ওসমান সজীবের লেখা আমাদের প্রকাশিত বই ‘মুহাম্মদ’
নিয়ে পাঠক সমাজে নানান অভিযোগ উঠেছে। যে অভিযোগের ভিত্তিতে বইপোকাদের আড্ডাখানা গ্রুপে
এ বইকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ অভিযোগগুলো যাচাই করে দেখার কারো সুযোগ হয়নি।
কেউ কেউ প্রকাশনীর দিকেও এ বই ছাপানোর জন্য আঙুল তুলেছেন। কিন্তু আসলে এ বইয়ে কী আছে
সেটা পড়ে দেখার ধৈর্য্য সিংহভাগ পাঠকের হয়নি। এ
মানসিকতাটা খুবই দুঃখজনক। এরকম মানসিকতা চিন্তাশক্তিতে মানুষকে পিছিয়ে রাখে।
সাধারণত লেখক ও পাঠকের বিতর্কে প্রকাশনীর নাক গলানো উচিত নয়। কিন্তু যেহেতু বড় ও
জনপ্রিয় একটি বইয়ের গ্রুপে লেখকের বই নিষিদ্ধ করায় লেখক মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তাই
আমরা প্রকাশনীর পক্ষ থেকেই পাঠকদের অভিযোগগুলোর জবাব দিচ্ছি। এছাড়া, আমরা নানান
নেতিবাচক প্রচারণার কারণে ব্যবসায়িকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। পাশাপাশি, চিলেকোঠার বই নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় অন্যান্য বই বিক্রিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এই জবাব দেয়ার
আরেকটা উল্লেখযোগ্য কারণ, চিলেকোঠা জবাবদিহিতে বিশ্বাস করে। পাঠকের মতামতকে
গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। আমরা ‘মুহাম্মদ’ বইয়ের বিপরীতে বিভিন্ন পাঠকের
অভিযোগ এখানে একত্রিত করে তার উত্তর দিয়েছি।
অভিযোগ
১:
নবী হযরত মুহাম্মদ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবনী নিয়ে ফ্যান্টাসী কিভাবে কেউ লেখে। নবীজির জীবন নিয়ে কী ফ্যান্টাসি হয়? প্রকাশনী কিভাবে ছাপায় এসব বই?
উত্তর:
এ অভিযোগটা যারা করেছেন
তারা কেউই বইটা পড়েননি। চিলেকোঠা থেকে কখনোই কোথাও বলা হয়নি, এটা নবীজি বিষয়ক ফ্যান্টাসি বই। আমাদের ওয়েবসাইটে, পেইজে এবং রকমারিতে বইয়ের
বিষয়বস্তু দেখার অনুরোধ থাকলো।
আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- এ
বইটি হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কিত কোনো বই বা ফ্যান্টাসি
নয়। গল্পের মূল চরিত্র মুহাম্মদ সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি মিস্টিক্যাল ক্যারেক্টার। নবীজির জীবনের কোনো ঘটনাই এখানে নেই।
আর একটা বিষয়ে আমরা
যথেষ্ট সচেতন যে, নবীজি (সা:)
পৃথিবীর তৎকালীন সময়ের একমাত্র ব্যক্তি যার নবুয়ত প্রাপ্তির পর সমস্ত
জীবন রেকর্ডেড। তাই তাঁর জীবন নিয়ে ফ্যান্টাসি বা কাল্পনিক কিছু লেখা সম্ভবই নয়। হুমায়ুন
আহমেদও একবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি সম্ভবত বিষয়টা বুঝতে পেরে লেখাটা আর এগিয়ে
নেননি। যদি কোনো মুসলিম নবীজিকে নিয়ে কাল্পনিক গল্প তৈরি করে তাহলে তার ঈমান নষ্ট হওয়ার
সম্ভাবনা আছে। এমনকি যিনি কোনো বই না পড়েই যদি সেখানে নবীজির জীবনী আছে বলেন,
সম্ভবত তাহলে তারও ঈমান নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে। কারণ না জেনে নবীজি
সম্পর্কে একটা মনগড়া কথা ছড়ানো হচ্ছে। হাদিসেও করা হয়েছে, কোনো কথা সামনে এলে তা
যাচাই-বাছাই করতে হবে।
এখন তাহলে কেন নবীজির
জীবন নিয়ে ফ্যান্টাসির কথাটা কিভাবে আসছে? আসছে কারণ, আমরা খেয়াল করেছি, লেখক নিজেই নানান সময়ে এটা বলেছেন।
যদিও নানান ব্যাখ্যা দিয়েছেন লেখক। কিন্তু পাঠক ব্যাখ্যাগুলো গ্রহণ করেননি। লেখক
হয়তো গুছিয়ে বিষয়টা পাঠককে বুঝিয়ে বলতে পারেননি। নিজের বইয়ের প্রতি অভিযোগ দেখে
হয়তো আবেগাক্রান্ত হয়ে জবাব দিতে চেয়েছেন। কিন্তু এখানে পাঠকের সাইকোলজিটাও বুঝতে
হবে লেখককে। বেশিরভাগ পাঠক মুসলিম হওয়ায়, নবীজিকে নিয়ে ফ্যান্টাসি শুনে তারা ক্ষুব্ধ
হয়ে পড়েছেন। আর না পড়েই বইটা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যদিও এটা আদৌ নবীজী বিষয়ক
কোনো ফ্যান্টাসি বই নয়। এটা লেখক সবথেকে ভালো জানেন।
তবুও ব্যক্তিগত আবেগে
ও সিদ্ধান্তে লেখক হয়তো নবীজির জীবনী নিয়ে ফ্যান্টাসি বলেছেন এ বইকে (বিশেষ করে সাইফুল্লাহ
হুজুরকে বই দেয়ার ছবির ক্যাপশনে এটা লেখা আছে। এটা ভুল কাজ হয়েছে। আমাদের অনুরোধ থাকবে
এই ক্যাপশনটা লেখক যাতে বদলে ফেলেন)।
এটা ঠিক, এ বইয়ের গল্পকে মুসলিম স্পিরিটের গল্প হিসেবে নেয়া যায় কিন্তু এটাকে নবীজিকে
নিয়ে ফ্যান্টাসি এমন কথা বলা অনুচিত । আমরা লেখককে অনুরোধ করবো ভবিষ্যতে কখনো যেন না
বলেন যে, এটা নবীজিকে নিয়ে ফ্যান্টাসি। কেননা এমন বক্তব্য
আমাদের ব্যবসায়িক স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
আসুন, এবার আমরা একটু
যাচাই করি আদৌ বইটা নবীজি সংক্রান্ত কোনো ফ্যান্টাসি কিনা? এ যাচাইটা প্রিয় পাঠকদের করতে হবে বইটা পড়ে। আমরা শুধু কিছু পয়েন্ট ধরিয়ে
দিচ্ছি-
* এ বইয়ের চরিত্র কী
মক্কার? গল্পে কী কোথাও কাবার উল্লেখ আছে?
উত্তর: না।
কল্পিত এক ভূমির চরিত্র গল্পের মুহাম্মদ। এখানে পবিত্র কাবার কোনো উল্লেখ নেই।
* এখানে কি নবীজির পিতা
বা মাতার বা শৈশবের কোনো উল্লেখ আছে? বা ইঙ্গিত?
উত্তর: না।
* এ গল্পে কী ইসলাম
প্রচারের গল্প আছে? ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে নানান বাঁধার সম্মুখিন
হবার?
উত্তর: না।
* এ গল্পে কী মক্কার
মুশরিকদের কথা আছে? বিশেষ করে আবু জাহেল বা আবু লাহাবের কথা বা ইঙ্গিত?
উত্তর: না।
* এ গল্পে কী মুহাম্মদ
চরিত্রটির নিজ গোত্রের মানুষের দ্বারা নিগৃহীত ও অপমানিত হওয়ার কাহিনী আছে?
উত্তর: না।
* এ গল্প কী মুশরিকদের
সাথে মুসলিমদের লড়াই সংক্রান্ত?
উত্তর: না।
এ লড়াইটা স্রাম্রাজ্যলোভী সম্রাটের বিরুদ্ধে দুর্বল এক জনপদের লড়াই। আর এ লড়াই ধর্ম বিষয়ক না। জবরদখল বিষয়ক।
* এ গল্পের মূল চরিত্রের
সঙ্গীরা কী আবুবকর (রা.), ওমর (রা.), উসমান (রা.),
আলী (রা.) প্রমুখ
সম্মানিত সাহাবীদের মতো? সাহাবীদের কোনো উল্লেখ বা ইঙ্গিত আছে?
উত্তর: না।
গল্পের মুহাম্মদের নবীজি (সাঃ) এর সাহাবীদের মতো দৃঢ় চরিত্রের সাহসী কোনো সঙ্গী নেই।
বরং এ মুহাম্মদের সঙ্গীরা ভীতু ও দুর্বল। শত্রুর ভয়ে কাঁপে। যেটা সম্মানিত সাহাবীদের
মধ্যে ছিলো না। তাঁরা কখনোই শত্রুর ভয়ে কাঁপেননি। বরং শত্রুর কাঁপন ধরিয়েছেন।
* এ গল্পে কী নবীজির
কোনো স্ত্রী, বা সন্তানদের উল্লেখ আছে?
উত্তর: এ
গল্পের চরিত্র মুহাম্মদের কোনো পরিবার পরিজন দেখানো হয়নি।
আশা করি, পাঠকরা এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে উপন্যাসটা পড়লে আমাদের বক্তব্যের সত্যতা
বুঝবেন ।
অভিযোগ
২:
প্রকাশনী থেকে বলা হয়েছে
এটা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ঢুকে যাবে। এ অতিরঞ্জিত কথা কেন?
উত্তর:
এ বইটা মাল্টি লেয়ারের থিম নিয়ে রচিত। মূলত আইডিয়া ও ইমোশন জেনারেট করে। কেন সাহিত্যে টিকে যাবে বলা হয়েছে সে ব্যাখ্যা দেয়ার আগে বলে রাখা ভালো চিলেকোঠার সম্পাদনা পরিষদে ব্যাকএন্ডে যারা কাজ করেন তাদের পাঁচ-সাত হাজার বই পড়ার অভিজ্ঞতা তো আছেই। শুধু তা-ই নয়, তারা যে কোনো বইয়ের যে কোনো এঙ্গেল থেকে ক্রিটিক্যাল পাঠে সক্ষম তারা। পনের-বিশ বছর সাহিত্য জগত নিয়েই পড়ে আছেন। তারা যখন একটা পাণ্ডুলিপি বাছাই করেন চিলেকোঠার হয়ে তখন নানান ফিল্টারের মধ্য দিয়ে যাচাই করেন পাণ্ডুলিপিকে। তো তারা মূলত নিচের ছয়টা কারণে পাণ্ডুলিপিটা বেছে নিয়েছেন-
- প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট করে এ বইটা। পাশ্চাত্য যে বারবার দুর্বল প্রাচ্যের ওপর হামলে পড়ে এটা ইতিহাস স্বীকৃত। তো এ বিষয়টা বাংলা সাহিত্যে দুর্লভ। যদিও প্রায় সকলেই সচেতন পাশ্চাত্যের আগ্রাসন নিয়ে। কিন্তু ওরকম কোনো জনপ্রিয় লেখা সচরাচর চোখে পড়ে না।
- এছাড়া, এটা অত্যাচারী ও শোষিত মানুষের দ্বন্দ্বেরও চমৎকার আখ্যান।
- এটা নিপীড়িত মুসলিম স্পিরিটকেও টাচ করে। মানে, এ বইটা পড়লে পশ্চিমা আগ্রাসনে ছিন্ন-ভিন্ন মুসলিম দেশগুলোর দৃশ্য মাথায় ঘুরবে আর বিদ্রোহের স্পৃহায় মুসলিম জনপদকে পুনর্জাগরনের স্বপ্ন দেখাবে এ বই। পাশাপাশি, চরম দুঃসময়েও স্রষ্টার স্মরণের কথাও বারবার বলে গল্পটা।
- দেশপ্রেমের দারুণ প্রকাশ আছে এটাতে। মানুষের মাতৃভূমি অনুন্নত হলেও মানুষ সেটাকে ভালোবাসে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে জেনেও মানুষ যুগে যুগে মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য রুখে দাঁড়িয়েছে। দেশপ্রেমের স্পিরিটটা এ উপন্যাসে বেশ ভালোভাবে আছে ।
- একজন নির্মোহ ও দুঃসাহসী নেতার আখ্যান এ বইয়ে আছে । মুহাম্মদ চরিত্রটা যুগে যুগে জন্ম নেয়া নেতাদের প্রতীকি চরিত্র। আমরা সব যুগেই এমন নেতা দেখেছি। আর সাধারণত মানুষ এমন নেতাই কামনা করে।
- এ বইয়ের স্ট্রাকচার বা বয়ান পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা। এ বইটা Theatrical Novel জনরার একটি রচনা। থিয়েটার বা মঞ্চনাটকের স্বাদ এটাতে পাঠক পাবেন। এরকম জনরায় বাংলায় সুপরিচিত কোনো বই নেই। মোটাদাগে, এমন জনরার বই খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। হয়তো আছে কিন্তু হতে পারে আমাদের চোখে পড়েনি। যদিও এটাকে লেখক মিস্ট্রি থ্রিলার বলতে পছন্দ করেন। সেটা তিনি বললেও, সাহিত্যের জনরা চেঞ্জ হয় না। ‘মুহাম্মদ’ বইটা Theatrical Novel জনরার বই।
উপরোক্ত কারণগুলোর জন্যেই
আমরা আশাবাদী ছিলাম পাঠক বইটা যদি সচেতন হয়ে পড়েন তবে হয়তো তারাও আমাদের মতোই বিষয়গুলো
অনুধাবন করবেন। অথবা না করলেও তো ক্ষতি নেই। পাঠকের সিদ্ধান্তের ওপর আমাদের হাত নেই।
কিন্তু একটা বই কতদূর-কতদিন টিকবে সেটা সময়ই বলবে। ভবিষ্যতের
পাঠকরা বলবে। আমরা আমাদের কথাটা বলেছি কেবল।
অভিযোগ
৩:
বইয়ের নাম ‘মুহাম্মদ’
রাখা হলো কেন? এর ব্যাখ্যা কী?
উত্তর:
একজন লেখক তার বইয়ের
জন্য ‘মুহাম্মদ’ নামটা পছন্দ করেছেন কারণ এটা তার ভালো লেগেছে। এখান যদি পাঠক ডিকটেট
করেন কেন এ নাম রাখা হলো, তাহলে তো সৃজনশীল কোনো কাজ করাই মুশকিল। এ অভিযোগটা অযৌক্তিক। কেন মুহাম্মদ নাম রাখা যাবে না এর ব্যাখ্যা অভিযোগকারী কেউই পবিত্র কোরআন-হাদিস থেকে দেননি। আর আমরা মেধাবী আলেমদের সাথে কথা বলেছি, এরকম নাম রাখায় সমস্যা নেই। এছাড়া, সারা পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষের নাম মুহাম্মদ। এখন আপনি কী খুঁজে খুঁজে সবাইকে
গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন- এই, আপনার নাম মুহাম্মদ কেন?
অভিযোগ
৪:
গল্পের শুরু হয় একটি ঝড়ের সময় দিয়ে। যেই ঝড়ে উড়ে এসে এমন এক জায়গায় কারাস রাজ্যের অধিপতি লেবলন আর তার সেনাপতি এসে পড়েন, সেই জায়গাটা ওরা ঠিক চেনে না। লেখক শুরুতেই বিশাল বড়ো প্লট হোলের রেখেছেন। প্রথমত যেই ঝড়ে উড়ে এসে এমন এক অপরিচিত জায়গায় পড়েছেন, তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তারা কোথায় যাচ্ছিল? কোন পথে যাচ্ছিল?
রাজার সাথে শুধু সেনাপতি কেন? রাজার চারিপাশে তো সৈন্য সামন্তের অভাব থাকার কথা না? লেখক চাইলেই এই অংশে ব্যাক স্টোরি এনে শুরুটা আকর্ষণীয় করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা কেন করেননি, তিনিই জানেন।
উত্তর:
আগেই বলা হয়েছে এটা Theatrical Novel ঘরানার বই। এমন বইয়ে বিশদ ব্যাখ্যা থাকবে না। পাঠকের কল্পনার ওপর অনেক ব্যাখ্যা
ছেড়ে দেয়া হয়। সম্রাট কোথা থেকে আসছেন, কোথায় যাবেন,
কেন যাচ্ছিল, কিভাবে ফিরবেন এসব ব্যাখ্যা
বা বিবরণ এ উপন্যাসের গল্পের জন্য প্রয়োজন ছিল না। রাজার সাথে হাজার হাজার সৈন্যসামন্ত
না থেকে শুধু সেনাপতি কেন? কারণ খেয়াল করলে দেখবেন মঞ্চনাটকে
সাধারণত মঞ্চে খুব কম লোক ওঠে। এখানেও তাই। গল্পের প্রয়োজনে শুধু সেনাপতিকে দরকার ছিল
বলে সেনাপতিকে রাখা হয়েছে।
অভিযোগ
৫:
আরেকটি বিষয় দৃষ্টিকটু লেগেছে। লেবলন এই পৃথিবীর শাসনকর্তা, অথচ তিনি উইকল্যান্ড চিনেন না! বিষয়টা কেমন না?
অথচ বইয়ের শেষাংশে আছে, প্রাসাদ থেকে সম্রাট লেবলন উইকল্যান্ড দেখছেন। দুই তথ্য সাংঘর্ষিক হয়ে যায় এখানেই।
উত্তর:
একজন শাসক পৃথিবীর শাসনকর্তা
হলেই যে সব ভূমির নাম জানবেন এটাতো এক অদ্ভুত আবদার। আবার গল্পের খাতিরে ধরেই নেয়া
যায় সম্রাট হয়তো জানেন না। আর যেহেতু উইকল্যান্ড তার দখলের কোনো ভূমি নয় তাই না চেনাটাই
স্বাভাবিক। তাই না?
আর বইয়ের শেষাংশে প্রাসাদ
থেকে সম্রাট উইকল্যান্ড দেখছেন এমন কোনো কথা নেই। বলা আছে- পঙ্গপালের মত মানুষ ছুটছে
উইকল্যান্ডে। যেহেতু যুদ্ধের পর সম্রাটের জানা আছে কোনদিকে উইকল্যান্ড, আর সেদিকে মানুষের
যাওয়া মানেই যে তাদের উইকল্যান্ডে যাওয়া, এটার জন্য আলাদা ব্যাখ্যার
দরকার কেন বিষয়টা বোঝা গেল না।
আর তর্কের খাতিরে ধরে
নেয়া যাক, সম্রাট প্রাসাদ থেকে উইকল্যান্ড দেখছেন। তো এখানে এটা ধরেই নেয়া যায় যে, আগে তিনি চিনতেন না বলে সেভাবে খেয়াল করেন নি। যুদ্ধের পর তো তিনি চেনেন
উইকল্যান্ড। তাই তিনি মানুষের যাত্রার উদ্দেশ্য যে উইকল্যান্ড এটা বুঝতে পারছেন।
একদম সরল বিষয়। অনর্থক জটিল করার কিছু নেই।
অভিযোগ
৬:
উপন্যাসিকার বিভিন্ন অংশে লেখক জুলুম, জালিম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
করার কথা বলেছেন। এমনই এক ক্ষণে বারবার মুহম্মদ নামক চরিত্রের আবির্ভাব হবে বলেই বইয়ের
অনেক অংশে বলা আছে। কিন্তু মুহাম্মদের সাথে সম্রাটের দেখা কাকতালীয়ভাবে। যেখানে জুলুম, অন্যায়ের কোনো ঘটনা সেই নির্দিষ্ট সময়ে ঘটেনি যে তার প্রতিরোধ করতে মুহম্মদ এগিয়ে
যাবেন। তাহলে? কোনো একটা ঘটনা তো প্রয়োজন
ছিল, যার দৃশ্যায়নের কারণে মুহম্মদ সম্রাটকে
সরাসরি চ্যালেঞ্জ করবেন। যেই কারণটা দেখানো হয়েছে, আমার পাকাপোক্ত লাগেনি।
উত্তর:
সম্রাটের সাথে
মুহাম্মদের কাকতালীয়ভাবে দেখা হতে পারে না? এখানে সমালোচনার অর্থটা পরিষ্কার নয়। পাঠক
মন দিয়ে পড়লেই দেখতেন, আগেই মুহাম্মদ কারাস সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধের ঘোষণা
দিয়ে দিয়েছে। পরে সে কারাসে গিয়েছে তলোয়ার কিনতে। তখন সম্রাট জানতে পেরে তাকে সেনাপতির
মাধ্যমে ডেকে নিয়েছে। তো এটা পাকাপোক্ত কেন লাগেনি সেটা পরিষ্কার নয়।
অভিযোগ
৭:
এই জায়গায় আরেকটি ত্রুটি নজরে এসেছে। ঝড়ের কবলে পড়ে উড়ে উড়ে উইকল্যান্ডে যাওয়া সম্রাট ও তার সেনাপতি কীভাবে দুই অধ্যায় পর নিজ রাজ্যের প্রাসাদে গেল? কোনো ব্যাখ্যা নেই,
বর্ণনা নেই। ফ্যান্টাসি গল্প, অথচ রাজ্যের বর্ণনা ফুটে ওঠেনি। একই সাথে ফুটে ওঠেনি এর আশেপাশের দৃশ্যাবলী। লেখকের যেন ফ্যান্টাসি দুনিয়া দৃশ্যায়নে বড্ড অনীহা। কিংবা হয়তো তেমন ইচ্ছেই ছিল না লেখকের। কে জানে?
উত্তর:
এর উত্তর আগে দেয়া হয়েছে।
তবু এখানেও দেয়া হলো- এটা Theatrical Novel ঘরানার বই। এমন বইয়ে বিশদ ব্যাখ্যা থাকবে না। পাঠকের কল্পনার ওপর অনেক ব্যাখ্যা
ছেড়ে দেয়া হয়। সম্রাট কোথা থেকে আসছেন, কোথায় যাবেন,
কেন যাচ্ছিল, কিভাবে ফিরবেন, আশে-পাশের
পরিবেশ কেমন ছিল, ফুল-লতা-পাতা ছিল না মরুভূমি ছিল এসব ব্যাখ্যা বা বিবরণ এ উপন্যাসের
গল্পের জন্য প্রয়োজন ছিল না।
অভিযোগ
৮:
একই সাথে একজন অত্যাচারী শাসকের যে চরিত্র লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন সেটাও বোধগম্য
হয়নি। অত্যাচারী শাসকের রাজ দরবারে গিয়ে একজন দুর্বল, বাইরের কেউ চোখে চোখ রেখে কথা বলছে; অথচ সম্রাট কিছুই করছে না! বিষয়টা দুর্বল চরিত্রায়নের অংশ বলে মনে হয়েছে। চরিত্র
গঠন পুরো বইয়ে দুর্বল ছিল। সম্রাট, মুহম্মদ, সেনাপতি আর একজন পন্ডিত
ছাড়া আর কেউ ছিল না।
উত্তর:
এটা ন্যায় আর অন্যায়ের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের গল্প। লেখক ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন অন্যায়কারী সত্যিকারের ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির সামনে ন্যায়গত কারণেই নত থাকেন। সম্রাট যদি কিছু করতেন, তাহলে কোনো বীরত্ব থাকতো না। তিনি যুদ্ধের মাধ্যমে উইকল্যান্ড ছিনিয়ে নিয়ে বীর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। এটা দুর্বল চরিত্রায়ন নয়। আর সম্রাট, মুহম্মদ, সেনাপতি
ও পণ্ডিত ছাড়া আর কেউ ছিল না... এ অভিযোগের উত্তর আগেই দেয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় কোনো চরিত্র গল্পের ডেভেলপমেন্টের জন্য বা গল্প ফুটিয়ে তোলার জন্য প্রয়োজন নেই বলেই আর কাউকে লেখক রাখেননি।
অভিযোগ
৯:
পন্ডিতের চরিত্র আমার খাপছাড়া লেগেছে। একবার এক কথা বলছে, আরেকবার আরেক কথা। একবার রাজাকে যুদ্ধ থেকে থামাতে চায়,
আরেকবার যেন উস্কে দিতে চায় যুদ্ধের দিকে! পুরোই গোঁজামিল অবস্থা।
উত্তর:
পণ্ডিত চরিত্রটাকে ওভাবেই
সেট করা হয়েছে। এ চরিত্রটা বুদ্ধিজীবিদের সমালোচনা ফুটিয়ে তোলার জন্য সাজানো হয়েছে।
এরা একেকবার একেক কথা বলে। শেষে কিন্তু পণ্ডিত স্বীকার করছে বা দোষ ঢাকছে, নিজের বয়স হয়েছে বলেই ভুলভাল বকছে... এমন কৈফিয়ত দিয়েছে। এ পয়েন্টটা পাঠক বোধহয় খেয়াল করেননি। ক্ষমতাবান পণ্ডিত হিসেবে অহংকারে যে
তিনি বিভ্রান্ত ছিলেন
সেটাও এ চরিত্রের মুখেই ফুটে ওঠে ৭৪ পৃষ্ঠায়। রহস্যময় কোনো
কারণে পাঠক বিষয়টা এড়িয়ে গেছেন বা খেয়াল করেননি।
অভিযোগ
১০:
যুদ্ধের কথা যখন এলো, তখন এই ব্যাপারেও দুর্বলতা ছিল অধিক হারে। আমি মনে করি, যুদ্ধের বর্ণনার ক্ষেত্রে লেখকের অধিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধের কৌশল কিংবা আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জানা না থাকলে এ জাতীয় লেখায় হাত দেওয়া অনুচিত। লেখক সেই কাজটিই করেছেন। ফলে যুদ্ধ হয়েছে কিন্তু কোনো বর্ণনার আশ্রয় লেখক নিতে পারেননি। সম্রাটের দল আক্রমণ করে হেরে যাচ্ছে,
কিন্তু কীভাবে সে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
উত্তর:
একই ধরনের অভিযোগ বারবার
করেছেন পাঠক। আগেই বলা হয়েছে এটা Theatrical Novel ঘরানার বই। এমন বইয়ে
বিশদ ব্যাখ্যা থাকবে না। পাঠকের কল্পনার ওপর অনেক ব্যাখ্যা ছেড়ে দেয়া হয়। যুদ্ধের
নাটকের মঞ্চায়ন যদি কেউ দেখে থাকেন তবে বিষয়টা বুঝবেন হয়তো। মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুধু
অভিনেতার মুখে মুখেই বা অভিনয়েই বিশাল যুদ্ধের বিবরণ উঠে আসে একদম অল্প কথায়
ডায়ালগ-অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে। বিশদ বর্ণনা থাকে না।
অভিযোগ
১১:
তলোয়ার (লেখক যদিও তরোয়াল লিখেছেন) দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে, কীভাবে সেই ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি। এগুলো লেখনীর দুর্বলতা ছাড়া কিছুই না।
উত্তর:
তলোয়ার ও তরোয়াল দুই
বানানই সঠিক। বরং তরোয়াল বেশি শুদ্ধ। এটা কষ্ট করে গুগল করলেই পাঠক জানতে পারতেন।
কিভাবে তরোয়াল
দুইভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে সে ব্যাখ্যাটা উপন্যাসে দেয়ার প্রয়োজন ছিলো না। একে অলৌকিক
ক্ষমতা হিসেবে ধরে নেয়া যায়। তবে সম্রাটের পণ্ডিত কিন্তু সম্রাটকে ব্যাখ্যা করে বোঝানোর
চেষ্টা করে যে, জাদু বলয় মুহাম্মদকে ঘিরে আছে এ কারণে তার কাছে গিয়ে সকল আঘাতই দুর্বল
হয়ে পড়ে। অস্ত্র ভেঙে যায়। যেমন সুপারম্যান মুভিতে সুপারম্যানের শরীর কোনো গুলি ভেদ
করতে পারে না। দেখতে সে রক্তমাংসের মানুষ অথচ তাবত লোহা-ইট-পাথর তার শরীরের সাথে লেগে
গুড়ো হয়ে যায়। তো এটা নিয়ে মানুষ প্রশ্ন করে না কেন? করে না, কারণ, মানুষ সুপারম্যানকে
সুপারহিরো হিসেবে দেখে। ঠিক একইভাবে এ গল্পের মুহাম্মদকেও সুপারহিরো হিসেবে দেখানোর
চেষ্টা করেছেন লেখক। তার হাতে যে অস্ত্রই থাকবে সেটাই অন্য সব অস্ত্রকে টুকরো করে দিতে
পারবে। এ বিষয়টাকে সুপার ন্যাচারাল ক্ষমতা হিসেবে দেখলেই পাঠের আনন্দ পাবেন পাঠক। অনর্থক
যুক্তি খুঁজলে পাঠের আনন্দ স্বাভাবিকভাবেই নষ্ট হবে।
অভিযোগ
১২:
পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের সাথে নিরানব্বই জনের অসম যুদ্ধ। এই পঞ্চাশ লাখ সেনাকে বিভিন্ন রাজ্য থেকে জড়ো করা হয়েছে। অথচ সেসব রাজ্যের শাসকদের চিন্তাধারা যেন লেখককে স্পর্শ করেনি।
উত্তর:
পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের
সাথে নিরানব্বই জনের অসম যুদ্ধ নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু আছে বলে মনে হয় না। এটা ফ্যান্টাসি বই। এখানে অসম্ভব কিছু নেই। সুপারহিরো মুভিগুলোতে তো আমরা
হরহামেশাই দেখি অসংখ্য এলিয়েনের বিপরীতে মাত্র পাঁচ-ছয়জন সুপারহিরো যুদ্ধ করে। তখন
কিন্তু আমরা এত প্রশ্ন করি না।
আর ওই আগের কথাই
আমরা বলবো , এটা Theatrical Novel ঘরানার বই। এমন বইয়ে বিশদ ব্যাখ্যা থাকবে না। পাঠকের কল্পনার ওপর অনেক ব্যাখ্যা
ছেড়ে দেয়া হয়। সেকারণেই অন্যান্য রাজ্যের শাসকদের চিন্তাধারা এখানে উঠে আসেনি। গল্পের
জন্য সেসবের দরকারও ছিল না। ধরে নেয়া যায়, আশে-পাশের সকল রাজ্য কারাস সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত
এবং তারা সম্রাটের প্রতি অনুগত।
অভিযোগ
১৩:
লেখক শেষে একটি ট্যাগ লাইন ব্যবহার করেছেন, "এ উপন্যাস সম্পূর্ণ কাল্পনিক, বাস্তব কোনো চরিত্র বা ঘটনার সাথে এর দূরতম সম্পর্কও নেই"। আসলেই কি তাই?
এখানে শতশত পাখির উড়ে আসা যে অন্য কিছুর ইঙ্গিত করে। কিংবা শেষ সময়ে উধাও হয়ে যাওয়া বা জুলুমের বিরুদ্ধে কারও আবির্ভাবের বাণী! সবকিছু যে ধর্মীয় দিকগুলো তুলে ধরছে, যা বুঝতে বেশি বেগ পেতে হয় না। সবচেয়ে বড়ো কথা, মুহম্মদ চরিত্রের যে গুনাগুন লেখক ব্যাখ্যা করেছেন তার সাথে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষের মিল পাওয়া কি কাকতালীয়? কিংবা তিনি যে স্রষ্টার ইবাদত করছে, তার মিল পাওয়া?
না-কি লেখক নিজেই সন্দিহান ছিলেন বলে এই ট্যাগ লাইন? বা নিজেকে নিরাপদে রাখার প্রয়াশ?
উত্তর:
এ পয়েন্টে মূলত পাঠক
সম্ভবত অভিযোগ করতে চেয়েছেন বা বোঝাতে চাইছেন, বইটার মুহাম্মদ চরিত্র মূলত
নবীজি (সা:) এর চরিত্র। কিন্তু অভিযোগটা স্পষ্ট করেননি। শতশত পাখি উড়ে আসলে সেটা কিভাবে
কী ইঙ্গিত করে সেটা বোধগম্য নয়। এখানে পাঠক কী বোঝাতে চেয়েছেন? শতশত পাখি উড়ে আসার ঘটনা নবীজির সাথে রিলেটেড? কিভাবে? আশা করি এ উত্তর পাঠক দেবেন।
শেষ সময়ে উধাও
হয়ে যাওয়া বা জুলুমের বিরুদ্ধে কারও আবির্ভাবের বাণী দিয়ে ঈসা (আঃ) এর দিকে ইঙ্গিত
করছেন পাঠক। তো এটা তো ঈসা (আঃ) এর ঘটনা, নবীজি (সা:) এর সাথে সম্পর্কিত করতে চান
কেন পাঠক? আর ঈসা (আঃ) কে তো বন্দীদশা থেকে
আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আর এ গল্পের মুহাম্মদ অদৃশ্য হয়ে গেছে যুদ্ধের ময়দান থেকে।
এ পার্থক্যটা পাঠক বুঝতে পারেননি। এই অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার বিষয়টা পশ্চিমা অনেক অসংখ্য
থ্রিলারে বিশেষ করে সুপার হিরো টাইপ মুভিতে দেখা যায়। অনেক ক্রিশ্চিয়ান মিথ ও
ঘটনার ছায়ায় গল্প তৈরি অসংখ্য গল্প ছড়িয়ে আছে পশ্চিমা দেশগুলোতে। সাহিত্য জগতে ধর্মীয়
মিথ ও ইতিহাস হরহামেশাই ব্যবহৃত হয়। এসব সিম্পল ঘটনা। এটাকে ধর্মের সাথে জড়ালে অনর্থক
ধর্মীয় উস্কানী তৈরির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। পাঠককে এদিক বিবেচনায় আরো সতর্ক হতে
হবে।
আর কোনো চরিত্রে যদি, নবীজির গুণাগুণ পাওয়া যায় তাকে নবীজি ধরে নিতে হবে? স্রষ্টার ইবাদত তো অসংখ্য মানুষ করছে তাতে কীভাবে নবীজির সাথে মিল পাওয়া
যায়? হ্যাঁ, নবীজির শেখানো পদ্ধতিতে
অসংখ্য মানুষ ইবাদত করছে সারা পৃথিবীতে। কিন্তু তাতে কী সবার ক্ষেত্রে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ
মানুষের মিল খুঁজে বেড়ান পাঠক?
আর শেষের ট্যাগলাইনটা
মূলত
‘মুহাম্মদ’ নামটা আছে বলেই দেয়া। কিন্তু
দুঃখজনকভাবে এ ট্যাগ লাইন থাকার পরও পাঠক এখানে কেন অন্য কিছু খুঁজেছেন তা বোধগম্য
না। বিতর্ক এড়ানোর জন্যই ট্যাগলাইনটা দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ
১৪:
যেহেতু উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় বা কনসেপ্ট হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়া সেক্ষেত্রে
যুদ্ধের বর্ণনা গুলো। কিংবা ডুয়েল হবার বর্ণনা গুলো একটু বাস্তবিক ভাবে আনার দরকার
ছিলো। কিন্তু লেখক তা এক লাইনেই উপসংহার টেনে দিলেন তিনবারই সম্রাটদের সৈন্য দের তরোয়াল
ভেঙে যায় এবং মুহাম্মদদের পক্ষ জয়ী হয়ে যায়। পুরোটাই গোঁজামিল ছিলো। যদি লেখক এখানে
মুহাম্মদ এর উপর আল্লাহর অশেষ রহমত নাযিল হয়েছে এমন কোন কিছু উল্লেখ করতেন তবে তরোয়াল
ভাঙার বিষয় টা যুক্তিসঙ্গত হতো। পুরো বইয়ে দুটো সম্মুখ যুদ্ধই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু
সেই গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধের কোন বর্ণনা নেই! লেখার অপরিপক্কতা প্রকাশ পায় এতে।
উত্তর:
এটা Theatrical Novel ঘরানার বই। এমন বইয়ে বিশদ ব্যাখ্যা থাকবে না। পাঠকের কল্পনার ওপর অনেক ব্যাখ্যা
ছেড়ে দেয়া হয়। সেকারণেই যুদ্ধের বিশদ বর্ণনা দেয়ার প্রয়োজন ছিল না।
আর তরোয়াল ভেঙে
যাওয়ার ব্যাখ্যা ‘অভিযোগ ১১’ এর উত্তরে দেয়া হয়েছে। পড়ে দেখার অনুরোধ
থাকলো।
অভিযোগ
১৫:
সম্রাট লেবলনের একজন
পণ্ডিত ছিলো। যে উচ্চবাক্যে সম্রাটের পিতার অত্যাচারের কথা গুলো সম্রাটকে জানাচ্ছিলো। বিষয় অযৌক্তিক ছিলো। যেখানে
শুরুতেই সম্রাট কে জালিম ও অত্যাচারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেখানে তার অধীনস্থ
পন্ডিত এভাবে পিতাকে ও তাকে মুখের উপর অত্যাচারী
শাসক বলার পরও তার বিরুদ্ধে কোন পরোয়ানাই নেয়নি। এখানেও সময়ের বিরাট বড় একটা প্রশ্ন
থেকে যায়। পিতার সময়কালেও মুহাম্মদ ছিলো। সম্রাটের সময় কালেও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে
সম্রাট লেবলন তার পিতার সময় কালে পুরো শহরের
অপমান জনক কথা ও পিতার সাথে মুহাম্মদের যুদ্ধের কথা অজানা কিভাবে থাকে?
উত্তর:
সম্রাট পণ্ডিতের ওপর অনেকটাই আস্থাশীল ছিল। যার
কারণে পণ্ডিতের কথা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার কাছে। এখানে অভিযোগটা এক প্রকারে ঠিক আছে।
সম্রাট ও তার পিতাকে অত্যাচারী বলার কারণে, সম্রাটের প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত ছিল।
কিন্তু আবার খেয়াল করুন, সম্রাট বেশ চিন্তিত অবস্থায় ছিলেন ওই সময়। স্বাভাবিক অবস্থায়
ছিলেন না। আলাপগুলো ভালো করে পড়লেই বোঝা যায়, সম্রাটের চিন্তাশক্তিও কাজ করছিল না।
পণ্ডিতের কথাগুলোই তার চিন্তাশক্তি গড়ে দিচ্ছিল। তাই পণ্ডিতকে শাস্তি দেবার বদলে পণ্ডিত
যে সংকট থেকে উদ্ধারের পথ দেখাচ্ছিল সেটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল সম্রাটের কাছে।
এটা বইয়ে প্রচ্ছন্নই যে, মুহাম্মদ যুগে যুগে
থাকবে। ৬২ পৃষ্ঠায় একটা ইঙ্গিতও রেখে গেছেন লেখক যে, সামনের পৃথিবীতেও হয়তো দুর্বলদের
নেতৃত্ব দেবে কোনো এক মুহাম্মদ। এটা বলা যায়, এই মুহাম্মদ এক প্রতীকি নেতার চরিত্র।
যে বারবার অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে সব যুগেই।
সম্রাটের পিতার সময়কালের ইতিহাস ও পিতার অপমানের
কথা বর্তমান সম্রাট জানেন না কেন? এ অভিযোগ আসলে করা হয়েছে, শাসন ব্যবস্থা ও সাম্রাজ্যের
ইতিহাস বিষয়ে ধারণা না থাকায়। প্রায় সকল সময়েই, ক্ষমতবানরা নিজেদের অপমানের ইতিহাস
ঢেকে ফেলে। প্রজারাও ভয়ে আর ওসব নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলে না। এখানেও এমন ঘটেছে ধরে
নেয়া যায়।
যেমন পাঠকের হয়তো জানা নেই, মিশরীয় প্রাচীন ইতিহাসে
ইউসুফ (আঃ) এর ন্যায়ের শাসন ও মুসা (আঃ) এর ফেরাউনের ওপর বিজয়ের ইতিহাস দুর্লভ। খুঁজে
পাওয়াই মুশকিল। মিশরীয় প্রাচীন ইতিহাস বা মিথোলজি পড়লে এই দুই প্রখ্যাত নবীর কাহিনীর
কোনো উল্লেখই পাওয়া যায় না। একদম মুছে দেয়া হয়েছে। আমরা এই দুই প্রখ্যাত নবীর কথা জানতে
পারি পবিত্র কুরআন ও হাদিসে। আশা করি পাঠক বিষয়টা বুঝতে পারছেন।
অভিযোগ
১৬:
সম্রাটের পিতার সময়কালে
যখন মুহাম্মদের সাথে যুদ্ধ হয় তখন মুহাম্মদ
হেরে যায়। কিন্তু তার সাহসিকতার জন্য পুরো রাষ্ট্র তাঁকে প্রশংসা করে। তখনই আকাশে একঝাঁক
নতুন পাখি মুহাম্মদ মুহাম্মদ বলে উচ্চারণ করে আর উড়তে থাকে। সম্রাট এই ডাকে অতিষ্ট
হয়ে পাখিদের খুন করতে বলেন। এ ঘটনাটি মহানবী (সঃ) এর সময়কালে আবাবিল পাখির পাথর ছুড়ে
মারার সেই মোজেজা। যার কিছু পরিবর্তন এনে লেখক
মুহাম্মদ ডাকে রূপান্তর করেছেন মনে হলো।
উত্তর:
পাঠক এখানে তথ্যগত ভুল করেছেন। আবাবিল পাখির
ঘটনা মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মের আগের। তাঁর সময়কালের না। আর হ্যাঁ, লেখক আবাবিল পাখির
ঘটনা থেকেই ইন্সপায়ার্ড হয়েই পাখির অংশটা নিজের কল্পনামতো সাজিয়েছেন।
অভিযোগ
১৭:
যখন ২য় যুদ্ধের সময়কালে
মুহাম্মদের সৈন্য ছিলো মাত্র ৯৯ জন। আর সম্রাট লেবলনের ৫০ লক্ষ সৈন্য ছিলো। যুদ্ধ শুরু
হতেই ধুলিমাখা প্রান্তরে কিছুক্ষণ পর শুধু সম্রাট লেবলনের সৈন্যদের লাশ পড়ে থাকতে দেখা
যায়। মুহাম্মদ ও তার সৈন্যগন সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। এখানে লেখক সম্রাটদের চরিত্রের
মাধ্যমে বেশ কয়েকবার যাদু জানে,যাদুকর
মুহাম্মদ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু শেষে বলেছেন মুহাম্মদ যাদুকর নয়। উইকল্যান্ডে যাদু
আছে। এখানে স্পষ্ট করে বলে দেয়া উচিত ছিলো যে মহান আল্লাহ দূর্বলদের উপর রহমত নাযিল
করেছেন। তাহলে বিষয় টা স্পষ্ট হতো। কিন্তু
এমন কোন কিছুই লেখেননি যা আল্লাহ তা'লার অসীম কুদরত। সৈন্য সহ মৃহাম্মদের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ও কোন কারন
তিনি উল্লেখ করেনি।এখানে বিষয়টা ঈসা(আঃ) ঘটনার রূপান্তর মনে হয়েছে। তাতে পাঠকের মনে
প্রশ্ন থেকেই যাবে-
উত্তর:
এখানেও পাঠক একটা তথ্যগত ভুল করেছেন। সৈন্যদের
লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায় এটা বলা হয়নি। বরং বলাই হয়েছে ‘কেউ নিহত হয়নি বললেই চলে। সবাই
আহত।’ আর বোঝানো হয়েছে নিহত হয়েছে খুব সামান্য সংখ্যক তাও যুদ্ধের কারণে না। নিজেদের সাথে
ধাক্কা খেয়ে গতি হারিয়ে।
এখানে পাঠক ভাবছেন, মুহাম্মদের বাহিনী অদৃশ্য
হয়ে যাওয়ার ঘটনা লেখকের ব্যাখ্যা করা দরকার ছিল। এমন ভাবতে দোষ নেই। কিন্তু এটাও তো
মাথায় রাখতে হবে, লেখক এভাবেই মিস্টিক্যাল ওয়েতেই বিষয়টা উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। এটা লেখকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ও পছন্দ।
আর ইসা (আঃ) এর বিষয়ে ১৩ নং অভিযোগের
বিপরীতে উত্তর দেয়া হয়েছে। পাঠককে পড়ে দেখার অনুরোধ।
অভিযোগ
১৮:
শেষটা ঠিক বুঝতে পারিনি। আসলে কী বলতে চেয়েছেন লেখক? কী বুঝাতে চেয়েছেন?
কেমন যেন হযবরল অবস্থা। যেখানে সুন্দর সমাপ্তি মানুষ আশা করা হয়, সেখানে গোঁজামিল দিয়ে শেষ করা বিরক্তির উদ্রেক ঘটিয়েছে। ঠিক কোন অংশের জন্য বইটি ভালো লাগবে? এমন কোনো অংশ-ই যে পাইনি।
উত্তর:
বইয়ের শেষটা এক দারুণ
বুদ্ধিদীপ্ত লেখা। আমরা এর ব্যাখ্যা দিতে হবে কখনো ভাবিনি। শেষ অংশের ব্যাখ্যা খুব
সুন্দর। আমরা ভেবেছিলাম পাঠক চিন্তা করে ধরবেন বিষয়টা। কিন্তু দেখা গেছে বেশিরভাগ পাঠক
অভিযোগ করেছেন এন্ডিং নিয়ে। তাই ব্যাখ্যা দিচ্ছি। যদিও এমন ব্যাখ্যা দেয়া অনুচিত।
শেষের ব্যাখ্যা: শেষে সম্রাট ক্রোধে মানসিক ভারসাম্য
হারিয়ে ছাদ থেকে লাফ দেন। শেষের লাইনটাই হচ্ছে পাঞ্চলাইন। এ লাইনের অর্থ হলো, মৃত্যুর পর সম্রাটের আত্মা যখন পরকালে পৌঁছবে তখনই তিনি সত্যিকারের জেগে উঠবেন।
মানে তার আত্মা বুঝতে পারবে বেঁচে থাকাকালীন কী কী ভুল ও পাপ তিনি করেছেন। মৃত
পাপী মানুষ মূলত সত্যিকারভাবে জেগে ওঠে পরকালেই। বুঝতে পারে, পৃথিবীতে সে একরকম
ঘুমিয়েই ছিল। কেননা বেঁচে থাকতে বিবেককে কখনো কাজে লাগায়নি সে।
অভিযোগ
১৯:
বইটির সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে গতি। লেখনশৈলী নেহাতই মন্দ ছিল না। তবে শব্দচয়নে যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। সংলাপে একই কথার পুনরাবৃত্তি বিরক্তি দিয়ে গেছে। একটি অংশের কথা বলা যায়- মুহম্মদের এক অনুসারী সম্রাটের গুনগান গাওয়ার ক্ষেত্রে বারবার বিভিন্ন কথা জানানোর চেষ্টা করছিল। প্রতিটি প্রশ্নের শুরু ছিল, "আপনি কি জানেন না......" এইভাবে। প্রতিবার মুহম্মদের উত্তর, "জানব না কেন?" এভাবে চার/পাঁচ প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব চলে। ফলে বিরক্তি ধরে গিয়েছিল। মাত্র ৭৭ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে যদি এভাবেই প্রায় এক পৃষ্ঠা নষ্ট করে ফেলা হয়,
তাহলে আর কী থাকে?
উত্তর:
আমরা যত অভিযোগ
পেয়েছি তার মধ্যে একমাত্র এ অভিযোগটাই যৌক্তিক। এ জায়গায় লেখকের আরো ডেভেলপমেন্টের
সুযোগ আছে। কিন্তু একই কথা পুনরাবৃত্তির একটা সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার স্যাপার আছে, যা পাঠকের জানা নেই হয়তো। যখন কেউ কিছু একটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তখন কথা রিপিট করেন। বার বার বলে অপরের মগজে কথাগুলো ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।
ভালো শিক্ষকদের সান্নিধ্যে যাদের যাওয়া সুযোগ হয়েছে তারা খেয়াল করবেন, ভালো
শিক্ষকরা একটা কথা কয়েকবার করে বলেন। এটা অপরের চিন্তা-ভাবনাকে প্রভাবিত করার একটা
পদ্ধতি।
অভিযোগ
২০:
৭৭ পৃষ্ঠা বললেও আদতে কি ৭৭ পৃষ্ঠা ছিল? বইয়ের ফন্ট সাইজ স্বাভাবিকের তুলনায় বড়ো। এক বাক্যের পর আরেক বাক্যের ফাঁকা স্থান বেশি। ৭৭ পৃষ্ঠার বই, খুব সহজেই ৬০ পৃষ্ঠার কমে রাখা যেত। ৭৭ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের মুদ্রিত মূল্য কোন হিসেবে ২৯০ টাকা হতে পারে? কেউ কি একটু বোঝাবেন?
উত্তর:
৬০ পৃষ্ঠা কেন, এটা চাইলে ৫০ পৃষ্ঠাও রাখা যেত। কিন্তু, তাতে করে বইয়ের
নান্দনিক সৌন্দর্য নষ্ট হতো। ইচ্ছে করেই কিছু পৃষ্ঠা বাড়িয়ে বইটাকে একটা রোবস্ট প্রিমিয়াম
লুকিং দেয়া হয়েছে। পৃষ্ঠা কমালে গুড লুক দেয়া সম্ভব হতো না। চিলেকোঠার প্রায় সব
বই-ই গুড লুকিং (আলহামদুলিল্লাহ)। এর কারণ, চিলেকোঠা চায়, পাঠক বইগুলো আজীবন নিজের
কাছেই যেন যত্ন করে রাখে, কেজি দরে যেন বেচে না দেয়।
আর দামের কথা সত্যি
বলতে গেলে আমাদের বিবেচনায় কমই রাখা হয়েছে। পাঠক যদি বাজারে একটু খোঁজ নেন তাহলে দেখবেন,
ভালো প্রোডাকশনের ৪৮ পৃষ্ঠার হার্ডকাভার একটা বইয়ের দাম গড়ে ২৫০ টাকা রাখা হয়। এর কমে
রাখলে লসেই বিক্রি করতে হবে প্রকাশনীকে। এখন আলু-পটল-মাংস-কাপড় সবখানেই লাভ করা যাবে
কিন্তু প্রকাশনীগুলোকে লসে বই বিক্রি করতে হবে কেন, এটা বোধগম্য নয়। তো ৪৮ পৃষ্ঠার দাম যেখানে ২৫০ সেখানে আরো প্রায় দুই ফর্মা বেশি এ বইয়ের
দাম ২৯০ বেশ যৌক্তিক।
তাও এত দাম হতো
না। কাগজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কথা পাঠকের বোধহয় জানা নেই। কাগজের দাম না
বাড়লে এ বইয়ের দাম আরো অনেক কমে রাখা যেত। এরপরও বেশি দাম মনে হওয়ায় পাঠকের কাছে
আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু প্রোডাকশন কস্ট বিবেচনায় এর থেকে কমে রাখা সম্ভব ছিল
না।
অভিযোগ
২১:
প্রচ্ছদ নিয়েও আমার অভিযোগ আছে। প্রচ্ছদের ছবিটা আমার কাছে ঝাপসা লেগেছে। ছোটো বেলায় যখন ডিসের লাইন ছিল না, বিটিভি ছিল এক মাত্র ভরসা। একটু ঝড় বা বৃষ্টিতে ঝিরিঝিরি যে অবস্থা টিভির হতো, প্রচ্ছদ দেখে সেই অনুভূতি হচ্ছে। এমন কেন?
উত্তর:
প্রচ্ছদটা প্রায় সকলেই পছন্দ করেছেন। অভিযোগকারী পাঠকের পছন্দ হয়নি এটা পাঠকের ব্যক্তিগত পছন্দ হিসেবেই মাথা পেতে নিলাম আমরা। কিন্তু সত্যি বলতে এটা হাই কোয়ালিটির একটা কাজ। Impressionist ঘরানার আর্টওয়ার্ক। এইআই, ইলাস্ট্রেটর, ফটোশপ মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে। বোদ্ধা চিত্রশিল্পীরা এটার আবেদন ধরতে পারবেন। অনেক পাঠকও পেরেছেন। তবুও পাঠকের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলো। সবার পছন্দ একই রকম নয়।
অভিযোগ ২২:
যখন লেখক নবীজিকে নিয়ে ফ্যান্টাসি বলে প্রচারণা চালাচ্ছিল তখন প্রকাশনী কোনো উদ্যোগ নেয়নি কেন? এখন কোন এত বড় ব্যাখ্যা দিচ্ছে?
উত্তর:
আমরা প্রায় ত্রিশের মতো লেখক নিয়ে কাজ করছি। যারা প্রকাশনীর সাথে সংশ্লিষ্ট তারা জানেন, বইয়ের প্রোডাকশনের কাজে জড়ালে নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথেও কথা বলার সুযোগ হয় না। সেখানে এতজন লেখক কোথায় কী করছে সেটা কীভাবে জানা সম্ভব? লেখকদের সবার গতিবিধি-প্রচারণা প্রকাশনীর পক্ষে তো ট্র্যাক করা সম্ভব না। আর ওসমান সজীব এখনো ওরকম বিখ্যাত বা জনপ্রিয় লেখক নন যে তার সব আপডেট আমাদের কাছে আসবে। সুতরাং এ বিষয়টা আমাদের নজরে আসেনি।
আর আমরা বইটা এনেছি ২০২২ এর ডিসেম্বরে। মাঝখানে এতবড় একটা বইমেলাও গেল। তো ওই সময়ের মধ্যে বইটা নিয়ে কেউ কমপ্লেইন করেনি আমাদের কাছে। মোটকথা বই প্রকাশের প্রায় চার-পাঁচ মাস পর আমাদের কাছে অভিযোগ আসতে থাকলো। জনপ্রিয় ও সবচেয়ে নির্ভর যোগ্য বইগ্রুপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো বইটিকে। জানতে পেরে আমরা সাথে সাথেই পদক্ষেপ নিয়েছি। এ ব্যাখ্যাটা তৈরি করেছি। লেখকের কাছে জবাব চেয়েছি এবং তিনি প্রচারণার ভুলের জন্য আমাদের ক্ষমা চেয়েছেন এবং যতদূর জানি, আমাদের অনুরোধে পাঠকের কাছেও ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দিয়েছেন।
শেষকথা: আমাদের ব্যাখ্যার সাথে দ্বিমত করার পূর্ণ স্বাধীনতা পাঠকের আছে। আমরা জানি, কখনোই পৃথিবীর সকল মানুষ একমত হবে না। দ্বিমত করাটা মানুষের সহজাত গুণ। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, দ্বিমত করতে গিয়ে যেন ক্রোধ-আক্রোশ-আবেগ প্রকাশ হয়ে না পড়ে। পাঠক আমাদের উত্তরগুলো পড়লে বুঝবেন আমরা পাঠকদের মতামতকে আক্রমণ করিনি। বরং আমাদের যুক্তি দিয়ে বইয়ের কন্টেন্টকে ডিফেন্ড করতে চেয়েছি লেখককে বা লেখকের আচরণকে নয়। আমরা আন্তরিক ছিলাম আমাদের জবাবগুলো দিতে গিয়ে। আমরা বিশ্বাস করি, যুক্তিতেই দ্বিমত করার বিষয়টা সবচেয়ে সুন্দর। তাই পাঠকের যুক্তিপূর্ণ দ্বিমতকে স্বাগতম। এ সকল জবাবের সাথে কারো দ্বিমত থাকলে আমাদের সাথে খোলামেলা আলাপ করতে পারবেন। এই আমন্ত্রণটা থাকলো।
পাশাপাশি, যারা এ বইটা নিয়ে ধর্মীয় উস্কানি তৈরির চেষ্টা করছে, ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে, মানুষের সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়ে নিজেদের ফেসবুক পেইজের রিচ বাড়াতে চাইছে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার এবং তাদের দ্বারা প্রভাবিত না হওয়ার বিনীত অনুরোধ সকলের প্রতি থাকলো। এ বই নিয়ে যদি কারো ধর্মীয় উস্কানি তৈরির চেষ্টা আপনাদের চোখে পড়ে তাহলে দ্রুত আমাদের জানান। আমরা আইনের সহায়তা নেব আর যিনি তথ্য দেবেন তার নাম নিরাপত্তার স্বার্থে গোপন রাখব।
সবশেষে বলব, মিথ্যে উস্কানিতে বিভ্রান্ত হওয়ার আগে বইটা পড়ুন। তারপর মন্তব্য করুন।
যোগাযোগ করুন- chilekothasahitto@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন