চিলেকোঠা ওয়েবজিনে প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও অন্যান্য

‘কেউ মরছে না’ মানুষের অধিকারের কথা বলে



‘কেউ মরছে না’ মানুষের অধিকারের কথা বলে

হুসাইন হানিফ

(পাঠ প্রতিক্রিয়া: কেউ মরছে না—কবীর রানা)


আজকাল কোনো বই নিয়ে প্রশংসা করলে অনেকেই ভাবে, এমনকি স্পষ্টতই বোঝায়, দালালিই করা হচ্ছে বোধহয়। সাধারণ পাঠকরা তো বটেই, অনেক বুদ্ধিজীবিরাও ভালো বই না পড়ে এমনকি চেষ্টাও না করে ধারণা করে বসে আছেন বাংলা সাহিত্যে কলিযুগ চলতেছে। এই অবুঝ একগুঁয়েমি ধারণা যতটা না সাহিত্যের বাজে অবস্থার জন্য, তার থেকে বেশি নিজেদের স্বার্থে (ব্যবসার জন্য, মুখ রক্ষার খাতিরে বা নিজ গোষ্ঠির লেখক বলে) খারাপ বই প্রমোট করার ট্রেন্ডের জন্য। এমনটাও অস্বাভাবিক না যে এটেনশন পাওয়ার জন্য এইটা বলা বা নিজে যে অনেক বড় হনু এইটা প্রমাণ করা। মানে একটা সমাজে মিথ্যা কথা বলাটা যখন নরমাল ঘটনা, দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তিত্বই যখন মুখ খুললেই অনর্গল মিথ্যা কথা বলে, সেইখানে সত্য কথা বলতেছে কেউ, হোক না সেইটা বই নিয়া—এইটা তো আসলে বিশ্বাস করতে কষ্টই হওয়ার কথা।

কিন্তু যারা সমকালীন সাহিত্য পড়েন, সিরিয়াস পাঠক যারা, তারা বোধহয় এ কথার সাথে সবসময় একমত হবেন না। হ্যাঁ, বাংলা সাহিত্যের সোনালী যুগ চলতেছে না সত্য, তার মানে এই না যে অনেক ভালো গল্প উপন্যাস বা কবিতা আমরা পাচ্ছি না। কোনোকালেই তো খুব বেশি ভালো বই একসাথে পাওয়া যায় না। তাছাড়া আপনি কত ভালো পাঠক, কতটা সত্য পাঠক সেইটা নিয়া আপনি সৎ কিনা সেইটা আগে বোঝাপড়া হওয়া দরকার, নিজের কাছেই।

তাছাড়া আমাদের ভেতর কেউই বোধহয় এইটাও স্বীকার করতে আর দ্বিধা করবেন না যে আমাদের পাঠকসত্তা মরে গেছে ইন্টারনেট আর ডিভাইস আসক্তির কারণে। আমি নিজে একজন ভালো পাঠক ছিলাম। মাসে ১০/১২ টা বই পড়তে পারতাম। কিন্তু এখন বছরেও ১০টা বই পড়ে শেষ করতে পারি না। এমন না যে ভালো বই কিনতেছি না বা আমার আগ্রহ নাই। কিন্তু আমার মনোযোগ কেড়ে নিছে পৃথিবীর সেরা সব মনোবিজ্ঞানী। কীভাবে? টেক রিলেটেড কোম্পানিগুলোর কাছে নিজের সকল কৌশল ও বিবেক বিক্রি করে দিয়ে।

তো, সেই জায়গা থেকে ভালো বই পড়া, ভালো কি মন্দ তা বুঝতে হইলেও অন্তত কিছু এভারেজ বইও পড়া লাগতে পারে, আর তাছাড়া অনেকে তো ঘোষণা দিয়াই সমকালীন লেখা পড়া থেকে বিরত থাকেন এই বলে যে আগে প্রতিষ্ঠিত হোক বা আরও পঞ্চাশ বছর যাক তারপর দেখা যাবে।

তবু একটা বই পড়ে ওঠা, আর সেইটা যদি ভালো বই হয়, তাইলে তো নিজের দায়িত্বই হয়ে যায় বইটার কথা পাবলিকলি বলা যে, হ্যাঁ, একটা দারুণ বই পড়লাম।

উপন্যাসটা সম্ভবত সকল কাল, পৃথিবীর সকল দেশ সকল স্থান আর জগতের সকল চরিত্রকে ধরার চেষ্টা করছে। দূর থেকে দেখলে দেখা যায় এখানে কিছুই নতুন না, কিছুই ধ্বংস হচ্ছে না। মানে এক ফ্যাসিস্ট যাচ্ছে, আরেক ফ্যাসিস্টের জন্ম হচ্ছে। ফ্যাসিস্টের মৃত্যু হচ্ছে না। জগতের ফুল ফল ফসলাদি পশু পাখি মানুষজন গণহত্যা কিছুই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। একটা যেতে না যেতেই তার উত্তরসূরী এসে হাজির। ফলে এইদিক থেকে মনে হচ্ছে কেউই আসলে মরছে না।

তো এইরকমই একটা বই—কথাশিল্পী কবীর রানার প্রথম উপন্যাস—‘কেউ মরছে না’ পড়ে শেষ করলাম। ব্যাপক পাঠ ও গ্রহণ বর্জন শেষে দীর্ঘ একটা প্রস্তুতির ভেতর দিয়ে—এর আগে আরও ৬টা গল্পের বই বের করে—৫৫ বছর বয়সে প্রথম উপন্যাস প্রকাশ করলেন ইংরেজির এই অধ্যাপক। তার লেখা ৩টা গল্পের বই আমার সংগ্রহে আছে। সেগুলোর ভেতর থেকে ১০/১২টা গল্প পড়ছি। তো তার লেখা আমার খুব ভালো লাগে। সেই আগ্রহ থেকেই তার উপন্যাস সংগ্রহ করা ও পড়া।

‘কেউ মরছে না’ পড়তে গিয়ে যেসব চিন্তা মাথায় আসছে, সেসব আমি খাতায় নোট নিছি। এর আগে কোনো বই পড়ার আগে যেই কাজটা আমি করি নাই। এমনিতে বইয়ের ভেতরেই হয়তো দাগাইছি অনেক, মন্তব্যও করা হইছে সংক্ষেপে। কিন্তু রীতিমতো খাতায় নোট নেওয়ার ব্যাপারটা এইবারই প্রথম। বইটা পড়া শুরু করে দুই পৃষ্ঠা পড়ার পর মনে হলো আমার ব্রেইন অর্গাজম হচ্ছে। এত তুমুল আনন্দ অন্য কোনো বই পড়ে পাই নাই। পড়ে মনে হলো নিজের এই অনুভূতির কথাটা লিখে রাখা দরকার।

এক কথায় যদি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে বলা হয়, তাহলে বলব, বাংলা ভাষায় লেখা শ্রেষ্ঠ এক উপন্যাস পড়লাম। ‘কেউ মরছে না’-কে আমি জীবন আমার বোন, খোয়াবনামা, সে রাতে পূর্ণিমা ছিল, অলীক মানুষের মতো শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলির পাশে রাখব।

উপন্যাসের বিষয়বস্তু কী? নিজকল্পা নামক কল্পিত এক গ্রামের মানুষ ও তাদের অর্থনীতি, রাজনীতি, সাহিত্যনীতি, জীবননীতি ও যাপনরীতিই এ উপন্যাসের বিষয়বস্তু।

‘কেউ মরছে না’ নামক এই আলেখ্যে ঔপন্যাসিক কবীর রানা মানুষের জীবনের দিকে তাকান প্রেমিকের চোখে, নিজকল্পার লোকজনের যাপনরীতির দিকে তাকান কিছুটা ঠাট্টা কিছুটা হতাশামিশ্রিত আর অধিকাংশই মমতা নিয়ে অভিভাবকের চোখে। নিজকল্পার সার্বিক বিষয়ে যখন তিনি ওপর থেকে আলোকপাত করেন, তখন তাকে এক মহান কারিগর বলে মনে হয়। নিজকল্পার মানুষকে যখন তিনি পাশে বসে পর্যবেক্ষণ করেন, তখন তাকে দার্শনিক মনে হয়। নিজকল্পার মানুষের সৌন্দর্য যখন তিনি বর্ণনা করেন তখন তাকে পৃথিবীর প্রথম কবি বলে মনে হয়। নিজকল্পার গল্প লিখতে সৌন্দর্য বর্ণনা করতে কবীর রানা এমন সব শব্দ ব্যহার করেন যে শব্দে কোনো হিংসা নাই, বিদ্বেষ নাই। আছে কেবল মায়া। আছে কেবল প্রেম। আছে কেবল অর্থ। সীমাহীন অর্থ। দুনিয়ার সকল অর্থ নিজের ভেতর ধরে রাখে এমন সব শব্দ দিয়ে লেখা এ উপন্যাস।

শব্দের কথার এই সৌন্দর্য তৈরি এই শিল্প তৈরি দেখে, কথার এই আনন্দে পড়ে মনে হচ্ছিল কথাশিল্পী শব্দটার কথা। কবীর রানা নামক এই লেখককে যদি বর্ণনা করতে হয় তবে তাকে কথাশিল্পী বলতে হবে। যিনি সাধারণ একটা কথাকেও শিল্পে পরিণত করতে পারেন।

উপন্যাসের শুরুটা চমৎকার। নিজকল্পা গ্রামের যুবক ইবনে বতুতা, যে কিনা পা থেকে বের হতে চায়, কিন্তু বহু ভ্রমণেও পা থেকে বের হতে পারছে না। ইবনে বতুতা ও তার ভ্রমণ বিষয়ক জটিলতা নিয়ে এই উপাখ্যান পড়তে গিয়ে মনে হলো এ ভ্রমণ প্রতিটি সচেতন মানুষের। প্রতিটি জিজ্ঞাসু মানব সন্তানের। সত্য অন্বেষী সকল হৃদয়ের চিন্তার যাত্রা এখানে বর্ণিত।

এ বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আছের মণ্ডল, সুলাইমান মণ্ডল, আলিবাবা, দিদার ফকির। সবগুলো চরিত্রই খুব রহস্যময়। কে কী, কেন কী, কিছু বোঝা গেলেও পুরোটা বোঝা যায় না যেন। এখন মনে হলো এক কথা, একটু পর মনে হলো অন্য কথা। একবার মনে হলো এই চরিত্রগুলো আমাদের পরিচিত ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানেরই, বিভিন্ন সময়ের নানান রূপ। আবার মনে হলো না, এগুলো তো একেকটা রাজনৈতিক দলের পরিচয় বহন করছে। আবার মনে হচ্ছে এসব হয়তো বিদেশি পরাশক্তি। কী যে তারা, তা বুঝতে হলে হয়তো আরও পাঠ দরকার, আরও ভ্রমণ দরকার।

এই উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্র পাখি খাতুন, মন যমুনা ও মোনা। পাখি খাতুন ও মন যমুনাকে নারী হিসেবে আবিষ্কার করা গেলেও মোনা ঠিক নারী নাকি সুখ, নাকি শান্তি যার খোঁজে ব্যাকুল সবাই কিন্তু কেউ পায় না—বোঝা দায়। কিন্তু না বুঝতে পারলেও এ পাঠ এ ভ্রমণ উপভোগ্য, আনন্দদায়ক।

এদিকে বাঘের লেজ দিয়ে সমাজের মাস্তানি সমাজের হুমকি ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র বাহিনীর দুর্বৃত্তায়ন বোঝানো হলেও হতে পারে।

উপন্যাসের শুরু থেকেই বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে গেছেন কবীর রানা। কিন্তু সেসব প্রশ্নের শেষে তার প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেওয়ার অনীহা দেখে ভাবতে হলো। মনে হলো এটা তার ইচ্ছাকৃত। কেন তার এই ইচ্ছা হলো? মনে হলো প্রশ্ন তুলে সেসবের কোনো উত্তর আশা করছেন না পাঠকের কাছে। আবার মনে হলো তার এই চিহ্নহীন প্রশ্ন ছোট ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফেলে চূড়ান্ত একটা পরিণতির দিকে মীমাংসাহীন চূড়ান্ত এক প্রশ্নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যার উত্তর খুঁজে বের করতে হবে পাঠককে। কী সেই প্রশ্ন তাও খুঁজে বের করতে হবে পাঠকের।

উপন্যাস পাঠ শেষে মনে হলো কেউ মরছে না আমাদের অধিকার নিয়ে কথা বলছে। আমাদের নদী দখল নিয়ে কথা বলছে। আমাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া অর্থনীতি নিয়ে কথা বলছে। কথা বলছে ক্ষমতার লোভে বেচে দেওয়া আদর্শের কথা। কথা বলছে গণমানুষের সঙ্গে প্রতারণার কথা। কথা বলছে দেশের সকল মানুষের চেয়ে একজন মানুষের হাস্যকর একই সাথে ভয়ঙ্করভাবে বড় হয়ে যাওয়ার কথা। বলছে মানুষের থেকে তার বক্তৃতা বড় হয়ে যাওয়ার কথা। বলছে ব্যক্তির ফাঁপা দাবির মুখে মানুষের অধিকার ধূলিস্মাৎ হয়ে যাওয়ার কথা। বলছে ভোট চুরি হয়ে যাওয়ার কথা।

কিন্তু এইসব কথা কৌশলে কেবল ইশারা দিয়ে যায়। কেবল এক ঝলক দেখায়া যায়। এইসব ঝলকে পাঠকের মনের গভীর বোধকে অনুন্মোচিত চিন্তাকে আলোকিত করে। আর এত দক্ষতার সঙ্গে এইসব ইশারার আঞ্জাম জায়গায় জায়গায় যে মনে হয় একজন সুদক্ষ খেলোয়াড়ের পক্ষেই কেবল সম্ভব মানুষের চিন্তা উসকে দেওয়ার এমন খেলায় নামা।

আবার এত রাখঢাক দেখে মনে হলো শিল্পী নিজের বাকস্বাধীনতা হরণের চরম ভয়ের ছায়ার ভেতরে থেকে কেবল সাংকেতিক ও সংক্ষিপ্ত সান্ধ্য ভাষায় সামান্য চিহ্ন রেখে গেলেন পরের প্রজন্মের জন্য যে কেমন ছিল তার কাল। কীভাবে এখানে বেঁচে থাকতে হতো মরার মতো।

পাঠ শেষে মনে প্রশ্ন জাগল, কেউ মরছে না কি তবে সমালোচনা গ্রন্থ? এ বইয়ে একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের হাস্যকর সকল ভুলের ব্যাপারে সমালোচনা করা হইছে? নাকি একটা স্বাধীন দেশের পরাধীন হয়ে যাওয়ার উপাখ্যান এইটা? কোনটা?

আমি অবশ্যই বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সব উপন্যাস পড়ি নাই, তবে নিজের পাঠের ভেতর থেকে বলতে পারি একটা উপন্যাসে এত মেটাফরের ব্যবহার বাংলা সাহিত্যে এর আগে আমার চোখে পড়েনি। মনে করতে পারছি মেহেদী ধ্রুবের ‘মেঘ ও মানুষেরা’ নামক গল্পের বই আর তার উপন্যাস ‘পশ্চিমের হাওয়ায় প্রাণ’-র কথা। এই কথাসাহিত্যিকের প্রথম গল্পের বই আর উপন্যাসে মেটাফরের এত নিখুঁত আর ব্যাপক ব্যবহারে চমৎকৃত হইছি, আনন্দ পাইছি। কিন্তু কবীর রানার এ উপন্যাস পড়ার পর ধারণা পাল্টে গেল। মনে হলো, বাংলা সাহিত্যের সকল ফিকশন থেকে স্বতন্ত্র হয়ে যাবে এখানে।

এ উপন্যাস পড়তে গিয়া দেখা গেল আমার জানা সকল শব্দ এখানে মৃত অর্থহীন। অভিধান এ উপন্যাসের শব্দের অর্থ প্রদাণ করতে অক্ষম। নতুন ভাষা শিক্ষা লাভ করছি এ বই পড়তে গিয়ে। অকেজো বহুল ব্যবহারে মৃত শব্দ এখানে প্রাণ ফিরে পায়। আনন্দে লাফাতে থাকে। শব্দ যে কত অর্থ দিতে পারে, শব্দ যে কত কিছু ধারণ করতে পারে, তা কবীর রানার ‘কেউ মরছে না’ না পড়লে বোধহয় বুঝতে পারতাম না।

কবীর রানার দীর্ঘ সাহিত্যচর্চা শেষে ৫৫ বছর বয়সে প্রথম উপন্যাস প্রকাশ করে মূলত বাংলা ভাষার পাঠকদের চ্যালেঞ্জই জানাইছেন, পাঠকের দৌড় দেখতে চাইছেন। সব শ্রেণির পাঠক ‘কেউ মরছে না’ নামক এ প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করতে পারবে না। অন্তত নিজের কথা বলতে পারি। আমি নিজে একজন লেখক পাঠক, মধ্যমমানের বুদ্ধির লোক। বাংলা সাহিত্যের মোটামুটি ভালোই একটা পাঠ নিছি। বিশ্বসাহিত্যের অনেক ভালো বই পড়ছি। সত্যি কথা বলতে এই উপন্যাসের পুরোটা আমি বুঝি নাই। তবে যতটুকু বুঝছি তা আমার জন্য কম না। আমি এক পাঠে এ উপন্যাসের হয়তো ১০% গ্রহণ করতে পারছি। সেইটা নিয়াই আপাতত আনন্দিত আমি। আর এইখানে কেবল নিজের সেই উচ্ছ্বাসটুকুই জানাইতে চাই।

কেন এই বইয়ের নাম হলো কেউ মরছে না?

প্রায় দুইশো পৃষ্ঠার এই বই পড়তে গিয়া বহু চিন্তা মাথায় আসছিল বিভিন্ন সময়। উপন্যাসটা সম্ভবত সকল কাল, পৃথিবীর সকল দেশ সকল স্থান আর জগতের সকল চরিত্রকে ধরার চেষ্টা করছে। দূর থেকে দেখলে দেখা যায় এখানে কিছুই নতুন না, কিছুই ধ্বংস হচ্ছে না। মানে এক ফ্যাসিস্ট যাচ্ছে, আরেক ফ্যাসিস্টের জন্ম হচ্ছে। ফ্যাসিস্টের মৃত্যু হচ্ছে না। জগতের ফুল ফল ফসলাদি পশু পাখি মানুষজন গণহত্যা কিছুই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। একটা যেতে না যেতেই তার উত্তরসূরী এসে হাজির। ফলে এইদিক থেকে মনে হচ্ছে কেউই আসলে মরছে না।

আবার মনে হলো, কেউ মরছে না বলে কি লেখক একটু ঠাট্টা করলেন? তিনি কি বলতে চান—যদি মরেই, তাহলে এইসব মৃত্যু কেন অর্থ বহন করে না? মরতে যদি হবেই মরাটাকে কেন গুরুত্ব দিচ্ছে না? কেন মহিমান্বিত করছে না? কেন লড়াই করে মরছে না?

আরেকবার মনে হলো, কেউ মরছে না—এক বিরাট সত্যের অস্বীকার। অস্বীকার করলেই যে মরবে না বা মরছে না তা না। সময়টা যে অস্বীকার-প্রবণ, অস্বীকারই যে এখন সত্য—সেই কথাটাই যেন বলে—কেউ মরছে না।

আবার মনে হলো, সবই মরছে, সবই ধ্বংস হচ্ছে—তবু বলতে হচ্ছে—সব ঠিক আছে। এরথেকে বড় ঠাট্টা আর কী হয়? সেই ঠাট্টার চিহ্নই কি থেকে যাবে এখানে?

অন্য এক সময় মনে হলো, চারিদিকে এত হত্যা, এত খুন, এত মৃত্যু—কোন কিছুই যেহেতু কোন পরিবর্তন আনতে পারছে না, এই এতটা কাল পার হয়ে আসার পরও এত বিশ্ববিদ্যালয় এত সভ্যতা এত আবিষ্কার এত নিয়মনীতি এত রাজার আসা যাওয়া কিছুই মানুষকে সভ্য বানাতে পারছে না, তাদের হিংস্রতা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে, কোনো কিছুই থামছে না, তার মানে তো আসলে কিছুই মরছে না। কারণ মৃত্যু মানেও তো পরিবর্তন। আসল পরিবর্তনটা ঘটে মানুষের মৃত্যুর ভেতর দিয়েই। কিন্তু মানুষের কোনো পরিবর্তন নাই। তার মানে তো কিছুই মরছে না।

অথবা আমাদের মৃত্যুকে যেহেতু হিসাবেই ধরা হচ্ছে না—অতএব আমরা মরছি না—কেউ মরছে না বলে এক ধরণের বিদ্রোহই করে বসলেন লেখক।

আমি হয়তো কোনো সত্যের কাছাকাছিও যেতে পারছি না। তবে এই যে আমার চেষ্টা, যার যার বুঝ থেকে, যার যার অবস্থান থেকে এই বোঝার চেষ্টা, এইটাও তো বিরাট ব্যাপার। লেখক হয়তো চাইছেন যে চিন্তার ভেতর দিয়ে পাঠককে নিয়ে যাইতে। সে দিক দিয়ে তিনি যে সফল তা বলতে আমার আনন্দই হচ্ছে।

 

রচনাকাল: পহেলা মার্চ, ২০২৪


লেখা পাঠান- chilekothasahitto@gmail.com


বর্তমানে চিলেকোঠার জনপ্রিয় বইগুলো পেতে ভিজিট করুন রকমারিতে:




মন্তব্যসমূহ

দেশসেরা বুকশপ থেকে কিনুন চিলেকোঠার বই

চিলেকোঠা বেস্ট সেলার বইসমূহ

‘নক্ষত্রের খোঁজে’ প্রতিযোগিতা ২০২২ এর নির্বাচিত বই