশাবে নভেল উত্তম সিদ্ধি সাধন করলেও অটোম্যাটিকলি এইটা “পলিফোনি” সমস্যার সৃষ্টি করে। এই প্রবলেমটার একটা এসপারওসপার হওন দরকার। ব্রখের “দ্য স্লিপওয়াকার” নভেলের তিসরা পার্টটার কথাই ধরেন; এইটা পাঁচটা ভিন্ন উপাদান লইয়া গঠিত : (১) প্যাসেনো, এশ এবং হিউগুনাওএই তিনটা মেইন ক্যারেক্টারের উপর ভিত্তি কইরানভেলিস্টিকবর্ণনা; () হ্যানা ওয়েন্ডিং এর ব্যক্তিগত কেচ্ছা; (৩) একটা মিলিটারি হসপিটাল জীবনের সইত্য ঘটনার বিবরণ; (৪) স্যালভেশন আর্মির একটা মাইয়ারে লইয়া কাব্যিক (আংশিক) বর্ণনা; () মূল্যবোধের অবক্ষয়ের উপর (সায়েন্টিফিক ঢঙ্গে) লেখা একটা দার্শনিক প্রবন্ধএর প্রত্যেকটা অংশই মাশাল্লাহ। কিন্তু আসল ব্যাপারটা হইল প্রত্যেকটা অংশই যুগপৎ তরীকায় লেখা এবং পলিফোনিক কায়দায় একটার লগে আরেকটা ঘুইরা ফিরা আইছে। হেরপরেও পাঁচটা অংশ আলাদা থাইকা গেছেঅন্যভাবে কওয়া যায়, এরপরেও তারা আসলে সামগ্রিক জৌলুশে পলিফোনিক নহে।

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

পলিফোনি শব্দটা লিটারেচারের ক্ষেত্রে মেটাফোর আকারে ইয়ুজ কইরা আপনে কি এমন কিছু দাবি করতে  চাইতেছেন যে উপন্যাস সম্ভবত এইভাবে টিকা থাকবার পারে না?

মিলান কুন্দেরা

দুই উপায়ে উপন্যাস বাইরের উপদানগুলিরে গ্রহন করবার পারে। দন কিহোতে ট্রাভেলের সময় নানা পদের আদমির লগে মোলাকাত করছিলেন, যারা উনার কাছে তাগো কেচ্ছাগুলা কইত। এইভাবে ভিন্ন ভিন্ন গল্পগুলা একত্রিত হইয়া একটা উপন্যাসের ফ্রেম তৈয়ার করত। এই টাইপের কম্পোজিশন সপ্তদশ আর অষ্টাদশ সেঞ্চুরির উপন্যাসগুলিতে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়। ব্রখ কিন্তু এশ এবং হিউগুনাও এর মেইন স্টোরিতে হ্যানা ওয়েন্ডিং এর গপ্পোগুলা না মিশাইয়া আলাদা পদ্ধতি ইয়ুজ করছিলেন। সার্ত্রে (দ্য রিপ্রাইভ এ), কিংবা উনারও আগে দস প্যাসোসও একই ভাবে পাশাপাশি প্রবাহমান টেকনিক ইয়ুজ করতেন। আসলে উনাদের এইম ছিল ভিন্ন ভিন্ন নভেলিস্টিক কেচ্ছাগুলারে একলগে করা। অন্যভাবে কইলে, ব্রখের মতো সাহিত্যের উপাদানগুলার মাঝে বিয়োগ না ঘটায়ে সম্মিলিত মিশ্র উপাদান সৃষ্টি করা। তাগো এই টেকনিকের ওজরে কাব্যময়তা হ্রাস পাইছে। এবং আমার কাছে এইটা খুবই যান্ত্রিক মনে হইছে। এই ধরণের কম্পোজিশনরে আমি “পলিফোনি” কিংবা “কাউন্টারপয়েন্ট” ছাড়া আর কোনো ভালা পদ দিয়া চিহ্নিত করবার পারি না। তাছাড়াও রূপক অর্থে সঙ্গীত শব্দটারে ব্যবহার করা যাইতে পারে। উদাহরণ হিশাবে, পয়লা যে জিনিসটা আমার কাছে বিরক্তিকর মনে হয় সেটা হইল ‘দ্য স্লিপওয়াকার’-এর তিসরা পার্ট-এ যে পাঁচটা উপাদান আছে, সেগুলা কোনোভাবেই একসমান নহে। অপরদিকে, প্রতিটা স্বরের সমতা জারি থাকা মিউজিক্যাল কাউন্টার পয়েন্টের বেসিক গ্রাউন্ড রুল; যেমন : সিনেকোয়ানোনব্রখের রচনায় অন্যান্য উপাদানগুলার তুলনায় পহিলা উপাদানটা (এশ এবং হিউগুনাও এর ঔপন্যাসিক বয়ান) অনেক বেশি স্পেস পাইছে; এবং আরো জরুরী বিষয় হইতেছে নভেলের আগের দুইটা উপাদানের লগে রিশতা কইরাই এটা করা হইছে। অতয়েব একলগে করার খায়েশ থিকাই এই কাম করা হয়েছে যার ফলে আকর্ষণ বাড়ছে জরুর লেকিন অন্য উপাদানগুলার গুরুত্ব কইমা গেছে গা। দুসরা যে জিনিসটা বিরক্তিকর মনে হইছে সেটা হইল, বাখের ফিয়ুগ-এর ভিত্রের যে কোনো একটা কণ্ঠের গরহাজিরাতেও এইটা সৃষ্টি হইতে পারে না, সেইখানে হ্যানা ওয়েন্ডিং-এর গল্প কিংবা গোল্লায় যাওয়া মূল্যবোধের উপ্রে লেহা প্রবন্ধটা একলাই খুব ভালোভাবে ইন্ডিপেন্ডেন্ট রচনা হিশাবে খাঁড়ায়ে থাকবার পারে। এতে কইরা নভেলের মিনিং কিংবা কোয়ালিটির কোনোরকম লোকসান অয় না।

আমার বিবেচনায় “নভেলিস্টিক কাউন্টারপয়েন্ট” এর বেসিক শর্তগুলা হইল : () বিভিন্ন উপাদানগুলার মধ্যে সমতা; (২) গোটা উপন্যাসটার ভিতরে একপ্রকার ঐক্য। আমার সেই দিনটার কথা ইয়াদ হয় যেদিন আমি ‘দ্য বুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’-এর তিসরা পার্টটা লিখা খতম দিছিলাম, যার নাম আছেল “দ্য অ্যাঞ্জেলস”কবুল করতেছি আমি খুব প্রাউড ফিল করতেছিলাম এই বিশ্বাসে যে, ন্যারেটিভ গঠনের একটা নয়া কৌশল নিশ্চিতভাবে আমি আবিষ্কার কইরা ফেলছি। লেখাটা যে বিষয়গুলা লইয়া গঠিত তা হইল : (১) দুইজন ইশকুলগার্ল এবং তাগো লেভিটেশন নিয়া কেচ্ছা; (২) একটা অটোবায়োগ্রাফিক্যাল ন্যারেটিভ; (৩) একটা ফেমিনিস্ট বহি’র উপর লেহা সমালোচনামূলক প্রবন্ধ; (৪) দেবদেবী এবং শয়তানের উপ্রে লেখা একখান ফেবল; (৫) পল এলুয়ারের প্রাগের আকাশের উপর দিয়া উইড়া যাওয়ার স্বপ্নিল বর্ণনা। এই এলিমেন্টগুলা কোনোভাবেই একটা আরেকটারে বাদ দিয়া টিকা থাকতে পারে না; বিষয়গুলা একটা আরেকটারে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে এবং একটা থিমরেই আলোকিত করে আর একটা কোশ্চেনই পুছে : হোয়াট ইজ অ্যান অ্যাঞ্জেল?
ছয় নম্বর অধ্যায়টার নাম হ’তেছে “দ্য অ্যাঞ্জেলস”। এর উপাদানগুলা হইল : (১) তামিনার মৃত্যুর উপর লেখা একটা ড্রিম-ন্যারেটিভ; (২) আমার বাপের মৃত্যুর উপর লেহা অটোবায়োগ্রাফিক্যাল ন্যারেটিভ; (৩) সংগীত তত্ত্ব বিষয়ক গভীর চিন্তাফিকির; (৪) ভুইলা যাওয়া মহামারীর প্রতিচ্ছবি যেটা প্রাগরে ছারখার কইরা ফেলছিল। আমার বাপ এবং শিশুদের হাতে টর্চার হওয়া তামিনার মধ্যে সম্পর্কটা কি? এইটা হইল “ব্যবচ্ছেদের টেবিলে একটা ছাতা আর একটা সেলাই মেশিনের মোলাকাত” এর লাহান অভিব্যক্তির লগে, স্যুররিয়ালিস্টগো পসন্দের বিখ্যাত লত্রেমোঁর ছবির থিমের একরকম মধ্যবর্তী তুলনা। নভেলিস্টিক পলিফোনি যতটা না টেকনিক, তার থিকা অনেক বেশি কাব্যিক। আমি সাহিত্যজগতের কোথাও পলিফোনিক কাব্যের এমন এক্সাম্পল খুঁইজা পাই নাই, তয় অ্যালেন রিসনেই এর লেটেস্ট ফিল্মটা দেইখা আমি খুব অবাক হইছি। উনার কাউন্টারপয়েন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করার ক্ষেমতা লা-জওয়াব।  

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

‘দি আনবেয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’-এ কাউন্টারপয়েন্ট তেমনভাবে ফুইটা উঠে নাই।

মিলান কুন্দেরা

এটাই আমার মতলব ছিলসেখানে আমি চাইছি স্বপ্ন, ন্যারেটিভ, রিফ্লেকশনের প্রবাহ একলগে জমাটভাবে থাকুক এবং সব মিলাইয়া একটা ন্যাচারাল গতিময়তা তৈয়ার হোক। বাট নভেলের পলিফোনিক ক্যারেক্টারটা সবচাইতে বেশি ফুইটা উঠছে ছয় নাম্বার পার্টে স্ট্যালিনের পোলার কাহিনি, থিয়োলজিক্যাল চিন্তাফিকির, এশিয়ার যেকোনো একটা রাজনৈতিক দৃশ্যপট, ব্যাংককে ফ্রান্ৎসের ওফাত এবং বোহেমিয়ায়টমাসের ফিউনারেলএইসব কিছুই একটা চিরন্তন কোশ্চেনের লগে যুক্ত : “হোয়াট ইজ খিচ?” অই পলিফোনিক প্যাসেজটাই হইল সেই পিলার যেটা পুরা নভেলটার স্ট্রাকচাররে ধইরা রাখছেএই আর্কিটেকচারের আসল সিক্রেটটা সেখানেই রইছে

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

“বিশেষ কইরা নভেলিস্টিক প্রবন্ধ” এর চেয়ে আপনে ‘দ্য স্লিপওয়াকার’-এ থাকা নৈতিকতার অবমূল্যায়ন বিষয়ে লেহা রচনার উপ্রে একাধিক সন্দেহ আরোপ করছেন।

মিলান কুন্দেরা

এইটা একটা দুর্দান্ত রচনা!

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

উপন্যাসটাতে এইটা কিভাবে যুক্ত হইছে তা নিয়া আপনার মনে ডাউট আছে। ব্রখ উনার সায়েন্টিফিক ল্যাঙ্গুইজ ব্যবহারে কোনোটাই বাদ দেন নাই। উনি উনার কোনো ক্যারেক্টারের পিছে পলাইয়া না থাইকা নিজের ভিউ সাদাসিধাভাবে মান কিংবা মুসিলের লাহান প্রকাশ করছেন। এই যে নয়া একটা চ্যালেঞ্জ ব্রখ লইতে পারছিলেন, এইটা কি উনার রিয়াল কন্ট্রিবিউশন নহে? 

মিলান কুন্দেরা

সেইটা ঠিক আছে, উনি উনার এই হেডমের ব্যাপারে বিলকুল সচেতন আছিলেন। তয় ইহার ভিত্রেও একখান রিস্ক আছে : একটাট্রুথহিশাবে উনার রচনাটা নভেলের আইডলজিক্যাল চাবি মনে কইরা বোঝাপড়া করা যাইত, কিংবা নিছক একটা চিন্তার ইলাস্ট্রেশন হিশাবেই নভেলের বাকি অংশটারে বদলাইয়া নেওয়া যাইত। এতে কইরা অবশ্য নভেলের ভারসাম্য নষ্ট অয়; রচনার সত্যবাদিতারে খুবই ওজনদার মনে অয়, এবং নভেলের দুর্বোধ্য আঙ্গিক বেমক্কা ঝুঁকিতে পইড়া যাইতে পারেএমন একটা নভেল যেইটার হয়তবা কোনো ফিলসোফিক্যাল থিসিস প্রচারের ইনটেনশন আছেল না (ব্রখ এইটাইপের উপন্যাসরে দেখতেই পারতেন না!) কিন্তু ইহার যবনিকা ঠিক অইভাবেই হইবে। কোন উপায়ে একটা রচনারে কেউ উপন্যাসে ইনকরপারেট করতে পারবে? একটা বেসিক ফ্যাক্ট মনে রাখা জরুরি : যেই মুহূর্তে এটা উপন্যাসের একটা অংশ হইয়া উডে, চিন্তাভাবনাটা তার সারবত্তা হারায়ে ফেলে। উপন্যাসের বাইরেও আমরা তার দাবি-দাওয়ার জগতের ভিত্রেই থাকি : পলিটিশিয়ান, দার্শনিক, কাঁসিয়ার্জ১০হগলেই তাগো নিজের বয়ানের ব্যাপারে এক্কেরে শিউর। যাউজ্ঞা, উপন্যাস হইল এমন একটা জগত যেখানে কেহ দাবি-দাওয়া লইয়া হাজির হয় না; এই জগত হইল হাইপোথিসিসের, নাটকের। তাইলে, উপন্যাসের ভাবনাচিন্তা মূলত হাইপোথেটিক্যাল তাহার বেবাক নির্যাস লইয়া।

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

লেকিন একজন নভেলিস্ট ক্যান নভেলে উনার নিজের ফিলোসফি সরাসরি এবং দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করার অধিকাররে আগে থিকাই কোরবান করবে?

মিলান কুন্দেরা

কারণ দার্শনিক আর নভেলিস্টের চিন্তাফিকিরে একটা মৌলিক পার্থক্য রইয়াই যায়! মাইনষে প্রায়শই চেখভ, কাফকা কিংবা মুসিলের ফিলোসফি লইয়া কথা কয়। কিন্তু এগো সকলের রচনার মধ্যে থিকা ফিলোসফির একটা পরিষ্কার যোগসূত্র বাইর করার চেষ্টা করেন দেখি! এমনকি যহন উনারা উনাদের আইডিয়া সরাসরি নিজেগো নোটবুকে প্রকাশ করেন, তখনো আইডিয়াগুলা কোনো ফিলোসফির দাবি-দাওয়া নহে। বরং ইন্টেলেকচুয়াল কসরত, প্যারাডক্স লইয়া খেলার লাহান অথবা আশুরচনার উদ্ভাবনী শক্তির জাহির। আর সেইসব দার্শনিকেরা যারা উপন্যাস লেখেন, উনারা আসলে স্যুডো উপন্যাসিকউনারা উনাদের আইডিয়াগুলা ইলাস্ট্রেইট করার জইন্য উপন্যাসের ফর্মটা ইয়ুজ করেনভলতেয়ার কিংবা ক্যামু কেউইউপন্যাস একাই আসলে কি উন্মোচন করতে পারেতা আবিষ্কার করবার পারেন নাইআমার জানামতে একখান ব্যতিক্রম আছে, তা হইল দিদেরোরজ্যাকলেফ্যাটালিস্টহ্যোয়াট অ্যা মিরাকল! নভেলের বাউন্ডারি পার হইয়া যাওনের পর, একজন সিরিয়াস ফিলোসফার মজা চোদাইন্নদা চিন্তকে পরিণত হন। তহন উনার গোটা নভেলে কোনো জুতমতো বাক্য থাকে নাসবডাই চুদুরবুদুর। এর লাইগ্যা উপন্যাসটা ফরাসি দেশে মারাত্মক আন্ডাররেটেডআসলে ফ্রান্স যা কিছু হারাইছে আর যা যা ফিরা পাইতে অস্বীকার করছে তার সবটাই জ্যাকলেফ্যাটালিস্টে রইছে। ফ্রান্সে কামের থিকা চিন্তাভাবনারে বেশি কদর করা হইয়া থাকে। আর জ্যাকলেফ্যাটালিস্টরে আইডিয়ার ভাষায় তর্জমা করার কোনো উপায়ই আছিল না। যার ফলে এটারে চিন্তার পয়দাভূমি দিয়া বুঝন যাইত ন।

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

‘দ্য জোক’-এ ইয়ারোস্লাভই হইলেন সেই আদমি যিনি একটা মিউজিকোলজিক্যাল থিওরি খাঁড়া করছিলেন। এর লাইগ্যা উনার চিন্তায় হাইপোথেটিক্যাল ক্যারেক্টারটা পষ্টলেকিন ‘দ্য বুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’-এ মিউজিকোলজিক্যাল মেডিটেশন হইল লেখকের, মানে আপনের নিজের। তাইলে আমি কেমনে বুঝতাম পারমু এগুলা কি হাইপোথেটিক্যাল নাকি বাস্তব সইত্য?

মিলান কুন্দেরা

এইটা ডিপেন্ড করে একটা জিনিস আমরা কেমনে প্রকাশ করি একদম তার উপ্রে। পয়লা শব্দ থিকাই আমার ইনটেনশন থাকে যে এই রিফ্লেকশনগুলারে প্লেফুল, আয়রনিক, উস্কানি মারাইন্না, এক্সপেরিমেন্টাল কিংবা জিজ্ঞাসাবাদের একটা সুর দেওয়ার। ‘দি আনবেয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’ এর পুরা ছয় নাম্বার পার্টটা (দ্য গ্র্যান্ড মার্চ) হইল খিচএর উপর একখান রচনা যা একটা মেইন থিসিসরে ব্যাখ্যা করে : বিরক্তি উৎপাদন করে এমন জিনিসের অস্তিত্বরে একেবারে অস্বীকার করাই হইল খিচ। খিচ নিয়া এই ধারণাটা মোর কাছে অতীব তাৎপর্যপূর্ণ। এইটা একটা মহান চিন্তাভাবনা, অভিজ্ঞতা, স্টাডি, ইভেন প্যাশনের উপ্রে ভিত্তি কইরা গইড়া উডে। তারপরেও সুরটা অত সিরিয়াস নহে, এইটা উস্কানি মারাইন্না। নভেলের বাইরে এই রচনাটা চিন্তাই করা যায় না, এইটা হইল একটা খাঁটি নভেলিস্টিক মেডিটেশন

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

আপনার উপন্যাসগুলায় পলিফোনি বিষয়টাতে আরো একটা ইলিমেন্ট রইছে, সেটা হইল ড্রিম-ন্যারেটিভএইটা ‘লাইফ ইজ এলসহ্যোয়ার’-এর পুরা সেকেন্ড পার্ট জুইড়া আছে, আর ইহাই ‘দ্য বুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’-এর ছয় নম্বর পার্ট এর ভিত্তি, এবং এটা তেরেজার স্বপ্নের ভিতর দিয়া ‘দি আনবেয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’ পর্যন্ত চলতে আছে।

মিলান কুন্দেরা

এই অংশগুলা থিকা সহজেই ভুল ধারণার সৃষ্টি হইতে পারে, কারণ লোকেরা এগুলার ভিতর থেকে কিছু সিম্বলিক মেসেজ খুঁইজা পাইতে চায়তেরেজার খোয়াব দিয়া রহস্য উদ্ধার করার মতো কিছু নাইক্কাএগুলা হইল মৃত্যু নিয়া কবিতা। এগুলার মর্ম এগুলার বিউটির ভিত্রেই রইছে, যেইটা তেরেজারে হিপনোটাইজ করে। যাউজ্ঞা, আপনে কি ঠাহর করতে পারছেন যে কাফকারে ক্যামনে পড়তে হইব মাইনষে এইটা জানেনা কারণ হেরা খালি উনার রহস্য উদ্ধার করতে চায়? উনার অতুলনীয় ইমাজিনেশনের লগে নিজেগোরে মিশায়ে দেওয়ার বদলে, উনারা অ্যালেগোরি টোগাইতে থায়ে এবং ক্লিশে ব্যাপারগুলা ছাড়া আর কিছুই নিয়া আহে না : জীবন হয় অ্যাবসার্ড (অথবা এইটা অ্যাবসার্ড নহে), খোদা নাগালের বাইরে (অথবা নাগালের ভিত্রেই আছেন), ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনে আর্ট সম্পর্কে বিশেষ কইরা মর্ডান আর্ট সম্পর্কে কিছুই বুঝবার পারবেন না, যদি না আপনে বুঝতে পারেন যে ইমাজিনেশনের নিজস্ব একটা ভ্যালু আছে। নোভালিস এইটা জানতেন তিনি যহন স্বপ্নের প্রশংসা করতেন। স্বপ্ন “জিন্দেগীর একঘেয়েমিতা থিকা আমাগোরে রক্ষা করে,” তিনি কয়েছিলেন, “স্বপ্নের খেইলগুলা আমোদ দান মারফত জীবনের সিরিয়াসনেসের হাত থিকা আমাগোরে আযাদ করে” স্বপ্ন এবং স্বপ্নের লাহান ইমাজিনেশন নভেলে কি রোল প্লে করতে পারে তিনিই পহিলা বুঝতে পারছিলেন। উনি উনার হাইনরিখ ভন অফটারডিনজেন উপন্যাসটার দুসরা ভলিউম লেখার প্ল্যান করতেছিলেন এমন এক ন্যারেটিভ হিশাবে যেহানে স্বপ্ন এবং রিয়ালিটি এতটাই লেপ্টালেপ্টি কইরা থাকবে যে কেউ এগুলারে আর আলাদা কইরা কইতে পারবে না। আনফরচুনেটলি, দুসরা ভলিউমখানায় যা কিছু রইছিল তাহা নোট আকারেই রহিয়া গেল যেখানে নোভালিস উনার এসথেটিক ইনটেনশনটারেই বর্ণনা করছিলেন। একশো বছর বাদ, কাফকা  উনার এম্বিশনটা পুরা করছিলেন। কাফকার নভেলগুলা হইল স্বপ্ন আর বাস্তবতার ফিউশন; তারমানে, হেরা স্বপ্নও না আবার বাস্তবতাও নহে। সব থেকে বড় কথা, কাফকা একটা এসথেটিক রেভ্যুলুশন লয়া আইছিলেন। একটা এসথেটিক মিরাকল। অফকোর্স, উনি যা করছেন সেইটা আবার কেউ ফিরা করতে পারবে নালেকিন আমি উনার লগে এবং নোভালিসের লগে উপন্যাসে স্বপ্নরে টাইনা আনার ডিজায়ার, এবং স্বপ্নের ইমাজিনেশনরে ভাগ কইরা নিছি। আমি স্বপ্ন এবং বাস্তবতার ফিউশন এই উপায়ে করতে পারি নাকরি পলিফোনিক কনফ্রন্টেশন এর ভিতর দিয়া। ড্রিম-ন্যারেটিভ হইল কাউন্টার পয়েন্টের অন্যতম একটা উপাদান।   

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

‘দ্য বুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’-এর শেষ পার্ট-এ পলিফোনিক জাতীয় কিছু নাই, হের পরেও এইটা সম্ভবত বইটার সবচে’ ইন্টারেস্টিং পার্ট। এটা চৌদ্দটা চ্যাপ্টার লইয়া গঠিত যেটা জ্যান নামে এক আদমির জিন্দেগীর ইরোটিক সিচুয়েশনের বিস্তারিত বয়ান করে। 

মিলান কুন্দেরা

আরেকটা মিউজিক্যাল টার্ম : এই ন্যারেটিভটা হইল “থিমের ভেরিয়েশন” নিয়া। থিমটা হইল এমন একটা সীমানা রেখা যার বাইরে জিনিসগুলা তাগো মিনিং হারায়ে ফেলে। আমাগো জীবন সেই সীমানা রেখার কাছাকাছি আনফোল্ড হয়, আর আমরা যেকোনো মুহূর্তে এইটা অতিক্রম করার রিস্ক লইমিনিং এবং মিনিংহীনতার সীমানায় চৌদ্দটা চ্যাপ্টার হইল একই সিচুয়েশনের চৌদ্দটা ভিন্ন ইরোটিসিজম।

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

আপনে ‘দ্য বুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’রে বর্ণনা করছিলেন “বহুমুখী ফর্মের নভেল” হিশাবে। লেকিন এইটা কি শুধুই একটা উপন্যাস? 

মিলান কুন্দেরা

অ্যাকশনের কোনো ইউনিটি নাই, যার কারণে এটারে কোনো নভেলের মতো লাগতেছে না। মাইনষে ইউনিটি ছাড়া কোনো উপন্যাস কল্পনাই করতে পারে না। এমনকি “ন্যুভুউ রোমান”১১ এক্সপেরিমেন্টও অ্যাকশনের ইউনিটি নির্ভর ছিল (অথবা বে-অ্যাকশনের)স্টার্ন আর দিদেরো অই ইউনিটিরে এক্কেরে নাজুক রাইখাই আমোদিত ছিলেন। জ্যাক এবং উনার মাস্টরের ভ্রমন কাহানিটা লওয়া হইছিল জ্যাকলেফ্যাটালিস্ট এর গৌণ পার্টটা থিকা; এইটা একটা কমিক প্রিটেক্সট ছাড়া আর কিছুই না যেখানে অ্যানেকডোটস, গল্প, চিন্তাফিকির ফিট খায়া গেছে। যাউজ্ঞা, এই প্রিটেক্সট, এই “ফ্রেম,” একটা উপন্যাসরে উপন্যাস কইরা তুলতে দরকারি। ‘দ্য বুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’-এ এমন কোনো প্রিটেক্সট নাই। থিমগুলার মইধ্যে ইউনিটি এবং তাদের ভেরিয়েশনই গোটা বিষয়টারে একলগে কইরা রাখছে। ইহা কি একটা উপন্যাস? অয় একটা উপন্যাস হইল অস্তিত্বের উপর মেডিটেশন, যারে কাল্পনিক ক্যারেক্টারগুলার ভিতর দিয়া দেখতে অয়। ফর্মটাতে আছে আনলিমিটেড স্বাধীনতা। উপন্যাসের ইতিহাসে উপন্যাস উহার অন্তহীন সম্ভাবনার থিকাকেমনে অ্যাডভান্টেজ লইতে হবে সেইটা কখনোই বুঝবার পারে নাই। এইটা তার সুযোগ মিস করছে।

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন                    

লেকিন ‘দ্য বুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’ বাদে আপনার নভেলগুলা ও অ্যাকশনের ইউনিটির উপ্রে ভিত্তি কইরা খাঁড়ায়ে আছে, যদিও ‘দি আনবেয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’ প্রকৃতপক্ষে অনেক আলগা জাতের।

মিলান কুন্দেরা

হা, কিন্তু ইউনিটির ভিন্ন ভিন্ন অনেক জরুরি উপাদান এরে কমপ্লিট করছে : একই মেটাফিজিক্যাল প্রশ্নগুলার ইউনিটি, একই মোটিফ আর তারপরে ভেরিয়েশনগুলি (যেমন, ‘দ্য ফেয়ার ওয়েল পার্টির বাপ সম্পর্কিত মোটিফ)তবে আমি সর্বোচ্চ জোর দিয়া কইতে চাই যে নভেলটা মূলত শোনবার্গের নোট সিরিজের১২ লাহান কয়েকটা মৌলিকশব্দের উপর খাঁড়ায়ে আছে‘দ্য বুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’-এ সিরিজটা হইল : ভুইলা যাওয়া, অট্টহাসি, ফেরেশতারা, “লিতোস্তে,”১৩ সীমারেখাপুরা উপন্যাসে এই পাঁচটা মূলশব্দই বিশ্লেষণ, গবেষণা, সংজ্ঞায়িত, পুনরায় সংজ্ঞায়িত হয় এবং এইভাবে অস্তিত্বের নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে রূপান্তরিত অয়যেমনে কিছু কাঠামোর উপ্রে একটা বাড়ি তৈয়ার করা হয় ঠিক অইভাবে এই কয়েকটা ক্যাটাগরির উপর উপন্যাসটা গইড়া উঠছে‘দি আনবেয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’-এর কাঠামোগুলা হইল : ভার, লঘুতা, আত্মা, শরীর, জবরদস্ত কুচকাওয়াজ, আবর্জনা, খিচ, দরদ, মাথা ঝিমঝিমানি, শক্তি এবং কমজোরি। এদের নিজস্ব ক্যাটাগরিক্যাল চরিত্রের কারণে, এই শব্দগুলারে অন্য কোনো প্রতিশব্দ দিয়া রিপ্লেস করা যায় না। ট্রান্সলেটরগো কাছে এই শব্দগুলা বারবার এক্সপ্লেইন করতে হইব, যারাগুডস্টাইলেরজন্য তাগো কনসার্ন অনুযায়ী রিপিটেশন এড়াইতে চান

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

আর্কিটেকচারাল ক্লারিটির কারণে, আমি টাসকি খাইছিলাম যে একটা নভেল বাদে আপনের বাকি সব নভেলরে সাতটা পার্ট এ ভাগ করন যায়।

মিলান কুন্দেরা

যখন আমি আমার পহিলা উপন্যাস ‘দ্য জোক’ শেষ করছিলাম, এইটার যে সাতটা পার্ট আছে সেইটা নিয়া অবাক হওনের কিছু আছিল না। হেরপর আমি ‘লাইফ ইজ এলসহোয়্যার’ লিখছিলাম। উপন্যাসটা অলমোস্ট যখন শেষ হয়া আসছিল, তখন এইটার ছয়টা পার্ট ছিল। আমি স্যাটিসফাইড ছিলাম না। সাডেনলি একটা কেচ্ছা ঢুকায়ে দেওয়ার আইডিয়া মাথাত আইলো যেটা নায়কের মরণের তিন বচ্ছর পরে সংঘটিত হইবেআরেক ভাবে কইলে, উপন্যাসের টাইমফ্রেমের বাইরে ঘটবে এটাএখন এইটা হয়া গেল ছয় নাম্বার পার্ট এরপরের অংশ, “দ্য মিডল-এজড্ম্যান। সাথে সাথেই উপন্যাসটার গঠন পারফেক্ট হইলপরে, আমি বুঝতে পারছিলাম যে এই ছয় নাম্বার পার্টটা ‘দ্য জোক’ (“কস্থকা”)-এর ছয় নম্বর অংশের লগে অদ্ভুতভাবে মিলা গেছে, যেইটা আবার উপন্যাসটার ভিত্রে বাইরের একটা ক্যারেক্টাররে নিয়া আহে, এবং উপন্যাসটার দেয়ালে একটা সিক্রেট জানালাও খুইলা দেয়। দশটা ছোট্ট কেচ্ছা হিশাবে ‘লাফেবল লাভস’ শুরু হইছিলফাইনাল ভার্শনটা একত্র করতে গিয়া তাদের ভিতর থিকা তিনটারে আমি বাদ দিয়া দিছিলাম। কালেকশনটা এমনভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়া উঠছিল যে সেইটা ‘দ্য বুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’রে আগে থিকাই ছাপায়ে গেছিল। চাইর নাম্বার আর ছয় নাম্বার গল্পটারে ডক্টর হ্যাভেল নামের একটা ক্যারেক্টার একলগে বাইন্ধা রাখছিল। ‘দ্য বুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’ বহিটাতেও চাইর নাম্বার আর ছয় নাম্বার পার্টটা তামিনা নামের একটা ক্যারেক্টারের মাধ্যমেই সংযুক্ত হইছিল। যখন আমি ‘দি আনবেয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’ লিখতেছিলাম, নাম্বার সেভেন কবজটারে ভাইঙ্গা ফেলতে আমি ডিটারমাইন্ড ছিলাম। ম্যালাদিন ধইরা আমি ছয় পার্ট নিয়া আউটলাইন করার সিধান্ত লইছিলাম। তয় পয়লা পার্টটা ছ্যাড়াবেড়া থাইকা সবসময়ই আমারে প্যারা দিতেছিল। শেষমেশ আমি বুঝবার পারছিলাম যে এইটা আসলে সিয়ামিজ যমজদের মতো দুইটা পার্ট নিয়া গঠিত, যারে অতি সূক্ষ্ম সার্জারির মাধ্যমে আলাদা করতে হয়। আমার এতসব কওয়ার একমাত্র কারণ হইতেছে এইটা দেখানো যে ম্যাজিক নাম্বার লইয়া আমার কুনো কুসংস্কারাছন্ন মোসাহেবি নাইক্কা, বা কোনো র‍্যাশনাল হিশাব নিকাশও করি না। বরং আমি একটা গভীর, আনকনসাস, ধারণার অতীত জরুরত থিকা চালিত, একটা ফরমাল আর্কেটাইপ১৪ যেটা থেকে আমি ভাগতে পারি না। আমার সবগুলা উপন্যাস হইল নাম্বার সেভেনের উপর গইড়া ওঠা আর্কিটেকচারের ভিন্নতা।

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

সবচে’ ভিন্ন ভিন্ন উপাদানগুলারে সুন্দরভাবে সাতটা পার্ট-এ ভাগ কইরা এক একটা নভেল রচনা করা আপনার সমন্বয় করার উদ্দেশ্য হিশাবে দেখা যাইতে পারে। আপনের নভেলের প্রতিটা অংশের সবসময় নিজস্ব একটা দুনিয়া আছে, আর নিজস্ব স্বকীয়তার লাগি ইহারা একে অন্যের থিকা আলাদা। লেকিন একটা নভেলরে যদি কয়েকটা ভাগে ভাগ করা অয়, তাইলে প্রতিটা ভাগ আবার চিহ্নিত চ্যাপ্টারে ভাগ করা ক্যান?

মিলান কুন্দেরা

চ্যাপ্টারগুলার নিজেদেরকেই নিজেগো একটা ছোট্ট দুনিয়া তৈয়ার করতে হইব; তাদের অবশ্যই তুলনামূলকভাবে ইনডিপেন্ডেন্ট হইতে হবে। এই কারণেই আমি আমার পাবলিশারগোরে চাপে রাখি যেন নাম্বারগুলা পষ্ট থায়ে আর চ্যাপ্টারগুলা ভালভাবে সেপারেট থাকে। চ্যাপ্টারগুলা যেন মিউজিক্যাল স্কোরের মাপকাঠি! কিছু অংশ রইছে যেখানে মাপকাঠিগুলি (চ্যাপ্টারগুলা) দীর্ঘ, অন্যত্র যেখানে তারা হ্রস্ব, কোথাও আবার অনিয়মিত মাপের। প্রত্যেকটা অংশে একটা মিউজিক্যাল টেম্পোর ইশারা থাকতে পারে : মডারেটো, প্রেস্টো১৫, অদাগিও১৬ ইত্যাদি ইত্যাদি। ‘লাইফ ইজ এলসহোয়্যার’ এর ছয় নম্বর অংশটা হইল অদাগিও : এটা হইতেছে শান্ত, মেলানকোলি ভঙ্গিতে, একটা মধ্যবয়স্ক ব্যাটা আর সবে জেল থিকা মুক্তি পাওয়া একটা মাইয়ার ভিত্রে সংক্ষিপ্ত মোলাকাত। শেষ অংশটা হইল প্রেস্টিসিমো১৭; এইটা খুব ছোটচ্যাপ্টারে লেখা, আর জ্যারোমিলের মরণ থেকে লাফায়ে লাফায়ে র‍্যাবো, লের্মোনতোভ এবং পুশকিনে পৌঁছাইছে। পয়লা আমি ‘দি আনবেয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’ রে মিউজিক্যাল পদ্ধতি দিয়া ভাবছিলাম। আমি জানতাম যে লাস্ট পার্টটা পিয়ানিসিমো১৮ এবং লেন্তো হইতে হবে : এটা বরং ফোকাস করে আরও শর্ট, ঘটনাবিহীন পিরিয়ড, একই লোকেশনের মধ্যে এবং শান্ত টোনে। আমি আরও জানতাম যে এই পার্টটা প্রেস্টিসিমো মারফত চালিত হওন উচিত : সেই পার্টটা হইল“দ্য গ্র্যান্ড মার্চ” শিরোনামে

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

নাম্বার সেভেন নিয়মের একটা ব্যতিক্রম আছে। ‘দ্য ফেয়ারওয়েল পার্টি’তে আছে মাত্র পাঁচটা পার্ট।

মিলান কুন্দেরা

‘দ্য ফেয়ারওয়েল পার্টি’ আরেকটা ফরমাল আর্কেটাইপের উপর ভিত্তি কইরা খাঁড়ায়ে আছে : এইটা এক্কেরে হোমোজিনিয়াস, একটা বিষয় নিয়াই কাম করে, একই টেম্পোতে কওয়া হইছে; খুবই নাটকীয় ভঙ্গি, স্টাইলাইজড, আর ফর্মটা প্রহসন থেকে লওয়া‘লাফেবল লাভস’-এ, ‘দ্য সিম্পোজিয়াম’ শিরোনামের গল্পটাও ঠিক একইভাবে তৈরিএকটা পাঁচ অঙ্কের প্রহসনের মতো

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

প্রহসন বলতে আপনে কি বুঝাইতে চাইছেন?

মিলান কুন্দেরা

আমি প্লটের উপ্রে জোর দেওয়ার কথাই কইতে চাইছি আর এইটা সব আচম্বিত ও আচানক ঘটনার ভিত্রে জুইড়া যায়। একটা উপন্যাসে এর থেকে বেশি সন্দেহজনক আর কিছুই নাইএত হাস্যকর, রিডিকুলাস, আদি কাইল্লা, গতানুগতিক আর পাইনসাপ্লট হিশাবে, তার প্রহসনগত কাবজাব সমেতফ্লবেয়ারের সময় থেকে, নভেলিস্টরা প্লটের নাটকীয় দিকগুলারে উড়ায়ে দেওনের চেষ্টা করছিলেন। যার ফলে উপন্যাসগুলা নীরস জিন্দেগীর থেকেও বেশি নীরস হয়া গেছে। তবুও প্লটের সন্দেহজনক ও বেহাল দিকটা খুঁইজা পাওয়ার অন্য উপায় আছে, আর সেটা হইতেছে সম্ভাবনার জরুরত থিকা ইহারে আযাদ করা। আপনে একটা অসম্ভব গল্প কচ্ছেন যেটা অসম্ভবরেই বাইছা লয়! ঠিক এভাবেই কাফকা ‘আমেরিকা’র ধারণাটা তৈরি করেন। পয়লা চ্যাপ্টারে অনেকগুলা আচানক ঘটনার ভিতর দিয়াই যেমনে কার্ল হের আঙ্কেলের লগে মোলাকাত করেকাফকা এই প্রথম উনার “স্যুররিয়াল” জগতে প্রবেশ করেন, উনার পয়লা “স্বপ্ন এবং বাস্তবতার ফিউশনে,”একটা প্লটের প্যারোডিসহপ্রহসনের দরজা দিয়া

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

লেকিন আপনে ক্যান নভেলের জন্য প্রহসনের ফর্মটারে চ্যুজ করলেন? এইটা মোটেও এন্টারটেইনমেন্টের জন্য হইতে পারে না।

মিলান কুন্দেরা

কিন্তু এইটা একটা বিনোদন! ফরাসিরা বিনোদনের জন্য যে অবজ্ঞা করে সেইটা আমি বুঝতে পারি না, কেনো উনারা “ডেভার্টিসমেন্ট”১৯ শব্দটা লইয়া এত শরম পায়। উনারা বোরিং হওয়ার চেয়ে বিনোদিত হওয়াটারে কম রিস্কি মনে করতআর উনারা খিচএর লাগি পতিত হওনেরও রিস্ক লইতে পারেন, সেই মিঠা, ইমব্যালিশমেন্টের ছলচাতুরি, গোলাপ-রঙা আলোর বাহার যেটা এমনকি এলুয়ারের কবিতা অথবা অ্যাতোরে স্কোলা’র রিসেন্ট ফিল্ম লে বাল (যার সাবটাইটেলটা হইতে পারে : “খিচ হিশাবে ফরাসি দেশের ইতিহাস) এর লাহান মর্ডানিস্ট কামকাইজরেও ম্লান কইরা দেয়। ইয়েস, খিচ কুনো বিনোদন নহে, একখান সাচ্চা এসথেটিক ব্যারাম! গ্রেট এয়ুরোপিয়ান উপন্যাসগুলা বিনোদন হিশাবেই পয়দা হইছিল, আর প্রত্যেক সাচ্চা নভেলিস্টই হারলাগি বেচেন ছিলেনইনফ্যাক্টসেই গ্রেট বিনোদনগুলার থিমগুলিও মারাত্মক সিরিয়াসসের্ভান্তেসের কথাই ভাবেননা! ‘দ্য ফেয়ার ওয়েল পার্টিতে প্রশ্নটা হইল, মানুষ কি এই দুনিয়ায় বসবাসের যোগ্য? কারও কিমাইনষের খপ্পর থিকা এই গ্রহটারে আযাদ করাউচিত না? আমার সারাজীবনের অ্যাম্বিশন ছিল প্রশ্নটার চরম সিরিয়াসনেস এবং এর ফর্মের চূড়ান্ত লঘুতারে একলগে নিয়া আসা এবং এইটা শুধুমাত্র একটা আর্টিস্টিক অ্যাম্বিশন ছিল না। ফালতু ফর্ম আর সিরিয়াস বিষয়ের কম্বিনেশন আমাগো নাটকগুলারে (আমাগো বিছানায় যেসব কাণ্ড ঘটে পাশাপাশি ইতিহাসের দুর্দান্ত মঞ্চে আমরা যেসব খেলা খেলি) তাদের ভয়াবহ অর্থহীনতার ভিত্রে নাঙ্গা কইরা রাখে। মোরা অস্তিত্বের অসহনীয় লঘুতারে অনুভব করি।

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

সুতরাং আপনে তো আপনার লেটেস্ট নভেলের টাইটেলটাও ‘দ্য ফেয়ারওয়েল পার্টি’র জন্য ইয়ুজ করতে পারতেন?

মিলান কুন্দেরা

আমার প্রতিটা নভেলের নামই ‘দি আনবেয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’ অথবা ‘দ্য জোক’ কিংবা ‘লাফেবল লাভস’ হইতে পারে; নামগুলা ইন্টারচেইঞ্জেবল, তারা সামান্য সংখ্যক থিমগুলারে প্রকাশ করে যা আমারে অবসেস কইরা রাখে, আমারে ডিফাইন করে, এবং, আনফরচুনেটলি আমারে বাইন্ধা রাখে। এই থিমগুলার বাইরে, আমার লেখার বা কওয়ার কিছু নাই।

ক্রিশ্চিয়ান স্যালমন

তাইলে, আপনার নভেলে দুই ধরণের ফরমাল আর্কেটাইপ গঠন আছে : (১) পলিফোনি, যেটা নাম্বার সেভেনের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন উপাদানগুলিরে একটা আর্কিটেকচারের ভিত্রে নিয়া আসে।
(২) প্রহসন, যেটা হোমোজিনিয়াস, নাটকীয়, এবং অসম্ভবের কিনারায় ঝুঁইকা পড়ে। এই দুই আর্কেটাইপের বাইরেও কি কোনো কুন্দেরা থাকতে পারে?  

মিলান কুন্দেরা

আমি সবসময়ই এক মহান অপ্রত্যাশিত বিশ্বাসঘাতকতার খোয়াব দেহি। লেকিন আমি অখনো আমার এই বিগামাস২০ অবস্থা থিকা পালাইতে পারি নাই।     


বোধিনী :

১. হিস্ট্রিক্যাল নভেল আর সাইকোলজিক্যাল নভেল লইয়া বাৎচিত করতে গিয়া কুন্দেরা উনার “দ্য আর্ট অব দ্য নভেল” বহিতে কন যে, হারম্যান ব্রখ ‘পলিহিস্ট্রিক্যাল’ নভেল টার্মটা ভুল কইরা অ্যাডপ্ট করছিলেন। কুন্দেরার মতে, পলিহিস্ট্রিক্যাল শব্দটার ব্যাখ্যা হইতে পারে : “যেটা প্রতিটা ডিভাইস এবং জ্ঞানের হগল ফর্মরে একলগে করে যাতে কোনো অস্তিত্বের প্রতি আলোকপাত করন যায়।” ‘পলিহিস্ট্রিক্যাল’ নভেল বিষয়ে আরো জানতে ফ্লোরিন ওপ্রেস্কু’র Power and Literature: Strategies of Subversiveness in the Romanian Novel (2018) বইটার ২১১-২১২ নম্বর পেইজে সার্চ মারতে পারেন ওস্তাদ!

২. ‘কাউন্টারপয়েন্ট’ টার্মটা হইল একটা মিউজিক্যাল টার্ম। মিউজিকে দুই বা তারও বেশি ডিফারেন্ট টিউনগুলারে কম্বিনেশন কইরা একলগে বাজানোরে ‘কাউন্টারপয়েন্ট’ কয় অথবা, একটা সুর রচনা কইরা অন্য একটা সুরের লগে একাট্টা করার প্রসেস হইল কাউন্টারপয়েন্ট। নভেলিস্টিক ‘কাউন্টারপয়েন্ট’ বলতে কুন্দেরা কি বুঝাইতে চাইছেন সেই বিষয়ে বেবাক বকবকাইছেন এই ইন্টারভিয়ুতে

৩. এলিপসেস (Ellipsis)শব্দটা আসছে গ্রীক শব্দ élleipsis থিকা (দুই একটা গ্রীক শব্দ না মারতে পারলে ঠিক জ্ঞানজ্ঞান লাগে না)যার অর্থ হইতে পারে ‘বাদ দেওয়া’ অথবা ‘কমানো’। এলিপসেস’র দুই/তিন ধরণের ডেফিনেশন এবং ব্যবহার পাওন যায়। আগ্রহীরা দেখতে পারেন : http://www.literarydevices.com/ellipsis/

৪.মাগো! পলিফোনিক (Polyphonic)হইল আরেকখান মিউজিক্যাল টার্ম। সহজ কইরা কইলে দুই বা দুইয়ের বেশি স্বাধীন টিউনরে একলগে সুরে রাইখা মিলান্তিসরে কয় পলিফোনিক। আরো সহজ কইরা বললে, যেখানে অনেকগুলা সাউন্ড বা ভয়েসরে একলগে ইনভলভ করা হইতেছে উহারে পলিফোনিক কহে।

৫. সিনেকোয়ানোন (sine qua non)একটা ল্যাটিন লিগ্যাল টার্ম; একটা জরুরী অবস্থা/কাম/ঘটনা বুঝায়, যেইটা না থাকলে অন্যটা ঘটা সম্ভব না।  

৬. ফিয়ুগ (Fugue)হইতাছে বিভিন্ন টিউন মিলায়ে একটা কম্পোজিশন তৈরি করা যেখানে একাধিক টিউন ঢুকায়ে সেগুলারে রিপিট কইরা একটা কমপ্লিকেটেড প্যাটার্ন বানানোহয়ফিয়ুগশব্দটা লিটারারি ইয়ুজ করা হয় তার বিস্তারিত কমপ্লেক্সিটি ডেসক্রাইব করার লাগি

৭. লেভিটেশন (Levitation)বাতাসে ভাইসা বেড়ানোর জাদুবিদ্যা

৮. লত্রেমোঁ (Lautréamont)উনিশ শতকের ফ্রেঞ্চ কবি। ২৪ বছর বয়সে মইরা গেছেন। দুইখানা নোটেবল কাম আছে। ফরাসি মর্ডান আর্ট ও লিটারেচারে এবং স্যুররিয়ালিস্টগোর উপ্রে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করছিলেন।

৯. খিচ (Kitsch)জর্মনলোন-ওয়ার্ড সাধারণভাবে কইলে খিচ হইতেছে এমন আর্ট বা অবজেক্ট যেইটা “হাই আর্ট”রে না চুইদা পপুলারের কাছে ধর্না দেয়। মাইনষে এগ্লারে আয়রনিক কিংবা হিউমারাস বিবেচনায় এপ্রিশিয়েট করবার চায়। এক্সাম্পল হিশাবে রাজীব দত্ত’র রবীন্দ্রনাথের ফটো লইয়া যে আর্টগুলা আছে, সেগুলা দেখতে পারেন। আবার, কুন্দেরার “দি আনবেয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং” উপন্যাসটার সেন্ট্রাল মোটিফ হইল খিচ। 

১০. কাঁসিয়ার্জ (Concierge)ফ্রান্স কিংবা উত্তর আম্রিকার অ্যাপার্টমেন্ট/হোটেলের কেয়ারটেকার।

১১. ন্যুভুউ রোমান (Nouveau roman)নয়া উপন্যাস। ১৯৫০-এর দশকের ফরাসি উপন্যাসগুলার ক্লাসিক্যাল লিটারারি ঘরানা থিকা সইরা আসারে এই শব্দটা দিয়া এমিল হেনরিয়েট পয়লা কয়েন করছিলেন। এন্টি-নভেল কিংবা আভাঁ-গার্দমার্কা নভেলগুলায় যেমন প্লট, ডায়লগ, ভিত্রের ন্যারেটিভ কিংবা মাইনষের ইন্টারেস্টের বিষয়গুলার বাপদশা লাইগা যায়; ঠিক অইরকম চরিত্রের জিনিস হইল ‘ন্যুভুউ রোমান’

১২. Twelve-tone technique (serialism) হইল চেক কম্পোজার য়ুসেফ ম্যাথিয়াস হাওয়ারের ১২ নোটের একখান কম্পোজিশন টেকনিক। পরে শোনবার্গ এই নোট সিরিজটারে আরো ডিভালপ করেন। মিউজিক ওয়ার্ল্ডে ‘Tone row’ নামেও লোকে এরে চিনেমিউজিকে‘Tone row’ বা ‘note row’ সিরিজটা হইতেছে একটা নন রিপিটিটিভ পিচক্লাস এর সেট, যেইটা সাধারণত ক্রোম্যাটিক স্কেলে রমিউজিক্যাল সেট থিউরির ১২টা নোটে মজুদ থাকে; যদিও বড় আর ছোট্ট সেটগুলাও মাঝে মাঝে থাকে
[ক্রোম্যাটিক স্কেল : যে মিউজিক্যাল স্কেলে ১২টা পিচ থাকে এবং যার প্রত্যেকটাই তার পাশের পিচের উপরের কিংবা নিচের সেমিটোন]

১৩. লিতোস্তে (Litost)স্লোভাক শব্দ। অর্থ হইতে পারে : করুণা।

১৪.আর্কেটাইপ (Archetype)কথাটার মানে হইতে পারে কোনো প্যাটার্ন-মডেল-টাইপ এর আদিরূপএইটা দিয়া ফেমাস কোনো কনসেপ্ট, আদমি অথবা কোনো অবজেক্টরে ব্যাপক অর্থে বোঝায়যেমন ধরেন, শেক্সপিয়ারের রোমিও-জুলিয়েট; এইটা হইল দুর্দশাগ্রস্ত লাভারদের আর্কেটাইপ। নানান ধরণের আর্কেটাইপ আছে : ইয়ুং এর সাইকোলজিক্যাল আর্কেটাইপ, প্লেটোনিক কনসেপ্টের আর্কেটাইপ, মেটাফিজিক্যাল আর্কেটাইপ ইত্যাদি ইত্যাদি। কানাডিয়ান লিটারারি ক্রিটিক নরথ্রপ ফ্রাই আরেক ধরণের আর্কেটাইপের কথা কইছেন উনার Anatomy of Criticism (1957) বহিতে।

১৫. প্রেস্টো (Presto)একটাক্ষ্যাপা রূঢ় ভাব

১৬. অদাগিও (Andante)শান্তিসহানুভূতিরভাব

১৭. প্রেস্টিসিমো (Prestissimo)দ্য গ্র্যান্ড মার্চ : একটা রূঢ়, তিতাভাব, অনেক ঘটনাবহুল

১৮. পিয়ানিসিমো (Pianissimo)ক্যারনিনের হাসি : একটা শান্ত, বিষণ্ণভাব, লগে কিছু কাহিনি

১৯. ডেভার্টিসমেন্ট (Divertissement)ফরাসি শব্দ। মানে হইল, বিনোদন। 

২০. বিগামাস (Bigamous)কথাটার মানে হইল একলগে দুই বিবি বা হাজবেন্ড থাকন। কুন্দেরা এখানে “বিগামাস” কথাটা কয়েন করে বুঝাইছেন যে অখন পর্যন্ত ‘পলিফোনি’ এবং ‘প্রহসন’এই দুই ফরমাল আর্কেটাইপের লগেই কুন্দেরার সংসার। আর এই দুই ফরমাল আর্কেটাইপের সংসার থিকা উনি পলাইতে  পারতেছেন না।

মেহেরাব ইফতি
বিভাবি, ইন্ডিয়া; ঈসায়ী ২০২০


লেখা পাঠান- chilekothasahitto@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠা বেস্ট সেলার বইসমূহ

‘নক্ষত্রের খোঁজে’ প্রতিযোগিতা ২০২২ এর নির্বাচিত বই