চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

মাথা



মাথা

বোরা চং
অনুবাদঃ সারোয়ার রাফি 


সে টয়লেটে ফ্ল্যাশ করতে যাচ্ছিল।

"আম্মো?"

সে ফিরে তাকালো। টয়লেটের ভিতর থেকে একটি মাথা বের হয়ে তাকে ডাকছিল। 

"আম্মো?"

মহিলাটি কিছুক্ষণের জন্যে সেখানে তাকালো। তারপর, সে টয়লেটে ফের ফ্ল্যাশ করলো। মাথাটি জলদি জলের স্রোতে অদৃশ্য হয়ে গেল। 

সে তারপর বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসলো। 

কিছুদিন পর, বাথরুমে মাথাটির সাথে তার ফের দেখা হলো। 

"আম্মো!"

মহিলাটি ফের টয়লেটে ফ্ল্যাশ করতেই যাচ্ছিলো। মাথাটি শব্দ করে উঠলো, "না-আ, একটু সময় দাও…"

মহিলা তার হাতটি ফ্ল্যাশে ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো এবং টয়লেটের মধ্যে মাথাটির দিকে ফিরে তাকালো। 

এটাকে স্পষ্টত আসল মাথার সাথে তুলনা করলে "এমন একটি জিনিস যা দেখতে অস্পষ্ট হলেও মাথার মতোনই" এবং তাই বলে সম্বোধনও করা যায়। এটি একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাথার আকারের দুই-তৃতীয়াংশের মতোন ছিল এবং অসতর্কভাবে মিশে যাওয়া হলুদ এবং ধূসর কাদামাটির পিণ্ডের মতোন ছিল, যেখানে কয়েকটি বিক্ষিপ্তভাবে ভেজা চুলের টুকরো ছিল। কোনো কান ছিলো না, কোনো আইভ্রু ছিলো না। চোখের জন্যে দুটি অংশ এতোই সরু ছিল যে সে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না দুটো চোখ আসলে খোলা নাকি বন্ধ। মাংসের স্তুপ বলতে যা বোঝানো যায় তা ছিল এটার নাক। মুখও ছিলো ঠোঁটবিহীন চেরা। এই চেরা ঠোঁটদুটো বিশ্রীভাবে একবার খুলছে এবং বন্ধ করছে এবং তাই দিয়েই সে তার সাথে কথা বলছে, একজন ডুবে যাওয়া ব্যক্তির শব্দের সাথে এর চাপা কথাগুলো যেন মিশে যাচ্ছে, কাজের মধ্যে থেকে যা বুঝতে পারা বড়োই কঠিন। 

"জঘন্য নরকের কীট তুই কে?" মহিলাটি প্রশ্ন করে ওঠে। 

"আমি নিজেকে মাথা বলে ডাকি", মাথাটি জবাব দিল। 

"অবশ্যই, তুই তাই," মহিলাটি জবাব দিল, "কিন্তু তুই আমার টয়লেটে কী করছিস? এবং তুই আমাকে 'মা' বলেই বা কেন ডাকছিস?"

ঠোঁটবিহীন মুখ দিয়ে আধো আধো কথা বলতে যেন মাথাটি চাপা পড়ে যায়। "তুমি টয়লেটের মধ্যে যা ফেল তাই দিয়ে আমার শরীর তৈরি হচ্ছে, যেমন তোমার পড়ে যাওয়া চুল এবং মল এবং টয়লেট পেপার যা দিয়ে তুমি তোমার পাছা মুছো"।

মহিলাটি খুব রেগে গেল। "আমি কখনোই তোর মতোন কাউকে আমার টয়লেটে বাস করবার অনুমতি দিইনি। আমি এমনকি প্রথমত তোকে তৈরিও করিনি, তাই আমাকে ''আম্মো'' বলে ডাকা বন্ধ কর। আমাকে তাই তোর ধ্বংসকারীকে ডাকার আগেই ভালোই ভালোই বিদেয় হ।"

"আমি শুধু অল্প কিছুই চাই," মাথাটি দ্রুততার সাথে যোগ করলো, "আমি শুধু এটুকুই চাই যে তুমি টয়লেটের মধ্যে তোমার শরীরের বর্জ্য পদার্থ ত্যাগ করতে থাকো যাতে আমি আমার বাকি শরীরটুকু তৈরি করে শেষ করতে পারি। তারপর আমি এখান থেকে খুব দূরে চলে যাবো এবং সেখানে আমি আমার মতোন বেঁচে থাকবো। তাই দয়া করে, প্রতিদিনকার মতোন টয়লেটটি ব্যবহার করতে থাকো।"

"এটা আমার টয়লেট," মহিলাটি শক্তভাবে বললো, "তাই অবশ্যই প্রতিদিন যেভাবে এটিকে ব্যবহার করি ঠিক সেভাবেই এটিকে ব্যবহার করবো। কিন্তু আমি তোর মতোন কীটকে এর ভিতরে বাস করতে দেখতে সহ্য করতে পারবো না। তোর শরীর তৈরি হলো কি হলো না তা আমার দেখার কাজ নয়। আমি থোড়াই কেয়ার করি তুই কী করছিস না করছিস, এবং তুই যদি এভাবে দেখা দেওয়া বন্ধ করিস তবেই আমি খুব খুশি হবো।"

মাথাটি টয়লেটের মধ্যে গায়েব হয়ে গেল।

কিন্তু মাথাটি পুনরায় দেখা দিতেই থাকলো। 

ফ্ল্যাশের পর, এটি টয়লেটের সিটের উপরে দেখা দিতে থাকলো এবং মহিলাটির হাত ধোঁয়া দেখতে লাগলো। যখন মহিলাটি অনুভব করতো যে তাকে কেউ নজরে রেখেছে, তার চোখজোড়া ফের টয়লেটের দিকে চলে যেত এবং দু'চোখ বন্ধ করে সে সে বুঝতে চাইতো এগুলো সেই চেরা চোখ কিনা। বিধস্ত মুখটিতে সে অভিব্যক্তি তৈরি করতে চেষ্টা করতো, কিন্তু এটা বলা প্রায় অসম্ভব ছিল যে তা আসলে কী ছিল। মহিলাটি যতই নিকটে আসতো মাথাটি টয়লেটের মধ্যে দ্রুতই গায়েব হয়ে যেত। মহিলাটি তারপর টয়লেটের ঢাকনাটি বন্ধ করে দিতো, ফ্ল্যাশ করতো এবং টয়লেটটার দিকে কিছুক্ষণের জন্যে তাকিয়ে থাকতো, এবং পরে চলে যেত। 

একদিন মহিলাটি সবসময়ের মতোনই টয়লেটটি ব্যবহার করতে থাকলো, তারপর হাতলটি ধরে ফ্ল্যাশ করলো এবং পরে তার হাত ধুতে থাকলো। মাথাটি তার পেছনে থাকা টয়লেটের মধ্যে ফের দেখা দিলো, সাধারণভাবে যেভাবে দেখা দেয়। 

মহিলাটি আয়না দিয়ে কিছুক্ষণের জন্যে এটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। মাথাটিও তাকিয়ে থাকলো। বিধস্ত মুখটি থোকা থোকা চুলের সাথে সাধারণভাবে হলুদ ও ধূসর বর্ণের দেখাতো, কিন্তু এখন এটাকে অদ্ভুতভাবে লাল দেখাচ্ছে। 

মহিলাটির তখন হঠাৎ মনে পড়লো তার পিরিয়ড চলছে। 

"তোর রঙ আজ ভিন্ন দেখাচ্ছে," সে মাথাটিকে বললো। "আমার নিজের শরীরের কোনো অবস্থা কী এর জন্যে দায়ী নাকি?" মাথাটি তা শুনে উত্তর দিলো, "আম্মো, তোমার শরীরের অবস্থার পরিবর্তন আমার চেহারার মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলে। এর কারণ হলো আমার পুরো অস্তিত্বই তোমার উপর নির্ভর করছে।"

মহিলাটি তার পরিধানরত আন্ডারওয়্যার ও স্যানিটারি প্যাডটি খুলে ফেললো। সে প্যাডটিতে  লেগে থাকা মাসিকের রক্ত দিয়ে মাথাটির মুখ লেপ্টে দিলো এবং পরে সেটি টয়লেটের মধ্যে ফেলে দিলো। তারপর ফ্ল্যাশ করে দিলো। 

মাথা এবং প্যাডটি টয়লেটের জলের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকলে এবং কিছুক্ষণ পরেই অতল গহ্বরে সেগুলো হারিয়ে গেল। সে তারপর তার হাতদুটো ধুয়ে ফেললো। তারপর সে বেসিনে বমি করে ফেললো। সে অনেকক্ষণ ধরে বমি করতে থাকলো, তারপর বেসিনটি পরিষ্কার করে বাথরুম ত্যাগ করলো। 

তারপরেই টয়লেটের মুখটি কিছুতে আটকে গেলো। প্লাম্বার সেখানে আটকে থাকা একটি স্যানিটারি প্যাড বের করে তার সামনে হাজির করলো যেন একটি শিরোপা তার সামনে হাজির করা হয়েছে এবং সে একটা লম্বা লেকচার দিলো যাতে এমন ধরণের জিনিস আর টয়লেটের মধ্যে না ফেলে। 

সে তারপর থেকে টয়লেটটি ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করে রাখতে থাকলো। যখনই সে তার কাজ করতো, সে ঘন ঘন হাতলটির দিকে তাকিয়ে থাকবার অভ্যাস গড়ে তুলতে লাগলো। এতে মহিলাটির কোষ্ঠকাঠিন্যে হয়ে গেলো। 

একদিন সে টয়লেটের ঢাকনাটি বন্ধ করতেই যাচ্ছিলো, তখন মুহূর্তেই তার নজরে এলো মাথাটি গর্ত হতে ফের দেখা দিচ্ছে। সে দুম করে ঢাকনাটি বন্ধ করে দিলো। সে কয়েকবার ফ্ল্যাশ করলো। যখনই সে বাথরুমটি ছেড়ে যাচ্ছিলো, সে সর্তকতার সাথে ঢাকনাটিকে একটু একটু করে উপরে তুলে দেখতে থাকলো। তার চোখজোড়া ফের অই মাথাটির সাক্ষাৎ পেলো। এটি জল থেকে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। চুলগুলো তার মুখের চারপাশে জলে ভাসতে থাকলো। সে ঢাকনাটি ফের বন্ধ করে দিলো। সে ফ্ল্যাশ করতে চেষ্টা করলো কিন্তু এতো জল আর ভিতরের দিকে যেতে চাচ্ছে না। 

মহিলাটি তার পরিবারকে এ ব্যাপারে জানালো। 

"এটি এমন কিছু নয় যে ডিম পাড়ার মতোন কিংবা অন্য কিছুর মতোন দেখতে। তাহলে কেন তুমি এটিকে একলা ছেড়ে দিচ্ছো না?"

এবং এই বিষয়ে এটুকুই তার পরিবারের সদস্যরা তাকে বললো। 

মহিলাটি ঘরের বাথরুমে যাওয়া বন্ধ করে দিলো। 

একদিন সে এটিকে তার কর্মস্থলের বাথরুমে দেখতে পেল। সে তখন টয়লেটে ফ্ল্যাশ করে তার হাত ধুচ্ছিল যখন এটিকে আয়না দিয়ে ফের দেখতে পায়, মাথাটি টয়লেটের মধ্যে দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলো। পরবর্তী দিন সে তার চাকরি ছেড়ে দেয়। 

তার কোষ্ঠকাঠিন্য ক্রমশ খারাপের দিকে চলে যায়। তার ব্লাডারে প্রদাহ বাড়তে থাকে। তার ডাক্তার তাকে বলেছিলো প্রতিদিন তাকে বাথরুম ব্যবহার করতে। কিন্তু সে যেখানে এই কাজটি করবে সেখানে কিছু একটি তার মল খাওয়ার জন্যে অপেক্ষা করছে, তার এই চিন্তাই তাকে বাথরুমে যাওয়া নিয়ে অসহনীয় করে তুলেছে। 

ফলে তার এই প্রদাহ ও কোষ্ঠকাঠিন্য কখনোই একেবারে চলে যাচ্ছে না।

এখন সে তার চাকরি ছেড়ে দিলো, তার পরিবার তাকে পরামর্শ দিলো যে এবার তার জন্যে ভালো হবে যদি সে একজন স্বামী খুঁজে পায়। তার মায়ের পরামর্শে সে তার সাথে মিলে এমন একজনের সাথে ডেটে গেলো। লোকটি একটা ট্রেডিং কোম্পানিতে একজন সাধারণ কর্মচারী হিসেবে কাজ করছে। সে বললো,একজন সুন্দর নারীকে বিয়ে করাই তার স্বপ্ন, তারপরে বাচ্চাকাচ্চা হবে, এবং পরবর্তীতে সে সুখে বসবাস করতে পারবে। তাকে দেখতে বিনয়ী এবং ভরসার মনে হলো যদিও এসবকিছু তার অকল্পনীয়ও বটে। এই অদ্ভুত মানুষটির সামনে বসে থেকে, সে তার এই বাথরুম পরিস্থিতির দুশ্চিন্তা নিয়ে কোনো সাহায্যই করতে পারছে না। লোকটি তার এই বিক্ষিপ্ত পরিস্থিতিকে বুঝতে ভুল করে। সে বলে, "তার আদর্শ নারী হবে লাজুক এবং সংযমী প্রকৃতির। এটা খুবই কঠিন যে আজকের দিনে কোনো লোকের সামনে এমন একজন লাজুক স্বভাবের নারীকে বসে থাকতে দেখতে।"

লোকটি তাদের মধ্যে এই মিল নিয়ে এতো প্রেমমুগ্ধ ও আত্মবিশ্বাসী ছিলো যে তারা পরবর্তী তিনমাসের মধ্যে বাগদান সম্পূর্ণ করে ফেললো এবং পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে বিয়েও করে ফেললো। 

এখন সে হানিমুন নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল। সৌভাগ্যক্রমে, মাথাটি এই পুরো যাত্রায় একবারো উদয় হলো না। তার স্বামীর সাথে নতুন বাড়িতে উঠার পরে সে যে জিনিসটি প্রথম দেখলো তা হলো বাড়িটির টয়লেট। এর ভিতরে তেমন কিছুই ছিলো না। এই নতুন বাড়ির জীবন তার ব্লাডারের প্রদাহ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে কিছুুটা তাকে মুক্তি দিলো। দিনগুলো উঠছে না অথবা নামছেও না, নির্দিষ্টভাবে ভালো অথবা খারাপও বলা যায় না, এবং সে চিন্তায় নিজে নিজে কমবেশি সন্তুষ্টই হলো। নতুন জীবনে মানিয়ে নেওয়ার এই ঘূর্ণিবায়ুর মধ্যে, সে নিজেকে মাথাটি নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় খুব কমই খুঁজে পেলো। তার ঘরে একটি সন্তান আসলো এবং মাথাটির ব্যাপারে সে একদমই ভুলে গেল। 

তার সন্তান জন্মানোর কিছু পরেই মাথাটি ফের তার জীবনে উদয় হলো। সে বেবি বেসিনে তার সন্তানকে তখন গোসল করাচ্ছিলো। 

"আম্মো।"

সে দুর্ঘটনাবশত তার সন্তানকে জলে ডুবিয়েই ফেলছিলো। 

মাথাটির মাথা এখন একজন গড় প্রাপ্তবয়স্কদের মতো বেড়েছে। 

এর হলুদ এবং ধূসর কাদামাটি মিশ্রিত গড়নটি একই ছিল তবে এর চোখগুলি কিছুটা আগের তুলনায় বড় হয়েছিল তাই সে চোখের পলক বের করে যাচ্ছে এবং এটি ঠোঁটের মতো মুখের সাথে সংযুক্ত ছিল। কানের জন্যে মাংসের ঢিবিটি দেখে মনে হচ্ছে সেগুলি তার মুখের চারপাশে অযত্নে আটকে আছে এবং এর স্পষ্ট চিবুকের নিচে মাংসের একটি নতুন ঢিবি দেখে মনে হচ্ছিল এখান থেকেই একটি ঘাড়ের শুরু হচ্ছে। 

"আম্মো, এই শিশুটি কী তোমার মেয়ে?"

মহিলাটি থুতু ফেলে বলছিল, "কীভাবে তুই ফের আমার সামনে পুনরায় আর্বিভাব হলি?" কে বললো তোকে যে আমরা কোথায় আছি?"

মাথাটি জবাব দিলো, "তোমার মল আমার শরীরের অংশ, তাই আমি সর্বদা জানি তুমি কোথায় থাকো।"

মাথাটির শব্দগুলো মহিলাটিকে অসন্তুষ্ট করলো। সে হিস হিস শব্দ করে বললো, "আমি তোকে দূরে চলে যেতে বলেছিলাম। তোর সাহস হয় কী করে আমাকে 'আম্মো' ডাকতে! এটা তোর ভাব্বার বিষয় নয় যে এই শিশুটি কার! কিন্তু ঠিক আছে, এটি আমার সন্তান। এই পৃথিবীতে সে হলো একমাত্র মানুষ যে কিনা আমাকে 'আম্মো' বলে ডাকতে পারে। এখন, চলে যা। আমি বলছি, চলে যা!" শিশুটি কেঁদে উঠলো। 

মাথাটি জবাব দিলো, "আমি হতে পারি এই শিশুটির তুলনায় ভিন্নভাবে জন্মেছি, কিন্তু আমিও তোমার সৃষ্টি, আম্মো।"

"আমি কী তোকে বলিনি তোর মতোন কাউকে আমি সৃষ্টি করিনি? আমি বলছি তুই দূর হ। যদি তুই প্রত্যাখ্যান করিস, তবে তোকে ধ্বংস করতে যা খুঁজে পাওয়ার ও করবার প্রয়োজন সেসবের সবটুকু করবো!"

সে সজোরে টয়লেটের ঢাকনাটি বন্ধ করলো এবং ফ্ল্যাশ করে দিলো। তারপর সে তার কান্নারত শিশুটিকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো এবং তার শরীরে লেগে থাকা সাবানের ফেনা পরিষ্কার করতে লাগলো।

পুনরায় মাথাটি তার জীবনে ফিরে আসবার সাথে সাথে, এটা দুঃস্বপ্নের মতোন বারবার আসতে লাগলো। সে অনুভব করতে লাগলো যখন সে ফ্ল্যাশ করে এবং হাত ধুতে থাকে তখন মাথাটি তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে চোখের কোণা দিয়ে বুঝতে পারলো হলুদ ও ধূসর বর্ণের কিছু তাকে দেখছে, কিন্তু যখনই সে পিছনে ফিরে দেখতে চাইলো, এটা চলে যেত, টয়লেটের মধ্যে তখন তার চুলের কিছু গোছা ভাসতে থাকতো। 

তার কোষ্ঠকাঠিন্য এবং মূত্রনালীর প্রদাহ ফের শুরু হলো। অন্য যেকোনো কিছুর থেকে, সে বাচ্চাটির ব্যাপারে চিন্তা করতে থাকলো। মাথাটি কী তার মেয়েটিকে নিয়ে হিংসে করছে? এটা কী বাচ্চাটিকে বুলি করছে? বাচ্চাটিকে নিয়ে মাথাটির চিন্তার ঝলক তার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। 

যখন ছোট্ট বাচ্চাটি বাথরুমে যেতে চাইতো তখন সে নার্ভাস হয়ে পড়তো। 

সে ঘুষি ধরে থাকতো। সে মাথাটিকে ধ্বংস করতে উঠে যেত। 

মহিলাটি স্বপ্ন দেখলো সে একটি সাদা, ছাদওলা ঘরে রয়েছে। হঠাৎই, মাথাটি তার সামনে উদয় হলো। মহিলাটি বিস্মিত হয়ে পেছনে ফিরে তাকালো। তারপর, মাথাটি অন্যদিকে উদিত হলো। এটি সবখানে উদিত হতে থাকলো।

তার পাশে থাকা, তার খুশি হওয়া বাচ্চাটি নির্দেশ করে বলে উঠলো, "মাথা! মাথা!"

মহিলাটি তার স্বামীর কাছে সাহায্যের জন্যে ভিক্ষা  চাইলো। সে তার পাশে বসেই পত্রিকা পড়ছিলো। "এহ, এটা কিছুই না। এটাকে একলা ছেড়ে দাও।"

তার শব্দগুলো ছাদে প্রতিধ্বনি হতে থাকলো এবং দেয়ালে সমস্বরে উচ্চারিত হতে থাকলো। একলা ছেড়ে দাও এটাকে। 

এটা কিছুই নয়। একলা ছেড়ে দাও এটাকে। এটা কিছুই নয়। 

মহিলাটি বাথরুমে যেত, তার কাজ সারতো এবং ফ্ল্যাশ করে দিত। হাত ধুতে ধুতে সে মাথাটির আর্বিভাবের অপেক্ষা করতো। যখনই হলুদ এবং ধূসর বর্ণের কিছু টয়লেটের মধ্যে থেকে উঁকি দিত, মহিলাটি নিঁচুস্বরে বলতো, "আমার তোকে কিছু বলার আছে।"

সে হাত ধোয়া শেষ করতো এবং টয়লেটের দিকে উপর হয়ে তাকাতো যাতে মাথাটি চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে। 

"তুমি হচ্ছো…"

সে ঘাবড়াতে থাকলো। মাথাটি অপেক্ষা করতে থাকলো। 

সে মাথাটিকে ধরে ফেললো, টয়লেট থেকে উপুড় করে বের করলো, এবং একটি প্লাস্টিক ব্যাগে মুড়িয়ে ফেললো। সে বাইরের আবর্জনার মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যাগটিকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। তারপর, নিশ্চিন্ত মনে, সে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলো। 

এই উপশম বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সে তার বাচ্চাটিকে নিয়ে বাথরুমে ছিলো যখন ব্যাপারটি পুনরায় ঘটে গেল। বাচ্চাটির এখন যথেষ্ট বয়স হলো যে নিজে নিজে টয়লেটে বসার। তার মেয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি এখন নিজে নিজেই ভালোভাবে শেষ করতে পারে যদি মহিলাটি প্রতিটা ধাপ তাকে বাতলে দেয় যে প্রথমে আন্ডারওয়্যার খুলে ফেলা, তারপর টয়লেটের উপরে বসা এবং তার কাজ সারা, তারপর পরিষ্কার করা, তারপর ফের কাপড় পরে নেওয়া, ফ্ল্যাশ করা এবং পরিশেষে হাত ধুয়ে ফেলা। যাইহোক, তার মেয়ে এতো লম্বা হয়নি যে বেসিনটির নাগাল পাবে তাই মহিলাটিই তাকে বেসিনে সাবান দিয়ে হাত ধুতে সাহায্য করে। একদিন যখন মহিলাটি তার কাজ করছিল তখন একটা পরিচিত হলদে এবং ধূসর জিনিসের আবির্ভাব ঘটলো। 

"আম্মো।"

মহিলাটি পিছনে ফিরে তাকালো এবং মাথাটিকে ফের দেখতে পেল। তারপর সে তার বাচ্চার হাতটি ভালোমতো ধুয়ে ফেললো এবং তোয়ালেতে মুছে ফেললো এবং বাথরুম থেকে তার মেয়েকে বের করে দিলো৷ 

"আম্মো।"

"এটার অর্থ কী? কীভাবে তুই ফের ফিরে এলে?" 

মাথার মুখটি অবাধ্যভাবে মুচড়ে যায়। "আমি একজন জেনিটারকে অনুরোধ করেছিলাম যে কিনা ফ্ল্যাশ করবার বেলায় নিচে আমাকে দেখেছিল।" 

মহিলাটি কিছু না বলেই ফের ফ্ল্যাশ করে দিলো। মাথাটি জলের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো এবং অন্ধকার গহ্বরে হারিয়ে গেল। বাথরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি বহু প্রশ্ন করলো। সে তার সন্তানকে বললো, "এটা হলো যেটাকে আমরা 'মাথা' বলে ডাকি। যদি তুমি আরেকবার দেখো, তাহলে শুধু ফ্ল্যাশ করে দিবে।"

বিরক্তি নিয়ে মাথাটি ফের মহিলাটি এবং তার বাচ্চাটির সামনে উদয় হতে থাকলো এবং তাকে "আম্মো" বলে ডাকতে লাগলো। 

সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো যে একবার এবং সারাজীবনের জন্যে তাকে এর থেকে মুক্তি পেতে হবে৷ 

টয়লেট থেকে মাথাটিকে পুনরায় তুলে ফেলা খুবই সহজ। কিন্তু যখনই সে এটিকে প্লাস্টিক ব্যাগে মুড়ে ফেলা এবং গার্বেজে এটিকে ছুঁড়ে ফেলার ব্যাপারে সে খুবই বিব্রতবোধ করলো যে

মাথাটিতো কথা বলতে পারে। যদি সে আবার এটিকে আগের মতো ছুঁড়ে ফেলে দেয়, এটি আগের মতো আবার কাউকে টয়লেটে তাকে ফ্ল্যাশ করে দিতে অনুরোধ করবে। তাকে আগে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে এটি যাতে কথা বলতে না পারে৷ 

মহিলাটি মাথাটিকে একটি ছোট কন্টেইনারে ভরলো, যেটাকে পরে সে বারান্দায় সূর্যের আলোতে রেখে দিলো। সে বের করলো পানি অথবা মলত্যাগ করা ছাড়া, মাথাটি আসলে মমিতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। সে আর অন্য কোনো উপায় ভাবতে পারলো না, না পারলো এই ব্যাপারে অন্য কোনো ইস্যুকে বড় করতে। 

সে তার স্বামী এবং বাচ্চাকে সর্তক করলো এই কন্টেইনারটিকে যেন ডিস্টার্ব না করে। তার স্বামীর কোনো কারণই ছিলো না বারান্দায় যাওয়ার, কিন্তু তার বাচ্চাটি ছিলো বড়ই কৌতূহলী। তার বাচ্চাটির এটিকে ছুঁতে এবং তাকিয়ে থাকতে এবং কথা বলতে প্রবল ইচ্ছা হলো। মহিলাটি তীব্রভাবে বাচ্চাটিকে খুবই বকাঝকা করলো এবং মাথাটির সাথে কন্টেইনারটিকে লুকিয়ে ফেললো। 

তার স্বামী কিছু ছুটি কাটানোর সময় পেলো, এবং তারা কিছুদিনের জন্যে ভ্রমণ করতে গেলো। যখন তারা ফিরে আসলো, মহিলাটি বাথরুমে গেল। সে হাত ধুতে লাগলো যখন তার পেছনে কোনো কিছুকে উদিত হতে দেখলো। সে পেছনে ফিরে তাকালো। সে টয়লেটের ঢাকনাটিকে জোরে নামিয়ে ফেললো এবং ফ্ল্যাশ করে ফেললো৷ 

মহিলাটি বাচ্চাটিকে খুবই বকাঝকা করলো। "তুমিই কাজটি করেছো, করোনি! আমি তোমাকে বারবার বারণ করেছিলাম এটিকে না ছুঁতে!"

বাচ্চাটি কাঁদতে লাগলো। তার স্বামী এগিয়ে আসলো। "ওহ, কন্টেইনারে থাকা জিনিসটি নাকি? এটি আমাকে বললো যে তাকে টয়লেটে রেখে আসতে, শুনে আমি তাই করেছিলাম। কেন, আমি কী কিছু ভুল করেছি?"

সে দীর্ঘশ্বাস ফেললো এবং তাকে পুরো ঘটনাটি বললো। 

তার স্বামী তারপরও উদাসীনতা দেখালো। "এহ, এটা কিছুই নয়। এটাকে একলা ছেড়ে দাও। এটা এমন কিছু নয় যে রাত্রিবেলায় গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে আসবে এবং ঘরের ভিতরে ডিম পাড়বে।"


মহিলাটি স্বপ্ন দেখলো সে একটি সাদা, ছাদওলা ঘরে রয়েছে। হঠাৎই, মাথাটি তার সামনে উদয় হলো। মহিলাটি বিস্মিত হয়ে পেছনে ফিরে তাকালো। তারপর, মাথাটি অন্যদিকে উদিত হলো। এটি সবখানে উদিত হতে থাকলো।

তার পাশে থাকা, তার খুশি হওয়া বাচ্চাটি নির্দেশ করে বলে উঠলো, "মাথা! মাথা!"

মহিলাটি তার স্বামীর কাছে সাহায্যের জন্যে ভিক্ষা  চাইলো। সে তার পাশে বসেই পত্রিকা পড়ছিলো। "এহ, এটা কিছুই না। এটাকে একলা ছেড়ে দাও।"

তার শব্দগুলো ছাদে প্রতিধ্বনি হতে থাকলো এবং দেয়ালে সমস্বরে উচ্চারিত হতে থাকলো। একলা ছেড়ে দাও এটাকে। 

এটা কিছুই নয়। একলা ছেড়ে দাও এটাকে। এটা কিছুই নয়। 

সিলিংয়ের কাছেই ফ্ল্যাশের হাতলটি ছিলো। সে কিছু বাঁধা অতিক্রম করে সেখানে পৌছালো এবং এটাকে টেনে দিতে সক্ষম হলো। পানি তার স্বামীর চারপাশে, তার বাচ্চার চারপাশে এবং মাথাটির চারপাশে ঘুরতে থাকলো। মহিলাটি তার খুশি হওয়া বাচ্চা ও তার উদাসীন হয়ে পত্রিকা পড়া স্বামীকে অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে দেখলো। সে তার বাচ্চাটিকে টেনে ধরলো এবং এই ঘূর্ণি থেকে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলো। একটা পরিচিত কণ্ঠ তখন তার কানের কাছে বলে উঠলো। 

"আম্মো?"

সে তার বাচ্চার দিকে ফিরে তাকালো। তার মেয়ের শরীরের দিকে তাকালো এবং দেখলো তার মেয়ের নরম ঘাড়ে মাথাটি বসে আছে। 

এই শক তাকে জাগিয়ে তুললো। সে বাথরুমে আটকে গেলো। সে টয়লেটের সামনে বসে পড়লো এবং পরিষ্কার, নিখুঁত সাদা বলের দিকে তাকিয়ে থাকলো, পরিষ্কার পানি ভিতরে বইতে থাকলো, এবং কালো গহ্বরটি এর ভিতরে নিমজ্জিত হতে থাকলো। জিনিসটিকে ভিতরে এবং কোথায় গহ্বরটি যাচ্ছে তা কল্পনা করতে থাকলো। 

কিন্তু যখন সে এটিকে মমি করবার চেষ্টা করলো, মাথাটি আর তারপর থেকে উদয় হয়নি। এবং সময়ের সাথে সাথে, সে আর এটিকে নিয়ে দুঃস্বপ্নও দেখলো না। মহিলাটি শান্তভাবেই তার জীবনে ফেরত আসলো- তার স্বামী ও বাচ্চার জন্যে রান্না করতে থাকলো, থালাবাসন ধুতে থাকলো, জামাকাপড় ইস্ত্রি করতে থাকলো, ঘর পরিষ্কার করতে থাকলো, শপিং করতে থাকলো, এবং সাধারণভাবেই নিজেকে অবিস্মরণীয়ভাবে কয়েকবছরের মধ্যে শান্তিপূর্ণ দিনগুলোতে খুঁজে পেলো। কোম্পানিতে তার স্বামী উন্নতি ঘটলো, অন্যদের তুলনায় না ধীর না দ্রুতভাবে। মানুষটি সাধারণত না ভদ্র না উষ্ণ ছিলো, কিন্তু সে তার সন্তানের জন্মদিনে বাড়িতে একটি কেক ঠিকই আনলো এবং এটিতে মোমবাতি জ্বালালো। তার সন্তান, অন্য সবার মতোন, প্রাথমিক স্কুলে যেতে লাগলো, তারপর মধ্য স্কুলে এবং তারপর হাই স্কুলের স্টুডেন্ট হয়ে গেল। বাচ্চাটির গ্রেডস না ভালো না খারাপ ছিলো। সে খুবই আদুরে দেখতে হলো, কিন্তু খুব সুন্দর ছিলো না। সে ছিলো টিপিক্যাল হাই স্কুলের স্টুডেন্টের মতোন যার কিনা সেলিব্রিটিদের মতোন সকালে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হতো এবং তার মুখে ওঠা ব্রণের দিকে আয়নায় তাকিয়ে থাকতে লাগলো। 

"জলদি নাস্তা করে নাও নয়তো দেরি হয়ে যাবে।"

"মা, তুমি কী আমার ইউনিফর্মের নেকটাইটি দেখেছিলে?"

"আমি এটিকে তোমার রুমের দরজার হাতলে ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। ধীরে খাও, নয়তো পেট খারাপ হবে।"

"ওকে। ওহ, যাইহোক, আমি গতকাল টয়লেটে একজন ব্যক্তির মাথা দেখেছিলাম।"

"তুমিও কি এখন। কী ঘটেছিল?"

"আমি টয়লেটে এটিকে ফ্ল্যাশ করে দিয়েছি।"

"গুড। আরো স্ট্যু দেবো?"

"এতেই চলবে। কিন্তু মাথাটির ব্যাপারে, আমার মনে হয় এটিকে আগে দেখেছিলাম। এটার থেকে কী মুক্তির কোনো পথ আছে? এটা খুবই জঘন্য।"

"ভুলে যাও এটার ব্যাপারে। শুধু ফ্ল্যাশ করে দিবে। তোমার কী হয়ে গেছে? "

"হ্যাঁ। দেখা হবে।"

"তুমি কী দুপুরের খাবার প্যাক করে নিয়েছো?"

"আমি নিয়েছি। বাই, মম।"

"দিন ভালো কাটুক তোমার।"

দরজাটি বন্ধ হয়ে গেল। 

এটার ব্যাপারে ভুলে যাও। 

এটা কিছুই নয়।

মহিলাটি টেবিলটিকে পরিষ্কার করতে থাকলো। 


তার বাচ্চাটি কলেজে ভর্তি হলো। অন্যদিকে, সে একসময় মসৃণ ছিল এমন জায়গায় বলিরেখা এবং ঝুলে যাওয়া ত্বক এবং রুক্ষ দাগ লক্ষ্য করা শুরু করে। সে তার সন্তানকে কিছু লিপস্টিক কিনে দিলো এবং এটি মেয়েটিকে মানালো ভালো, শুধু বাচ্চাটি এখন বালিকা নয় বরং সে একটা তরুণ নারী। মহিলাটি তার তরুণ বয়সের সীমাসূচক বলিরেখা পরিচিত-অপরিচিতভাবে তার মেয়ের মুখে পুনরায় আবিষ্কার করলো, বিস্মিত অনুভব হলো, গর্ববোধ করলো, একইসাথে ভালোবাসায় এবং ঈর্ষা করতে লাগলো। যখন তার সন্তান তার চুল সোজা করে বেগুনি রঙ করত, মহিলাটি একটি আয়নার সামনে দাঁড়াতো যখন কেউ দেখছিল না এবং তার "আন্টি পার্ম" এর কোঁকড়া চুল বাঁধতো। যখন কেউ দেখছিল না এবং তার "আন্টি পার্ম" এর কোঁকড়া চুলগুলি নিয়ে ঘোরাঘুরি করতো, তখন পুডলের মতো চুলের একটি টাইট টুপি পড়তো যেটাকে কালো রঙ করতে হয়েছিল।


মহিলাটি বাড়িতে আরো অধিক সময় একাকি কাটাতে থাকলো। তার স্বামী কার্যনির্বাহী পদে উঠে গেল এবং অসংখ্য কাজের চাপের মধ্যে যাপন করতে লাগলো এবং তার সন্তান তার নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল, তাই পরিবারের সদস্যদের কদাচিৎ একে অপরের সাথে দেখা হতো৷ সময় হতে সময়ে, তার স্বামী স্বাভাবিকের তুলনায় আগেই বাড়িতে আসতো এবং বাকি দুজন সারা সন্ধ্যা একসাথে নীরবেই কাটিয়ে দিতো, কিন্তু তাদের মধ্যে এখন আর আগের মতো আবেগপূর্ণ ব্যাপার ছিলো না অথবা পেছনে স্মৃতিতে ফিরে যাওয়ার জন্যে অতো সময়ও ছিল না। তারা তাদের দাম্পত্য জীবন আবেগ থেকে সরে গিয়েই কাটিয়ে দিতে লাগলো যা এখন তাদের জন্যে আবেগপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা থাকতো। তারা নীরবেই তাদের ডিনার খেতো, নীরবেই টিভি দেখতো, এবং তার স্বামীই নীরবে প্রথমে ঘুমুতে চলে যেত। 

মহিলাটি তারপর নিজে নিজেই টিভি দেখতো। কিছু কিছু দিনেতো তার সন্তান এবং স্বামী বাড়িতে দেরিতে আসতো, অথবা পুরো পরিবার লম্বা ঘুমে তলিয়ে যেত, সে তারপরও টিভি দেখতে থাকতো যতক্ষণ পর্যন্ত না জাতীয় সংগীত বেজে উঠতো। অংশত কারণ তার আর কিছুই করবার ছিলো না, কিন্তু আরো কারণ সে ভাবতো যদি সে টিভির স্ক্রীনে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে, সে হয়তো তার হৃদয়ে উদিত হওয়া অস্বাভাবিক অনুভূতির শূন্যস্থান কমাতে পারবে৷ স্থানটি মাঝেমধ্যে পুরোই শূন্য থাকতো, অন্যদের বেলায় পূর্ণ থাকতো, এবং মাঝেমধ্যে খুবই ব্যথা এবং তিক্ততা অনুভব করতো৷ এই অদ্ভুত শূন্যতায়, যদি সে তলিয়ে যায়, হঠাৎ করে তাকে আকারে উড়িয়ে দিতে পারে এবং তাকে গ্রাস করতে পারে। তাই সে টিভি দেখতে থাকলো, তার শূন্য হৃদয় পূর্ণ করবার চেষ্টা করতো এবং স্ক্রীনে অর্থহীন দৃশ্যগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতো। কিন্তু তাকে এই চিন্তা গভীরে নিয়ে যেতোই, এবং এটা বিষয়ই নয় কতটুকু সে নিজেকে এর থেকে বের করে নেওয়ার চেষ্টা করতো, তার চিন্তা তবুও কানায় কানায় উপচে পড়ে উঠতো…

তারপর একরাতে সে বাথরুমে গেল। 

সে তখন টিভি দেখতে থাকলো, যেমন সর্বদা দেখে, এবং পুরো বাড়িতে সে একাই, অন্যদিনের মতোন। সে তার কাজ করতে থাকলো, ঢাকনাটি বন্ধ করলো, এবং ফ্ল্যাশ করলো। যখন সে তার হাতে ধুতে লাগলো, সে তাকে আয়নায় একবার দেখলো। ঝুলে পড়া চোখ, ত্বক, কঠোর এবং শুষ্ক চামড়া।

সাদা চুল তার ডাই করা কাজের শিকড় থেকে উঁকি দিচ্ছে। সে তার চুলগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল, এবং আয়নায় দেখতে দেখতে ভাবতে থাকলো তার শীঘ্রই আরেকটি চুল ঠিক করবার এপয়নমেন্ট নেওয়া প্রয়োজন, তখনই টয়লেটের ঢাকনাটি সরে গেল। 

খটখটে শব্দ হলো। 

একটা ভেজা হাত টয়লেটের ভিতর হতে বেরুলো এবং ঢাকনাটি ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেললো। আরেকটি ভেজা হাত বেরুলো। দুটো হাতই টয়লেটের কোণাটিকে ধরে থাকলো। 

সে তার পেছনে একজন ব্যক্তির মাথা দেখলো, চুলের সাথে চিকন এবং পানির মতোন পিচ্ছিল, টয়লেটের মধ্যে থেকে উদয় হলো। 

সূক্ষ্ম হাতদুটি লম্বা, চিকন আঙুলগুলো খুলে ফেললো এবং সাদা চুল তার ডাই কাজের শিকড় থেকে উঁকি দিচ্ছে। সমৃদ্ধ কালো চুলগুলি মসৃণ পিঠের নীচে সমস্ত পথে পৌঁছেছে, তারপরে একটি মসৃণ কোমর এবং সাদা, স্বেচ্ছাচারী নিতম্ব এবং দৃঢ় উরুগুলির সংবেদনশীল লাইন অনুসরণ করেছে। একটি হাঁটু উঠে গেছে এবং একটি পা টয়লেটের বাটির প্রান্তে রাখা হয়েছে। পা ছিল সাদা এবং লম্বা এবং পাতলা। বাছুরগুলো ছিল সঠিক আকারের, পায়ের ওপরে উঠার সাথে সাথে পেশীগুলো একটু টানটান হয়ে উঠছিল, গোড়ালিটা সুন্দর। অন্য পা ফুটে উঠল, এবং তার সূক্ষ্ম আঙ্গুলগুলি হালকাভাবে বাথরুমের মেঝেতে স্পর্শ করল। বাথরুমের হলুদ আবছা আলোয় ভেজা, নগ্ন শরীরটা জ্বলজ্বল করছে।

মহিলাটি আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকলো। যে লোকটি টয়লেটের মধ্যে থেকে উদিত হলো সে পেছনে ফিরে তাকালো। মহিলাটি তার তারুণ্য প্রতিফলিত হচ্ছে মুখটিতে দেখতে পেল তার নিজের ঝুলে পড়া মুখের সামনে। তার তারুণ্য, তার বৃদ্ধ চেহারার দিকে তাকিয়ে হাসছে। 

বৃদ্ধাটি ধীরে ধীরে তরুণ নিজের মুখের দিকে ফিরে তাকালো। 

মাথাটি আর মাথাটি হিসেবে তার সামনে দাঁড়িয়ে নেই। বৃদ্ধাটি তার তারুণ্যের মুখের দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকলো, এমন মুখের দিকে যে কিনা অনবরত হেসেই চলেছে। 

"আম্মো?" কণ্ঠের আওয়াজ একটু উচ্চস্বরের কিন্তু এখন আর আগের মতোন গড়গড় শব্দ নেই, ডুবে যাওয়া ব্যক্তির সেই বিরক্তিকর কণ্ঠ আর নেই। "আমাকে চিনতে পেরেছো?"

"আচ্ছা…" তার নিজের কন্ঠস্বর মরিচা কব্জার মতো কচকচ শব্দ করতে থাকলো। 

"কেমন ছিলে, মা?"

মহিলাটি কিছুই বললো না। 

"আমার শরীরটি তৈরি সমাপ্ত করেছি। এবং আমি যেমন কথা দিয়েছিলাম, আমি চলে যাবো এবং আমার মতোন বাস করবো। আমি তোমাকে বিদায় জানাতে এসেছি এবং একটা শেষ অনুরোধ নিয়ে এসেছি।"

একটা শব্দই তার মনোযোগ কাড়লোঃ 

"অনুরোধ।"

"চিন্তা কোরো না।" মাথাটি হেসে তাকে আশ্বস্ত করলো৷ "আমি পৃথিবীর সামনেতো আর নগ্ন হয়ে যেতে পারিনা, পারি কী? এটা আমার জন্যে কঠিনই ছিলো তোমার ত্যাগ করা জিনিস দিয়ে আমার শরীর সম্পূর্ণ করতে, তাই আমি কোনো পোশাক তৈরি করিনি নিজেকে ঢাকতে। এটা আমার প্রথম ও শেষ অনুরোধ। যদি তুমি আমাকে পোশাক পাল্টানোর সুযোগ দাও, আমি আমার লজ্জাস্থান ঢাকতে পারি এবং আমার পথে চলে যেতে পারি।"

মহিলাটি তার ওয়ার্ডড্রোবে রাখা পোশাকগুলার কথা ভাবলো এবং সেগুলো আনতে বাথরুমে ত্যাগ করবার জন্যে ঘুরে দাঁড়ালো। মাথাটি তাকে আটকালো। 

"তোমার পথে যেও না। তোমার পরনে থাকা কাপড়গুলোই আমার জন্যে ভালো হবে।"

মহিলাটি জবাব দিলো, "কী বলছিস এসব তুই? মিনিটের জন্যে তোর জন্যে আমাকে নিজের পোশাক খুলতে বলছিস? তাও ঠাণ্ডায় টাইলস করা ফ্লোরে? আমি যা দিবো তোর সেগুলোই নেওয়া উচিত- তোর এতো চাহিদা কেন?"

"মা, প্লিজ শান্ত হও।" মাথা তার তরুণ মুখে আকাঙ্ক্ষার অভিব্যক্তি নিয়ে তার দিকে তাকালো। "আমি তোমার থেকে কখনো কিছু গ্রহণ করিনি তোমার ত্যাগ করা জিনিসগুলো ছাড়া। এটা আমার প্রথম এবং শেষ অনুরোধ। যদি তুমি আমাকে যা পরে আছে তাই আমাকে দাও, আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞতার সাথে তোমার উষ্ণতা এবং গন্ধ আমার শরীরে বয়ে বেড়াতে পারবো যতদিন পর্যন্ত না মারা যাচ্ছি আমি।"

মহিলাটি তার তারুণ্যের নিজের দিকে তাকালো। তার তারুণ্যের শরীরটির দিকে৷ এমন একটি সত্তার দিকে যে কিনা গর্ভ এবং অমরার মাধ্যমে তৈরি হয়নি বরং তৈরি হয়েছে কোলন এবং মল থেকে। 

সাদা পোরসেলিনের অন্ধকার গহ্বরে সবসময় যা লুকিয়ে ছিল সে এটার দিকে তাকিয়ে রইলো, তাকে অত্যাচার করেছিল, এবং এখন সে স্বাধীনতা চাইছে। যদি এটাই বিদায় হয়, এবং যদি তারা একে অপরকে আর কখনোই না দেখে, তাহলে কাপড় চেঞ্জ করলে আর কী হবে?

গামছা পরিধানরত তার তরুণ সত্তাটির জন্যে বৃদ্ধা তার কাপড় খুলতে লাগলো। তার পোশাক অতো আহামরি নয়ঃ একটি কার্ডিগান, একটা সাধারণ জামা, একটা ব্রা, প্যান্টি, এবং মোজা। এগুলোই ছিলো। নগ্ন হয়ে সে তার তরুণ সত্তাটিকে সবকিছু তুলে নিতে এবং পরতে দেখলো। 

প্যান্টি। ব্রা। জামা। কার্ডিগান। তরুণ সত্তাটি প্রতিটা জিনিসই উপভোগ করে পরলো। সবশেষে, মোজাগুলো পরলো, কার্ডিগানের বোতামগুলোও লাগানো শেষ হয়ে গেছে। বৃদ্ধা সত্তাটি তার নগ্ন শরীরের বিপরীতে বেশ ঠাণ্ডা অনুভব করলো। 

"ঠিক আছে, তারপর। এখন তোর আমার কাপড় পরা হয়ে গেছো, এবার বিদেয় হ। আমি ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছি। আমাকে কিছু পরতে হবে।"

সে ফের বাথরুম থেকে বেরুতে ঘুরে দাঁড়ালো। 

তরুণ সত্তাটি দ্রুতই তার এবং দরোজার মাঝে এসে দাঁড়ালো। 

"তুমি কোথায় যাচ্ছো বলে ভেবে রেখেছো? তোমার স্থান বাহিরে নয়।" সে টয়লেটের দিকে নির্দেশ করলো। "তেমার স্থান ওখানে।"

"তুই কী বলতে চাচ্ছিস?" চিৎকার করে বৃদ্ধা সত্তাটি বললো। "যখন তুই আমাকে বলেছিস তখন কী আমি তোকে কাপড়গুলো দিইনি? তুই আমাকে যা বলেছিলি তার সবকিছুই কী করিনি? এখন তুই অকৃতজ্ঞ কেন? যথেষ্ট পাগলামো হয়েছে, বিদেয় হ, বিদেয় হ!"

মুহূর্তেই তরুণ সত্তাটির চেহারা অবজ্ঞায় পরিবর্তিত হয়ে গেল। "ঠিক আছে। আমি যা বলেছিলাম তুমি তার সবকিছুই দিয়েছো, এবং সবকিছুর পর তোমার এই স্ফীত থরথরে শরীরটাই রয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে, আমি নিচে থেকে তোমাকে সহ্য করে এসেছি যখন বাহিরে পুরোটা সময় ধরে তুমি তোমার জীবনকে উপভোগ করে গিয়েছিলে। এবার তোমার সময় এসেছে যে টয়েলেটের ভিতরে চলে যাওয়ার। আমি তোমার স্থান নেবো এবং তুমি যা উপভোগ করেছিলে সেসব কিছুই উপভোগ করবো!"

বৃদ্ধা রেগে গেল। "তুই অকৃতজ্ঞ! এখানে উপভোগ করার কী ছিল? আমার জীবন অন্য সবার মতোই একই ছিল, এবং তুইও নস কি, তোর অত্যাচারের জন্যে আমার জীবনে যা ক্ষুদ্র আনন্দ ছিল তা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে? আমি তবুও অবজ্ঞা এবং ঘৃণার সাথে দাঁড়িয়ে রয়েছি এবং তুই আজকে যা তা তৈরি করেছি। তোর যদি ন্যূনতম কৃতজ্ঞতা থাকে আমি তোর জন্যে যা করেছিলাম নেহাত তুই আমার উপর যা করেছিলে তা ছাড়া, তাহলে তোর সম্পূর্ণ শরীর নিয়ে আমার জীবন থেকে দূর হয়ে যা! আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা!"

তরুণ সত্তাটির মুখ মুহূর্তেই ম্লান হয়ে গেল। চমকানি চোখে, তার তরুণ সত্তাটি দাঁত খিচিয়ে বলতে লাগলো, কিন্তু পরিষ্কার, ধীরে এবং সংযত সুরে। 

"কৃতজ্ঞতা। কোন ধরণের কৃতজ্ঞতা তোমাকে আমি দেখাবো? আমি কী তোমাকে আমায় জন্ম দিতে বলেছিলাম? তুমি কী আমার যত্ন করেছিলে অথবা একটা ভালো কথাও আমার সাথে বলেছিলে, তোমার এই পরিত্যক্ত সন্তানের সাথে?

তুমি আমাকে জন্ম দিয়েছিলে যখন আমি তা চাইনি, এবং তুমি কী আমাকে বিদ্বেষে এবং ঘৃণায় ধ্বংস করে দিতে চাওনি? তোমার মল এবং আর্বজনা ছাড়া আর তুমি আমাকে কী দিয়েছো? আমি সবধরনের অবক্ষয় ও অবজ্ঞা সহ্য করে গিয়েছিলাম শুধু এজন্যে যে আমার মানুষের মতোন শরীর সম্পূর্ণ করতে প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখন, এটা সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। ঐ অন্ধকার গহ্বরে এই দিনটির জন্যে আমি অপেক্ষা করে ছিলাম। এখন আমি তুমি হয়ে গিয়েছি,আমি তোমার স্থান নিবো এবং নতুন জীবন যাপন করবো।"

তরুণ সত্তাটি বৃদ্ধাটির দিকে অগ্রসর হতে থাকলো। তরুণটির শক্ত হাতদুটি বৃদ্ধটির কাঁধ এবং ঘাড় ধরলো। দ্রুতই ফ্ল্যাশ করবার জন্যে তরুণটির হাত বৃদ্ধাটির মাথা টয়লেটের ভিতরে ঢুকিয়ে দিলো, তারপর গোড়ালির সাহায্যে তাকে তুলে ধরলো। ভালোভাবেই বৃদ্ধার শরীরটিকে টয়লেটের ভিতরে প্রবেশ করালো, তার তরুণ সত্তাটি তারপর ঢাকনাটি বন্ধ করে দিলো এবং ফ্ল্যাশ করে দিলো। 

লেখা পাঠান- chilekothasahitto@gmail.com


মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠা বেস্ট সেলার বইসমূহ

‘নক্ষত্রের খোঁজে’ প্রতিযোগিতা ২০২২ এর নির্বাচিত বই