চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

বিস্মৃতির কাছে মন ইজারা দিয়েছিলো যে চিত্রশিল্পী



বিস্মৃতির কাছে মন ইজারা দিয়েছিলো যে চিত্রশিল্পী 

সালমান সাদিক


একটা আড্ডায় সবাই যখন নেশা করে ঢিপঢিপ চোখ নিয়ে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিলো তখনকার কথা, মেয়েটা গেয়ে উঠেছিলো,

“নীল সাগরে

অতল গভীরে

গাংচিল ওড়ে আর কতো গান গায়”

গল্পবাজ এক তরুণ মাঝপথে গায়িকার কণ্ঠ রোধ করে বলে এক আজব গল্প। দূরে কোনো এক দ্বীপে না কি আছে এমন ধরনের এক প্রাণী, যাদের নীচটা মানুষের মত, দুইটা পা আর কোমর আর উপরে মানে পেট থেকে নিয়ে মাথা পর্যন্ত গাংচিলের দেহ। সে হিসেবে তাদের নাকি হাত-টাত কিছু নেই। আছে দুইটা ডানা আর সরু লম্বা ঠোট। এই প্রাণীর কথা মানুষ প্রথম জানে সাবাতিনির এক উপন্যাসে, যেখানে এক ইংরেজ যুবক সমাজের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে আর তার প্রেমিকাকে বিয়ে করে তারই বড় ভাই। ব্যাপারটা তাকে এতটাই কষ্ট দেয় যে সে দেশ ছেড়ে চলে যায় সমুদ্রে এবং একটা ডুবন্ত জাহাজ আবিষ্কার করে, যে জাহাজের উপর উড়ছিলো আলবাট্রস পাখি বা হতে পারে সীগাল। যখন তার জাহাজ সেই জাহাজের কাছে যায় তখন তারা দেখতে পায় কয়েকটা পাখি। এই পাখিগুলা জাহাজটাকে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের পা দিয়ে ধরে রেখেছে জাহাজটা। তারা চাচ্ছিলো জাহাজটাকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পাশের কোনো দ্বীপে। কিন্তু জাহাজটায় ছিলো তিমির তেলে ভর্তি অনেকগুলো পিপে আর ছিলো প্রচুর মদ। যার ফলে জাহাজটা ছিলো ভীষণ ভারী। তাদের ডানায় এতটা শক্তি ছিলো না যে তারা এই ভীষণ ভারী জাহাজটাকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারবে। এই সময়ে ইংরেজ যুবকের জাহাজটা আসে আর তাদেরকে দেখে এই অদ্ভুত প্রাণীগুলা পালিয়ে যায়। ফলে ডুবে যায় এই ভাঙা জাহাজটা অন্য জাহাজ আসার আগেই। সেই সাথে ডুবে যায় উন্নত মদ আর অনেকগুলা তেলের পিপে। গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু উদ্দেশ্যহীন ঘুরতে থাকা যুবক এই প্রাণী আবিষ্কারের নেশায় ঘুরতে ঘুরতে চলে যায় নিকারাগুয়া না কী যেন এক দেশে, যেখানে হয় বনরুটির মত এক ধরনের ফল। সেই ফল খেলে এমনই ঘুম আসে যে ঘুম মানুষকে ভুলিয়ে দেয় তার সমস্ত স্মৃতি আর জাগ্রত করে এক ক্ষুধা। এই ক্ষুধা এমনই তীব্র, যে পাথর খেয়ে ফেলাও আশ্চর্য কিছু না। ব্যাপারটা বড়ই অদ্ভুত তাই না? পাখি খুঁজতে গিয়ে রুটি খেয়ে ফেলা আর তারপর সব ভুলে গিয়ে শুধু খাওয়ার জন্য বেঁচে থাকা!

এই আড্ডায় যারা বসে এরা সাধারণত ছন্নছাড়া ক্ষ্যাপাটে কিছু তরুণ-তরুণী। এরা যখন নেশা করে তখন এদের কাছে যা-ই বলা হয় এরা সেটাকে বাস্তব ভেবে বসে। তবে নেশা ছুটে গেলে সমস্ত বাস্তবতা ফিকে হয়ে যায় আর ফিরে আসে স্বপ্ন। কিন্তু বাস্তবতার প্রভাব এই স্বপ্নগুলায় থেকে যায়। ফলে তাদের ছন্নছাড়া জীবনে এইসব স্বপ্নই তাদেরকে পথ দেখায় আর তারা অবাস্তব বা অলীক কোনো বস্তুর পিছনে ছুটতে থাকে। এরা জানেই না, কোনটা বাস্তব আর কোনটা অবাস্তব। 

আড্ডায় এমন একটা ঝিম ধরা গল্প সবার মধ্যে নিদ্রা না হলেও তন্দ্রার যে ঢুলুঢুলু ভাব তৈয়ার করলো সেটা কাটিয়ে উঠে জগতটাকে আরো কিছুক্ষণ কোনো মিউজিক্যাল ব্যান্ড -সেটা হতে পারে মাশরু লেইলা বা মেঘদল বা অন্য কোনো সংশয়বাদী ব্যান্ড, যাদের গানের মধ্যে থাকে গল্প। এই সব গল্প এমন যে এখানে জীবনের সমস্যা আসে আর যায়। কিন্তু যারা এই গানের পিছনের মানুষ তারা নিজেরাই জানে না সমস্যার সমাধান কী। বরং তারা আরো সমস্যা সৃষ্টি করে, যা পুঁজি করে তারা বাঁচিয়ে রাখে নিজেদেরকে এবং তাদের পেশাকে। মূলত এরা এবং এদের শ্রোতারা সমস্যা শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় নিয়েই হতাশাগ্রস্ত জীবন পার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

অমুক ব্যান্ড তমুক ব্যান্ড সুর-তাল-লয় যাইহোক, সেখানে মানুষের কথাই গান বা সাইকেল, রিক্সা এমনকি হাই হিলের খটাখট চ্যাটাং চ্যাটাং সহ তাবৎ জগতটাই এক ব্যান্ডের নিচে জড়ো হয়ে গান কইতে থাকে আর বাজাতে থাকে ড্রামের মতো বিশাল বিশাল সব যন্ত্র। যুবকদল সেই সুর-ছন্দ-মিউজিকের কর্মযজ্ঞে শামিল হতে চায়, বা তারা হাত পা ছোড়ে অদ্ভুতভাবে আর যুবতী নারী, যে নিজেকে এখনো কিশোরী ভাবতেই বেশি পছন্দ করে সে একখানা ব্লাউজ জাতীয় হাতাকাটা গেঞ্জির উপর উদল বাহুসহ উত্তোলন করে তার দুই হাত এবং নিজের চুল এলোমেলো করতে করতে স্বপ্ন দেখে ভোগ শেষ হওয়ার আগেই মরে যাওয়ার। এই স্বপ্নের জেরেই সে আবার গেয়ে ওঠে, নীল সাগরে। সাগরের র-য়ে থেকে যায় একটা মিহি চিকন সুর যেটা এ-এ-এ করে বাতাসের সূক্ষ্ম তারগুলো নাড়িয়ে যায় আরো বেশ কটা মুহূর্ত ধরে।

আড্ডা তুঙ্গে উঠলে বাঁশির টান চড়া হয় আর এমনকি কয়েকজন অতিউৎসাহী একেবারে সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠতে চায় সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে। হয়ত বাঁশির চড়া সুর বা গুণগুণানির চরম মুহূর্তে মাথার আকল দুলে উঠছে আর সে চলে গেছে এমন এক সমুদ্রের মাঝখানে যেখানে প্রতিটা ঢেউ ছোট্ট জাহাজ বইদা-ফারহাকে দুই ড্রেনের সঙ্গমমুখে বৃষ্টির দিনে আধপুতানো বাদামের খোসাকে নিয়ে নাড়াচাড়া করার মতো করেই দোলাতে থাকে আর নাবিক ও অন্যান্যরা মদ না খেয়েও মাতাল হয়ে রোলারকোস্টারে চড়ে।

একাকিত্বের সাথে বিস্মৃতির যোগসূত্রটা বড় অদ্ভুত। মেয়েটা এই ব্যাপারটা ওইসব ভোরে উপলব্ধি করেছিলো, যেসব ভোর আসার আগের রাতে সে কয়েকজন পুরুষকে জায়গা দিতো নিজের ভিতর আর দৈহিক যাতনায় নিষ্পেষিত হতো কোনোরকম স্মৃতি তৈরি না করেই৷ যেহেতু স্মৃতি তৈরির জন্য মন বা মস্তিষ্ককে সজাগ থাকতে হয় আর প্রেমহীন এই জীবনে মেয়েটার জন্য দৈহিক যাতনার সুখ স্মৃতি রক্ষার প্রয়োজন ছিলো না। তার শুধু দরকার হতো ওই মুহূর্তগুলোর, যেসব মুহূর্তে একের পর এক পুরুষ তার কোমল দেহে নিষ্পেষণের মাধ্যমে জাগিয়ে তুলতো শারীরিক যাতনা। এভাবে সে অনুভব করতো প্রাণকে, মানে এইসব মুহূর্তে বেঁচে থাকার ব্যাপারটা বা শরীরে রক্ত চলাচলসহ অন্যান্য আরো অনেক ব্যাপার- যা ঝিম ধরা দৈন্দিন জীবনে কখনো মেয়েটা অনুভব করতো না-সেইসব অনুভূতি পাবার জন্যই সে নিজেকে এই রকম করে নিষ্পেষিত করতো। আর ভুলে থাকার জন্য পান করতো মদ বা বিস্মৃতির অন্যান্য সাময়িক ওষুধ। এর ফলে যখন বিভিন্ন জ্বালাপোড়া নিয়ে ভোরবেলা সে বের হত তখন গতরাতের উত্তাল উচ্ছ্বাস জনিত সকল আবেগের চিহ্ন শরীরে আঁকা থাকলেও সে জানতো না সঙ্গমকালীন পুরুষ সঙ্গীর মুখটা।

তারপর মজলিশের শেষে তীব্র পিপাসা আর বুকের ভিতর দপদপানি থেমে যাওয়ার মত অনুভূতি, যা তৈরি হয় নিচ থেকে উঠে আসা এক ধরনের শীতলতা থেকে। এরকমই নির্জীবতাসহ যখন সবাই বিদায় নিচ্ছিলো তখন কেউ কেউ মেয়েটাকে তার বাসায় থেকে যাওয়ার জন্যও বলছিলো। কিন্তু এটা অন্য দিনের মতো হয়নি। আজকে তার ভিতরে এক ধরনের তাড়না জেগে উঠেছে। এই তাড়নার স্রষ্টা যদিও সে। কিন্তু তাড়নার মূলে আছে সাবাতিনির গল্প আর গাংচিল আর মানুষের সমণ্বয় এই প্রাণী। এই তাড়নাটা হলো সৃষ্টির। সময়টা তার জন্য এমন ছিলো, সে যদি রাতটা কারো বাসায় থেকে যেত এবং মদ খেয়ে বা অন্য কিছু খেয়ে আরো মাতাল হয়ে অবশ অনুভূতি শূন্য মস্তিষ্ক নিয়ে কয়েকজন, যারা সেই ফ্লাটে থাকতো, সবার সাথে সঙ্গম করতো তাহলে এই তাড়না চলে যেত। ঘুম ভাঙলে সে একটা শূন্য মস্তিষ্ক আর জামাকাপড় ঠিক করতে করতে বেরিয়ে পড়তো এই একই রাস্তায়, যে রাস্তাটাই কি না এই প্রেমহীন চাঁদনি রাতে বইদা-ফারহার মতো ছোট্ট একটা জাহাজকে ভাসিয়ে নেওয়া মোটামুটি উত্তাল এক সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আর টলমল পায়ে সেই সমুদ্র দেখতে রেলিং ধরে দেহটাকে ঝুকিয়ে দিয়েছে নামহীন এক মেয়ে, যাকে আমরা সুরাইয়া বলতে পারি। যেমন আকাশের সুরাইয়া বা ইমরাউল কায়েসের কবিতার নায়িকা সুরাইয়া অমাবস্যার রাতকে চাঁদনি রাতে পরিণত করে তেমনটা না হলেও এই নামহীন সুরাইয়া চারপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছিলো একাকিত্বের অপার্থিব এক মধুরিমা।

জাহাজের গন্তব্য অজানা। কারণ যারা এই মেয়েটাকে বা জাহাজটাকে দেখছে তারা এই জাহাজের কেউ না। তারা রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক বিশাল হলরুমে, যেখানে আর্ট এক্সিবিশন চলছে। এই জাহাজ নিয়ে তাদের মধ্যে কোনোরূপ প্রশ্ন আসেনি। প্রশ্ন না আসার কারণ অবশ্য আছে। এইখানে গ্যালারির মধ্যখানে যে চিত্রকর্ম ঝুলছে সেখানে এই জাহাজের অস্তিত্ব ঝড়ে বিধ্বস্ত ভাঙাচোরা একখানা গাছের কান্ডের মতো। বা আমরা বলতে পারি, জাহাজটার ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে একটা দ্বীপের পাশে। কিন্তু বালিয়াড়ির শেষে যেখানে সমুদ্রের শুরু সেখানে শুয়ে থাকা মেয়েটির চোখের ভিতর দিয়ে দৃশ্যকল্প অন্য খাতে বইতে থাকে। এইখানে লুকিয়ে আছে নামহীন সুরাইয়ার গল্প। এই গল্পটা চিত্রশিল্পীর, মানে যে কিনা একটা রাস্তাকে সমুদ্র ভেবে বইদা-ফারহায় উঠে চলে গিয়েছিলো রুটির মতো এক ফলের খোঁজে বা গাংচিলের মাথাওয়ালা মানুষের খোঁজে।

এই আর্ট এক্সিবিশনের আগের কথা। মেয়েটা যখন সেই আড্ডা থেকে সৃষ্টির তাড়না নিয়ে বের হলো তারপর হাঁটতে হাঁটতে তার বাসায় ফিরে এলো তখনকার কথা। সে ঘুমাতে পারেনি। তার মনে বাসা বেধেছিলো একটা চিন্তা। এই চিন্তাটা এক দৃশ্যের কথা বলে৷ এই দৃশ্য নিয়ে সে ভাবছিলো। কিন্তু সে কোনো কুল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলো না। একটা দৃশ্য স্রেফ কিছু রঙ আর একটা সাদা কাগজের সমন্বয় না। অনেক সময় সেটা স্রেফ দৃশ্য হয়। কিন্তু কখনো কখনো দৃশ্যের মাঝে পুরো একটা গল্প লুকিয়ে থাকে। একটা দৃশ্যের কথা মেয়েটা জানতো। যে দৃশ্যে জানালার মধ্য দিয়ে দেখা যায় সমুদ্র আর সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়ানো এক নিঃসঙ্গ মানবী, যার চোখের তারায় একাকিত্ব যে আবেদন নিয়ে উপস্থিত হয় তা বইদা-ফারহার রেলিং ধরে দাঁড়ানো সুরাইয়ারই প্রতিরূপ যেন। বা সুরাইয়ার একাকিত্বটা যে বিস্মৃতির কথা বলে সেই বিস্মৃতির মূল ধারণাটা আসে এই মেয়েটার চোখের মধ্যে উপস্থিত থাকা নিঃসঙ্গতা থেকেই। মেয়েটা যে বিষয়টা ভেবে পাচ্ছিলো না, সেটা হলো এই একাকিত্বটাকে সে ঠিক কীভাবে তার দৃশ্যে ফুটিয়ে তুলবে।

এক জাপানিজ চিত্রশিল্পীর ব্যাপারে সে জেনেছিলো অনেক আগে। এই জাপানিজ চিত্রশিল্পীর যে ব্যাপারটা তার মনে নাড়া দিয়েছিলো সেটা একটা নরক-চিত্র। এই নরক-চিত্র আঁকার জন্য জাপানিজ এই চিত্রশিল্পী নরকের দরজা খুঁজতে ঘুরে বেড়িয়েছিলো অনেকগুলো বসন্ত। অবশেষে সে জানতে পারে নরকের দরজায় রয়েছে একটা মস্ত তালা। এই তালা খুলতে হলে দরকার হবে একটা চাবির। নরক যেহেতু শয়তানী কাজ-কারবারের প্রতিফল তাই এর চাবিটাও লুকিয়ে আছে এরকম এক শয়তানী ইবাদতের মধ্যে। ব্যাপারটা তাকে জানিয়েছিলো একটা শকুন৷ এই শকুন তাকে বলেছিলো, একটা মোক্ষম সময়ে তোমার মেয়েকে বলিদান করতে পারলেই তুমি নরকে প্রবেশের অধিকার পাবে। চিত্রশিল্পী একটা মুহূর্তও দ্বিধায় দোদুল্যমান হয়নি। সে শকুনের কথায় বিশ্বাস করে এই জন্য, যে শকুনটা ছিলো একেবারে জগতের শেষ সীমায়। এরপরে আর কারো কাছেই সে কোনো সমাধান আশা করতে পারতো না। যেহেতু হাজার বছর বেঁচে থাকা এক আলকেমিস্টও তাকে নিরাশ করেছিলো, যার দাবী অনুযায়ী তার কাছে ছিলো মহাজগত সৃষ্টির পিছনের সমস্ত রহস্যের জ্ঞান। কিন্তু সে নরক-দ্বারের জ্ঞানই রাখতো না। তাই এই জ্ঞানের ভাণ্ডার আলকেমিস্টকে হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখলেও একটা নরক-চিত্রের রসদ যোগানো তার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

সে তার বাড়িতে ফিরে এসে বলি দেয় তার মেয়েকে। মেয়ের শরীরটা ঘরের মধ্যে রেখে জ্বালিয়ে দেয় সে পুরো বাড়িটাকে। তারপর সে বাড়ি পোড়ার শব্দের সাথে সাথে শুনতে পায় এমন এক আর্তচিৎকার যা তাকে নিয়ে যায় এক ঘোরের মধ্যে। সে সেই ঘোরের মধ্যে দেখতে পায় এক জ্বলন্ত হিমশীতল জগত। আর সেই জগতে থাকতে থাকতেই সে এঁকে ফেলে নরক-চিত্রটি৷ কিন্তু এই নরক-চিত্র মানুষের জগতে কখনো আবিষ্কৃত হতে পারেনি৷ চিত্রশিল্পী কখনো বের হতে পারেনি সেই জ্বলন্ত হিমশীতল জগত থেকে।

মেয়েটা একাকিত্বের নমুনা তালাশের উপায় খুঁজে পায় এই জাপানিজ চিত্রশিল্পীর গল্পের মধ্যে। গল্পের মূল ভাবটা তার কাছে এভাবে ধরা দেয়, যে সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন বলিদানের, সৃষ্টি বা নতুন কিছুর জন্ম হয়-ই ধ্বংসের মাঝখান থেকে, যেমনটা বিভিন্ন লোককথায় ফিনিক্স বা আনকা পাখির গল্পের মাধ্যমে পুরো জগত-সভ্যতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আর এরই আধুনিক রূপ অন্যভাবে প্রকাশ পেয়েছে জাপানিজ চিত্রশিল্পীর গল্পে।

কিন্তু সে যে উপায়টা পেয়েছে তা আত্মঘাতী। এ ছাড়া আর কোনো উপায় তার সামনে খোলা নেই। সুরাইয়াকে আঁকতে হলে তার প্রয়োজন দুইটা জিনিসের। সমুদ্রের মধ্যে একটা ভাঙা জাহাজ আর অনেকগুলো গাংচিল, যাদের পাগুলো মানুষের। এই প্রাণী খুঁজে পেতে তাকে হয়তো বেরিয়ে পড়তে হবে পরিচিত জগত ছেড়ে নয়তো একাকিত্বের খোঁজে তাকে যেতে হবে নাম না জানা দেশে যেখানে মানুষেরা খায় রুটির মত দেখতে এক ধরনের ফল। যা তাদের সমস্ত অতীতকে ভুলিয়ে দেয়। একাকিত্বের সাথে বিস্মৃতির যোগসূত্রটা বড় অদ্ভুত। মেয়েটা এই ব্যাপারটা ওইসব ভোরে উপলব্ধি করেছিলো, যেসব ভোর আসার আগের রাতে সে কয়েকজন পুরুষকে জায়গা দিতো নিজের ভিতর আর দৈহিক যাতনায় নিষ্পেষিত হতো কোনোরকম স্মৃতি তৈরি না করেই৷ যেহেতু স্মৃতি তৈরির জন্য মন বা মস্তিষ্ককে সজাগ থাকতে হয় আর প্রেমহীন এই জীবনে মেয়েটার জন্য দৈহিক যাতনার সুখ স্মৃতি রক্ষার প্রয়োজন ছিলো না। তার শুধু দরকার হতো ওই মুহূর্তগুলোর, যেসব মুহূর্তে একের পর এক পুরুষ তার কোমল দেহে নিষ্পেষণের মাধ্যমে জাগিয়ে তুলতো শারীরিক যাতনা। এভাবে সে অনুভব করতো প্রাণকে, মানে এইসব মুহূর্তে বেঁচে থাকার ব্যাপারটা বা শরীরে রক্ত চলাচলসহ অন্যান্য আরো অনেক ব্যাপার- যা ঝিম ধরা দৈন্দিন জীবনে কখনো মেয়েটা অনুভব করতো না-সেইসব অনুভূতি পাবার জন্যই সে নিজেকে এই রকম করে নিষ্পেষিত করতো। আর ভুলে থাকার জন্য পান করতো মদ বা বিস্মৃতির অন্যান্য সাময়িক ওষুধ। এর ফলে যখন বিভিন্ন জ্বালাপোড়া নিয়ে ভোরবেলা সে বের হত তখন গতরাতের উত্তাল উচ্ছ্বাস জনিত সকল আবেগের চিহ্ন শরীরে আঁকা থাকলেও সে জানতো না সঙ্গমকালীন পুরুষ সঙ্গীর মুখটা। আর এটা তার মধ্যে এক হাহাকারের জন্ম দিতো, যে হাহাকার থেকে তৈরি হতো একাকিত্বের এমন কিছু অনুভূতি যা তাকে বাথটাবে বা শাওয়ারের নিচে পানির ধারার সাথে গড়িয়ে পড়া তপ্ত অশ্রু উপহার দিতো বা এমন কিছু গুমরে ওঠা গোঙানি যা শুধু সে-ই শুনতে পেতো।

সে আত্মঘাতী এই উপায় বেছে নিয়ে এরপরের অনেকগুলো দিন এভাবে বিস্মৃতির কাছে বলি দিয়ে গেলো। শুধুমাত্র একটা দৃশ্যের জন্য বা সুরাইয়ার চোখের একাকিত্বকে জীবন্ত রূপে ফুটিয়ে তোলার জন্য। এভাবে গভীর সমুদ্রে বইদা-ফারহা জাহাজটা ভেসে চললো। দিনের পর দিন জাহাজটা কুলহীন ভেসে চলার মাধ্যমে হারিয়ে যাচ্ছিলো বিচিত্র আওয়াজ আর হরকতের জগত থেকে। একঘেয়ে একটা শব্দ একটানা জাহাজের যাত্রী এবং নাবিকদের কানে বাজতে থাকতো। যত দিন যেতে লাগলো এই শব্দ সমস্ত অনুভূতিকে ভোতা করে দিতে লাগলো। জাহাজটা দিক হারালো আরো কিছুদিন পরে যখন জাহাজের কাপ্তান বা অন্যান্য নাবিকদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। সমুদ্রের স্রোত তখন ভাসিয়ে নিয়ে চলল জাহাজটাকে অজানার উদ্দেশ্যে। এই যাত্রায় দিনে দিনে ক্ষয়ে যেতে থাকলো এক এক করে সমস্ত যাত্রীর প্রাণ। কঙ্কাল বা সমুদ্রের অতলে হারিয়ে যাওয়া মানুষদেরকে মনে রাখার মতো এক সুরাইয়া ছাড়া আর কেউ বেঁচে ছিলো না জাহাজে৷ কিন্তু সুরাইয়া কীভাবে মনে রাখবে তাদেরকে! সে তো বহু আগেই বিস্মৃতির কাছে ইজারা দিয়েছে তার মনকে আর বিস্মৃতি দীর্ঘকালীন ইজারার সুযোগ নিয়ে দখল করে নিয়েছে তার মনকে।

এত এত বিস্মৃতি, যা গ্রাস করেছিলো সমস্ত নাবিক আর যাত্রীদেরকে তার মধ্যেও সুরাইয়ার বেঁচে থাকা বা রেলিং ধরে সমুদ্রের অতলান্ত জলে ওই দৃষ্টি নিক্ষেপ, যে দৃষ্টি মনুষ্য জগতের বাইরে চলে গিয়েছে। তার কারণ, সে যে একটা ছোট্ট জাহাজে সমুদ্র-পথে নিরুদ্দেশ হয়েছে তার খোঁজ কেউ রাখেনি৷ যারা তাকে চিনতো তারা হয়ত জানে, সে সমুদ্রে প্রমোদভ্রমণে বেরিয়েছে, যেমন অনেকগুলো রাতে সে নিজের বাসায় না থেকে কয়েকজন পুরুষ থাকে এমন অসংখ্য ফ্লাটে রাত কাটিয়েছে। এইসব পুরুষ, যারা তাকে চিনতো না খুব গাঢ়ভাবে আর সে-ও জানতো না সবার নাম। কেউ তাকে মনে রাখেনি বা মনে রাখলেও তাদের মনে আছে সুডৌল স্তন বা তার কঠিন চোয়ালের ধারালো চোখা হাড় বা সঙ্গমের তীব্রতায় যখন এক ঠোট চেপে ধরতো অন্য ঠোটকে এবং চোখের কোণে জমতো জল, যে জলের রহস্য তার পুরুষ সঙ্গী যেমন জানতো না তেমনি সে নিজেও বুঝতো না, এই জল কিসের বা এই জলের উৎস, যেখানে রয়েছে সমুদ্র বা বিস্মৃতির গভীরতা, যার কোনো তল বা লয় নেই। অথবা তারা শুধু মনে রেখেছে তার আপেলের মতো নিতম্ব-মুখের সূচনা বা নরোম মাংস, যা প্রতিটা আঘাতে দেবে দেবে যেত পুরুষ সঙ্গীর তলপেট বা লোমবিশিষ্ট উরুর সাথে। এভাবে তার শরীর বেঁচে থাকে বইদা-ফারহার গলুইয়ে৷ কিন্তু তার মন, যা সে অস্বীকার করে এসেছে বা যে মন সে ইজারা দিয়েছে তল-লয়হীন সমুদ্রের কাছে সেটার উপর তার দখল আর কতটুকু বাকি আছে! সেটা কি বেঁচে আছে না মরে গেছে তা বুঝার ক্ষমতা কি কারো আছে? যদি থাকতোই তাহলে হয়ত আবিষ্কার করা যেত প্রাণহীন একাকিত্ব বা বিস্মৃতি বা নরকের জ্বলন্ত হিমশীতল পরিবেশের অনুভূতি।

বইদা-ফারহার নামকরণ করেছিলো এক ধনকুবের, যার অর্থ ছিলো নির্মল আনন্দ। কিন্তু নির্মল আনন্দের সংজ্ঞা জানা ছিলো না সেই ধনকুবেরের। যার ফলে জাহাজের গলুইয়ে দাঁড়িয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করতে হয়েছিলো তাকে। সুরাইয়া দাঁড়িয়ে ছিলো জাহাজের গলুইয়ে ঠিক সেই জায়গাটায়, যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আত্মহত্যা করেছিলো এর মালিক। সুরাইয়া এতদিনে ভুলে গেছিলো জাহাজের নাম, তার গন্তব্য আর অন্যান্য যাত্রী ও নাবিকদের স্মৃতি। সবকিছু ভুলে গিয়ে সুরাইয়া যখন দেখছিলো সমুদ্রে ঢেউয়ের ওঠানামা তখন তার চোখে ছিলো শূন্যতা। এই শূন্যতার কোনো অর্থ নেই, কোনো জাত বা অন্য কিছুই নেই। এর কোনো ব্যাখ্যাও নেই। আর এই শূন্যতা এমন, যে কোনোরকম যন্ত্রণাও অনুভব করা যায় না। সুরাইয়ার ভাগ্য ভালো সে বইদা-ফারহার মালিকের মতো নির্মল আনন্দকে বুঝতে না পারার যন্ত্রণায় আত্মহত্যা করেনি বা বিস্মৃতির যন্ত্রণাও তাকে গ্রাস করেনি। যেমনটা করেছিলো অন্যান্য যাত্রী ও নাবিকদেরকে। আর বিস্মৃতির যন্ত্রণাটা এমনই যে এটা একবার অনুভব করলে ব্যক্তি আর উযুদে থাকতে পারে না৷ সে হারিয়ে যায় সমুদ্রের অতলে বা মিলিয়ে যায় আকাশের নিঃসীম শূন্যতায়। যারা হারিয়ে যায় তাদেরকে কল্পনাও করা যায় না৷ তারা স্রেফ হারিয়ে যায়৷

জাহাজ চলে। কিন্তু তার নিজস্ব গতি নেই৷ সে চলে স্রোতের টানে। স্রোতের টানে চলা ছাড়া তার আর উপায়ও নেই৷ কেননা তার কোনো চালক নেই৷ আর এটা এমন এক জায়গা যার দূরত্ব অনেক, মানুষের সাধ্যের বাইরে এখানে সমুদ্রের ক্ষমতা। এখানে সমুদ্র কখনো আকাশের মেঘ হয়ে ঝরে পড়ে আবার কখনো সেটা মরুভূমির মতো ধোঁকা দেয়, মরীচিকার ধোঁকা। এই ধোঁকা বইদা-ফারহার গলুইয়ে দাঁড়ানো সুরাইয়ার দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না। বিস্মৃতি যার অন্তর নিয়ে গেছে আর যার দৃষ্টিতে রয়েছে শুধু একাকিত্ব, মানে নিজস্ব জগতের বাইরে অন্য কোনোকিছুই আর তার মনোজগতে নেই। তবে নিজস্ব জগত বা আত্মকেন্দ্রিক যে ব্যাপারটা মানুষের মধ্যে থাকে এটাও তার ভিতরে খুঁজে পাওয়া যাবে কি না সে কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। সে আছে বইদা-ফারহার গলুইয়ে। কিন্তু তার মন, সেটা রয়েছে আদিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির মধ্যে। যেখানে শুরু-শেষের ব্যাপারটাই কাজ করে না। 

যদি সে মরীচিকা বা ধোঁকাগুলো দেখতো তাহলে সে যেটা দেখতে পেতো তা অবশ্যই ওই মেয়েটার চিত্রকর্মের সার্থকতা বলে বিবেচিত হতো। কারণ তার মাথার উপরে সূর্য থাকলেও সেই সূর্যের তাপ তাকে ছুতে পারছিলো না। আবার তাকে রক্ষা করার জন্যেও ছিলো না কেউ। সে ছিলো একা এবং একদমই একা এক মানুষ।

কেউ তাকে নিয়ে গান করেনি। কেউ করুণ সুরে সমুদ্রের নিকটে দাঁড়িয়ে নিজেরে নিবেদন করে বলেনি, “য়া বাহার রযায়ীলি রযায়ীলি আখাওয়া!” ফলে সমুদ্রও তাকে আর ফিরিয়ে দেয়নি। ফিরিয়ে দিলেও রেখে দিয়েছে তার সত্তা। এই সত্তাকে ঘিরে উড়ে বেড়ায় কয়েকটা গাংচিল বা মরিচীকার মতো এক ধোকা৷ আসলে এই পর্যায়ে এসে জাহাজের চলাচল বা গতিও যখন বিস্মৃত হয় এই জগত থেকে তখন গাংচিলের দল আসে- যাদের পাগুলো মানুষের।

অথচ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এক হলরুমে শুধু কিছু চিত্রকর্মের প্রদর্শনী চলে৷ যে প্রদর্শনীতে চিত্রশিল্পীকে চেনা যায় না। চেনা যায় শুধু চিত্রটাকে। চিত্রশিল্পীর মনোজগতের তালাশ করতে কেউ আগ্রহী হয় না। যেমন রাতের ওই সময়গুলোর পরে আর কেউ আগ্রহী হয় না সঙ্গী বা সঙ্গিনীর ব্যক্তি পরিচয় বা চ্যান-প্যাঁহচানে। তারা তাদের সুখ-সঙ্গমটা মনে রাখে বা সেই সুখকাতর দৃষ্টি পরেরদিন অন্য নারীর দেহের প্রতি কাম-ভাবনার উদ্রেক করে। আর এক কাম অন্য কামরে বিস্মৃত করে। ফলে পরেরদিন তারা বলে, আজকের রাতটাই আমার জীবনের সেরা রাত ছিলো।

তেমনিভাবে চিত্র বা সুরাইয়ার চারপাশে ছড়িয়ে পড়া একাকিত্ব খুঁজতে থাকে চিত্র-সমালোচকের দল। আর খুব স্বাভাবিকভাবেই এইসব সমালোচক, যারা মুখরোচক সব গল্পের মাধ্যমে রাতের শয্যা প্রস্তুত করে আর তাদেরই সঙ্গী বা সঙ্গিনীর চোখে ভাসতে থাকে সুরাইয়ার একাকিত্ব বা অন্য কোনো জগত, যেখানে গাংচিলের দল বা বইদা-ফারহার উপস্থিতি না থাকলেও সেটা যে এ জগতের বাইরের আর কোনো অনাবিষ্কৃত জগত তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই সমস্ত জগত অনাবিষ্কৃত থাকার মূল কারণটা লুকিয়ে আছে মেয়েটার এই চিত্রকর্মে। যে চিত্রকর্মকে এক গল্পকার খুব সাধারণ একটা দেয়াল-চিত্র অ্যাখ্যা দিয়ে অন্য আরেকদিকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়, যেখানে রয়েছে এক আনকোরা নারী, যে সবাইকে ভেঙে ভেঙে এক ফ্রেঞ্চ চিত্রকর্মের নামের উচ্চারণ বুঝাচ্ছিলো। আর যখন সে প্রতিটা শব্দের শেষে উই বা লুই জাতীয় টান দিচ্ছিলো তখন সেই সমালোচক ভুলে যাচ্ছিলো গতরাতের শয্যায় সঙ্গিনীর শিৎকার।

চিত্রশিল্পী, মানে মেয়েটিকে এই চিত্র আঁকতে দিতে হয়েছিলো সর্বোচ্চ উৎসর্গ বা নিবেদন। যেখানে গাংচিলরূপী মানুষ বা মানুষরূপী গাংচিল বাঁচানোর চেষ্টা করছিলো এক মেয়ের মনকে বা সমগ্র বইদা-ফারহা জাহাজটাকেই৷ কিন্তু সে দিতে পারছিলো না ছায়া ছাড়া আর কিছুই। এই চিত্রটি এতটাই গভীর আর এতটাই আন্তরিক যা অনুভব করার শক্তি কারো ছিলো না। তাদের কাছে- ওইসব গল্পকারের রূপ ধরা মেকি সমালোচক- যারা মনে করতো তারা শিল্পের আগপিছ উপরনিচের তাবৎ হাল-হাকিকত জানে; এটা স্রেফ একটা মানবীয় বিলাসিতার নামান্তর, যা সর্বোচ্চ ঝুলে থাকতে পারে কোনো ধনকুবেরের প্রাসাদের দেয়ালে। তারমানে তারা এভাবেই পুরা ব্যাপারটাকে বিশ্লেষণ করে। একজন ধনকুবেরের প্রাসাদের দেয়ালের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই তাদের কাছে ছিলো না, যার ফলে আলোচনার বাইরে থেকে যায় এক মেয়ে, যে এতদিনে রুটির মতো এক ফল খেয়ে সব ভুলে গিয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় বা অন্য এক তাড়নায় খেয়ে ফেলেছে এত বেশি, যে তাকে উদ্ধার করা গাংচিলের দুর্বল ডানার শক্তিতে নেই বা বাহুর তাকত নিয়ে এগিয়ে আসবে না কোনো মানুষ। কারণ সে খেয়ে ফেলেছে অনেক বেশি।


লেখা পাঠান: chilekothasahitto@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠা বেস্ট সেলার বইসমূহ

‘নক্ষত্রের খোঁজে’ প্রতিযোগিতা ২০২২ এর নির্বাচিত বই